ঐতিহ্য |
• বাংলায় বিহার |
বৌদ্ধ ধর্ম বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্ ধর্ম। সে দেশের জনসংখ্যার প্রায় ০.৭ শতাংশ মহাযান মতাদর্শী। তাঁদের বেশির ভাগই থাকেন চট্টগ্রামে। গৌতম বুদ্ধ একটা সময় এখানে এসেছিলেন ঠিকই, কিন্তু ধর্মের বিস্তার ঘটে তার অনেক পরে— সম্রাট অশোকের রাজত্ব কালে। তুর্কি হানায় নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়-সহ প্রচুর বিহার ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর বৌদ্ধ ভিক্ষুকরা বসবাস শুরু করেন বাংলাদেশের এই অঞ্চলে। আর সে কারণেই স্থানীয় উপজাতীয় প্রথার সংমিশ্রনে সমৃদ্ধ এখানকার বৌদ্ধ ধর্ম।
রাজশাহি জেলার জামালগঞ্জ থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে পাহাড়পুর গ্রাম। খননকার্যে সেখানেই আবিষ্কৃত হয় সপ্তম থেকে দ্বাদশ শতকের মাঝে মহাযান বৌদ্ধ ধর্মের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গা— সোমপুর মহাবিহার। ৭৭০-৮১০ খ্রিস্টাব্দে পাল বংশীয় রাজা ধর্ম পাল এই বিহার নির্মাণ করেন। চতুষ্কোণ বিশিষ্ট এই বিহারের ঠিক মাঝখানে আছে প্রকাণ্ড মন্দির। চারপাশের দেওয়াল জুড়ে মোট ১৭৭টি ছোট ছোট ঘর রয়েছে ভিক্ষুকদের জন্য। জাভা ও কম্বোডিয়ার বৌদ্ধ মঠের নির্মাণশৈলীর সঙ্গে বেশ মিল পাওয়া যায় এই মহাবিহারের। ১৯৮৪ সালে 'ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট' হিসেবে সোমপুরের নাম প্রস্তাবিত হলেও, তা মনোনীত হয় ১৯৮৫ সালে। সোমপুরের পাশ্বর্বর্তী এলাকায় খনি শিল্পের সম্ভাবনা থাকায় নাকি এই দেরি! পরে ‘বাফার জোন’ তৈরির লিখিত প্রতিশ্রুতির পর সোমপুর মহাবিহার 'ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট'-এর তালিকাভুক্ত হয়।
১৯৫৬-৫৭ সালে নির্মিত একটি ছোট মিউজিয়ামও আছে সোমপুরে, যেখানে খননকার্যে উদ্ধার করা মাটির দেবদেবীর মূর্তি, মুদ্রা, বাসন-সহ নানাবিধ জিনিস সংরক্ষিত হয়েছে। আরও বেশ কিছু জিনিসপত্র আছে রাজশাহির বারেন্দ্র রিসার্চ মিউজিয়ামে।
|
• আফগানি জয়স্তম্ভ— মিনারেট অফ জাম |
১১৯৪ সালে আফগানিস্তানের ঘুরিদ বংশের সুলতান গিয়াসউদ্দিন তার দিল্লি জয়ের স্মারক হিসেবে ‘মিনারেট অফ জাম’ নির্মাণ করেন। ঘুরিদ সাম্রাজ্যের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী ফিরুজকুহ শহরের এই মিনার উচ্চতায় প্রায় ৬৫ মিটার। জাম ও হরি-রুদ নদীর সঙ্গমস্থলের কাছেই পার্বত্য উপত্যকায় দাঁড়িয়ে থাকা এই মিনার মধ্য এশিয়ার ইসলামিক যুগের এক অপূর্ব নির্মাণশৈলী। এর প্রভাব দেখা যায় দিল্লির কুতুব মিনারের গঠনশৈলীতেও।
ন’মিটার ব্যাসের অষ্টভুজাকৃতি ভিতের উপর চারটি ছুঁচলো স্তম্ভ— সম্পূর্ণটাই তৈরি করা হয়েছে পোড়া ইট দিয়ে। নীল রঙের টালির উপর ‘কুফিক’ ভাষায় লেখা খোদাই করা হয়েছে সমগ্র মিনারে। মিনারের এক পাশে কুশকক্ পাহাড়ে পাওয়া গিয়েছে একাদশ ও দ্বাদশ শতকের হিব্রু ভাষায় খোদাই করা কিছু শিলালিপি। হরি-রুদ নদীর পাড়েও পাওয়া গিয়েছে ঘুরিদ সাম্রাজ্যের বেশ কিছু প্রাসাদ ও সাধারণ ঘরবাড়ি।
‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ ইন ডেঞ্জার’-এর তালিকায় থাকা সত্ত্বেও গত ৮০০ বছরে এই অঞ্চলে সংরক্ষণ বা কোনও পুনঃর্নির্মাণ হয়নি! জাম মিনার ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকা প্রত্নতত্ত্ববিদদের নজরে আসে ১৯৫৭ সালে। দেশের সংস্কৃতি মন্ত্রক মিনারের দায়িত্বভার না নিলে এবং রক্ষণাবেক্ষণ সঠিক পদ্ধতিতে না করলে হয়তো ঐতিহাসিক এই অঞ্চল অচিরেই তলিয়ে যাবে জাম ও হরি-রুদ নদীর অতলে!
|
• সমুদ্রের উপহার: হাঙরদের 'আশ্রয়স্থল' |
ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের সংরক্ষণ পদ্ধতি, পরিকল্পনা, সেই স্থান বা ঐতিহ্য ঘিরে পর্যটন শিল্প গড়ে তোলা ও আরও নানাবিধ কারণে তালিকাভুক্ত 'জায়গা'গুলিকে বেশ কিছু পুরস্কার প্রদান করা হয়। ২০১২ সালে মেরিন ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের তালিকাভুক্ত ‘ফ্যুচার পলিসি অ্যাওয়ার্ড’ দেওয়া হয়েছে পালাউ-র রক আইল্যান্ড সাদার্ন লেগুন ও ফিলিপিন্সের টুব্বাটাহা রিফস্ ন্যাচরাল পার্ককে।
জলজ সম্পদের ন্যায্য ও অনুমোদনযোগ্য ব্যবহারের জন্য পালাউ এ বছরের ‘গোল্ড অ্যাওয়ার্ড’ও পেয়েছে এবং প্রশংসিত হয়েছে তার ‘শার্ক হেভ্ন অ্যাক্ট’-এর জন্যও। কারণ, প্রশান্ত মহাসাগরের এই দ্বীপরাজ্য তার সমুদ্র এলাকাকে হাঙরদের 'আশ্রয়স্থল' বলে ঘোষণা করেছে।
টুব্বাটাহা রিফস্ ন্যাচরাল পার্ক ফিলিপিন্সের এমনই সামুদ্রিক আশ্রয়স্থল, যা ‘নতুন’ সপ্তম প্রাকৃতিক আশ্চর্যের তালিকায় মনোনীত হয়েছে। অনৈতিক ভাবে মাছ ধরা ও নষ্ট করা বন্ধ করতে এ অঞ্চলের বেশ কিছু সংস্থা এই পার্কের সঙ্গে একজোট হয়ে কাজ করছে। এ কাজের জন্য আইনও পাশ করা হয়েছে, যা পৃথিবীর অন্যান্য প্রবালদ্বীপের ক্ষেত্রেও কার্যকরী হবে।
|
• ফুলের ঘায়ে... |
১৯৮৮ সালের এই মাসেই, অর্থাত্ ডিসেম্বরে, নন্দা দেবী জাতীয় উদ্যান ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের তালিকাভুক্ত হয়। প্রচলিত নাম হান্ডা দেবী স্যাঙ্কচুয়ারির নাম এক সময় পরিবর্তন করে সঞ্জয় গাঁধী জাতীয় উদ্যান করা হয়েছিল। তবে, তা বেশি দিনের জন্য নয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের বিক্ষোভে ফের তার নামকরণ করা হয় হান্ডা দেবী জাতীয় উদ্যান— ১৯৮২ সালের নভেম্বর মাসে।
পশ্চিম হিমালয়ের ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ারস জাতীয় উদ্যান যে কেবলমাত্র তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যই পরিচিত, তা নয়। এই উদ্যানে বসবাসকারী বেশ কিছু প্রাণী বর্তমানে লুপ্তপ্রায়, যেমন, এশিয়াটিক ব্ল্যাক বেয়ার, স্নো লেপার্ড, ব্রাউন বেয়ার, ব্লু শিপ ও হিমালয়ান মাস্ক ডিয়ার ইত্যাদি।
জাসকর ও হিমালয়ের মধ্যবর্তী বেশ খানিকটা জায়গা জুড়ে এই দুই জাতীয় উদ্যানের বিস্তার তৈরি করেছে নন্দা দেবী বায়োস্ফিয়ার রিসার্ভ–এর কোর অঞ্চল।
|
প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার |
• তৃণভোজী ‘মানুষ’ |
মানুষের পূর্বপুরুষ যে 'বাঁদর' এটা জানা ছিল, কিন্তু পূর্বপুরুষ 'গরু' ছিল এমন তথ্যও মিলল এ বার! অক্সফোর্ডের সাম্প্রতিক গবেষণা তেমন কথাই বলছে। যদিও সময়টা প্রায় ৩৫ লক্ষ বছর আগে। সম্প্রতি মানবজাতির সেই তৃণভোজী পূর্বপুরুষের সন্ধান পেলেন একদল বিজ্ঞানী। আফ্রিকার চাদে এক খননকার্য চালানোর সময় আবিষ্কৃত হয় অস্ট্রালোপিথেকাস বাহ্রেলঘাজেলি গোত্রের এক জীবাশ্মের। সেই জীবাশ্মের দাঁতের লেসার পর্যবেক্ষণ করে জানা যায় এই পর্যায়ের প্রাণীদের খাদ্যের মূল উপাদান ছিল 'সি ফোর', যা ঘাস ও হোগলা জাতীয় গুল্মের মধ্যেই বেশি দেখা যায়। প্রায় পাঁচ ফুট লম্বা এই গোত্রের প্রাণীদের গড় ওজন ছিল ৫০-৫৫ কিলোগ্রাম। দু’পায়ে হাঁটতে সক্ষম এই প্রাণীরা সম্ভবত যন্ত্রপাতি তৈরিতে অপারগ ছিল। আফ্রিকায় এর আগে প্যারানথ্রোপাস বইসি গোত্রের আর এক জীবাশ্মের ক্ষেত্রেও একই খাদ্যাভ্যাসের প্রমাণ মিলেছিল। কিন্তু এই গোত্রের প্রাণীদের আধিপত্য ছিল ‘মাত্র’ ২০ লক্ষ বছর আগে। সেই ইতিহাসকেই এক ধাক্কায় প্রায় ১৫ লক্ষ বছর পিছিয়ে দিল এই আবিষ্কার। মূলত আফ্রিকার সাভানা অঞ্চলে বসবাসকারী এই অস্ট্রালোপিথেকাসরা সমসাময়িক শিম্পাঞ্জিদের মতো নরম ফল না খেয়ে ঘাস ও হোগলা খেতেই বেশি পছন্দ করত। এ ক্ষেত্রে তাদের সাহায্য করত শক্তিশালী চোয়াল ও মজবুত দাঁত। তখন থেকেই আমাদের পবর্বপুরুষদের খাদ্যাভাসের বিভাজনের শুরু।
|
• রহস্যভেদে নতুন পরিচয় পেল ‘আয়রন ম্যান’ |
এ যেন ইন্ডিয়ানা জোন্সের রোমাঞ্চকর কাহিনি। প্রায় পঁচাত্তর বছর আগে ১৯৩৮ সালে নাৎসি বাহিনীর এক অভিযানে উদ্ধার হয় ২৪ সেন্টিমিটার লম্বা ও দশ কিলোগ্রাম ওজনের এক প্রাচীন বৌদ্ধমূর্তি। তদানীন্তন বিজ্ঞানীরা মূর্তিটি পরীক্ষা করে দেখেন এটি একাদশ শতকের বন সভ্যতার সময়ে তৈরি। আকারের তুলনায় বেশ ভারী মূর্তিটির নাম দেওয়া হয় 'আয়রন ম্যান'। কিন্তু এই সহস্রাব্দ প্রাচীন মূর্তিটি পরীক্ষা করে আধুনিক বিজ্ঞানীরা এক চমকপ্রদ তথ্য দিয়েছেন, মূর্তিটি নাকি তৈরি হয়েছিল ১৫ হাজার বছরের প্রাচীন এক উল্কাপিণ্ড থেকে। তাঁদের মতে মঙ্গোলিয়া-সাইবেরিয়া সীমান্তে প্রায় ১৫ হাজার বছর আগে পড়ে ওই উল্কাটি। মূর্তিটিতে বুদ্ধ ও বুদ্ধ পূর্ব সংস্কৃতির ছাপ রয়েছে, মিল রয়েছে বন সভ্যতার রাজা বৈশ্রাবণের সঙ্গে। মূর্তিটিতে উচ্চমানের নিকেলের উপস্থিতিও লক্ষনীয়। উল্কাপিণ্ড থেকে এই ধরনের মানবমূর্তি অত্যন্ত বিরল ও মহার্ঘ্য বলে মত বিজ্ঞানীদের।
|
• ৮৫০ বছরের পুরনো মানব-কঙ্কাল |
মেক্সিকোর অদূরে এক প্রত্নতত্ত্বস্থলে খননকার্য চালিয়ে প্রায় ৮৫০ বছরের পুরনো দেহাবশেষ উদ্ধার করলেন একদল প্রত্নতাত্ত্বিক। তাঁদের ধারণা, কুয়েরেতারো প্রদেশের সিয়েরা গোর্দা অঞ্চলে পাওয়া এই মানব-কঙ্কালগুলি ১১৫০ খ্রিস্টাব্দের। এই অঞ্চলের প্রাচীন অধিবাসীরা এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার পর ফিরে আসতেন শুধু সমাধিক্ষেত্রগুলো ব্যবহার করতে। তাঁদের গোষ্ঠীর লোকেদের এখানেই সমাহিত করা হত বলে প্রাথমিক অনুমান বিশেষজ্ঞদের। তবে আরও পরীক্ষার পরে এ বিষয়ে সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে বলে মত তাঁদের। কঙ্কালগুলির বিভিন্ন জায়গায় গভীর ক্ষতচিহ্ন আছে। এই ক্ষতচিহ্নগুলি নিয়েও ধন্দে বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে মৃতদেহ উত্সর্গ করা হলে এমন চিহ্ন থাকার সম্ভাবনা থাকে। অথবা এক সমাধিক্ষেত্র থেকে মৃতদেহ অন্যত্র স্থানান্তরিতের কারণেও এই ক্ষত হয়ে থাকতে পারে। ক্ষতচিহ্নের কারণ-সহ বয়স, লিঙ্গ ও মৃত্যুর কারণ জানতে কঙ্কালগুলিকে আরও পরীক্ষা করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রত্নতাত্ত্বিকেরা।
|
• হুন্ড-এ হিন্দু রাজত্বের প্রত্নতাত্বিক নিদর্শন |
পাকিস্তানের স্বাবি জেলার হুন্ড-এ ফের মিলল প্রাচীন হিন্দু সাম্রাজ্যের নিদর্শন। ১৯৯৬ সাল থেকে পাকিস্তানের প্রখ্যাত প্রত্নতাত্বিক এ এইচ দানি ও আর্শাদ শামি খানের নেতৃত্বে এই অঞ্চলে শুরু হয় খননকার্য। উদ্ধার হওয়া বিভিন্ন মূল্যবান নিদর্শন নিয়ে তৈরি হয় হুন্ড-এর জাদুঘর। সম্প্রতি জাদুঘরের অধিকর্তা আসিফ রাজার উদ্যোগে এই অঞ্চলে ফের শুরু হয় খননকার্য। আর তাতেই মিলেছে এই বিপুল প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন— ঘর বাড়ির অবশেষ, বাসনপত্র, মুদ্রা প্রভৃতি। এই এলাকার ঐতিহাসিক গুরুত্বও অপরিসীম। প্রাচীন হুন্ড-এর নাম ছিল উদাভান্দাপুরা। খ্রিস্টপূর্ব ৩২৭ অব্দে উদাভান্দাপুরায় এসেছিলেন গ্রিক সম্রাট আলেকজান্ডার। ৬৪৪ অব্দে চিনা পরিব্রাজক জুয়াংঝাং-ও (এক সময় যাঁকে হিউয়েন সাং লেখা হত) এসেছিলেন এখানে। সিন্ধু নদের পাড়ে গড়ে ওঠা এই শহরটি ছিল তত্কালীন হিন্দু শাহি রাজত্বের তৃতীয় বৃহত্তম শহর। সিন্ধুর ভয়াবহ বন্যায় ধ্বংস হয় প্রাচীন এই শহরটি।
|
পরিবেশ ও বন্যপ্রাণ |
• সমতা বজায় রাখতে গরুমারায় আনা হবে স্ত্রী গন্ডার |
দেশের মধ্যে এই প্রথম বিষ্ঠা পরীক্ষার মাধ্যমে গন্ডার গণনা হল গরুমারায়। চলতি বছরে প্রথাগত পদ্ধতিতে দেখা গিয়েছে, গরুমারায় ৪২টি গন্ডার রয়েছে। তবে বিষ্ঠা পরীক্ষার পর বিশেষজ্ঞরা জানান, গরুমারায় গন্ডারের সংখ্যা ৪৩।
বিষ্ঠার ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে প্রাণিসুমারির চল এ দেশে নতুন। এশিয়ার একশৃঙ্গ গন্ডারের সংখ্যা, বংশধারা ও চারণ-চরিত্র গবেষণা করতে বিশেষ একটি প্রকল্প হাতে নেয় ‘ইন্টারন্যাশনাল রাইনো ফাউন্ডেশন’ ও আরণ্যক। এতে সামিল হন বন্য প্রাণীদের বিষ্ঠা নিয়ে গবেষণা চালানো রসায়নবিদ ও বিশেষজ্ঞেরা। গত বছর গরুমারা থেকে গন্ডারের ৬০ টুকরো বিষ্ঠা সংগ্রহ করে অসমের ওয়াইল্ড লাইফ জেনেটিক্স ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়। উচ্চ ‘পলি মরফিক মাইক্রো স্যাটেলাইট মার্কার’ দিয়ে প্রতিটি মলকে চিহ্নিত করা হয়। ‘সেক্স ক্রোমোজোম মার্কার’ দিয়ে বিষ্ঠার লিঙ্গ নির্ধারণ হয়। মলের মধ্যে গ্যাসট্রো ইনটেসটানাল পেশি তন্তু ও কোষ থাকে সেখান থেকে ডিএনএ মেলে। বিষ্ঠা যত টাটকা হয়, তত ভাল।
বিশেষজ্ঞদের মতে, চোখে দেখে গণনার সময় লম্বা ঘাসের আড়ালে থাকা গন্ডারের লিঙ্গ নির্ধারণ করতে সমস্যা হয়। এ ক্ষেত্রে বিষ্ঠাই উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়।
গরুমারায় পুরুষ ও স্ত্রী গন্ডারের আনুপাতিক হার ৪:১। অসমের কাজিরাঙাতে অবশ্য আনুপাতিক হার প্রায় সমান-সমান। বন দফতর সূত্রের খবর, ফি বছর সঙ্গিনীর দখল নিয়ে গরুমারায় গন্ডারদের মধ্যে লড়াই হয়। এতে প্রাণ সংশয় দেখা দেয়। আনুপাতিক হার সমান হলে ওই সমস্যা দূর হবে বলে মত বন দফতরের। সে জন্য পশ্চিমবঙ্গের বন বিভাগ স্ত্রী গন্ডার পেতে অসমের শরণাপন্ন হয়েছে। সেখানে গন্ডারের সংখ্যা আড়াই হাজারের বেশি।
|
• গজলডোবায় নামছে ভিন্ দেশি পরিযায়ী |
গজলডোবায় তিস্তা নদীর জলে আস্তানা গেড়েছে পরিযায়ীর দল। চিন, মঙ্গোলিয়া, সাইবেরিয়ার পরিযায়ীদের ভিড়ে অপরূপ হয়ে উঠেছে তিস্তা। সে খবর পাওয়ায় পাখিপ্রেমীরা ভিড় জমাচ্ছেন সেখানে। পর্যটকদের আনাগোনা শুরু হতেই এ বার তাই আশায় বুক বাঁধছে গজলডোবা। বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কমন পোচার্ড, ফ্যালকেটেড টিল’রা অল্প অল্প করে ইতিমধ্যেই এসে পাড়ি জমাচ্ছে তিস্তার চরে। উত্তর চিন, মঙ্গোলিয়া, সাইবেরিয়া, রাশিয়ায় এই সময় প্রচণ্ড ঠান্ডা পড়ে। সেই সব এলাকা ছেড়ে একটু উষ্ণতার জন্য হাজার হাজার মাইল পাড়ি দেয় এই পাখিরা। এশিয়ার বাইরে ইউরোপ থেকেও নানা প্রজাতির পাখিই ভিড় জমায় গজলডোবায়। ভিন্ দেশের বিরল প্রজাতির পাখি যেমন স্মিউ, গ্লোডেন ক্লোভার্ট, গোল্ডেন আই-এর মতো পাখিরাও ভিড় করে। তাদের দেখতে পাখি বিশারদেরা সেখানে হাজির হন। রং-বেরঙের পাখিদের দেখে মুগ্ধ সবাই। স্থানীয় মাঝি যারা বছরের বাকি সময়ে তিস্তায় মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন তাঁদের মধ্যে অনেকেই শুধুমাত্র পর্যটকদের নৌকোয় তিস্তায় ঘুরিয়ে, পাখি দেখিয়ে, ভাল টাকা রোজগার করেন। বিকল্প এই আয়ের সন্ধানে আরও বেশি পরিমাণে স্থানীয় বসিন্দাদের ব্যবহার করা হলে পরিযায়ী পাখি সংরক্ষণের প্রচার আরও জোরালো হবে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। গজলডোবাকে পাখিদের জন্যে সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করার জন্যে ইতিমধ্যেই বন দফতরের পক্ষ থেকে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। স্থানীয়দের মতে, পরিযায়ীদের নিয়ে পর্যটন দফতরের তরফে যদি বেশি করে প্রচার চালানো হয় তবে ভাল হয়। কেননা বেশি পর্যটক মানেই এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন।
|
• বিরলতম তিমি— মেসোপলোডন ট্রাভারসি |
তিন ভাগ জল ও এক ভাগ স্থলের ভূ-বিভাজন বরাবরই বিজ্ঞানীদের ধন্দে ফেলেছে। কেননা, ওই তিন ভাগের ভিতরেই যে কত শত জানা-অজানা প্রাণ ছড়িয়ে আছে! সমুদ্রের অতলের বিপুল সংখ্যক প্রাণীসম্পদ আজও বিজ্ঞানীদের ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাই সমুদ্রের গভীরে অনুসন্ধান চালিয়ে দুষ্প্রাপ্য মণিমুক্তো তুলে আনার মতোই দুর্লভ প্রাণের খোঁজে সর্বদাই ব্যস্ত থাকেন তাঁরা। আর তেমন ভাবেই সম্প্রতি প্রশান্ত মহাসাগরে বিরলতম তিমির খোঁজ পেলেন নিউজিল্যান্ডের বিজ্ঞানীরা— মেসোপলোডন ট্রাভারসি। প্রসারিত দাঁত ও পাখির ঠোঁটের মতো লম্বা মুখবিশিষ্ট এই বিশেষ প্রজাতির তিমির সংখ্যা বর্তমান পৃথিবীতে খুবই কম। সর্বপ্রথম এই প্রজাতির সন্ধান মিলেছিল ১৮৭২ সালে নিউজিল্যান্ডের পিট দ্বীপপুঞ্জে। এর পর ২০১০ সালের ৩১ ডিসেম্বর নিউজিল্যান্ডের ওপাপে সমুদ্রসৈকতে ৫.৩ মিটার লম্বা একটি স্ত্রী তিমি ও ৩.৫ মিটার লম্বা তার শাবকের দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। এদের কোষের নমুনা সংরক্ষণ করেন বিজ্ঞানীরা। পরে এই তিমির জিনগত বৈশিষ্ট্য পর্যালোচনা করে বিজ্ঞানীরা দেখেন পিট দ্বীপপুঞ্জে প্রাপ্ত তিমির মতো এরাও একই গোত্রভুক্ত।
|
• শামুকের ‘লিঙ্গান্তর’ |
সাম্প্রতিক কালের বাংলা ছবি 'চিত্রাঙ্গদা'র কথা মনে পড়িয়ে দিল মেরু প্রজাতির এক ক্ষুদ্র জীব। ছবিতে নায়ক রুদ্র পুরুষ দেহে বহন করে চলত নারী সত্তা। আর এ কারণে একটা সময়ে সে নারীতে রূপান্তরিত হতে চেয়ে অস্ত্রোপচারের সাহায্য নেয়। আধুনিক চিকিত্সা বিজ্ঞানে এই রূপান্তর সম্ভব। কিন্তু প্রাকৃতিক ভাবে রূপান্তরের এমনই এক আশ্চর্য ঘটনা বেজায় চমকে দিয়েছে জীববিজ্ঞানীদের! দক্ষিণ মেরুর দ্বিপুটক (দুই খোলবিশিষ্ট) শামুকের জীবনচক্রের উপর গবেষণা করে দেখা গিয়েছে তারা লিঙ্গন্তরে প্রাকৃতিক ভাবেই সক্ষম। লিসারকা মিলারিস নামে শামুকের এই বিশেষ প্রজাতিটি আবিষ্কৃত হয় ১৮৪৫ সালে। ১৯৭০ সাল থেকে প্রজাতিটির উপর বিস্তারিত গবেষণা শুরু হলেও এর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধে প্রায় অন্ধকারেই ছিলেন বিজ্ঞানীরা। দেখা গিয়েছে দক্ষিণ মেরুর প্রচণ্ড ঠান্ডায় বংশবিস্তার করার অভিপ্রায়ে পুরুষ শামুকেরা লিঙ্গান্তরিত হয়ে স্ত্রী শামুকে রূপান্তরিত হয়। এর আগে জানা গিয়েছিল স্ত্রী শামুকেরা সন্তানদের ১৮ মাস পর্যন্ত প্রতিপালন করে। দু’টি খোলের নীচে সত্তরটি পর্যন্ত শাবক ধারণেও সক্ষম তারা। কিন্তু এ ব্যাপারে পিছিয়ে নেই পুরুষরাও। রূপান্তরিত পুরুষদের দেহেও প্রচুর পরিমাণে ডিমের অস্তিত্ব দেখা গিয়েছে। তবে পরিবর্তনের পরেও তাদের পুরুষ জননাঙ্গগুলি বেশ কয়েক দিন সক্রিয় থাকে। বিজ্ঞানীদের মতে এই অঞ্চলে উভলিঙ্গ প্রাণীদের যথেষ্ট উপস্থিতি থাকলেও রূপান্তরকামী বৈশিষ্ট্যের এমন খোঁজ মিলল এই প্রথম।
|
পার্বণ |
• কোচবিহারের রাসমেলার ২০০ বছর |
এ বার ২০০ বছরে পড়ল কোচবিহারের রাসমেলা। কোচবিহার রাজাদের কুলদেবতা মদনমোহন দেবের রাসযাত্রাকে কেন্দ্র করে ফি বছর ওই মেলা বসে। কোচবিহার জেলা তো বটেই উত্তরবঙ্গ, নিম্ন অসম, নেপাল, ভুটান থেকে অসংখ্য দর্শনার্থী, ব্যবসায়ী মেলায় আসেন। ১৮১২ সালে প্রথম রাসমেলার আয়োজন হয় ভেটাগুড়িতে। অগ্রহায়ণ মাসে রাসপূর্ণিমা তিথিতে মহারাজ হরেন্দ্রনারায়ণ ভেটাগুড়িতে নব নির্মিত রাজপ্রাসাদে প্রবেশ করেন। সেই উপলক্ষে রাসমেলার শুরু। ১৮২১ সাল পর্যন্ত ভেটাগুড়ি কোচবিহার রাজ্যের রাজধানী ছিল। ১৮২১ সালে কোচবিহার শহর লাগোয়া ধলুয়াবাড়িতে রাজধানী স্থানান্তরিত হয়। ১৮২৮ সালে কোচবিহার শহরে রাজধানী স্থানান্তরিত হয়। অনেকের ধারণা পুরনো রাজবাড়িতে মদনমোহন বিগ্রহ থাকায় ওই বাড়ির চত্বরে মেলা হত। ইতিহাস গবেষকরা জানান, বর্তমান বৈরাগী দিঘির পাড়ে মদনমোহন মন্দির নির্মাণ সম্পূর্ণ হওয়ার পর ১৮৯০ থেকে ওই মন্দির ও সংলগ্ন এলাকায় মেলা বসছে বলে অনুমান। ১৯০৭ সালে টাউন কমিটি রাসমেলার দায়িত্ব নেয়। ১৯১২ সালে মেলার শতবর্ষ পূর্ণ হয়। ১৯১৭ সাল নাগাদ মেলার আয়তন বেড়ে যাওয়ায় ‘প্যারেড গ্রাউন্ডে’ তার স্থানান্তর হয়। পরে রাসমেলার মাঠ নামে যা পরিচিত হয়ে উঠেছে। কলেরার কারণে ১৯২৩ সালে মেলা বন্ধ ছিল। ১৯২৮ সালে মেলায় প্রথম বিদ্যুতের আলো ব্যবহার হয়। ১৯৬২ সালে চিনের আক্রমনের জেরে মেলা বন্ধ হওয়ার কথা উঠলেও শেষ পর্যন্ত বসেছিল। রাস উপলক্ষে রাসচক্র ঘোরার মতো অনেক ঐতিহ্য বজায় থাকলেও ‘সর্ণা’ প্রথা উঠে গিয়েছে। ওই প্রথা অনুযায়ী মেলার একটি দিন পর্দানসিন মহিলাদের জন্য নির্দিষ্ট থাকত। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের সে দিন মেলায় প্রবেশাধিকার ছিল না। রাজাদের আমলে রাসমেলা উপলক্ষে ২০ টাকা ভাড়ায় আগ্রহীরা বিমানে কোচবিহার শহরে দু'বার চক্কর দিতে পারতেন। এখন যদিও সে সুযোগ নেই।
|
• বুন্দি উত্সব |
রাজস্থানের হাদোতি জেলার বুন্দিতে নভেম্বর-ডিসেম্বর মাস নাগাদ পালিত হয় বন্দি উত্সব। এ বছর সে উত্সব উদযাপিত হল ১ থেকে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত। বুন্দি উত্সব আসলে সংস্কৃতির নানা মাধ্যমের এক মিশেল। রাজস্থানের ঐতিহ্যবাহী লোকগীতি ও লোকনৃত্যের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা সঙ্গীতশিল্পীদের সমন্বয়ে নানা ধারার উচ্চাঙ্গসঙ্গীতে মুখর হয়ে ওঠে মেলা প্রাঙ্গণ। সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা তো বটেই আঞ্চলিক ভাবে খ্যাত নানা ক্রীড়া সংক্রান্ত প্রতিযোগিতা, চিত্র প্রদর্শনী বুন্দি উত্সবকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে। সঙ্গীতের পাশাপাশি স্থানীয় শিল্পীদের আঁকা চিত্রকলা, চামড়ার বাহারি জিনিস, মশলাপাতি, রং-বেরঙের পোশাকের বিকিকিনি— জমজমাট করে তোলে মানুষের মন। মেলায় আসা স্থানীয় মহিলারা চম্বল নদীতে পুজো-আরতির পর জলে প্রদীপ ভাসিয়ে দেন। নদীর বুকে প্রজ্জ্বলিত অসংখ্য প্রদীপ এই উত্সবকে মায়াময় ও আলোকোজ্জ্বল করে তোলে। চোখ ধাঁধানো জাঁকজমকের কারণেই বুন্দি উত্সব ‘ছোট পুষ্কর’ নামেও পরিচিত। তবে এ উত্সব ছাড়াও বুন্দি তার স্থাপত্য ও উত্কৃষ্ট চিত্রকলার জন্য বিখ্যাত। হাদা রাজাদের সময়ে গড়ে ওঠা বিভিন্ন মহল ও প্রাসাদের স্থাপত্য, তাদের দেওয়ালের গায়ে আঁকা চিত্রকথা ও কলা সারা বছর ধরে পর্যটক টেনে আনে বুন্দিতে। বুন্দি ফোর্টের উচ্চমানের চিত্রকলা বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ চিত্রশৈলীর সঙ্গে তুলনীয়। এ ছাড়াও দেওয়ান-ই-আম, নহবত্ খানা, হাতিশালার স্থাপত্যও বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
|
• বিষ্ণুপুর মেলার রজতজয়ন্তী বর্ষ |
জাতীয় মেলার মর্যাদায় ভূষিত বিষ্ণুপুর মেলার এ বার রজতজয়ন্তী বর্ষ। আগামী ২৩ ডিসেম্বর শুরু হয়ে মেলা চলবে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত। সরকারি এই মেলা কমিটির সভাপতি তথা রাজ্যের শিশু কল্যাণ দফতরের মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “জেলার সংস্কৃতি, হস্ত-কুটিরশিল্প ও পর্যটন উন্নয়নের লক্ষ্যে এই মেলার সূচনা। সেই দিকটিকে গুরুত্ব দিয়ে এ বারও নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। সঙ্গীত ঘরানার শহরে মেলা মঞ্চে এ বার প্রধান আমন্ত্রিত শিল্পী পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী।” ২৫ বছরে পা রাখা এ বারের মেলায় বাজেট ধরা হয়েছে ৫৬ লক্ষ ৩৬ হাজার টাকা। মেলায় আরও দর্শক সমাগম বাড়ানোর উদ্দেশ্যে জেলা এবং জেলার বাইরে থেকে মেলার পাঁচ দিন বিশেষ বাস চালানোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন মন্ত্রী।
|
• বুড়ি মায়ের উত্সব |
পুরুলিয়ার সাঁওতাল ও আদিবাসীদের একটি অন্যতম উত্সব আদি মাতা বন্দনা, যা বুড়ি মায়ের উত্সব নামেই বেশি পরিচিত। প্রতি বছর কার্তিক মাসের অমাবস্যায় এই উত্সব শুরু হয়, চলে টানা ৫ দিন। পুরুলিয়ার সাঁওতাল ও আদিবাসীদের বিশ্বাস, সকল সৃষ্টি, সকল উত্স-এর মূলেই রয়েছেন এই মাতৃশক্তি বা বুড়ি মা। তাই শক্তির আরাধনায় প্রতি বছর পুরুলিয়ার আদিবাসী মানুষ মেতে ওঠেন আদি মাতা বন্দনায়। মাদোল, তাসা, বাঁশি সহযোগে ঐতিহ্যবাহী আদিবাসী লোকগীতি ও লোকনৃত্য এই উত্সবের পরিবেশটাকেই পাল্টে দেয়। এই উত্সবের টানে ছুটে আসা অসংখ্য শহুরে ব্যস্ত মানুষও মন্ত্রমুগ্ধের মতো বুঁদ হয়ে যান, মুগ্ধ হয়ে যান এই সব ঐতিহ্যবাহী আদিবাসী লোকগীতি ও লোকনৃত্যের আরণ্যক স্নিগ্ধ সুরের নেশায়।
|
পর্যটন কেন্দ্র |
• পর্যটকদের জন্য খুলছে লালকুঠি |
দশক পেরিয়ে ফের পর্যটকদের জন্য খুলে যাচ্ছে দার্জিলিঙের লালকুঠি। সত্তরের দশকে তনুজা, রঞ্জিৎ মল্লিক, উৎপল দত্ত ও ড্যানি ডেনজংপা অভিনীত বিখ্যাত ‘লালকুঠি’ সিনেমার শ্যুটিং হয়েছিল এখানে। প্রায় ১১ বছর বন্ধ থাকার পর লালকুঠির নির্দিষ্ট কিছু ঘর ও বাইরের বাগান-চত্বর খুলে দিল গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ)। টিকিট কেটে এখন যে কেউ লালকুঠিতে ঢুকে সময় কাটাতে পারবেন। কোচবিহারের মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণের আমলে রাজপরিবারের গ্রীষ্মকালীন আবাস হিসাবে দার্জিলিঙে গড়ে তোলা হয় লালকুঠি। পরবর্তীতে তা ব্রিটিশদের হাতে যায়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর কয়েক হাত ঘুরে সরকারি সম্পত্তিতে পরিণত হয় লালকুঠি। তখন থেকেই পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে সে। ‘লালকুঠি’র শ্যুটিং হওয়ার পরে এর আকর্ষণ আরও বাড়ে। গথিক শৈলীর বাংলো, সুদৃশ্য বিরাট বাগান, পুকুর, ঝর্না ছাড়াও দার্জিলিং শহরের একেবারে উপরে থাকায় লালকুঠি থেকে দেখা মেলে নয়নাভিরাম কাঞ্চনজঙ্ঘার। প্রায় গোটা শহরটাই নজরে আসে এখান থেকে। জিটিএ সূত্রের খবর, পর্যটক পিছু ১০ টাকা করে প্রবেশ কর নেওয়া হবে বলে ঠিক হয়েছে। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের কোনও টাকা দিতে হবে না।
|
• বক্সার কোর এলাকাতে এ বার পর্যটক প্রবেশের অনুমতি |
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে বক্সার কোর এলাকায় পযর্টকদের প্রবেশের অনুমতি দিতে চলেছে বন দফতর। দ্রুত সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ খতিয়ে দেখে তা কার্যকর করার নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্যের বনমন্ত্রী হিতেন বর্মন। বক্সা ব্যঘ্র প্রকল্পের কর্তারা জানান, জাতীয় বাঘ সংরক্ষণ অথরিটির নির্দেশিকা নিয়ে আসা হয়েছে। দ্রুত কোর এলাকার কোন জায়গায় পর্যটকদের গাড়ি ঢোকার অনুমতি দেওয়া যাবে তা নিয়ে চিন্তা ভাবনা শুরু হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের বনমন্ত্রী হিতেন বর্মন বলেন, “সুপ্রিম কোর্ট ১৬ অক্টোবর একটি নির্দেশিকায় ব্যাঘ্র প্রকল্পগুলির কোর এলাকায় পর্যটকদের ঢোকার অনুমতি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, কোর এলাকার ২০ শতাংশ এলাকায় পর্যটকদের প্রবেশের অনুমতি দেওয়া যাবে। সুপ্রিম কোর্ট ও জাতীয় বাঘ সংরক্ষণ অথরিটির নির্দেশিকা দেখে তা কার্যকর করা হবে।” বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের উপক্ষেত্র অধিকর্তা ভাস্কর জেভি জানিয়েছেন, বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের ৭৬১ বর্গ কিলোমিটার এলাকা রয়েছে। তার মধ্যে ৩৯০ বর্গ কিলোমিটার ‘কোর’ এলাকা বলে চিহ্নিত। যেখানে পর্যটকদের প্রবেশের অনুমতি ছিল না।
আগামী ছ'মাসের মধ্যে কোর এলাকার কোন কোন জায়গায় পর্যটকদের কার সাফারির অনুমতি দেওয়া হবে তা ঠিক করা হবে। তার পর বক্সার জঙ্গলে হুড খোলা জিপ গাড়ি করে পর্যটকরা ভেতরে প্রবেশ করতে পারবেন।
|
• ছবির মতো সুন্দর গাডরাসিনি পাহাড় |
বেলপাহাড়ির কোলে গাডরাসিনি পাহাড়। ছবির মতো সুন্দর এই এলাকায় এক সময় পর্যটন কেন্দ্র তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল। সেটা ছিল ২০০২-০৩ সাল। পরে মাওবাদীদের বাড়বাড়ন্তে সেই পরিকল্পনা ধাক্কা খায়। ফের গাডরাসিনি ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র তৈরিতে উদ্যোগী হচ্ছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। এ বারের উদ্যোগ অবশ্য জেলা প্রশাসনের নিজস্ব পরিকল্পনা নয়। বেলপাহাড়ির এক সাধক স্বামী আত্মানন্দগিরি এই বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছেন। প্রয়োজন শুধু সরকারের সবুজ সঙ্কেত। বেলপাহাড়ি জুড়েই রয়েছে উজাড় করা নিসর্গ। কোথাও জঙ্গল, কোথাও নদী। চার দিকে ছোটখাটো টিলা। চড়াই-উৎরাই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত। এই বেলপাহাড়ি ব্লকেই রয়েছে গাডরাসিনি পাহাড়। একটা সময় নিসর্গের টানে বহু পর্যটক এখানে ভিড় জমাতেন। কাকড়াঝোর, গাডরাসিনি, লালজল বা তারাফেনিতে ঘুরে বুক ভরে শ্বাস নিতেন শহুরে বাঙালি। তবে কাকড়াঝোর ছাড়া অন্যত্র থাকার ব্যবস্থা ছিল না। থাকতে হত ঝাড়গ্রাম শহরে। পর্যটকের আনাগোনা ক্রমেই বাড়তে থাকায় এখানে পর্যটন কেন্দ্র তৈরির জন্য রাজ্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন ‘মা গাডরাসিনি’ মন্দিরের মহারাজ স্বামী আত্মানন্দগিরি। পাহাড়ের কোলে এই মন্দির ঘিরে বড়সড় উৎসবও হয়।
|
• ঘুমের জাদুঘরে |
বিশ্ব ঐতিহ্যের তকমা পাওয়া ‘দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে’র একটা ইতিহাস আছে। তার ঝলক দেখতে পাওয়া যাবে ঘুম স্টেশনে গেলে। ১৮৮১ সালে গড়ে ওঠা এই স্টেশনে তৈরি হয়েছে একটা মিউজিয়াম, যেখানে মিটবে পর্যটকদের অশেষ কৌতূহল। এখানে রয়েছে রেলের ক্রসিং লিভার, রেল লাইনে ঘন কুয়াশা থাকলে সিগন্যালের কাজে ব্যবহার করা সেই ঘণ্টা, রেলের প্রাচীন পোস্ট, লুব্রিকেটিং মেশিন, পুরনো কিছু টিকিটের সংগ্রহ, ঘড়ি, গার্ডের ব্যাজ, বাঁশি ইত্যাদি। প্রদর্শিত হয়েছে ১৯১৩, ১৯২৭, ১৯৪৫, ১৯৪৭ সালের রেল লাইনের অংশ বিশেষও। দেওয়ালে রাখা সাদা কালো ছবিগুলি রেলের উজ্জ্বল ইতিহাস তুলে ধরে। এগুলির মধ্যে রয়েছে গোড়ার দিকের যাত্রী-সহ ট্রেনের ছবি, রেলপথের নকশা, দার্জিলিং স্টেশন, পাগলাঝোরায় ‘ইউ’ টার্নের ছবি, ১৯৩৯ সালে তোলা তদনীন্তন জেনারেল ম্যানেজারকে অভিনন্দন জানানোর জন্য রেলকর্মীদের সমাবেশ, ১৮৮২ সালে রেলপথ নির্মাণের পরে প্রথম লোকোমোটিভ। রয়েছে ১৯৫০ সালে বন্যা ও ধসে সোনাদার কাছে ক্ষতিগ্রস্ত রেলপথ ও পাহাড়ি পথে সেতুর নীচ দিয়ে তৈরি হওয়া টানেলের ছবিও। সংগ্রহে রয়েছে ১৯০০ সালে একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত এই রেলপথ সম্পর্কিত নানা প্রতিবেদন। এক কথায় ‘দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে’ গড়ে ওঠার সংরক্ষিত ইতিহাস শোভা পাচ্ছে ঘুমের দেওয়ালে।
|
পরিষেবা |
• কাতার এয়ারওয়েজ এ বার কিলিমাঞ্জারোতেও |
তানজানিয়ার দ্বিতীয় গন্তব্য হিসেবে কিলিমাঞ্জারোতে বিমান পরিষেবা শুরু করল কাতার এয়ারওয়েজ। আর এই পরিষেবা শুরু হওয়ায় বিশ্ব জুড়ে ১১৮টি জায়গায় কাতারের পরিষেবা চলছে। দোহার এই বিমান সংস্থার সিইও আকবর আল বাকের জানিয়েছেন, বিমানবন্দরের সীমিত সুযোগ সুবিধা থাকা সত্ত্বেও যাত্রীদের চাহিদার কথা মাথায় রেখেই আফ্রিকার এই ‘কুখ্যাত’ স্থানে তাদের পরিষেবা শুরু করা হয়েছে। কাতার এয়ারওয়েজের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন তানজানিয়া প্রশাসন। পরিষেবা শুরু করার পর প্রথম দিন প্রশাসনিক স্তরে একটি বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তানজানিয়ার পরিবহণমন্ত্রী হ্যারিসন এমওয়াকি এম্বে, পর্যটনমন্ত্রী হিসিমি কাগাসেকি এবং সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটির অধিকর্তা জেনারেল ফাধিলি মাননগি।
|
• শ্রীলঙ্কায় রেল লাইন তৈরি করবে ভারত |
শ্রীলঙ্কা নর্দান রেলওয়ের ফাল্লাই থেকে কঙ্কসান্তুরাই স্টেশন পর্যন্ত রেল লাইন বানানোর বরাত পেল ইন্ডিয়ান রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন ইন্টারন্যাশনাল (ইরকন)। সম্প্রতি প্রায় ১৫ কোটি ডলার মূল্যের এই বরাত পেয়েছে ইরকন। এই কাজের জন্য শ্রীলঙ্কাকে অর্থ সাহায্য করছে এক্সিম ব্যঙ্ক অব ইন্ডিয়া। ২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কায় গৃহযুদ্ধ চলাকালীন ভাভুনিয়া থেকে কঙ্কসান্তুরাই পর্যন্ত পাতা রেল লাইন সম্পূর্ণ রূপে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর প্রশাসনিক উদ্যোগে ভাভুনিয়া থেকে ওমান্তাই পর্যন্ত ট্রেন পরিষেবা শুরু হয়েছে। বাকি কাজ শেষ করবে ইরকন।
|
• দিল্লি-চণ্ডীগড়ের মধ্যে চলবে দোতলা ট্রেন |
প্রতিদিন বাড়তে থাকা যাত্রীদের চাপ কমাতে দিল্লি এবং চণ্ডীগড়ের মধ্যে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত দোতলা ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে উত্তর রেল। ১২ কামরার এই ট্রেনগুলিতে থাকবে আগুন সংক্রান্ত সতর্কীকরণের বিশেষ প্রযুক্তির ব্যবস্থা এবং স্বয়ংক্রিয় ‘স্মোক ডিটেক্টর সিস্টেম’। এ ছাড়াও ইলেকট্রিক্যাল মাল্টিপল ইউনিট (ইএমইউ) প্রযুক্তি সম্বলিত এই ট্রেনগুলি ঘণ্টায় প্রায় ১৩০-১৫০ কিমি গতিবেগে ছুটতে সক্ষম। ফলে এক শহর থেকে অন্য শহরে যেতে সময় লাগবে খুবই কম। কপুরথালা রেলওয়ে কোচ ফ্যাক্টরিতে নতুন ভাবে তৈরি এই ট্রেনের প্রতিটি কামরা ১২০ জন করে যাত্রী বহন করতে পারবে। |
|
|
|