২ ফাল্গুন ১৪১৮ বুধবার ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১২


সংবাদের পরিভাষায় যাকে ‘হার্ড নিউজ’ বলে তার বাইরেও বিস্তৃত খবর-রাশি প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
আর সেই পাহাড়-প্রমাণ খবরের খনি থেকে কিছু বিষয় ভিত্তিক সংবাদকে বেছে নিয়ে আমরা সাজিয়েছি ‘সংবাদের হাওয়াবদল’।
সরাসরি বেড়ানোর কথা না-বললেও এইসমস্ত খবর আসলে হাওয়াবদলকে কেন্দ্র করেই। সংবাদের মোড়কে পর্যটন,
চমকে দেওয়া না-জানা তথ্য, জীবজগতের পাশাপাশি পার্বণ, প্রত্নতত্ত্ব সবমিলিয়ে এক অন্য খবরের জগৎ।


খবর এক মুঠো
এক ঝলকে ঘুরে আসা ভিন্ন স্বাদের খবর-দুনিয়ায়।
এ বার মেলা স্পেশ্যাল...
ঐতিহ্য
• ভলতেয়ারের চিঠি
সম্প্রতি অক্সফোর্ডের এক শিক্ষাবিদ ভলতেয়ারের ১৪টি চিঠি উদ্ধার করেছেন আমেরিকার বিভিন্ন গ্রন্থাগার থেকে। এই চিঠিগুলি থেকে স্পষ্ট, ইংল্যান্ডে থাকাকালীন বৌদ্ধিক ও আর্থিক দিক থেকে তিনি ভীষণই সমৃদ্ধ হয়েছিলেন। ফরাসি রেনেসাঁ যুগের এই দার্শনিক-লেখক সে সময় ২০০ পাউন্ড অনুদান পেয়েছিলেন তৎকালীন ব্রিটিশ রাজপরিবার থেকে। সেই অনুদানের প্রাপ্তি স্বীকার করে রাজ পরিবারকে যে চিঠি দিয়েছিলেন ভলতেয়ার, সংগৃহীত চিঠিগুলির মধ্যে থেকে উদ্ধার হয়েছে তাঁর স্বাক্ষরিত সেই পত্রও। বর্তমানে এই চিঠিগুলি নিয়ে গবেষণা করছে অক্সফোর্ডের ভলতেয়ার ফাউন্ডেশন। প্রস্তুতি চলছে ভলতেয়ার সমগ্র প্রকাশের। তাদের মতে ভলতেয়ারের রচনা সমগ্র একত্রিত করতে সময় লাগবে প্রায় পঞ্চাশ বছর। অপেক্ষায় রইলেন লেখকের গুনগ্রাহীরা।

• বিসমার্কের গলায় গান-আবৃত্তি
ফ্রান্সের জাতীয় সঙ্গীতের প্রথম বাক্যটি গাইছেন বিসমার্ক। অথবা কবিতা আবৃত্তি শোনা যাচ্ছে তার নিজের গলায়। একশো বছরেরও আগে জার্মান সাম্রাজ্যের প্রথম চ্যান্সেলর ওটো ভন বিসমার্কের যে কণ্ঠস্বর শেষ বার শোনা গিয়েছিল, ডিজিটাল প্রযুক্তির সাহায্যে তা ফের উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। সম্প্রতি তা প্রকাশও পেয়েছে। ঘটনাটির সম্পূর্ণ কৃতিত্ব ‘দ্য টমাস এডিসন ন্যাশনাল হিস্টোরিকাল পার্ক মিউজিয়াম’-এর। বিসমার্কের কণ্ঠস্বর রেকর্ড করা হয়েছিল ১৮৮৯ সালে। ফোনোগ্রাফের আবিষ্কারক টমাস এডিসনের হয়ে এক প্রযুক্তিবিদ এই ‘রেকর্ডিং’ করেন। ‘‘এটি একটি সাড়া জাগানো ঘটনা!’, বলছে জার্মানির ‘দ্য ওটো ভন বিসমার্ক ফাউন্ডেশন’। ফাউন্ডেশন-এর তরফে মনে করা হয়েছিল, বিসমার্কের রেকর্ডিং হয়তো হারিয়ে গিয়েছে! ১৯৫৭ সালে আমেরিকার নিউ জার্সির এডিসন ল্যাবরেটরিতে একটি লেবেল বিহীন বাক্সের মধ্যে কিছু ‘ওয়াক্স সিলিন্ডার রেকর্ড’ পাওয়া গিয়েছিল। সে সময় ‘রেকর্ডিং’-এর মধ্যে বিসমার্কের কণ্ঠস্বর সুস্পষ্ট ভাবে বোঝা যেত না। তবে ‘রেকর্ডিং’ থেকে বেশ বোঝা যায়, তিনি আবৃত্তি করছেন, গান গাইছেন বা তাঁর ছেলেকে কিছু পরামর্শ দিচ্ছেন। একটা অংশে শোনা যায় তিনি ফ্রান্সের জাতীয় সংঙ্গীতের প্রথম লাইনটিও গাইছেন। এমন ভাবে এই ‘কণ্ঠস্বর’ প্রকাশ্যে চলে আসায় উত্তেজিত উৎসাহীমহল।

• অযান্ত্রিক
‘কু-ঝিক-ঝিক করে চলত’। না, কোনও ভ্রমণ কাহিনির কথা বলতে এই শব্দের অবতারণা নয়। বা, কোনও রেলগাড়িও নয়! পথ নির্মাণের জন্য ব্যবহৃত একটি স্টিম রোলারের কথাই বলা হচ্ছে। রোলারটি ব্যবহার করা হত গত শতাব্দীর ত্রিশের দশকে। তৈরি করেছিল ইংল্যান্ডের জন্ ফাওলার অ্যান্ড কোম্পানি, লিডস্ লিমিটেড, লিডস্। ১৮০০ অশ্বশক্তি’র স্টিম রোলারটি বর্তমানে জলপাইগুড়ির তিস্তা উদ্যানে সংরক্ষিত রয়েছে। পড়তে অসুবিধে হলেও রোলারের সামনে ও পেছনে খোদাই করা নম্বরটি (বি২৭৮৪৭) এখনও বোঝা যায়। রীতিমতো বেদি তৈরি করে তার উপর রাখা হয়েছে স্টিম রোলারটি। হেরিটেজ যন্ত্রটিকে স্মারক হিসেবে রাখতেই এই উদ্যোগ। জলপাইগুড়ির নাগরাকাটায় পূর্ত দফতরের সাব ডিভিশনাল অফিস ও কোচবিহারের পূর্ত দফতরে রয়েছে এমন দু’টি পুরনো স্টিম রোলার। ব্রিটিশ আমলে এ ধরনের বহু রোলার ব্যবহার করা হত। কিন্তু সেগুলো তেমন ভাবে সংরক্ষণ করা হয়নি। ব্যতিক্রম এই দু’টি রোলার।

• অবহেলায় মুর্শিদাবাদের ওয়াসিফ মঞ্জিল
লালবাগের ওয়াসিফ মঞ্জিল বা নিউ প্যালেস ছিল মুর্শিদাবাদের নবাব বাহাদুর ওয়াসিফ আলি মির্জার (১৮৭৪-১৯৫৯) ঠিকানা। বছর দুয়েক আগে রাজ্য আইন বিভাগ ওই প্রাসাদ ও সংগ্রহশালা পর্যটন দফতরকে হস্তান্তর করার পর থেকেই তা তালাবন্দি অবস্থায় পড়ে রয়েছে। সাধারণ দর্শনার্থীরা ঢুকতে পারেন না। দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকায় সংরক্ষণের অভাবে নবাব-ব্যবহৃত পুরাবস্তু নষ্ট হতে বসেছে। ইতিহাসবিদ থেকে জেলার সাধারণ মানুষ ওই প্রাসাদ ও সংগ্রহশালা সংরক্ষণের দাবি তুলেছেন। একই দাবি উঠেছে নবাব বাহাদুরের উত্তরসূরীদের তরফেও। নবাবের উত্তরাধিকারী ওয়াসিফ আলি মির্জার নাতি সৈয়দ রেজা আলি মির্জার অভিযোগ, “রাজ্য পর্যটন দফতরের গাফিলতিতে নবাব বাহাদুরের ব্যবহৃত বিভিন্ন আসবাবপত্র, চাঁদি-সোনা দিয়ে তৈরি হাতির মুকুট, মিশ্র ধাতুর তৈরি হাওদা, জরির কাজ করা বেগমদের শাড়ি, বেগমদের ব্যবহৃত দুর্মূল্য কাঠের পালকি এ সব যা যা রয়েছে তা সবই নষ্ট হতে বসেছে।” বিশাল ঘর জুড়ে এলোমেলো ভাবে পড়ে রয়েছে নবাব বাহাদুর ওয়াসিফ আলি মির্জার ব্যবহৃত আসবাবপত্র।

প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার
• দক্ষিণবঙ্গের যদুপুরে উদ্ধার বিরল লিপি
মাটি খুঁড়তে গিয়ে যদুপুরে সম্প্রতি একটি ভগ্ন বুদ্ধ মূর্তির সন্ধান পেলেন পুরাতাত্ত্বিকেরা। শুধু তাই নয়, ষষ্ঠ-সপ্তম শতকের একটি লিপিও উদ্ধার করা হয়েছে, যা দক্ষিণবঙ্গে বিরল। এর আগে উত্তরবঙ্গের কোথাও কোথাও ব্রাহ্মীতে লেখা সংস্কৃত মন্ত্র অবশ্য পাওয়া গিয়েছে। মালদহে ধাতু নির্মিত বুদ্ধমূর্তির পিছনেও লেখা মন্ত্র পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু তা ছিল অষ্টম শতাব্দীর। পুরাতাত্ত্বিকেরা জানাচ্ছেন, দক্ষিণবঙ্গে এমনিতেই বুদ্ধ মূর্তি কম পাওয়া গিয়েছে। শুধু তাই নয়, এই লেখ-টি সমসাময়িক ইতিহাসের উপর নতুন আলোকপাত করবে বলে তাঁরা মনে করেন। রাজ্য পুরাতত্ত্ব দফতরের উপ-অধিকর্তা অমল রায় বলেন, “দক্ষিণবঙ্গে এত পুরনো লেখ আমরা কমই পেয়েছি। কর্ণসুবর্ণ অঞ্চল সে সময়ে রাজনৈতিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছিল। গুপ্ত যুগের পরপরই শশাঙ্কের আমলের কাছাকাছি সময়ে তাঁর রাজধানী কর্ণসুবর্ণ এলাকায় বৌদ্ধরাও যে ছিলেন, তার একটা প্রমাণ এই মূর্তি থেকে পাওয়া গেল।” কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক ও লিপি বিশারদ সুরেশচন্দ্র ভট্টাচার্য লেখটি পরীক্ষা করেছেন। তিনি বলেন, “লেখটির গোড়ার দিক ও শেষের দিকের কিছুটা নেই। কিন্তু যেটুকু রয়েছে, তা থেকে বোঝা যাচ্ছে মন্ত্রটি হল, ‘ধর্মা হেতুপ্রভবা হেতুং তেষাং তথাগতোহ্যবদৎ’।’’

• অসংরক্ষিত মোগলমারির প্রত্নক্ষেত্র
পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতনের ইতিহাস অতি প্রাচীন। প্রাচীন ‘দণ্ডভুক্তি’ রাজ্যের কেন্দ্রভূমি ছিল দাঁতন। অঞ্চলটির সর্বত্র প্রত্নচিহ্ন বিদ্যমান। দাঁতন-১ ব্লকের মোগলমারি গ্রামে ঢোকার মুখেই বিশাল ঢিবি। স্থানীয় মানুষের কথায় ‘সখি সোনার ঢিবি’। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ২০০৩-০৪ সালে এখানে খনন শুরু করে। পাঁচ দফায় কাজ হয়েছে। প্রতি বারই একটু একটু উন্মোচিত হয়েছে ইতিহাস। আর পাওয়া গিয়েছে বিভিন্ন সময়ের প্রায় চল্লিশ রকমের ইট, বুদ্ধমূর্তি, পোড়ামাটির প্রদীপ, অর্ঘ্যপাত্র প্রভৃতি। গবেষকদের মতে, এখানে ষষ্ঠ-সপ্তম শতকে নির্মিত এক বৌদ্ধবিহার ছিল। হিউয়েন সাঙের বিবরণে তাম্রলিপ্ত রাজ্যে যে দশটি বৌদ্ধবিহারের উল্লেখ রয়েছে, তার একটিও এখনও পর্যন্ত অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলায় আবিষ্কৃত হয়নি। মোগলমারির এই বৌদ্ধবিহারটি তার অন্যতম হতে পারে। সন্ন্যাসীদের থাকার জন্য ছোট ছোট ঘর, প্রবেশদ্বার, চার দিকে প্রদক্ষিণ-পথ প্রভৃতি এখানে পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু প্রত্নক্ষেত্রটির অধিকাংশই এখনও মাটির তলায়। ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের পক্ষ থেকে মোগলমারির বিহারকে জাতীয় স্তরের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। অথচ আজ পর্যন্ত প্রত্নক্ষেত্রটিকে সংরক্ষণের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় কাজ শুরু হয়নি। প্রত্নক্ষেত্রটি নষ্ট হচ্ছে। প্রত্নসামগ্রী চুরি হয়ে যাচ্ছে।

• অতীতের ছায়ামণ্ডপ
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গঙ্গারামপুর থানার অন্তর্গত শিববাড়ির মধ্যে অবস্থিত ঐতিহাসিক বাণগড়। জায়গাটি পুরাতাত্ত্বিক উপাদানে সমৃদ্ধ। ১৯৩৮-৪১ সালে পুরাতত্ত্ব বিভাগ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় অধ্যাপক কুঞ্জগোবিন্দ গোস্বামী প্রথম বার বাণগড়ে খনন কাজ শুরু করেন। এর পর ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ব সর্বেক্ষণ ২০০৭, ’০৯ ও ’১০-এ খনন করে। সে সময়ে উঠে আসে অনেক অজানা ইতিহাস। ২০১১-র প্রত্নখননে চ্যালকোলিথিক যুগের ইতিহাস উঠে এসেছে, যা নিয়ে গবেষকরা বেশ উত্তেজিত। এর পাশাপাশি আছে জনশ্রুতি। বাণগড়ে ছিলেন পরাক্রমশালী রাজা বাণাসুর। তাঁর রূপসী কন্যা উষাকে হরণ করেছিলেন শ্রীকৃষ্ণের পৌত্র অনিরুদ্ধ। উষার সঙ্গে অনিরুদ্ধের গভীর প্রণয় ছিল। বাণরাজা তা মেনে নিতে পারেননি। পরে শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে যুদ্ধে বাণরাজ নিহত হন এবং উষা ও অনিরুদ্ধের বিয়ে হয়। বাণগড়ে উষার বিয়ের ছায়ামণ্ডপটি আজও বর্তমান। মণ্ডপটির চার দিকে চারটি বড় পাথরের স্তম্ভও রয়েছে। স্থানীয় লোকেরা এদের ‘কলাগাছ’ বলেন। অনেক পর্যটক কলাগাছকে আলিঙ্গন করে তাঁদের মনের বাসনা পূরণের প্রার্থনা জানান। এই প্রত্নস্থানের অল্প দূরেই আছে ‘উষাহরণ রোড’ নামের একটি রাস্তা। বাণকন্যা উষার নামেই এই প্রাচীন সড়কের নামকরণ। ২০১০-এ প্রত্নতত্ত্ব সর্বেক্ষণ স্তম্ভগুলির কিছু অংশ খনন করে মাটির তলা থেকে মূল মন্দিরের কাঠামোটির অংশ আবিষ্কার করে। সেখানে মাটির তলা থেকে বেরিয়ে এসেছে পাথরের সিঁড়ি এবং চার দিকে ইটের ভাঙা স্থাপত্য।

পরিবেশ ও বন্যপ্রাণ
• নতুন সাপের চোখে সিঙের মতো দাঁড়া
তানজানিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলে একটি নতুন প্রজাতির সাপের খোঁজ মিলেছে। সম্প্রতি ‘জুটাক্সা’ পত্রিকায় উজ্জ্বল রঙের এই প্রজাতিটি সম্পর্কে লেখা হয়েছে। নিউজিল্যান্ড থেকে প্রকাশিত এই জার্নাল অনুযায়ী লম্বায় প্রায় ২.১ ফুটের এই সাপগুলির গায়ের রং হলুদ-কালোয় মেশানো। এ ছাড়া এদের চোখের উপরে শিঙের মতো দাঁড়া রয়েছে। সদ্য খুঁজে পাওয়া সাপের এই প্রজাতিটির নামকরণ করা হয়েছে “মাটিল্ডা’স হর্নড ভাইপার”। পূর্ব আফ্রিকায় খুঁজে পাওয়া এই প্রজাতিটির বাসস্থানের সঠিক হদিশ অবশ্য গোপন রাখা হয়েছে। আশঙ্কা, চোরাশিকারীদের নজরে এলে বিপন্ন হতে পারে মাটিল্ডা’স হর্নড ভাইপারের অস্তিত্ব। ‘ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন সোসাইটি’-র তরফে জানানো হয়েছে, এই ধরনের সাপের বাসভূমি ছড়িয়ে আছে কেবলমাত্র কয়েক বর্গ কিলোমিটার জুড়ে। তাই, এই সাপটিকে অতি বিপন্ন প্রজাতির তালিকাভুক্ত কার হোক, চাইছেন বিজ্ঞানীরা।

• বাদুড়ের সংখ্যা কমছে উত্তর আমেরিকায়
আমেরিকার ১৬টি রাজ্য-সহ কানাডায় আশঙ্কাজনক ভাবে কমছে বাদুড়ের সংখ্যা। বৈজ্ঞানিকদের মতে, এখনও পর্যন্ত এই অঞ্চলে প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ৫ কোটি ৭০ লাখ বাদুড়। ছত্রাকজনিত আক্রমণে এই বাদুড়দের মধ্যে যে সমস্ত উপসর্গ দেখা গেছে তা পরীক্ষা করে বৈজ্ঞানিকরা বলছেন ‘হোয়াইট নোজ সিন্ড্রোম’-ই এর জন্য দায়ী। ২০০৬-এ নিউ ইয়র্কের একটি গুহায় সর্বপ্রথম এই রোগের লক্ষণ ধরা পড়ে। রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় এর আগে মার্কিন মৎস্য ও বন দফতর থেকে এখানকার গুহা ও খনিগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। শীতকালে এই রোগে আক্রান্ত বাদুড়দের আচরণেও বেশ কিছু পরিবর্তন লক্ষ করা গেছে। এমনকী দিনের বেলাতেও উড়তে দেখা গেছে তাদের!

• বাঘের সংখ্যা বাড়ল অসমে
অসমে দু’টি ব্যাঘ্র প্রকল্পভুক্ত এলাকায় বাঘের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে। এরই পাশাপাশি, ওড়িশার নন্দন কানন থেকে আনা সাদা বাঘ দু’টির তিনটি শাবক হয়েছে। সব মিলিয়ে এখন গুয়াহাটি চিড়িয়াখানায় বাঘের সংখ্যা ১৪। ডিসেম্বর অবধি হওয়া বাঘ সুমারি অনুযায়ী অসমে রয়্যাল বেঙ্গলের সংখ্যা ১৪৩টি। এর মধ্যে কাজিরাঙাতেই ১১৮টি বাঘ রয়েছে। বাঘের উপরে নজর রাখতে কাজিরাঙার ১৫টি স্পর্শকাতর এলাকায় বসানো হচ্ছে ‘ইলেকট্রনিক আই’। ‘ইলেকট্রনিক আই’-এমন একটি লেন্সভিত্তিক যন্ত্র, যার মাধ্যমে পরিষ্কার পরিবেশে ২০ কিলোমিটার এলাকা অবধি নজর রাখা সম্ভব। ২০ কিলোগ্রাম ওজনের যে কোনও সচল বস্তুর ছবি তুলে, চিহ্নিত করতে সক্ষম এই যন্ত্র। তবে, কাজিরাঙার মতো অরণ্যে ‘ইলেকট্রনিক আই’ ৫ কিলোমিটার অবধি নজর রাখতে পারবে। এই বছরের মধ্যে কাজিরাঙায় যন্ত্রটি বসানো হবে। ঠিক মতো কাজ করলে অন্য অরণ্যগুলিতেও ‘ইলেকট্রনিক আই’ বসানো হবে। অনেকটা ক্লোজ্ড সার্কিট ক্যামেরার মতোই কাজ করবে এটি। লেন্সের চোখে ধরা দেওয়া দৃশ্য রেঞ্জ অফিসের টিভিতে দেখা যাবে। অস্বাভাবিক কিছু দেখলেই, দ্রুত বনরক্ষীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাবেন। কাজিরাঙা ছাড়া, ওরাং-এও বাঘের ঘনত্ব বাড়ছে। ক্যামেরা ট্র্যাপিং-এ মানসে বাঘ থাকার প্রমাণও মিলেছে। অসমের বনমন্ত্রী রকিবুল হুসেন জানান, ২০১১ সালের হাতি সুমারি অনুযায়ী রাজ্যে হাতির সংখ্যা ৫৬২০টি। ২০০২ সালে সংখ্যাটি ছিল ৫২৪৬। রাজ্যে একশৃঙ্গ গণ্ডারের সংখ্যা এখনও ২২০০-র বেশি। ২০০৬ সালে সংখ্যাটি ছিল ১৯৯৯টি।

• পাখির হাই তোলা
হাই তোলাটা খুবই ছোঁয়াচে। কেউ হাই তুললেই অবচেতন ভাবেই পাশের মানুষগুলিও হাই তুলতে শুরু করেন! যেন এটা এক ‘রোগ’! আশ্চর্যের বিষয় পাখিরাও এর বাইরে নয়। পাখিদের হাই তোলা নিয়ে বিজ্ঞানীমহল তো বটেই সাধারণ মানুষের মধ্যেও এত দিন কোনও ধারণা ছিল না। সম্প্রতি নিউ ইয়র্কের বিমহ্যাংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অ্যানড্রু গ্যালুপ এ বিষয়ে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেন। ‘সামাজিক পাখি’ অর্থাৎ যে সমস্ত পাখিরা মানুষের দৈনন্দিনতার সঙ্গে জুড়ে আছে, তেমনই ২১ টি পাখি নিয়ে পনেরো দিন ধরে পর্যবেক্ষণ করেন অধ্যাপক গ্যালুপ। তিনি লক্ষ করেন, চোখ হাল্কা বন্ধ রেখে ঘাড় সামান্য প্রসারিত করে এরা হাই তোলে। তাও আবার ঘন্টায় কেউ ১ বার, কেউ কেউ আবার ৩ বার। কোনও একটি পাখি হাই তোলার সঙ্গে সঙ্গেই পাশাপাশি থাকা অন্যান্য পাখিরাও নিজেদের হাই তোলা ঠেকাতে পারে না! গ্যালুপ বলেন, এই গবেষণা প্রমাণ করে ‘প্রাইমেট’ গোষ্ঠীভুক্ত নয় এমন প্রাণীদের মধ্যে হাই তোলার ছোঁয়াচে ‘রোগ’টা প্রকট। তিনি আরও জানান, কোনও অজানা আশঙ্কা থেকে দলের সমস্ত সদস্যদের সাবধান করতেই সম্ভবত হাই তোলাটা এক ধরনের সতর্কবার্তা হিসাবেও কাজ করে।

পার্বণ
• রঙের উৎসব
সামনের মাসের শুরুতেই এ বছরের দোল উৎসবের দিন সূচিত আছে ক্যালেন্ডারে। ঠিক তার পরের দিনই আবার হোলি। কিন্তু ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে শুরু হয় রং ও বৈচিত্র্যের ফাগ উৎসব। পশ্চিমবঙ্গ-সহ ভারতের প্রায় সব রাজ্যেই এই উৎসব মহা সমারহে পালিত হয়। নানা অনুষ্ঠানের মধ্যেই প্রকৃতির রঙের সঙ্গে মানুষের খুশির রং মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। দোল উৎসব এবং হোলি এই ফাগ উৎসবের একটি অন্যতম পর্ব। হিন্দু ধর্মের পুরা কাহিনি অনুযায়ী দাপর যুগে শ্রীকৃষ্ণ এমনই ফাল্গুনী পূর্ণিমায় রং ও আবিরের খেলায় মেতেছিলেন শ্রীরাধা ও তাঁর অসংখ্য সহচরীদের সঙ্গে। পৌরাণিক ও প্রথাগত ধর্মীয় অনুষ্ঠানের গণ্ডি পেরিয়ে আজ এই উত্সব ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে খুশির মহোৎসবে পরিণত হয়েছে। যেমন নেপালে রঙের এই পরব ধর্মীয় নানা উপাচারের সঙ্গে পালিত হয়। এখানে আবার এটি ‘ফাগু’ উৎসব নামে পরিচিত। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে খুব জাঁকজমকের সঙ্গে রঙের এই উৎসব পালিত হলেও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উদ্যোগে শুরু হওয়া শান্তিনিকেতনের বসন্ত উৎসব বাঙালি মানসে খুবই উজ্জ্বল।

• দেবতার বনভোজনে থাকেন বাসিন্দারাও
দেবতার চড়ুইভাতিতে এ বারও মেতে উঠল পুরুলিয়ার বরাবাজারের রথটাঁড়। চার পাশে জঙ্গল ঘেরা এক ছোট্ট মাঠে পৌষ সংক্রান্তির দিন চড়ুইভাতি হয়ে গেল। এলাকার অন্তত ১০টি গ্রামের বাসিন্দা উপস্থিত ছিলেন। রথে ছিলেন বরাভূম রাজ স্টেটের কুলদেবতা রাধাবৃন্দাবন চাঁদ জীউ। ঢাকঢোল বাজিয়ে বরাবাজার রাজবাড়ি থেকে দু’কিলোমিটার পথ সেই রথ টেনে আনা হয় রথটাঁড়ের বনভোজন প্রাঙ্গনে। আগে বলরামপুর, পটমদা, চাণ্ডিল থেকে নিমন্ত্রণ করে আনা হত অন্যান্য দেবদেবীদের। সে জন্য তৈরি করা হয়েছিল একটি মন্দির। মন্দির এখনও রয়েছে। কিন্তু পটমদা ও চাণ্ডিল ঝাড়খণ্ডের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর থেকে রাধাবৃন্দাবনজীকে এখন একাই বনভোজন সারতে হয়। কথিত আছে, ১৩৭৩ সালে রাজ পরিবারের সদস্য গঙ্গাগোবিন্দ সিংহ দেও দর্প সাহা দেবতার নির্দেশে পৌষ সংক্রান্তির দিন এই বনভোজনের সূচনা করেছিলেন। বরাবাজার উৎসব কমিটির পক্ষ থেকে বর্তমানে এই বনভোজনের পরিচালনা করা হয়। আগে রাজকোষ থেকে লক্ষাধিক টাকা খরচ করে এই উৎসব হত। এখন বাসিন্দাদের থেকে সংগৃহীত টাকায় হয়। কয়েক দশক আগেও দেবতার জন্য নয় রকমের ব্যঞ্জন রান্না হলেও ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় এখন শুধু খিচুড়ি আর পায়েস রান্না হয়।

• বাউল-ফকির উৎসব
মুর্শিদাবাদের নওপুকুরিয়া মা ডুমনি লোক সংস্কৃতি পরিষদের উদ্যোগে ১৮তম বাউল ফকির উৎসব অনুষ্ঠিত হল বেলডাঙায়। এই উৎসবের উদ্দেশ্য ছিল মানুষের মধ্যে সম্প্রীতির প্রসার ঘটানো। শুধু বাউল নয় চারণ কবিগানও ছিল উৎসবের একটা অংশ। এলাকার মানুষ একত্রিত হয়েছিলেন উৎসবকে ঘিরে। উৎসব কমিটির সম্পাদক দেবশরণ ঘোষ বলেন, “বাউল সঙ্গীত ব্রহ্ম জ্ঞান প্রদান করে; তা ছাড়া সংহতি, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা, সার্বিক সাক্ষরতা প্রসার, পণ প্রথার উচ্ছেদ, নারীর অধিকার, স্বাধীনতা, পরিকল্পিত পরিবার ও সার্বিক স্বাস্থ্য গঠনে পূর্ণ জ্ঞান এনে দেয়।” উৎসবে বাংলাদেশের আরতি বালা বিত্তার এবং করিমপুরের হাসান ফকির তরজা গানের মধ্যে দিয়ে নারী স্বাধীনতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা বলেছেন। বাউল উৎসব কমিটির সভাপতি মনোহর মণ্ডলও জোর দেন শিক্ষা প্রসারের উপর। তিনি বলেন, “মুর্শিদাবাদ তথা পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু ও মুসলিমের পাশাপাশি থাকার জন্য এই সম্প্রীতি জরুরি। তা হলেই মানুষের উন্নতি হবে।”

মাঘ পয়লার ঘুড়ি-উৎসব
মাঘ পয়লার ঘুড়ি উত্সবে মেতে উঠল মেদিনীপুর শহর ও শহরতলি। তাই সকাল থেকেই আকাশ জুড়ে ঘুড়ির ছড়াছড়ি। মেদিনীপুর শহরের বড়বাজার, ছোটবাজার, বক্সীবাজারের মতো এলাকায় ‘ঘুড়ি উৎসব’কে কেন্দ্র করে উৎসাহ-উদ্দীপনা ছিল একটু বেশিই। আগে পৌষ সংক্রান্তির এক মাস আগে থেকেই ঘুড়ি ওড়ানো শুরু হত। দুপুর হলেই লাটাই-সুতো নিয়ে বাড়ির ছাদে উঠে পড়ত কিশোর-তরুণরা। এখন অবশ্য সেই পরিস্থিতি নেই। সবার জীবনেই ব্যস্ততা বেড়েছে। তাই ঘুড়ি ওড়ানো হয়ে গিয়েছে এক দিনের উৎসব। এই দিনটাকে ঘিরেই যাবতীয় প্রস্তুতি। পৌষ সংক্রান্তির পর দিন ছিল বড়াম পুজো। কোতোয়ালি বাজার-সহ শহরের নানা এলাকায় পুজো হয়েছে। সেই সঙ্গে ঘুড়ি ওড়ানোয় মেতেছিল কিশোর-তরুণের দল। এলাকার তরুণ অভিজিৎ রায় বলেন, “আগে পৌষ সংক্রান্তির বেশ কয়েক দিন আগে থেকেই ঘুড়ি ওড়াতাম। এখন এই এক-দু’দিনই ঘুড়ি ওড়াই।” তাঁর কথায়, “এই সময়ে অন্য কাজ করতে ভালই লাগে না। ঘুড়ি ওড়ানোকে কেন্দ্র করে পাড়ায় যেন উৎসব চলে।”

ট্যুরিস্ট স্পট
• সমুদ্র গর্ভে মিউজিয়াম
মেক্সিকোর কানকুনে সমুদ্রের তলায় গড়ে ওঠা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মিউজিয়ামকে কেন্দ্র করে সেখানকার পর্যটন শিল্পে এক উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। ২০১০ সালের নভেম্বর মাসে এই মিউজিয়াম তৈরি হওয়ার পর বছরে গড়ে প্রায় ৭৫ হাজার পর্যটক ভিড় করেছেন এখানে। শিল্পী জেসন ডিক্যারেস টেলর এই মিউজিয়ামটি তৈরি করার সময় বিভিন্ন জলজ প্রাণীদের স্বাচ্ছন্দ্যের দিকেও বিশেষ খেয়াল রেখেছেন। প্রায় বিলুপ্ত হতে বসা পিকক ফ্লাউন্ডার, হোয়াইট টেলেস্ট্রা কোরাল-সহ অন্যান্য প্রাণীদের পর্যটকদের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে ‘পি-এইচ নিউট্রাল কংক্রিট’-এর সাহায্যে মিউজিয়ামে মানুষের নানা ভঙ্গিমার মূর্তি বানিয়েছেন তিনি। এতে এই জলজ প্রাণীদের স্বাভাবিক বাসস্থান ক্ষতিগ্রস্ত তো হয়নি, উল্টে তাদের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছে। আচমকা তারা যাতে মানুষের সাহচর্যে এসে ঘাবড়ে না-যায় সে জন্যেই এই ব্যবস্থা। শুধুমাত্র মিউজিয়ামই নয়, পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে অত্যাধুনিক হোটেল, শপিং মল, বিভিন্ন বুটিক আর সারা পৃথিবীর নানা ধরনের খাদ্য-সম্ভার নিয়ে রয়েছে সুন্দর সব রেস্তোরাঁ।

• সেজে উঠেছে সিপচু
ডুয়ার্সের মেটেলি ব্লকের সিপচুকে পর্যটন মানচিত্রে তুলে ধরতে উদ্যোগী হয়েছে ইনডং গ্রাম পঞ্চায়েত। ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের উদ্যোগে মূর্তি নদী লাগোয়া সিপচুতে চড়ুইভাতির জন্যে বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে দু’পাশে পাথর দিয়ে সাজিয়ে রাস্তা গড়ে তোলা হয়েছে। বানানো হয়েছে বসার জায়গা, ছোট ছাউনির বিশ্রাম ঘর। ইনডং পঞ্চায়েতের উপপ্রধান হরেন্দ্রনাথ দে জানান, ২০০ টাকা করে গাড়ি প্রতি প্রবেশমূল্য নেওয়া হবে। সেই টাকা বাসিন্দারাই সংগ্রহ করে নিজেদের উন্নয়ন মূলক কাজে ব্যয় করা হবে। ২০১১ সালে মোর্চার আন্দোলনের জেরে এলাকার পর্যটন ভেঙে পড়ে। আরও নতুন পর্যটন কেন্দ্র তৈরি করা হচ্ছে। সিপচুর কাছেই চালসা চা বাগানের মূর্তি ডিভিশন। এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব আছে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধারা পালা করে ভারতীয় সেনার কাছ থেকে যুদ্ধের তালিম নিতেন। পর্যটকরা এই এলাকাটি ঘুরে দেখতে পারবেন বলে জানান হরেন্দ্রনাথবাবু।

• এই পারের পর্যটকদের ও-পার বাংলার ডাক
পশ্চিমবঙ্গের পর্যটকদের বাংলাদেশে বেড়ানোর ক্ষেত্র প্রশস্ত করতে শুরু হল নতুন উদ্যোগ। বাংলাদেশে এই রাজ্যের পর্যটকের সংখ্যা বাড়াতে তৎপর হয়েছে ‘বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট’ নামে এক বেসরকারি সংস্থা। সঙ্গে রয়েছে কলকাতায় অবস্থিত বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশন। সম্প্রতি ডেপুটি হাইকমিশনের কার্যালয়ে ফাউন্ডেশনের ডিরেক্টর রেজাউল একরাম এ কথা জানান। এ-পারের পর্যটকদের বাংলাদেশ ভ্রমণে আগ্রহী করতে শহরে তিন দিন ব্যাপী অনুষ্ঠান করা হয়। একরাম জানান, বাংলাদেশ থেকে প্রতি দিন গড়ে দু’হাজার পর্যটক ভারতে আসেন। কিন্তু এ রাজ্য থেকে ও-পারে যান চারশোর কিছু বেশি মানুষ। তিনি বলেন, “পশ্চিমবঙ্গের প্রচুর মানুষ ফি-বছর বেড়াতে যান। আমরা চাই, তাঁরা বাংলাদেশকে ভ্রমণসূচির অন্তর্ভুক্ত করুন। বাংলাদেশ ভ্রমণে অনেকেই অনিশ্চয়তা ও অনাস্থায় ভোগেন। তাঁদের আহ্বান জানাতে এসেছি আমরা।”

পরিষেবা
• ফোনে রেল টিকিট বুকিং
এ বার ফোনের মাধ্যমে রেলওয়ে টিকিট বুক করা যাবে। যাত্রীদের কাছ থেকে অন-লাইন টিকিট বুকিংয়ে ব্যাপক সাড়া মেলায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রেল কর্তৃপক্ষ। অন-লাইন টিকিট বুকিং-এর সঙ্গে ফোনে টিকিট বুকিং চালু হলে দীর্ঘ ক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিটের জন্য যাত্রীদের হয়রানি অনেকাংশে কমবে বলে রেলের কর্তাদের অভিমত। ‘ইন্ডিয়ান রেলওয়ে ক্যাটারিং অ্যান্ড ট্যুরিজম কর্পোরেশন’ এই ব্যবস্থা শীঘ্রই চালু করতে কাজ শুরু করেছে। দেশব্যাপি ‘১৩৮’ নম্বরের সাহায্যে এই টিকিট বুকিং করা যাবে। বিভিন্ন বন্টন কেন্দ্রে বা যাত্রী সংরক্ষণ পদ্ধতির মাধ্যমে বুক করা টিকিটগুলিও এখান থেকে সংগ্রহ করা যাবে। দেশের যে কোনও প্রান্ত থেকে যে কোনও টেলিকম সংস্থার নম্বর থেকে এই বুকিংয়ের সুবিধা পাওয়া যাবে।

• দিল্লিতে ২০১৭-য় মনোরেল
২০১৭-য় ভারতে প্রথম মনোরেল চালু হতে চলেছে দিল্লিতে। দিল্লির নগর উন্নয়ন মন্ত্রী এ কে ওয়ালিয়া জানিয়েছেন এই প্রকল্পে আনুমানিক খরচ হবে প্রায় ১,৬৬৫ কোটি টাকা। প্রথম পর্যায়ে ১০.৮ কিলোমিটারে রেল লাইন বসানো হবে শাস্ত্রী পার্ক থেকে ত্রিলোকপুরী পর্যন্ত। ইঞ্জিনিয়ারিং সংস্থা ‘রাইটস লিমিটেড’ এই প্রকল্পের প্রাথমিক খসড়াটি প্রস্তুত করেছে। মনে করা হচ্ছে প্রতি দিন গড়ে ১.৫ লক্ষ মানুষ যাতায়াত করবেন এবং যানবাহনের উপর ক্রমবর্ধমান চাপ কমাতেও সহায়ক হবে মনোরেল। ২০২১-র মধ্যে সমগ্র দিল্লিতে মনোরেল যাতায়াত ব্যবস্থার অন্যতম প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠবে বলে মন্তব্য করেন শ্রী ওয়ালিয়া। তিনি আরও জানিয়েছেন পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করার উদ্দেশ্যে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে এই প্রকল্প।

• অসুন্দর ‘বন্যসুন্দরী’
পযর্টকদের জন্য জুনপুটের কাছে ‘বন্যসুন্দরী’ পর্যটন আবাস নির্মাণ করেছিল রাজ্য মত্স্য দফতর। কাদুয়ায় ঝাউ-জঙ্গলে ঘেরা মৎস্য ভেড়ির পাশেই কয়েক লক্ষ টাকা ব্যয়ে দু’টি সুদৃশ্য পর্যটক আবাস, কাঠের অতিথিশালা,স্টাফ কোয়ার্টার বানিয়েছিল রাজ্য মৎস্য উন্নয়ন নিগম। ২০১০ সালের ১৬ মে রাজ্যের তৎকালীন মৎস্যমন্ত্রী কিরণময় নন্দ ‘বন্যসুন্দরী’র উদ্বোধন করেছিলেন। কিন্তু পরে আর ওই ভবন মৎস্য দফতরে হস্তান্তরিত করা হয়নি। ফলে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে ‘বন্যসুন্দরী’। এমনকী নজরদারির অভাবে প্রায় গোচারণ ক্ষেত্রে পরিণত হওয়া ‘বন্যসুন্দরী’র স্টাফ কোয়ার্টারগুলোরও এখন জীর্ণদশা।

• আমেরিকার বাঙালিদের শহরে টানতে উড়ান
মার্কিন মুলুকের বাঙালিদের সঙ্গে কলকাতার যোগাযোগ বাড়াতে এ বার ডালাস ও সিয়াটল থেকে উড়ান চালু করছে এমিরেটস। আগে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের উড়ানে বস্টন থেকে লন্ডন ঘুরে কলকাতা পৌঁছাতেন যাত্রীরা। সংস্থাটি কলকাতা থেকে উড়ান তুলে নেওয়ায় লুফৎহানসাই ছিল ভরসা। তাই ডালাস ও সিয়াটল থেকে এমিরেটসের উড়ান চালুর খবরে খুশি যাত্রীরা। ডালাস ও ফোর্টওয়ার্থ কলকাতা-হাওড়ার মতো ‘টুইন সিটি’। ডালাসের ভারতীয়দের নিয়ে গ্রেটার ডালাস ইন্দো-আমেরিকান চেম্বার অফ কমার্সও আছে। তার চেয়ারম্যান এ কে মাগো জানান, ডালাসে ১.২ লাখ ভারতীয় আছেন। দিনে ডালাস থেকে গড়ে ১৬০ জন দেশে ফেরেন। তাঁর মতে, এমিরেটসের তো লাভ হবেই, আমদানি-রফতানি ক্ষেত্রেও এই উড়ান সাহায্য করবে ডালাসের ভারতীয়দের।

হায় পুরী!
বাঙালিদের প্রথম আকর্ষণীয় স্থান হল পুরী। কিন্তু, পুরীর হোটেলে খাবার পছন্দ না-হলে, নিজেরা রান্না করে খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও জ্বালা। বাজারটি অত্যন্ত নোংরা। পুরীর রাস্তায় হাইড্রেন চোখে পড়ে না। বড় বড় হোটেলের নোংরা জল অনবরত রাস্তা দিয়ে গড়াচ্ছে। ওই নোংরা জলে পা দিয়েই মানুষেরা পুজো দিতে, কেনাকাটা করতে বা হোটেলে খেতে যান। বিচ জুড়ে শুধুই দোকান। মাঝেমধ্যেই চায়ের দোকান। বেঞ্চ ও প্লাস্টিকের চেয়ার অনেকটা জায়গা জুড়ে পাতা। প্রতিটি দোকানের আশেপাশে কুকুর। তাদের বিষ্ঠার দেখা প্রায়ই পাওয়া যায়। চায়ের দোকানের চেয়ার ছাড়াও দশ টাকা প্রতিটি হিসাবে ভাড়া দেওয়ার জন্য মজুত থাকে। চড়বার জন্য উট ও ঘোড়া কেবলই যাতায়াত করছে। তাদের গায়ের গন্ধ ও বিষ্ঠাতেও গা ঘিনঘিন করে। বালিতে বসলে নকল মুক্তো, সলতে-সহ নানাবিধ সামগ্রীর ছোট বড় হকাররা সমুদ্র উপভোগের যে ব্যাঘাত ঘটায়, তা সহজেই অনুমেয়। আর স্বর্গদ্বার? অগণিত লোক সমাগম, দোকানিদের পশরা, শবদাহের গন্ধ। শ্মশানের সামনেই সার সার খাবারের দোকান। কী করে অনুমতি মেলে, তাও জানি না! উড়ন্ত খেলনা-বল বা আলো যখন-তখন মাথার উপর আচমকা পড়ার আশঙ্কা। তার উপর কোনও ঝড়ঝঞ্ঝা ছাড়াই মারাত্মক লোডশেডিং। ভ্রমণরসিকদের কাছে কিন্তু পুরী ক্রমশই দুর্বিষহ হয়ে উঠছে।

ইন্টারনেট থেকে নেওয়া ও নিজস্ব চিত্র।

পৌষ সংক্রান্তিতে বিভিন্ন ভাবে মেতে উঠেছিল মানুষের মন। তারই কিছু মুহূর্ত...

Content on this page requires a newer version of Adobe Flash Player.

Get Adobe Flash player

 
 


রোজের আনন্দবাজারএ বারের সংখ্যা • সংবাদের হাওয়াবদল স্বাদবদল • আপনার রান্নাঘর • পুরনো সংস্করণ