১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪১৯ শুক্রবার ১ জুন ২০১২



 
ক্যানসার জয়ীদের ‘ফেস্টিভ্যাল’
ক্যানসার জয়ীদের নিয়ে এই প্রথম বার মালয়েশিয়ার কুয়ালা লামপুরের কাছে ‘পুত্রাজায়া ওয়াটার স্পোর্টস কমপ্লেক্স’-এ অনুষ্ঠিত হল ‘ইন্টারন্যাশনাল ড্রাগন বোট ফেস্টিভ্যাল ২০১১’।

বিভিন্ন ধরনের ‘রেস’ ও ‘ড্রাগন বোট প্রতিযোগিতা’র মাধ্যমে গত বছরের ২০ থেকে ২৩ অক্টোবর সাড়ম্বরে আয়োজিত হয়েছিল এই ‘বাইচ-উত্সব’। কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, সিঙ্গাপুর, হংকং এবং মালয়েশিয়া-সহ বিভিন্ন দেশের ৬৫টি দল ও ১৬০০ প্রতিযোগী অংশ নিয়েছিলেন এই প্রতিযোগিতায়। এঁদের বেশির ভাগই স্তন ক্যানসারের অভিশাপ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা মহিলা।

চিকিত্সা গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ‘বোট’ চালানোর সময় শরীরের উপরের দিককার পেশীর যে ধরনের সঞ্চালন হয়, সেটা ক্যানসার আক্রান্তদের আরও তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠতে সাহায্য করে। ক্যানসার জয়ীদের মনে সাহস যোগাতে ও উৎসাহ দিতে ‘ডব্লিউ পি পুত্রাজায়া ড্রাগন বোট অ্যসোসিয়েশন’-এর এই সুন্দর উদ্যোগ ও আয়োজন তাই ভীষণ ভাবে প্রশংসনীয়।

২০১১ সালের অগস্ট মাস থেকেই প্রতিযোগীদের জন্য ছিল ‘ফ্রি ট্রেনিং’-এর ব্যবস্থা। ১২ ও ২২ জন ‘ক্রু’ নিয়ে গঠিত দু’ধরনের টিমে ছিলেন এক জন ড্রামার, এক জন হেল্ম ও ১০ জন প্যাডলার। ছিল দু’টি বিভাগ, তাদের আবার উপ বিভাগও— ওপেন, মিক্সড, উইমেন ও জুনিয়র (অনূর্দ্ধ ২৩ বছর)। প্রত্যেক দেশের প্রতিযোগীদের আলাদা আলাদা রঙের জার্সি । স্টেডিয়াম থেকে তাঁদের দেখে মনে হচ্ছিল গোলাপি, লাল, হলুদ, সবুজ— নানা রঙের যেন ফুলের মেলা বসেছে সেখানে!

অসম্ভব মনের জোর ও বাঁচার লড়াইয়ের নিরিখে প্রত্যেক প্রতিযোগীই যে নতুন যুগের এক এক জন পথ প্রদর্শক, এ কথা অনস্বীকার্য। ক্যানসার নামক মারণব্যাধির আক্রমণ থেকে বেঁচে ওঠা এমনই এক জন ‘বিজয়ী মানুষ’ ৪৩ বছর বয়সী চিয়া সিয়াং-এর অধিনায়কত্বে সিঙ্গাপুরের ‘পিংক গ্রুপ’ ২০১১ সালের ট্রফি জয় করে প্রমাণ করলেন, জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ক্যানসার কোনও বাধা নয়।

সব মিলিয়ে তাই প্রতিযোগী এবং অবশ্যই উদ্যোক্তাদের জানাই কুর্নিশ!

কিছু কথা...
ড্রাগন বোট: সেগুন কাঠের তৈরি মানবচালিত এক ধরনের নৌকা এই ‘ড্রাগন বোট’। পৃথিবীর অন্যান্য অংশেও তৈরি হয়, তবে প্রধানত দক্ষিণ চিনের পার্ল নদীর ব-দ্বীপ অঞ্চলের গুয়াংডঙ প্রদেশের অধিবাসীরাই এই বিশেষ প্রজাতীয় নৌকার রূপকার। এখানেই প্রথাগত ভাবে তৈরি হয়ে আসছে ‘ড্রাগন বোট’। এই ‘বোট’ এশিয়া, আফ্রিকা ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপগুলিতে ব্যবহৃত প্যাডেলযুক্ত দীর্ঘ নৌকা পরিবারের সদস্য। দক্ষিণ চিনে প্রায় দু’হাজার বছর ধরে ‘ড্রাগন বোট’-এর প্রতিযোগিতা হয়ে আসছে। ধর্মীয় প্রথা ও অনুষ্ঠান হিসাবে অনুষ্ঠিত পরম্পরার এই প্রতিযোগিতা আজ আন্তর্জাতিক ‘খেলা’র মর্যাদা পেয়েছে।

পুত্রাজায়া: পরিকল্পনামাফিক গড়ে ওঠা পুত্রাজায়া শহরটি মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালা লামপুর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দক্ষিণে। রাজধানী শহরটি বেশি ঘিঞ্জি ও জনবহুল হয়ে ওঠায় ১৯৯৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রীয় মালয়েশিয়ার প্রশাসনিক কেন্দ্র এই পুত্রাজায়াতেই তৈরি হয়। শহরটি এখানকার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ডঃ মহাথির মুহাম্মদের মস্তিষ্কপ্রসূত। ২০০১ সালে পুত্রাজায়া হয়ে ওঠে মালয়েশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম যুক্তরাষ্ট্রীয় অঞ্চল। ‘পুত্রা’ শব্দের অর্থ ‘যুবরাজ’ এবং ‘জায়া’ অর্থে ‘সাফল্য’— আর এই দুইয়ে মিলে পুত্রাজায়া।
 
পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনার মেয়ে, পেশায় ডাক্তার। বাংলা কবিতা আবৃত্তি-ই প্রথম প্রেম। আকাশবাণী থেকে রবীন্দ্রসদন, কলামন্দির— দেশ-বিদেশের নামি মঞ্চে নিয়মিত আবৃত্তি উপস্থাপন। সম্প্রতি ভীষণ ব্যস্ততার সঙ্গে চলছে সংসার-যাপন। বৈবাহিক সূত্রে প্রথম আমেরিকায় যাওয়া, সেই থেকে ঘুরতে ঘুরতে এখন মালয়েশিয়ার বাসিন্দা। তবে, মন বাঁধা আছে— বাবা, মা, বাংলার নদী, মাঠ, ভাঁটফুল আরও কত কী-র কাছে!

ছবি: লেখক


রোজের আনন্দবাজার এ বারের সংখ্যা সংবাদের হাওয়াবদল আপনার রান্নাঘর স্বাদবদল চিঠি পুরনো সংস্করণ