দিন আসে, দিন যায়, তার ফাঁকেই ইতিহাসে ঢুকে পড়ে তার চলাচলের খবর। পুরনো দিনের শহুরে খবর দিয়ে চেনা যায় এখনকার
অতি পরিচিত শহরের অতীতটাকে, তার নাগরিক জীবনযাপন থেকে খেলাধুলো, সংস্কৃতি বা কূটকচালি থেকে রাজনীতির হাল।
পঞ্চাশ বছর আগের কলকাতা শহরের গতিবিধি চিনতে ২১ সেপ্টেম্বর ১৯৬৩ থেকে ২০ অক্টোবর ১৯৬৩ এক মাসের কিছু বিশেষ খবর।

শনিবার, ৪ আশ্বিন, ১৩৭০ (৩০ ভাদ্র, ১৮৮৫ শকাব্দ) SATURDAY, SEPTEMBER 21, 1963
• বৃহত্তর কলিকাতা উন্নয়ন প্রকল্পে দশ কোটি টাকা কেন্দ্রীয় সাহায্যের সম্ভাবনা: বৃহত্তর কলিকাতার নানা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার ‘যৌথ তহবিলে’ যে দশ কোটি টাকা দিবার প্রতিশ্রুতি দিয়াছিলেন, তাহা পাইবার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হইয়াছে। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার ভিত্তিতেই ঐ টাকা পাওয়া যাইবে। শুক্রবার রাইটার্স বিল্ডিংয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য অধ্যাপক এম এস থ্যাকারের সঙ্গে আলোচনার পর বিদায়ী অর্থমন্ত্রী শ্রীশঙ্করপ্রসাদ ব্যানার্জি সাংবাদিকদের নিকট এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, বৃহত্তর কলিকাতার উন্নয়নের জন্য সি এম পি ও এবং সরকার রচিত কয়েকটি প্রকল্পের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার ১০ কোটি এবং রাজ্য সরকার ১০ কোটি টাকা দিবেন বলিয়া স্থির আছে। ইতিমধ্যে দমদম-কলিকাতা সুপার হাইওয়ে এবং অন্যান্য কয়েকটি পরিকল্পনার জন্য রাজ্য সরকার টাকা খরচ করিতে শুরু করিয়াছেন। এবার কেন্দ্রীয় সরকারের সাহায্যও তাড়াতাড়ি আসিতে আরম্ভ করিবে বলিয়া আশা করা যায়। অধ্যাপক থ্যাকার এবং কমিশনের প্রতিনিধি শ্রী এস সেন ও শ্রী কে মিত্র মুখ্যমন্ত্রী শ্রীসেনের সঙ্গেও ঐদিন সাক্ষাত্ করেন। প্রকাশ, অর্থমন্ত্রী ও অফিসারদের সঙ্গে ঐ কমিশনের প্রতিনিধিরা বৃহত্তর কলিকাতার যে সব উন্নয়ন পরিকল্পনার সাহায্যের প্রশ্ন লইয়া আলোচনা করেন সেগুলি প্রধানত এই:- ১) পৌর এলাকায় পরিস্রুত জল সরবরাহ, ২) দমদম-কলিকাতা সুপার হাইওয়ে নির্মাণ, ৩) বস্তি উন্নয়ন এবং ৪) শহরে গ্যাস সরবরাহের যন্ত্রপাতি আধুনিকীকরণ।

রবিবার, ৫ আশ্বিন, ১৩৭০ (৩১ ভাদ্র, ১৮৮৫ শকাব্দ) SUNDAY, SEPTEMBER 22, 1963
• স্বস্তির নিঃশ্বাস: আয়কর দেন না এমন ব্যক্তিদের অবশ্য সঞ্চয় হইতে রেহাই দেওয়ার খবরটি শুনিয়া কলিকাতার মধ্যবিত্ত কর্মীরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলিয়া বাঁচেন। শনিবার অনেকেই ঠিকমত খবরটি জানিতে পারেন নাই। ডালহৌসীতে এক সওদাগরী অফিসের কনিষ্ঠ কেরানী শ্রীনবীন হালদারকে সংবাদটি দিতেই তিনি চেয়ার হইতে আনন্দে লাফাইয়া উঠিলেন: “জয় মা জাপান জাপিনী, অবশ্য সঞ্চয়ের ভূত নেমেছে।” সঙ্গে সঙ্গে সারা অফিসে হইচই। খুশীর ঐক্যতানের প্রধান সুর হইলঃ উঠে গেছে ভাই, আঃ বাঁচা গেল। ইতিমধ্যে ১৩ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে আয়কর দেন না এমন ব্যক্তিদের নিকট হইতে ৭ লক্ষ ৭৮ হাজার ৩০৮ টাকা সংগৃহীত হইয়াছে। এই টাকাটা ফেরত দেওয়া হইবে। এ জন্য ৮৭ হাজার ১ শত ৩৪টি অ্যাকাউন্ট খোলা হইয়াছিল। আয়করদাতাদের অনেকেই কিন্তু নিরাশ হইয়াছেন। অফিস পাড়ার একজন ট্রেড ইউনিয়ন নেতা বলেন, বার্ষিক ছয় হাজার টাকা পর্যন্ত আয়বিশিষ্ট ব্যক্তিদের রেহাই দেওয়া উচিত ছিল।

সোমবার, ৬ আশ্বিন, ১৩৭০ (১ আশ্বিন, ১৮৮৫ শকাব্দ) MONDAY, SEPTEMBER 23, 1963
• বি এন রেলের প্রথম আই এফ এ শীল্ড লাভ: ইংরাজী ১৯৬৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ২২ তারিখটি একটি স্মরণীয় দিন হিসাবেই বি এন রেলের ক্লাব ইতিহাসের পাতায় সোনার অক্ষরে লিখিত থাকিবে। কারণ ঐদিন বহু ফুটবল সংগ্রামের ক্রীড়াভূমি ক্যালকাটা-মোহনবাগান মাঠে ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ ফুটবল প্রতিযোগিতা আই এফ এ শীল্ডের ফাইনাল খেলায় রেল দল ১-০ গোলে মহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবকে পরাজিত করিয়া সর্বপ্রথম শীল্ড লাভের গৌরব অর্জন করিয়াছে। দর্শক-সমাকীর্ণ মাঠে খেলা আরম্ভ হইবার পর দুই মিনিট অতিবাহিত হইতে না হইতেই সুযোগসন্ধানী খেলোয়াড় আপ্পালারাজু রেল দলের বিজয়সূচক গোলটি করিলে রেল সমর্থকদের আনন্দরোলে মাঠের আকাশ-বাতাস ভরিয়া উঠে। বাকি ৬৮ মিনিটের খেলায় আর কোনও গোল হয় না।
শীল্ডজয়ী রেল দল।
প্রচণ্ড গ্রীষ্মতাপের মধ্যের দুই দল খেলায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য মরণপণ সংগ্রাম করিলেও শীল্ড ফাইনালের ক্রীড়াধারা অবশ্য দর্শকদের সন্তুষ্ট করিতে পারে নাই। আবার যোগ্য দল হিসাবে বি এন রেলের জয়লাভ সম্পর্কেও কোনও সন্দেহের অবকাশ নাই। সর্বপ্রথম ফাইনালে উঠিয়া বি এন রেলের প্রথম শীল্ড জয় খুবই কৃতিত্বপূর্ণ। আরও কৃতিত্বপূর্ণ, পরম নির্ভরযোগ্য ইনসাইড বলরাম দলে নাই। ইহা ছাড়া তৃতীয় রাউন্ড হইতেই রেল দলকে একে একে শক্তিশালী দলের সম্মুখীন হইতে হয়। প্রথমে এরিয়ান, পরে গতবারের বিজয়ী মোহনবাগান ও সেমিফাইনালে দক্ষিণ ভারতের সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী হায়দরাবাদ একাদশকে পরাজিত করিয়া ফাইনালে ওঠে।

সোমবার, ৬ আশ্বিন, ১৩৭০ (১ আশ্বিন, ১৮৮৫ শকাব্দ) MONDAY, SEPTEMBER 23, 1963
• কলিকাতায় তৈল শোধনাগার ও হলদিয়া পেট্রলজাত রাসায়নিক কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনা: খনি ও জ্বালানী দপ্তরের মন্ত্রী শ্রী ও ডি আলাগেশান কংগ্রেস পার্লামেন্টারী পার্টির খনি ও জ্বালানী সম্পর্কিত স্ট্যান্ডিং কমিটির আহ্বায়ক শ্রীবীরেন রায়কে জানাইয়াছেন বলিয়া জানা গিয়াছে যে, সরকার চতুর্থ যোজনায় কলিকাতায় একটি তৈল শোধনাগার এবং হলদিয়া অঞ্চলে একটি পেট্রলজাত রাসায়নিক কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনার কথা বিবেচনা করিতেছেন। প্রকাশ, শ্রী আলাগেশান গতকাল কমিটির নিকট জানাইয়াছেন যে, বারুণী তৈল শোধনাগার নির্মাণের কাজ নির্ধারিত সময় পর্যন্ত চলিলেও তৈল শোধনাগারের কাজ চালু হইবার পূর্বেই আসামের নাহারকাটিয়া ও বারুণীর মধ্যে পাইপ লাইন নির্মাণের কাজ শেষ, হইয়া যাইবে। শ্রী আলাগেশান নাকি এই আভাসও দিয়াছেন যে, যশলমীরে যদি যথেষ্ট পরিমাণ তেল পাওয়া যায় তবে রাজস্থানেও তৈল শোধনাগার স্থাপন করা হইতে পারে।

মঙ্গলবার, ৭ আশ্বিন, ১৩৭০ (২ আশ্বিন, ১৮৮৫ শকাব্দ) TUESDAY, SEPTEMBER 24, 1963
• স্টেটবাসে কুপনপ্রথা: কলিকাতা রাষ্ট্রীয় পরিবহণ কর্পোরেশন হইতে শতকরা ৫ টাকা কম মূল্যে কুপন চালু করার সিদ্ধান্ত করিয়াছেন। আপাততঃ ৭ নঃ পঃ, ৯ নঃ পঃ, ১১ নঃ পঃ এবং ১৯ নঃ পঃ— এই চারটি স্তরে ইহা চালু হইবে। আগামী ১লা অক্টোবর হইতে এই কুপন প্রথা চালু হইবে। টাকা ভাঙ্গানীর ব্যাপারে যাত্রী এবং স্টেট বাস কন্ডাক্টরদের সাহায্য করার জন্যই এই ব্যবস্থা চালু হইতেছে। প্রত্যেকটি কুপনে বইয়ে ২১টি কুপন থাকিবে এবং উহা ২০টি কুপনের দামে বিক্রয় হইবে। কুপনগুলি পরের মাসের ৭ই পর্যন্ত বৈধ থাকিবে। শ্যামবাজার, গড়িয়াহাট, হাজরা রোডের মোড়, এসপ্ল্যানেড, হাওড়া স্টেশন এবং শিয়ালদহের আঞ্চলিক অফিসে সকাল সাড়ে ৮টা হইতে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত এবং ৪৫ নং গণেশচন্দ্র এভিনিউয়ে কেন্দ্রীয় অফিসে সকাল ১১টা হইতে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত কুপন পাওয়া যাইবে।

বুধবার, ৮ আশ্বিন, ১৩৭০ (৩ আশ্বিন, ১৮৮৫ শকাব্দ) WEDNESDAY, SEPTEMBER 25, 1963
• আজ মহাসপ্তমী পূজা: দৃক্ সিদ্ধ পঞ্জিকামতে দূর্গাপূজো শুরু হলেও কলকাতায় এখনও পূজোর হাওয়া ঠিক ওঠেনি। সবে পূজো মরশুমের পূর্বরাগ আরম্ভ হয়েছে মাত্র। আলোঝলমল নগরীতে দোকান সাজাবার পর্ব শেষ, মায় টোম্পোরারী কর্মচারী নিয়োগ পর্যন্ত। প্রাচীন পঞ্জিকামতে এবার পূজো হেমন্ত ঋতুর প্রথম মাস কার্তিকে। কলকতায় পূজোর হৈ-চৈ তখন হবে— সর্বজনীন আসরে মাইক্রোফোন বাজবে আর সন্ধ্যের পর নতুন জামা পরে ছেলে-বুড়োর দল ‘কিউ’ দিয়ে প্রতিমা দর্শনে যাবে। তবুও দৃক্ সিদ্ধ পঞ্জিকার মতে মঙ্গলবার ষষ্ঠীতে ঢাকের আওয়াজ উঠেছে এবং নবপত্রিকা বাঁধার কাজও শেষ হয়েছে।
নিজের বাড়িতে দুর্গাপুজো করছেন শ্রীজীব ন্যায়রত্ন।
সপ্তমীর প্রাতে বুধবার স্নানের পর নবপত্রিকাকে পূজোমঞ্চে স্থাপন করা হবে। তারপর ‘সপ্তম্যাদি কল্পারম্ভ ও সপ্তমীবিহিত’ পূজো। কলকাতার অধিকাংশ পূজোই প্রচীন মতে হবে, শতকার দশ ভাগও দৃক্ সিদ্ধ পঞ্জিকামতে হচ্ছে না। সর্বজনীন পূজো একটিও নয়। রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠের কয়েকটি কেন্দ্র এবং কিছু পারিবারিক পূজো ছাড়া সকলেই প্রাচীন পঞ্জিকার দিকে। অর্থাত্ পূজোর ব্যাপারে প্রচীন মতটাই ভারী বা সংখ্যাগরিষ্ঠ। তাই সংখ্যালঘিষ্ঠের পূজোর ষষ্ঠীতে কলকাতায় মাইক্রোফোনে আধুনিক সঙ্গীত আকাশ মুখর করেনি। রাজ্য সরকারের সামান্য কয়েকজন কর্মচারী এই পূজোয় ছুটি নিয়েছেন। তবে স্কুল-কলেজ কিছু কিছু ছুটি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কুমোরটুলির কর্মব্যস্ততা মোটেই কমেনি, বরং বেড়েছে। আর তিন সপ্তাহ পরে সর্বজনীন পূজোমণ্ডপগুলোর প্রতিমা পৌঁছে দিতে হবে।

বুধবার, ৮ আশ্বিন, ১৩৭০ (৩ আশ্বিন, ১৮৮৫ শকাব্দ) WEDNESDAY, SEPTEMBER 25, 1963
• বঙ্গভাষা প্রসার সমিতির সমাবর্তন অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি ডঃ রাধাকৃষ্ণণের ভাষণ: মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ রাসবিহারী এভিনিউস্থিত শরত্ চ্যাটার্জি (ত্রিকোণ) পার্কে শরত্ স্মৃতি সদনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। নিখিল ভারত বঙ্গভাষা প্রসার সমিতির ২৭তম বার্ষিক সমাবর্তন উত্সবে পৌরহিত্য করেন। বাংলার দরদী কথাশিল্পী শরত্চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা নিবেদন করিয়া রাষ্ট্রপতি বলেন, বিদ্রোহী শরত্চন্দ্র তাঁহার বলিষ্ঠ লেখনী পরিচালনা করিয়া সমাজের অনেক পাপ সম্পর্কে সমাজচেতনা আনিতে সমর্থ হইয়াছিলেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, বঙ্কিমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ, শরত্চন্দ্রের মত অগ্রণী সাহিত্যিকগণ সাহিত্যের যে ধারা প্রবাহিত করিয়াছেন, তাঁহাদের উত্তর সাধকেরা সেই ধারা বাঁচাইয়া রাখিবেন।
দমদম বিমানবন্দরে ডঃ রাধাকৃষ্ণণ।
নিখিল ভারত বঙ্গভাষা প্রসার সমিতির সমাবর্তন অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলা ভাষা শুধু বাংলা বা ভারতের নয়, সারা বিশ্বের একটি শ্রেষ্ঠ ভাষা। ইহা বিশ্বের সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পদ বাড়াইয়াছে। শরত্ সমিতি ও শিল্পী সংস্থার উদ্যোগে শরত্চন্দ্রের দুইদিনব্যাপী ৮৮তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে শরত্ স্মৃতি সদনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠান হয়। ‘বন্দে মাতরম্’ সঙ্গীতের পর সভার কাজ শুরু হয়।

বুধবার, ৮ আশ্বিন, ১৩৭০ (৩ আশ্বিন, ১৮৮৫ শকাব্দ) WEDNESDAY, SEPTEMBER 25, 1963
• স্বাভাবিক জীবনযাত্রা সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত: দ্রব্যমূল্য ও করবৃদ্ধির প্রতিবাদে মঙ্গলবার ভোর হইতে বেলা চারটা পর্যন্ত কলিকাতা ও শহরতলীতে সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়। অকম্যুনিস্ট বামপন্থী সংগঠন দ্রব্যমূল্য ও করবৃদ্ধি প্রতিরোধ কমিটি এবং প্রজাসমাজতন্ত্রী দল এই হরতালের আহ্বান জানাইয়াছিল। হরতাল উপলক্ষে কোথাও শান্তিভঙ্গের বড় রকমের ঘটনার সংবাদ পাওয়া যায় নাই। শুধু উচ্ছৃঙ্খল আচরণের অপরাধে পুলিস মধ্য কলিকাতায় দুইজনকে গ্রেপ্তার করে এবং ট্রেন চলাচলে বাধা দেওয়ার অভিযোগে বিভিন্ন স্থান হইতে মোট ৪০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই দিন মহানগরীর পথে ট্রাম, বাস, ট্যাক্সি, রিক্সা বা অন্যান্য যানবাহন চলে নাই। তবে জনজীবনের অত্যাবশ্যক কর্মগুলি এই দিন বন্ধ থাকে নাই।

বুধবার, ৮ আশ্বিন, ১৩৭০ (৩ আশ্বিন, ১৮৮৫ শকাব্দ) WEDNESDAY, SEPTEMBER 25, 1963
• শ্রীশ্রীঁ শারদীয়া মহাপূজার সময় নির্ঘণ্ট, দৃক্ সিদ্ধ পঞ্জিকা মতে:
সপ্তমী
বুধবার, ৮ আশ্বিন, ১৩৭০ (৩ আশ্বিন, ১৮৮৫ শকাব্দ), ২৫ সেপ্টেম্বর। সপ্তমী সন্ধ্যা ঘঃ ৫।১০ মিঃ পর্যন্ত। পূর্বাহ্ন ঘঃ ৯।২৯ মিঃ মধ্যে কিন্তু বারবেলানুরোধে দিবা ঘঃ ৮।৩০ মিঃ মধ্যে শ্রীশ্রীদেবীর নবপত্রিকা প্রবেশ, স্থাপন, সপ্তম্যাদি কল্পারম্ভ ও সপ্তমীবিহিত পূজারম্ভ প্রশস্ত। রাত্রি ঘঃ ১১।৫ মিঃ গতে ১১।৫৩ মিঃ মধ্যে কুলাতারানুসারে শ্রীশ্রীদেবীর অর্ধরাত্রবিহিত পূজা। দেবীর নৌকায় আগমন। ফলং নৌকায়াং শস্যবৃদ্ধিশ্চ।
মহাষ্টমী
বৃহস্পতিবার, ৯ আশ্বিন, ১৩৭০ ৯ (৪ আশ্বিন, ১৮৮৫ শকাব্দ) ২৬ সেপ্টেম্বর। অষ্টমী রাত্রি ঘঃ ৬।৫৮ মিঃ মধ্যে শ্রীশ্রীগেবীর মহাষ্টমীবিহিত পূজা প্রশস্ত। সন্ধ্যা ঘঃ ৬।৩৪ মিঃ গতে সন্ধিপূজারম্ভ। রাত্রি ঘঃ ৬।৫৮ মিঃ গতে ৭।২২ মিঃ মধ্যে বলিদান ও সন্ধিপূজা সমাপন।
মহানবমী
শুক্রবার, ১০ আশ্বিন, ১৩৭০ (৫ আশ্বিন, ১৮৮৫ শকাব্দ) ২৭ সেপ্টেম্বর। নবমী রাত্রি ঘঃ ৮।৪ মিঃ পর্যন্ত। পূর্বাহ্ন ঘঃ ৯।২৯ মিঃ পর্যন্ত, কিন্তু বারবেবানুরোধে দিবা ঘঃ ৮।৩০ মিঃ মধ্যে শ্রীশ্রীদেবীর মহানবমীবিহিত পূজারম্ভ প্রশস্ত।
বিজয়া দশমী
শনিবার, ১১ আশ্বিন, ১৩৭০ (৬ আশ্বিন, ১৮৮৫ শকাব্দ), ২৮ সেপ্টেম্বর। দশমী রাত্রি ঘঃ ৮।২১ মিঃ পর্যন্ত। পূর্বাহ্ন ঘঃ ৯।২৯ মিঃ মধ্যে কিন্তু দ্ব্যাত্মক ও চরলগ্নানুরোধে দিবা ঘঃ ৭।০ মিঃ গতে ৯।৭ মিঃ মধ্যে শ্রীশ্রীদেবীর দশমীবিহিত পূজা সমাপন ও বিসর্জন প্রশস্ততম। বিসর্জনান্তে অপরাজিতাপূজা। বিজয়া দশমীকৃত্য। দেবীর ঘোটকে গমন। ফলং- ছত্রভঙ্গ-স্তুরঙ্গমে।

বৃহস্পতিবার, ৯ আশ্বিন, ১৩৭০ (৪ আশ্বিন, ১৮৮৫ শকাব্দ) THURSDAY, SEPTEMBER 26, 1963
• আনন্দবাজারের টেলেক্স সার্ভিসের উদ্বোধন: লালবাহাদূর শাস্ত্রী আজ অপরাহ্নে এক ঘরোয়া অনুষ্ঠানে আমাদের কলিকাতাস্থিত সদর দপ্তর এ দিল্লির অফিসের মধ্যে টেলেক্স সার্ভিসের উদ্বোধন করেন। আমাদের দিল্লি অফিসে আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদক শ্রীঅশোককুমার সরকার শ্রীশাস্ত্রীজীকে অভ্যর্থনা জানান। শ্রীশাস্ত্রীজীর সহিত তাঁহার পত্নী ও পুত্র শ্রীহরিকৃষ্ণও ছিলেন। টেলেক্স সার্ভিসের ইদ্বোধনকালে শ্রীশাস্ত্রীজী আমাদের সংবাদপত্রগুলির জন্য নিম্নলিখিত বাণী দেন:- “এই সুযোগে আনন্দবাজার পত্রিকার দিল্লি অফিস পরিদর্শন করিতে পারিয়া আমি আনন্দিত। কেবলমাত্র পশ্চিমবহ্গ নয়, সমগ্র দেশে আনন্দবাজার পত্রিকার এক বিশেষ মর্যাদা আছে। আমি এই সংবাদপত্রের শুভ কামনা করি। শ্রী সরকার, তাঁহার সহকর্মীগণ এবং অন্যান্য সমস্ত কর্মীকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাই।”

বৃহস্পতিবার, ৯ আশ্বিন, ১৩৭০ (৪ আশ্বিন, ১৮৮৫ শকাব্দ) THURSDAY, SEPTEMBER 26, 1963
• ‘দেশ’ প্রফুল্ল সরকার কাপ বিজয়ী: বুধবার ভবানীপুর মাঠে কলিকাতা ক্রীড়া সাংবাদিক পরিচালিত সাংবাদিক, সংবাদপত্রসেবী ও প্রচার সংস্থার ফুটবল প্রতিযোগিতা প্রফুল্ল সরকার স্মৃতি কাপের ফাইনালে ‘দেশ’ ১-০ গোলে পূর্ রেল প্রচার বিভাগকে পরাজিত করে। দুই দলে কয়েকজন অতীতের খ্যাতনামা খেলোয়াড় ছিল। তাঁহাদের বিগত দিনের খেলার প্রতিচ্ছবি বুধবারের ক্রীড়াঙ্গনে দেখা যায়।
কর্মকর্তা-সহ বিজয়ী দলের খেলোয়াড়েরা।
খেলাটিতে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও উত্তেজনা বজায় ছিল। প্রথমার্ধের ৭ মিনিটে অজয় খাঁ-এর সেন্টার হইতে মানা ঘোষ একমাত্র গোলটি করেন। বিজয়ী দেলর গোলরক্ষক অভি ঠাকুর, শচীন মুখার্জি, মদন মেটা ও বিজিত দলের এ নাগ, এস ভট্টাচার্য, সরোজ ঘোষ, ও সুবীর রায়ের খেলা উপস্থিত প্রায় ১০ হাজার দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। বিশেষ করিয়া অভি ঠাকুরের নৈপুণ্যের জন্য ‘দেশ’ দল জয়লাভ করিয়াছে বলা চলে।

শুক্রবার, ১০ আশ্বিন, ১৩৭০ (৫ আশ্বিন, ১৮৮৫ শকাব্দ) FRIDAY, SEPTEMBER 27, 1963
• কলিকাতায় সার্কুলার রেলের সম্ভাব্যতা আবার বিচার-বিবেচনা: কলিকাতায় সার্কুলার রেলপথের প্রস্তাবটি কেন্দ্রীয় রেল দপ্তর আরও বিচার করিয়া দেখিতে চান। এ সম্পর্কে বিবেচনার ভার পূর্ব রেলের চীফ ইঞ্জিনীয়ার এবং ডেপুটি চীফ অপারেটিং সুপারিন্টেডেন্টের উপর অর্পণ করা হইয়াছে। বৃহস্পতিবার কলিকাতা পোর্ট কমিশনার্স অফিসে তাঁহারা পশ্চিমবঙ্গ সরকার সি এম পি ও এবং কলিকাতা বন্দরের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হন। প্রকাশ, সেখানে পূর্ব রেলের চীফ ইঞ্জিনীয়ার সার্কুলার রেলের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেন। তবে তাঁহার মতে ঐ রেলপথ কলিকাতা বন্দরের বর্তমান জেটি লেভেল ক্রসিং এবং রাস্তা যতদূর সম্ভব কম ওলটপালট করিয়া করা উচিত। সার্কুলার রেলের সম্ভাব্যতা বিচার করিয়া দেখিবার জন্য সি এম পি ও, কলিকাতা বন্দর এবং রেলের প্রতিনিধি লইয়া এই সভায় একটি কমিটি গঠিত হয়। প্রসঙ্গত স্মরণ করা যায়, বেশ কয়েক বছর আগে সার্কুলার রেলপথ সম্বন্ধে কয়েকটি সমীক্ষা শেষ হইয়াছে এবং রিপোর্টও তৈরী হইয়াছে। কিছু দিন হইল পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই প্রস্তাব লইয়া কেন্দ্রের সহিত পুনরায় আলোচনা শুরু করিয়াছেন। রাজ্যের অর্থমন্ত্রী শ্রীশঙ্করদাস ব্যানার্জি সম্প্রতি দিল্লিতে রেলমন্ত্রী শ্রীদাসাপ্পার সহিত এ ব্যাপারে আলোচনা করেন।

শুক্রবার, ১০ আশ্বিন, ১৩৭০ (৫ আশ্বিন, ১৮৮৫ শকাব্দ) FRIDAY, SEPTEMBER 27, 1963
• মহাষ্টমীতে বেলুড়ে লক্ষ নরনারীর সমাগম: দূর্গাপূজা উপলক্ষে বৃহস্পতিবার প্রায় এক লক্ষ নরনারী বেলুড় মঠে দূর্গা প্রতিমা দর্শনের জন্য সমবেত হন। ‘কুমারী পূজা’ দেখার জন্য প্রত্যুষ হইতে দলে দলে লোক আসিতে থাকে। সকাল সাড়ে সাত ঘটিকার পর শ্রীশ্রী পরমহংসদেবের প্রধান মন্দিরে তিল ধারণের স্থান ছিল না। বেলা সাড়ে আটটার সময় লাল শাড়ী ফুলের গহনায় সাজাইয়া ছোট্ট একটি মেয়েকে প্রধান মন্দির হইতে বাহির করা হইলে মঠ প্রাঙ্গণে অপেক্ষমান শত-সহস্র নারনারীর মধ্যে ছুটাছুটি পড়িয়া যায়। ৫০ হাজার নরনারী মধ্যাহ্নে প্রসাদ গ্রহণ করে। কাসুন্দিয়ার রামকৃষ্ণ বিবেকান্দ আশ্রম ও হাওড়া সমাজের (নদের নিমাই) দূর্গা প্রতিমা দেখিতেও প্রচুর জনসমাগম হয়। দর্শনার্থীদের সুবিধার জন্য মঠ প্রাঙ্গণে বিশেষ আলোর ব্যবস্থা করা হয়। বুধবার ও বৃহস্পতিবার মঠ প্রাঙ্গণে অশোভন আচরণের অভিযোগে পুলিশ কলেজ ছাত্র বলিয়া বর্ণিত ছয়জনকে গ্রেফতার করে। সেন্ট জন এম্বুলেন্সের স্বেচ্ছাসেবকগণ ৭ জনের প্রাথমিক চিকিত্সা করেন।

শুক্রবার, ১০ আশ্বিন, ১৩৭০ (৫ আশ্বিন, ১৮৮৫ শকাব্দ) FRIDAY, SEPTEMBER 27, 1963

—আর চিন্তা নাই।
বৈদ্যুতীকরণের কাজ শেষ।
এখন বৈদ্যুতিক রেল
ইঞ্জিন তৈরী করার কাজ
আমরা সুরু করব।
• শিয়ালদহ বিভাগে যাত্রীদের দুর্ভোগ: শিয়ালদহ বিভাগে বহু-বিঘোষিত বৈদ্যুতিক ট্রেন চালু হইলে যাত্রীদের কতটুকু সুরাহা হইবে? ওয়াকিবহাল মহল মনে করেন, বৈদ্যুতিকরণের পরও ট্রেনের ‘লেট’ যাতায়াত বন্ধ করা যাইবে না। ভিড় কমানো যাইবে না এবং এমনকি সময়ও বাঁচিবে না। বৈদ্যুতিক ট্রেন চলাচলের যে প্রাথমিক টাইম টেবল তৈয়ারি হইতেছে তাহাতে দেখা গিয়াছে যে, বর্তমান বাস্পচালিত ইঞ্জিনে যেটুকু সময় লাগিতেছে, বৈদ্যুতিকরণের পরও সেই একই সময় লাগিবে। অন্তত আপাতত যাত্রীদের সময়ের ব্যাপারে কিছু সুরাহা হইবার আশা নাই। শিয়ালদহ বিভাগে মালগাড়ী চলাচলকে অগ্রাধিকার দেওয়া প্যাসেঞ্জার ট্রেন চলাচলের ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টির অন্যতম কারণ বলিয়া ওয়াকিবহাল মহল মনে করেন। যাত্রীগাড়ীকে দাঁড় করাইয়া রাখিয়া যেভাবে ডিজেল চালিত মালগাড়ীগুলিকে পাস করানো হইতেছে, তাহা রেলওয়ে বোর্ডের নির্দেশের বিরোধী। রেলওয়ে বোর্ডের স্পষ্টই নির্দেশ আছে যে, কোনও অবস্থাতেই লোকাল প্যাসেঞ্জার ট্রেনকে আটক না রাখা হয়। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যাইতে পারে, ডানকুনি হইতে একবার মালগাড়ী ছাড়িলে দমদম ছাড়া কোথাও দাঁড়াইতে পারে না। কারণ অন্য কোনও স্টেশনে সাইডিংয়ের ব্যবস্থা নাই। যদি কোনও মালগাড়ী একবার দমদমে লাইন ক্লিয়ার না পায়, তাহা হইলে পিছনের গাড়ী নিয়মিত দাঁড়াইয়া থাকে।

শনিবার, ১১ আশ্বিন, ১৩৭০ (৬ আশ্বিন, ১৮৮৫ শকাব্দ) SATURDAY, SEPTEMBER 28, 1963
• মহানবমীর পুণ্যতিথিতে বিভিন্ন পূজামণ্ডপে হাজার হাজার নরনারীর ভীড়: শুক্রবার মহানবমী উপলক্ষে বেলুড়মঠ, বাগবাজারের শ্রীরামকৃষ্ণ সারদামঠ এবং অন্যান্য দূর্গাপূজা মণ্ডপে হাজার হাজার নরনারী সমবেত হয়। এইদিন প্রতিকূল আবহাওয়া এই উত্সবে বিঘ্নের সৃষ্টি করিলেও পণ্ড করিতে পারে নাই। বৃষ্টি মাথায় করিয়াও ভক্তের দল পূজামণ্ডপে উপস্থিত হইয়াছে। আর যখন বৃষ্টি থামিয়াছে, তখন তো কথাই নাই। শুধু কলিকাতা নয়, কলিকাতার বাইরে চন্দননগর, চুঁচুড়া, বারাকপুর, ভাটপাড়া প্রভৃতি স্থানেও একই অবস্থা— সারাদিন বৃষ্টি হইয়াছে এ কথা ঠিক, কিন্তু মাঝে মাঝে থামিয়াছেও। সুতরাং পূজামণ্ডপে ছেলেবুড়োর ভীড় কমে নাই। বরং কিছু বাড়িয়াছে। দৃক্ সিদ্দ পঞ্জিকামতে এবার এ সময় সর্বত্র পূজা হয় নাই। সুতরাং যেখানে পূজা হইয়াছে, সেখানেই গত বত্সরের তুলনায় ভীড় বেশী মনে হইয়াছে। ঐ দিন বিকালে ভাটপাড়ায় গিয়া তাহাই মনে হইল। সেখানে বিশিষ্ট সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিত শ্রীশ্রীজীব ন্যায়তীর্থ মহাশয়ের বাড়ীতে পূজা হইতেছে। কিন্তু ভক্তের দলের যেন শেষ নাই। সকলেই প্রতিমা দর্শন এবং পূজার প্রসাদ পাইবার জন্য ব্যস্ত। কলিকাতার বাগবাজারে নন্দলাল বসুর গৃহের পূজা বহু প্রাচীন। অন্যান্য বত্সরের মতো এবারও এই গৃহে পাড়াপ্রতিবেশী সকলেই ভীড় করিয়াছে। আর সব পারিবারিক পূজামণ্ডপেও সারাদিন ধরিয়াই দর্শনার্থীর ভীড় হইয়াছে।


—আপনি নাকি বলেছেন পূজো বলে
মনেই হচ্ছে না, তাই চাঁদা চাইতে এলাম।


শাড়ীটা দেখে লোভ হল। তাই মডেল
হয়ে এখানে ঠায় দাঁড়িয়ে আছি।


শাড়ি ভবন,
পান জর্দা ফ্রি

শনিবার, ১১ আশ্বিন, ১৩৭০ (৬ আশ্বিন, ১৮৮৫ শকাব্দ) SATURDAY, SEPTEMBER 28, 1963
• শুক্রবার প্রবল বর্ষণে কলিকাতার নাগরিক জীবন বিপর্যস্ত: শুক্রবারের বর্ষণ কলিকাতার নাগরিক জীবন অনেকাংশে বিপর্যস্ত করে। রাস্তাঘাটে জল দাঁড়াইয়াছে, অধিকাংশ পথে ট্রাম নাই, বাসগুলি যে-দিক সে-দিক দিয়া ছুটিতেছে, বন্দরে মাল ওঠানামার কাজ ব্যাহত, মোটামুটি ইহাই ছিল শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত কলিকাতার চিত্র। সকালের দিকে মুষলধারায় বৃষ্টি নামায় অফিসযাত্রী ও স্কুলকলেজের ছাত্রছাত্রীদের দুর্ভোগের অন্ত ছিল না। ট্রাম না থাকায় বাসে ওঠা প্রায় অসম্ভব হইয়া পড়ে। বহু লোক সময়মত অফিস যাইতে পারেন নাই, বর্ষণসিক্ত ছাত্রছাত্রীর মুখ চাহিয়া কিছু স্কুল ‘রেনি ডে’র ছুটি দেন। শুক্রবার রাস্তায় যে পরিমাণ জল দাঁড়ায় তাহাতে অনেকেই কলিকাতার জল নিষ্কাশন ব্যবস্থার কার্যকারিতা সম্বন্ধে সংশয় প্রকাশ করেন। ইহার উপর হাইড্রেনের ঢাকনাগুলিও অনেকক্ষেত্রে ঠিকমত খোলা হয় নাই, ফলে দীর্ঘ সময় রাস্তার জল জমিয়া থাকে— এইরূপ অভিযোগ পাওয়া গিয়াছে। এই দিনের বর্ষণে বেলগাছিয়ায় সকাল ৬টা হইতে বিকাল ৪-৩০, টালিগঞ্জে ভোর হইতে বিকাল ৫টা পর্যন্ত এবং অন্যান্য প্রায় সমস্ত রুটেই সকাল সকাল পৌনে নটা হইতে আড়াইটা পর্যন্ত ট্রাম চলাচল বন্ধ থাকে। ৪, ১৪, ৫, ৬, ৭ প্রভৃতি বাসগুলিকে ঘুরাইয়া দেওয়া হয়।

রবিবার, ১২ আশ্বিন, ১৩৭০ SUNDAY, SEPTEMBER 29, 1963
• কলিকাতা হাওড়া নূতন সেতু, সামরিক কর্তৃপক্ষের আপত্তি: গঙ্গার উপর দিয়া কলিকাতা-হাওড়া যোগোযোগের নূতন সেতু নির্মাণে অনেক বাধা কাটাইবার পরে আবার বোধ হয় নয়া উপসর্গ সৃষ্টি হইল। হিসেব নিকেশ সমীক্ষার ছন্দ হইবার পর প্রিন্সেপ ঘাটের কাছে সেতুর জন্য জায়গা ঠিক হইয়া আছে। বিশেষজ্ঞ দল সেতুর নকশা সহ চূড়ান্ত প্রোজেক্ট রিপোর্ট রচনা প্রায় শেষ। অক্টোবরের মধ্যেই উহা জমা দিবার কথা। কিন্তু সামরিক কর্তৃপক্ষ নাকি আপত্তি তুলিয়াছেন। জায়গাটি সামরিক কর্তৃপক্ষ অঞ্চল সংকল্প। একেবারে ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গের লাগোয়া। সেতু হইলেই দিবারাত্র অসামরিক সাধারন লোকের আনাগোনার ভিড় বাড়িয়া যাইবে। সামরিক কর্তৃপক্ষের ইহা পছন্দ নয়। তাঁহাদের ইহাতে বিঘ্ন সৃষ্টির আশঙ্কা। আউটরাম ঘাটের কাছে হইলে তাঁহাদের আপত্তি নাই। সি পি এম ও তাহাতে গররাজি। নূতন-পুরাতন দুইটি সেতুই কাছাকাছি থাকার চেয়ে দূরে দূরে থাকিলেই পরিবহণ সৌকর্ষ বৃদ্ধি পাইবে বলিয়া বিশেষজ্ঞদের অভিমত।

শুক্রবার, ১৭ আশ্বিন, ১৩৭০ FRIDAY, OCTOBER 4, 1963
• সরকারী দুধ: বৃহত্তর কলিকাতার দুধ সরবরাহ পরিকল্পনা গরুর গাড়ির মত ঢিক ঢিক করিয়া আগাইতেছে। দ্বিতীয় পরিকল্পনার শেষ নাগাদ সরকার (বৃহত্তর) কলিকাতাবাসীকে দৈনিক যে পরিমাণ দুধ খাওয়াইবার সঙ্কল্প ঘোষোনা করিয়াছিলেন, তৃতীয় পরিকল্পনার তৃতীয় বছরে তাঁহার অর্ধেকেরও কাছাকাছি পৌঁছাইতে পারেন নাই। সরকারী ঘোষনা ছিল ১৯৬০-৬১ সন নাগাদ, অর্থাৎ দ্বিতীয় পরিকল্পনার চূড়ান্ত বছর অবধি, বৃহত্তর কলিকাতা দুগ্ধ সরবরাহ পরিকল্পনা দৈনিক প্রায় ৬,০০০ মণ করিয়া দুধ দিবে। কিন্তু এখনও, তৃতীয় পরিকল্পনার তৃতীয় বছরেও দৈনিক সরকারী দুগ্ধ সরবরাহের পরিমাণ তাহার কাছাকাছি পৌঁছাইতে পারে নাই- মিল্ক কমিশনারের দেওয়া (সেপ্টেম্বরের) হিসাব দৈনিক সরবরাহ মাত্র ১,৮৭৫ মণ। তবে তাঁহার বক্তব্য, গড় হিসাব ধরিলে পরিমাণটা ২,০০০ মণে পৌঁছায়। এদিকে সরকার তৃতীয় পরিকল্পনায় বৃহত্তর কলিকাতা দুগ্ধ সরবরাহ প্রকল্পে দৈনিক ১০,৮০০ মণ দুধ দেওয়ার লক্ষ্য স্থির করিয়া বসিয়া আছেন! অতীত সাফল্য অসাফল্যের বিচারে ১৯৬৫-৬৬ সনে এই লক্ষ্য পৌঁছান একরকম অসম্ভব বলিয়াই মনে হয়।

শুক্রবার, ১৭ আশ্বিন, ১৩৭০ FRIDAY, OCTOBER 4, 1963
• সকল বিষয়ে কলিকাতার শ্রেষ্ঠত্বের সম্মান: বৃহস্পতিবার আজাদ হিন্দ বাগে ভারতের কলেজ ছাত্রছাত্রীদের সাঁতার প্রতিযোগিতার শেষ দিনে আর একটি বিষয়ে নূতন রেকর্ড হওয়ার সর্বসমেত পাঁচটি নূতন রেকর্ড প্রতিষ্ঠিত হইয়া ১৯৬৩ সালের আন্তঃ বিশ্ববিদ্যালয় সাঁতার প্রতিযোগিতা শেষ হইয়াছে। গতবারের চ্যাম্পিয়ন বোম্বাই বিশ্ববিদ্যালয়কে ৫৮-৫৩ পয়েন্টে পরাজিত করিয়া কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় চ্যাম্পিয়নশিপ লাভ এই বত্সরের বিশ্ববিদ্যালয় সন্তরণের উল্লেখযোগ্য ঘটনা। কেবল সাঁতারেই নহে, ওয়াটারপোলো খেলাতেও কলিকাতা চ্যাম্পিয়নশিপ লাভ করিয়াছে। ইহা ছাড়া স্প্রিং বোর্ড এবং ফিক্সড বোর্ডে ডাইভিংএ ও কলিকাতার ছাত্র কান্তি দত্ত প্রথম স্থান অধিকার করিয়াছেন। ছাত্রীদের সাঁতারে দ্বিতীয় স্থানাধিকারী পুণা বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে ১৪ পয়েন্ট সংগ্রহ করিয়াছে সেখানে প্রথম স্থানাধিকারী কলিকাতার ছাত্রীরা লাভ করিয়াছে ৪৬ পয়েন্ট।

শনিবার, ১৮ আশ্বিন, ১৩৭০ SATURDAY, OCTOBER 5, 1963
• বিক্রেতার ভূমিকায় মুখ্যমন্ত্রী: গান্ধী জয়ন্তী উপলক্ষ্যে মুখ্যমন্ত্রী শ্রীপ্রফুল্লচন্দ্র সেন শুক্রবার সন্ধ্যায় চিত্তরঞ্জন এভিনিউস্থ খাদি গ্রামোদ্যোগ ভবনে প্রায় দুই ঘন্টাকাল খাদি বিক্রয় করেন। এই দিন রাত আটটা পর্যন্ত মোট ২৬ হাজার টাকার মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর হাত দিয়া ১৬ হাজার টাকার খাদি বিক্রয় হয়। সন্ধ্যা ছয়টায় মুখ্যমন্ত্রী গ্রামোদ্যোগ ভবনে আসেন এবং রাত আটটা পর্যন্ত সেখানে থাকেন। নবাব মাসারাত হোসেন এম এল সি মুখ্যমন্ত্রীর নিকট হইতে প্রথম ক্রয় করেন।
শুক্রবার সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী শ্রীপ্রফুল্লচন্দ্র সেন চিত্তরঞ্জন এভিনিউস্থ খাদি গ্রামোদ্যোগ ভবনে খাদি বিক্রয় করিতেছেন। - আনন্দ চিত্র
নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে কংগ্রেস পার্লামেন্টারী পার্টির সেক্রেটারী শ্রী অশোক কৃষ্ণ দত্ত, শ্রীরামকুমার ভুয়ালকা এম-পি, প্রাক্তন উপমন্ত্রী শ্রীমতী মায়া ব্যানার্জি প্রভৃতি শ্রী সেনের নিকট হইতে খাদি কেনেন। মুখ্যমন্ত্রীর আগমনের সংবাদে সন্ধ্যায় উক্ত ভবনে প্রচুর ক্রেতার ভীড় হয়। মুখ্যমন্ত্রীকে প্রায় সবসময়ই রসিদ কাটিতে ব্যস্ত দেখা যায়।

শনিবার, ১৮ আশ্বিন, ১৩৭০ SATURDAY, OCTOBER 5, 1963
• ট্যাক্সি ভাড়া বৃদ্ধি, এবার বাসের পালা: আগামী ১০ই অক্টোবর হইতে কলিকাতার ট্যাক্সি ভাড়া বাড়িতেছে। নয়া ভাড়া হইবে প্রথম কিলোমিটারে ৬০ নয়া পয়সা করিয়া। শুক্রবার এক সরকারী মুখপাত্র এই খবর দিয়া বলেন, নিন্মলিখিত ১০ই হইতে ভাড়ার নূতন হাড় চালু হইলেও ‘মীটার’ গুলিতে প্রয়োজনীয় অদল বদলের জন্য আরও ৫।৬ দিন সময় দেওয়া হইবে। সম্ভবত, ১৬ই অক্টোবর পর্যন্ত। এখন কলিকাতার ট্যাক্সিভাড়ার হাল প্রথম মাইল হইতেই প্রতি মাইল ৫০ নয়া পয়সা। তিনি আরও বলেন যে, নূতন ট্যাক্সির লাইসেন্স দান পরিকল্পনা অনুযায়ী এপর্যন্ত প্রায় ১০০ টি সেকেন্ডহ্যান্ড গাড়ী ট্যাক্সি হিসাবে চালাইবার জন্য অনুমোদন করা হইয়াছে। ঐগুলি পূজার পূর্বেই চালু হইবার সম্ভবনা।

সোমবার, ২০ আশ্বিন, ১৩৭০ (১৫ আশ্বিন, ১৮৮৫ শক) MONDAY, OCTOBER 7, 1963
• রাতের কলিকাতা: “শুভরাত্রি, ভদ্রমহোদয়গণ”, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের সুবিধা বঞ্চিত লাক্সারি টুরিস্ট-বাসে মহিলা গাইডের সুচিক্কণ কন্ঠস্বর মাইক যন্ত্রে ভাসিয়া উঠিল। “রাত্রির কলিকাতা দেখাইবার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের টুরিস্ট দপ্তরের পক্ষ হইতে আপনাদিগকে স্বাগত জানাইতেছি।” অতঃপর ডালহৌসি স্কোয়ারের টুরিস্ট অফিসের সম্মুখ হইতে বাসখানি দক্ষিণ কলিকাতা অভিমুখে যাত্রা করিল। শনিবার রাত্রি প্রায় ৮টা। এবং আমরা ওল্ড কোর্ট হাউস স্ট্রীট, চৌরঙ্গী, পার্ক স্ট্রীট, ক্যামাক স্ট্রীট, লোয়ার সার্কুলার রোড, ল্যান্সডাউন রোড, রাসবিহারী এভিনিউ, রবীন্দ্র সরোবর, শ্যামাপ্রসাদ ও আশুতোষ মুখার্জি রোড, চৌরঙ্গী, স্ট্যান্ড রোড প্রভৃতি ঘুরিয়া গ্র্যাণ্ড হোটেলের সামনে যখন বাস হইতে নামিলাম, রাত্রি তখন ১১টা বাজিয়া গিয়াছে। ইহার মধ্যে দুইবার বাস হইতে নামিয়াছিলাম। একবার লোয়ার সার্কুলার রোডে কলিকাতা তথ্য কেন্দ্রে এবং আর একবার চৌরঙ্গীর ফিরপো হোটেলে। তথ্য কেন্দ্রে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের লোকরঞ্জন শাখা প্রায় এক ঘণ্টা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করিয়াছিলেন। প্রযোজকদের যত্নে এবং শিল্পীদের পরিশ্রমে অনুষ্ঠানটি বিশেষ উপভোগ্য হইয়াছিল। অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রসঙ্গীত, মণিপুরী নৃত্য, উড়িষ্যার মাছ-ধরা নৃত্য, বাংলার চাষ নৃত্য, গুজরাটি গরবা নৃত্য এবং বাউল সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। বাঁশী ও দোতরার দ্বৈত সঙ্গীতও শুনিতে বেশ লাগিয়াছে।

মঙ্গলবার, ২১ আশ্বিন, ১৩৭০ TUESDAY, OCTOBER 8, 1963
• কলিকাতার রাস্তায় ওভার হেড ব্রীজ: ডালহৌসী স্কোয়ার, হ্যারিসান রোড এবং সার্কুলার রোডে ওভারহেড ব্রীজ নির্মাণ করার জন্য কলিকাতা কর্পোরেশনের পক্ষ হইতে রাজ্য সরকারের নিকট একটি পরিকল্পনা পেশ করা হইয়াছে বলিয়া জানা যায়। এই পরিকল্পনাটি কার্যকরী হইলে উল্লিখিত এলাকাসমূহ যানবাহন চলাচলের অনেকটা সুবিধা হইবে বলিয়া আশা করা যায়। কর্পোরেশনের চীফ ইঞ্জিনীয়ার শ্রীসুধাংশু মিত্র এই পরিকল্পনাটির একটি খসড়া রাজ্য চারিজন দপ্তরের সেক্রেটারী শ্রীঅমিতাভ নিয়োগীর নিকট কিছুদিন পূর্বে পেশ করিয়াছেন। শ্রী নিয়োগী চীফ ইঞ্জিনিয়ার শ্রী মিত্রকে নাকি জানাইয়াছেন যে, তিনি এই বিষয়টি সম্পর্কে অনতিবিলম্বে রাজ্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করিবেন। পরিকল্পনাটি কার্যকরী করিতে কত টাকা প্রয়োজন হইবে সে ব্যাপারে বিবেচনা করিয়া দেখা হইতেছে। পরিকল্পনাটিতে এইরূপ অভিমত ব্যক্ত করা হইয়াছে যে, ওভারহেড ব্রীজ নির্মাণ করা হইয়াছে যে, ওভারহেড ব্রীজ নির্মাণ করা হইলে সকল প্রকার যানবাহন নীতের রাস্তা দিয়া চলাচল করিবে এবং পথচারীগণ ঐ সকল এলাকায় ওভারহেড রাস্তার উপর দিয়া করিবেন। প্রতিটি বাস এবং ট্রাম স্টপেজের নিকট একটি করিয়া সিড়ি থাকিবে। তবে ঐ এলাকায় দোকান, বাজার বা অন্য কোন কাজের জন্য পথচারীগণ নীচের রাস্তার ফুটপাতের উপর দিয়া চলাচল করিতে পারিবেন এবং নির্দিষ্ট জায়গা দিয়া রাস্তা পারাপারও চলিবে।

শুক্রবার, ২৭ আশ্বিন, ১৩৭০ FRIDAY, OCTOBER 11, 1963
• কলিকাতার পৌরকর্মীদের অনশন ধর্মঘট: বৃহস্পতিবার বেলা বারটা হইতে কুড়িজন মহিলা সহ কলিকাতা কর্পোরেশনের মোট ৩৭৫ জন কর্মচারী কেন্দ্রীয় পৌরভবন প্রাঙ্গনে অনশন ধর্মঘট সুরু করেন। শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত এ অনশন চলিবে। পূজার আগে ৫০০ বেতন পর্যন্ত সমস্ত শ্রমিক কর্মচারীকে প্রতি বত্সর এক মাসের অতিরিক্ত বেতন প্রদান, শতকরা ২৫ ভাগ মহার্ঘ ভাতা বৃদ্ধি, সকল অস্থায়ী কর্মীকে স্থায়িপদে গ্রহণ, অফিসের বর্ধিত সময় কমাইয়া পুরাতন সময় প্রবর্তন প্রভৃতি দশ দফা দাবি আদায়ের জন্য কর্মচারিগণ ঐ অনশন ধর্মঘট আরম্ভ করেন। এই সিদ্ধান্ত কর্তৃপক্ষকে আগেই জানানো হইয়াছিল। কর্মচারীদের উল্লিখিত দাবি সম্পর্কে স্ট্যান্ডিং ফিনান্স কমিটির জনৈক মুখপাত্র বলেন, কর্মচারীদের শতকরা ২৫ ভাগ মহার্ঘ ভাতা বৃদ্ধির বিষয়টি কমিটি নৈতিকভাবে সমর্থন করিয়াছেন। এবং ইতিমধ্যেই এই বিষয়টি সম্পর্কে রাজ্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হইয়াছে। কারণ ঐ মহার্ঘ ভাতার শতকরা ৮০ ভাগ রাজ্য সরকারের দেওয়ার কথা। রাজ্য সরকার ঐ ৮০ ভাগ দিতে রাজী থাকিলে কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ অবশ্যই বাকী টাকা দিবার ব্যবস্থা করিবেন। কিন্তু সমস্ত শ্রমিক কর্মচারীকে প্রতি বত্সর এক মাসের অতিরিক্ত বেতন প্রদান সম্পর্কে উক্ত মুখপাত্র এই মন্তব্য করেন যে, কর্পোরেশনের বর্তমান আর্থিক অবস্থায় উহা কার্যকারী করা সম্ভবপর নহে। অন্যান্য দাবি সম্পর্কে ফিনান্স কমিটি কর্মচারী প্রতিনিধিদের সহিত মিলিত হইয়া যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে রাজি আছেন বলিয়া তিনি জানান।

রবিবার, ২৬ আশ্বিন, ১৩৭০ (২১ আশ্বিন, ১৮৮৫ শক) SUNDAY, OCTOBER 13, 1963
• চাউল সংকটে মানুষ দিশাহারা: কলিকাতা ও হাওড়া অঞ্চলে পাইকারী বাজারে চাউলের দর আরও কিছু হ্রাস পাইয়াছে। শুক্রবারের তুলনায় শনিবার পাইকারী চাউলের দর মণকরা দেড় হইতে দুই টাকা হ্রাস পায়। কিন্তু দর আরও নামার আশায় পাইকাররা এইদিনও চাউল কেনা বন্ধ রাখেন। সোমবারের মধ্যে দর আরও কয়েকটাকা কমিবে বলিয়া তাঁহারা মনে করেন। পাইকারী বাজারে চাউলের দর হ্রাসের গতি কিন্তু খুচরা বাজারে আদৌ প্রতিফলিত হয় নাই। খুচরা ব্যবসায়ীদের দোকানে দোকানে চাউলের চাউলের পরিমাণ অবশ্য কম ছিল। কিন্তু দর আগের মতই আগুন ছিল— ৪৭ টাকা হইতে ৫০ টাকা। ইতিমধ্যে বিশ্বাসসূত্রে জানা যায় যে, আগামী আমন মরশুমে সম্ভাব্য চড়া দরের প্রতিরোধক ব্যবস্থা বিসাবে পশ্চিমবঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন চাউল মজুত রাখা হইবে কিনা রাজ্য সরকার এখন সেবিষয়ে গভীর চিন্তা করিতেছেন। আরও প্রকাশ, রাজ্য সরকার এবিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গেও আলোচনা সুরু করিয়াছেন।


—আর একটু না পচলে এ বস্তার চাল বেচি কি করে বলুন।

চল্ বাবা, চাল কোথায় আছে দেখিয়ে দে

সোমবার, ২৭ আশ্বিন, ১৩৭০(২২ আশ্বিন, ১৮৮৫ শক) Monday, October 14, 1963
• পূজাবকাশে বাহিরে যাওয়ার আগ্রহ: পূজার মরসুমে ২৩শে অক্টোবরের জন্য দূরপাল্লার বিশেষ ট্রেনগুলিতে অগ্রিম আসন সংগ্রহের চেষ্টায় রবিবার সকালে হাওড়া ও শিয়ালদহ স্টেশনে অসংখ্য লোক গিয়া ভিড় করে। অগ্রিম টিকিট ক্রয় ও আসন রিজার্ভেশনের জন্য রাত্রি ৪টা হইতে লোক গিয়া সারিবদ্ধ-ভাবে দাঁড়াইয়া থাকে। এইবার উভয় স্টেশন হইতেই কয়েকটি পূজা স্পেশাল ছাড়ার ব্যবস্থা করা হইয়াছে। কিন্তু পূজার ভিড় লেখা টিকিট দিতেই যত দেরী হয় বলিয়া তিনি জানান। ২৩শে অক্টোবরের জন্য নির্দিষ্ট বিশেষ ট্রেনগুলি সংরক্ষিত সিটের সমূদয় টিকিট আজ বিক্রয় হইয়া গিয়াছে বলিয়া জানা গিয়াছে। টিকিট বিক্রয় এইবার কঠোর ব্যবস্থা অবলম্বন করা হইয়াছে এবং রেল-কর্মচারীরাও টিকিট ক্রয় সংক্রান্ত ব্যাপারে আলাদা কোন সুযোগ-সুবিধা পায় নাই বলিয়া প্রকাশ।

মঙ্গলবার, ২৮ আশ্বিন, ১৩৭০(২৩ আশ্বিন, ১৮৮৫ শক) Tuesday, October 15, 1963
• কলিকাতায় হল্যাণ্ডের রানী জুলিয়ানা: হল্যাণ্ডের রানী জুলিয়ানা এবং প্রিন্স বানর্হার্ড সোমবার সন্ধ্যায় কলিকাতা পৌঁছিয়াছেন। তাঁহাদের সঙ্গে রাজকুমারী ব্রিটিক্স এবং হল্যাণ্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডাঃ ল্যান্সও আসিয়াছেন। রানী জুলিয়ানা স্পেশাল কে এল এম বিমানে দমদম আসিয়া পৌঁছিলে রাজ্যের পূর্তমন্ত্রী শ্রীখগেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত এবং চীফ সেক্রেটারী শ্রী আর গুপ্ত রাজ্য সরকারের পক্ষ হইতে তাঁহাদের সম্বর্ধনা জানান। ভারতস্থ হল্যাণ্ডের রাষ্ট্রদূত শ্রী জে জি বি ভান ব্লকল্যাণ্ড রানীকে সম্বর্ধনার জন্য পূর্বেই দিল্লি হইতে কলিকাতা পৌঁছেন।
দমদম বিমানবন্দরে হল্যান্ডের রানী।
তিনি এবং কলিকাতার অন্যান্য কূটনৈতিক প্রতিনিধিগণ বিমানঘাটিতে রানীকে সম্বর্ধনা জানান। রানী জুলিয়ানার দলে ১৪ জন সদস্য রহিয়াছেন। তাঁহারা বিমানঘাটি হইতে সরাসরি গ্রেট ইস্টার্ন হোটেলে চলিয়া যান এবং রাত্রিতে তথায় অবস্থান করেন। পূর্ব হইতেই তাঁহাদের গ্রেট ইস্টার্ন হোটেলে থাকা স্থির ছিল। মঙ্গলবার সকালে তাঁহারা ব্যাঙ্কক যাত্রা করিতেছেন।

বুধবার, ২৯ আশ্বিন, ১৩৭০(২৪ আশ্বিন, ১৮৮৫ শক) Wednesday, October 16, 1963
• কলিকাতাকে সাতটি “চাউল অঞ্চলে” বিভাগ, সংশোধিত অর্ডিন্যান্স জারী: অবশেষে সরকার চাউলের উপর যথেচ্ছ মুনাফা নিরোধে তত্পর হইয়া উঠিয়াছেন। রাজ্য সরকার ১৯৬৩ সালের পশ্চিমবঙ্গ খাদ্যশস্য (মুনাফার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ) আদেশের বিধানাবলীর সংশোধন করিয়াছেন। এই আদেশবলে পুলিসের হাতে ব্যাপক ক্ষমতা দেওয়া হইয়াছে। তদনুসারে পুলিস মঙ্গলবার অসাধু চাউল ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সক্রিয় হইয়া উঠেন। এইদিন এনফোর্সমেন্ট পুলিস কলিকাতার বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপকভাবে হানা দেন এবং একবালপুরের একটি গুদাম হইতেই ১৬০ বস্তা চাউল বাজেয়াপ্ত করেন। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীর খাতাপত্রে এই চাউলের হিসাব দেখান হয় নাই। ইহা ছাড়া বেনিয়াপুকুরে ১১৯ বস্তা চাউল সহ একটি লরী আটক করা হয়। কলিকাতার বিভিন্ন স্থান হইতে খাদ্যশস্য নিয়ন্ত্রণ অমান্যের অভিযোগে এইদিন প্রায় ৪০জন চাউল ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তারও করা হয়।

বৃহস্পতিবার, ৩০ আশ্বিন, ১৩৭০(২৫ আশ্বিন, ১৮৮৫ শক) Thursday, October 17, 1963
• কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশুতোষ ট্রফি লাভ: আজ আন্তঃ বিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল প্রতিযোগিতার মূল ফাইনাল খেলায় কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় দল ৪-১ গোলে ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় দলকে সহজেই পরাজিত করিয়া সপ্তমবার ‘স্যার আশুতোষ ট্রফি’ লাভ করিয়াছে। ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলোযাড়দের উপর আধিপত্য বিস্তার করিয়া খেলিয়া কলিকাতা দল বিশ্রাম সময়েই ৩-০ গোলে অগ্রগামী থাকে। দ্বিতীয়ার্ধে ওসমানিয়া দল একটি গোল পরিশোধ করিবার পর কলিকাতা দল পুনরায় আর একটি গোল করে।

শুক্রবার, ৩১ আশ্বিন, ১৩৭০(২৬ আশ্বিন, ১৮৮৫ শক) Friday, October 18, 1963
• বিক্ষোভ মিছিলের গতিরোধ: সস্তা দরে চালের দাবীতে বৃহস্পতিবার কলিকাতায় রাজভবন অভিমুখে তিনটি মিছিল পরিচালিত হয়—কর ও মূল্যবৃদ্ধি প্রতিরোধ কমিটি, সরকারী কমিউনিস্ট পার্টি এবং বন্দীমুক্তি ও গণদাবী আন্দোলন প্রস্তুতি কমিটির (চীনাপন্থী কমিউনিস্টবৃন্দ) উদ্যোগে একে একে মিছিল তিনটি রাজভবনের অদূরে এসপ্ল্যানেড ইস্টে পৌঁছিলে পুলিস উহাদের গতিরোধ করে। প্রতিরোধ কমিটির মিছিলটি সহযোগী চারটি দল ফরওয়ার্ড ব্লক, আরএসপি, আর সিপিআই এবং বলশেভিক পার্টির পতাকা ও ফেস্টুনসহ সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা নাগাদ এসপ্ল্যানেড ইস্টে পৌঁছায়। এবং ঘন্টাখানেক অবস্থানের পর মিছিলকারীরা শান্তিপূর্ণভাবে সেখান হইতে চলিয়া যায়। সরকারী কমিউনিস্ট পার্টি এবং বন্দীমুক্তি কমিটির সদস্যগণ কিন্তু শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত অবস্থানের কর্মসূচীতে সেখানে বসিয়া থাকে। স্থানত্যাগের কারণ সম্পর্কে মূল্যবৃদ্ধি প্রতিরোধ কমিটির এক মুখপাত্র সাংবাদিকদের জানান যে, পুলিস বেষ্টনীর সামনে অবস্থানের কোন কর্মসূচী তাঁহাদের ছিল না। তাহা ছাড়া কমিউনিস্টদের কার্যকলাপ তাঁহারা সমর্থন করেন না।

আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত এই সকল সংবাদের বানান ও ভাষা অপরিবর্তিত।
 
 


 

Content on this page requires a newer version of Adobe Flash Player.

Get Adobe Flash player

 
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.