খবর এক মুঠো
‘মেলা স্পেশাল’
মংলামাড়ো মেলার উদ্বোধন হল নেতাজির জন্মদিনে। ১১তম বর্ষের এই মেলার উদ্বোধন করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শিশির অধিকারী। উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক অর্ধেন্দু মাইতি প্রমুখ। মেলায় গণবিবাহ ও রক্তদান শিবিরেরও আয়োজন করা হয়েছিল।

বর্ধমানের মাধবডিহির দামিন্যা গ্রামে জন্মেছিলেন কবি মুকুন্দরাম চক্রবর্তী। তাঁরই স্মৃতিতে জন্মভিটেয় অনুষ্ঠিত হল কবিকঙ্কন মুকুন্দরাম সাংস্কৃতিক মেলা। ২৬ বছরে পড়ল এই মেলা। মেলার উদ্বোধন করেন মুকুন্দ-গবেষক ও সাহিত্যিক প্রভাত মুখোপাধ্যায়। উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য, সুনন্দ সান্যাল-সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।

পুরুলিয়া মফস্বল থানা এলাকার ডুড়কু বিদ্যাসাগর আবাসিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হল বিদ্যাসাগর মেলার। উদ্বোধন করেন সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য তপতী মুখোপাধ্যায়। নারী শিক্ষার লক্ষেই এই মেলার আয়োজন বলে উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন। মেলার বিভিন্ন দিনে রামমোহন, বিদ্যাসাগর ও বিবেকানন্দের কর্ম জীবনের উপর নানা আলোচনা হয়। মেলায় ছিল স্বনির্ভর গোষ্ঠীর স্টলও।

ভয়মুক্ত পরিবেশে অনুষ্ঠিত হল ৩৭তম ঝাড়গ্রাম মেলা ও যুব উৎসব। চলেছে ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। ঝাড়গ্রাম স্টেডিয়াম সংলগ্ন এলাকায় আয়োজিত এই মেলার উদ্বোধন করেন পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নমন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঝাড়গ্রামের মহকুমাশাসক বাসব বন্দ্যোপাধ্যায়, বিডিও সুদীপনারায়ণ ওঝা প্রমুখ। শুরু থেকেই মেলা ঘিরে অরণ্যশহরে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। প্রচুর মানুষ মেলায় ভিড় করেন।

কোন্নগর নবগ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয় ‘শিশুপাঠ’-এর প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের সংগঠন ‘শিশুপাঠ অ্যালামনি’ অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে স্থানীয় সেবক সঙ্ঘের মাঠে ফানুস উৎসব হল। ৮টি ফানুস ছাড়া হয়। থিম ছিল ‘শিশুশ্রম দূরীকরণ ও সকলের জন্য শিক্ষা’। প্রাক্তনী ছাড়াও বর্তমান ছাত্রছাত্রী শিক্ষক-শিক্ষিকারা ছিলেন।

৬ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে হরিমতি হাইস্কুলের মাঠে অনুষ্ঠিত হল ডেবরা উৎসব। উৎসবের উদ্বোধন করেন পর্যটনমন্ত্রী রচপাল সিংহ। উপস্থিত ছিলেন জলসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র-সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। উৎসবকে কেন্দ্র করে মেলা বসে। মেলা প্রাঙ্গণে ভিড় জমান সাধারণ মানুষ। উৎসব কমিটি অন্যতম কর্তা বিবেক মুখোপাধ্যায় জানান, প্রতি দিন সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

উদয়নারায়ণপুরের পেঁড়োয় ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর স্মৃতি সাহিত্য মন্দির প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হল ৩৬তম বর্ষ ‘ভারতচন্দ্র মেলা’। উদ্যোক্তা ভারতচন্দ্র মেলা কমিটি। কৃষি-শিল্প প্রদর্শনী ও ভারতচন্দ্র রায়গুণাকরের জীবন ও সাহিত্য মাটির পুতুলের মাধ্যমে দেখানো হয়। এটি ছিল মেলার মূল আকর্ষণ। মেলা কমিটির মূল উদ্যোক্তা ওঙ্কারনাথ রায় বলেন, কবি ভারতচন্দ্র রায়গুণাকরের ৩০০তম জন্ম বর্ষ পূর্তি উপলক্ষে মেলা, প্রদর্শনী এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আড়ম্বর অন্য বছরের চেয়ে বেশি ছিল। মেলার ক’দিন কবিতা, নাটক, যাত্রা, তরজা গান, বাউল সঙ্গীত ইত্যাদি অনুষ্ঠিত হয়।
‘পীরের মেলা’ শেষ হল হাওড়ার জগৎবল্লভপুরের মুন্সিরহাটে। ‘পীর ফতে আলি শাহ উরস ও মেলা কমিটি’র পক্ষে শতাধিক বছরের পুরনো এই মেলা চলল এক মাস ধরে। শেষ হল আজই। মেলার উদ্বোধন করেন শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। মেলার প্রথম দিন কাওয়ালি-সহ নানা ধরনের গান ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। প্রতি দিনই ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। তা ছাড়া, ম্যাজিক শো, পুতুল নাচ, নাগরদোলার আসর বসেছে। রকমারি মাটির জিনিস, খেলা-সহ নানা দোকানও বসেছে মেলা প্রাঙ্গণে।

পূর্বজদের স্মরণে অসমে পালিত হল মে দাম মে ফি। মে অর্থ নৈবেদ্য, দাম মানে পূর্বপুরুষ, ফি অর্থ ঈশ্বর। বিশেষ করে আহোমদের জন্য মে দাম মে ফি-র গুরুত্ব অসীম। তাই-শান বংশদ্ভূত আহোমরাজ সাউলুং স্যুকাফা ও স্যুকাফা সাম্রাজ্যের ৬০০ বছরের ঐতিহ্যকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। তাই-আহোম লোককথা অনুসারে, স্বর্গদেব লেংডন তাঁর দুই পুত্র খুনলুং ও খুনলাইকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন উম্ফা, ফুরালং, মে দাম মে ফি ও রিখান পালন করার জন্য। মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ, গুয়াহাটির নটবমায় স্যুকাফা নগরে মে দাম মে ফি উৎসবের সূচনা করে বলেন, অস্ত্র নয়, মানুষের অন্তর জয় করতে হবে।

মানবাজারে অনুষ্ঠিত হল রাঙ্গামাটি মানভূম মিলন মেলা। মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন রাজ্যের স্বনির্ভর ও স্বনিযুক্তি মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো। ছিলেন রাজ্যের পরিবহন ও ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র। মেলার শুরুতে রণপা-সহ মিছিল হয়। বিভিন্ন ক্লাবের কচিকাঁচারা প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন নিয়ে শহর পরিক্রমা করে। মেলা কমিটির সভাপতি তথা মানবাজারের বিধায়ক সন্ধ্যারানি টুডু বলেন, “এলাকার সাংস্কৃতিক বিকাশ ও চর্চার লক্ষে এই মেলার আয়োজন করা হয়েছে।” অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, উচ্চশিক্ষা সংসদের সহসচিব গুরুপদ সরেন, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি নীলকমল মাহাতো প্রমুখ।

ইতিহাস হারিয়ে গিয়েছে। কিন্তু প্রথা রয়ে গিয়েছে। প্রথা মেনে সরস্বতী পুজার পরের দিন পুঞ্চা ও মানবাজার থানার সীমানায় বুধপুরে কংসাবতী নদীর পাড়ে মাকুড়ি মেলা হয়েছে। মেলায় কমবেশি ষাট হাজার মানুষের জমায়েত হয়েছিল। মানভূম কলেজের ইতিহাসের শিক্ষক তথা গবেষক প্রদীপ মণ্ডলের মতে, “এই মেলার বয়স কত তা বলা সম্ভব নয়। বুধপুর গ্রামে কংসাবতী নদীর পাড়ে এই মেলা বসে। এলাকায় জৈন ধর্মের অনেক নিদর্শন রয়েছে। পাথরে যে সমস্ত নিদর্শন রয়েছে তা নবম কিংবা দশম শতাব্দীর। এলাকায় প্রাচীন রীতি রয়েছে সরস্বতী পুজার দিন রান্না করে তার পরের দিন খাওয়া। তার ঠিক এক দিন পরে মাকুড়ির মেলা বসে। মেলার মেয়াদ সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত অবধি।” বুধপুরে শিব মন্দির রয়েছে। বাসিন্দারা নদীতে স্নান করে মন্দিরে পুজো দেন। এই রীতি চলে আসছে মেলার সূচনা পর্বের সময় থেকেই।

পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার অন্যতম প্রধান উত্সব সিজানো উত্সব। প্রতি বছর সরস্বতী পুজোর পরের দিন হয় এই উৎসব। এর প্রধান বিশেষত্ব মাছ। কারণ মাছ ছাড়া এই উত্সব হবে না বললেই চলে। তাই সরস্বতী পুজোর দিন থেকেই চড়া থাকে মাছের দাম। তবে বড় মাছের চাহিদা বেশি থাকে। পুজোর দিন দুই জেলার বাজার অনেক বেলা পর্যন্ত সরগরম হয়ে থাকে। এই শতাব্দী প্রাচীন রীতিই মেনে আসছেন এখানকার বাসিন্দারা। এ দিন রান্নাবান্না বন্ধ থাকে। হাত দেওয়া হয় না শিল-নোড়াতেও। আগের দিন রান্না সেরে রাখা হয়। পরের দিন পঞ্চব্যাঞ্জনের সঙ্গে মাঠের নানা পদ দিয়ে সিজানো ভাত অর্থাৎ পান্তা খাওয়া হয়। এই প্রসঙ্গে মানবাজারের বাসিন্দা সুভাষ বন্দোপাধ্যায়, গণেশ দত্তরা বলেন, “মাছের দাম অন্য দিনের থেকে এ দিন বেড়ে যায়। কিন্তু উপায় নাই। সিজানো উৎসবে যে মাছ লাগবেই। তাই দামের পরোয়া করা যায় না।” রসিকজনেরা বলেন, মাছের দর বৃদ্ধির রক্তচক্ষুর কাছে রসনাকে কি বলি দেওয়া যায়?

স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁতলই বললেও আদতে জায়গাটির নাম তন্ত্রেশ্বর। বক্রেশ্বরের সঙ্গে এর মিল রয়েছে। বক্রেশ্বরের মতো এখানেও উষ্ণপ্রস্রবণ ও শিবমন্দির আছে। কিন্তু বছরের বেশির ভাগ সময়ে এখানে ভিড় জমান না স্থানীয় মানুষ কিংবা পর্যটকেরা। এক মাত্র মকরসংক্রান্তির দিন তন্ত্রেশ্বরে ঢল নামে মানুষের। কারণ, এ দিন শিব মন্দিরকে ঘিরে মেলা বসে। “যত দিন ধরে মেলা দেখছি তাতে তফাৎ একটাই। যে স্টলগুলি বসেছে সেগুলি ঝকঝকে। বহু বছর আগে মাটিতে মাদুর, ত্রিপল, প্লাস্টিক পেতে স্টল বসত। এখন সেগুলি দোকানের মতো তৈরি করা হয়। বাকি সব একই আছে।”