এক প্রস্থ শেষ হয়ে গেলেও উৎসবের মরসুম এখনও চলছে। শরৎ শেষের বাতাসে হেমন্তের গন্ধ। ঘরের মেয়ে দুগ্গা স্বামীর ঘরে ফিরে যেতেই
ফের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। দুর্গতিনাশিনীর পর এ বার শক্তির আরাধনা। এক দিকে যখন আলোর জোয়ারে ধুয়ে যাবে চরাচর, তখনই
কালী-সাধনায় ব্রতী হবে চরাচর। অমাবস্যার সে পুজো শেষে প্রতিপদ পেরিয়ে দ্বিতীয়া আসতেই ফের আর এক প্রস্থ আনন্দ— ভ্রাতৃ দ্বিতীয়া,
বাঙালির সাধের ভাইফোঁটা। যমের দুয়ারে কাঁটার ব্যবস্থা করতে গিয়ে ভাইদের ট্যাঁকের হাল খারাপ হয়ে পড়লে দিদিরাই আবার উদ্ধারকর্তা।
পুজো, বাজি পোড়ানো, খাওয়াদাওয়া, দেওয়াথোওয়ার বাইরে এই দুই উৎসবের আন্তরিকতার দিকটাই তুলে ধরলেন শহরের এক ঝাঁক তারকা।
চুনী গোস্বামী (কোচ ও ফুটবল খেলোয়াড়)
সকলের প্রিয় দুর্গাপুজো ও এই পুজো নিয়েই আমরা মেতে থাকি। কিন্তু আমার প্রিয় কালীপুজো। ছাত্রাবস্থা থেকে কালীপুজোই ছিল আমার মুখ্য আকর্ষণীয়। শব্দবাজি, নানা রঙের বাতি, তুবড়ি, কালীপটকা, হুল্লোড় সব নিয়ে মেতে থাকা সেই কিশোরবেলা থেকে। কালীপুজো কবে আসবে সেই অপেক্ষায় দিন কাটত। তুবড়ি, নানা ধরনের শব্দবাজি পোড়ানোর কথার সঙ্গে মনে পড়ে যাচ্ছে ছোটবেলার বালিগঞ্জের বাড়ির কথা। কোনও এক সময় চেতলার কাছে থাকতাম। সেখানের কালীপুজোয় তুবড়ি প্রতিযোগিতা হত। কে কাকে টক্কর দেবে তার প্রতিযোগিতা চলত। সাদা ফুলকি কত উঁচুতে উঠবে, কোন পাড়া জিতবে, এসব কোনও দিন ভুলব না। এর আকর্ষণ আজও ছাড়তে পারিনি। আজও কোথাও কোথাও তুবড়ি প্রতিযোগিতা হয়। তবে এখন বাড়ি সাজাই আলো দিয়ে। আমার শ্যালক তুবড়ি তৈরি করে। আমার নাতির উৎসাহের শেষ নেই। আমি পাশে দাঁড়িয়ে মদত দিই। বাড়ির বড় হিসেবে নানা ধরনের আতসবাজি কিনে আনি। এর পরেই থাকে ভাইফোঁটার পর্ব। যদিও আমার কোনও নিজের বোন নেই, কিন্তু আত্মীয়স্বজনের মধ্যে থেকে ঠিক বোন বেরিয়ে পড়ে। তারা আমায় ফোঁটা দেয়।

ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায় (আবৃত্তিশিল্পী)
অনেকগুলো বছর পেরিয়ে এসেছি। স্মরণীয় ঘটনা বলতে তেমন কিছু মনে পড়ছে না। তবে কালীপুজোয় পরিবারের সবাই এক হই। হই হই করে সেলিব্রেশন করি। কোনও অনুষ্ঠানের জন্য বাইরে থাকলেও মন পড়ে থাকে বাড়ির জন্য। মনে পড়ে ছোটবেলার কথা। মামারা আসতেন নানা উপহার নিয়ে। মা রান্না করতেন। বাবা, মাকে সাহায্য করতেন। মা যত্ন করে মামাদের বসিয়ে ফোঁটা দিতেন, মিষ্টির প্লেট তুলে দিতেন হাতে। আমিও ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দিতাম। আজও কালীপুজোর সন্ধেতে সব মামাতো দাদা-ভাইয়েরা আসে। ছোটবড় সকলে মিলে বাজি পোড়াই। আমার তুবড়ি পোড়াতে খুব ভাল লাগে। নানা রঙের আগুনের ফুলকি যখন ছড়িয়ে পড়ে দেখতে খুব ভাল লাগে। মায়ের হাতে ধরিয়ে দিই ফুলঝুরি-রংমশাল। মা-ও খুব আনন্দ পান। কোনও হোটেলে খেতে যাই। পরের দিন আরও একটা আনন্দের দিন। নিজের ভাইকে ফোঁটা দিয়ে কোনও কোনও সময় বৃদ্ধাশ্রমে বা কোনও অনাথ আশ্রমের অনুষ্ঠানে যেতে হয়। সেখানে অনাথ ভাই-দাদারা অপেক্ষায় থাকেন। এই অনুভূতি সত্যিই আলাদা। তবে এখন চারধারে এত ভিড় কোথাও ঠাকুর দেখতে যাওয়া হয় না। বছর সাত-আট আগে একবার বারাসতে কালীঠাকুর দেখতে গিয়েছিলাম। খুব সুন্দর সুন্দর ঠাকুর দেখেছিলাম। এ বছর বাড়িতেই থাকব। তাই বাড়ি জমজমাট হবে দীপাবলির উৎসবে।
যোগেশ দত্ত (মূকাভিনেতা)
এখন তো বয়স বেড়েছে। হই-হুল্লোড় করতে পারি না। বাড়ির ছাদে উঠে কলকাতার ছবিটা দেখতে পাই। নিশুতি রাতেও আকাশ ঝলমল করে বাজির আলোয়। শহরটা যেন অন্য রূপে হাজির হয়। আমার মন বড় উদ্বেল হয়ে ওঠে। ফেলে আসা দিনগুলো বড় মনে পড়ে যায়। কত স্মৃতি, কত কথা। সেই কোন কালে উদ্বাস্তু হয়ে বাবার হাত ধরে এই শহরে পা রেখেছিলাম। জীবনে আনন্দ কাকে বলে জানতাম না। দু’বেলা অন্ন জোটাতে বাবা হিমশিম খাচ্ছেন। এমনই পরিবেশে শহরের প্রথম কালীপুজোয় বাবা কয়েকটা তুবড়ি আর রংমশাল কিনে দিয়েছিলেন। সেই প্রথম অনুভব করেছিলাম, জীবনটা অনেক বড়। দুঃখের মাঝেও অন্য সুখের সন্ধান মেলে। ছোট থেকেই আমার চিন্তাভাবনা একটু অন্য রকমের। ঘোর অমাবস্যার অন্ধকারে আলোর রোশনাই জীবনের অনেক অজানা পথ দেখাতে পারে। অন্ধকারের পরেই তো আলো। আমি সেই আলোর সন্ধান পেতে প্রতি বছর এমন দিনটাই খুঁজে ফিরতাম বারবার।
এখনও খুঁজি। তবে দুঃখ নয়, আনন্দকে ফিরে পেতে। আমার এই ছোট্ট জীবনে সব পেয়েছি মান-সম্মান-অর্থ। তবুও কোথায় যেন ছেলেমানুষ রয়ে গেলাম মনে মনে। মাথায় হিম বসার ভয়ে টুপি পরে ঠিক সন্ধেতে হাজির হয়ে যাই বাড়ির বিশাল ছাদের এক কোণে। দেখতে পাই আর শুনতে পাই পাশাপাশি বাড়ির ছাদ থেকে ভেসে আসা ছোটদের নানা উল্লাস-ধ্বনি। আসলে ওই ছোটদের মধ্যেই যে আমার শৈশব। আমার হারানো অনেক কথা। মনে পড়ে যায় মায়ের কথাও। নারকেলের নাড়ু বানিয়ে মা যে বসে থাকতেন কখন ছুটে এসে খেয়ে যাব। বাবা শালপাতার থালায় ঠিক খিচুড়ি জোগাড় করে রাতে খাইয়ে দিতেন। খেতে খেতে ঘুমিয়েও পড়তাম। কিন্তু কখনওই বলতাম না, তারাবাজির বারুদ ছিটকে বুড়ো আঙুল ঝলসে গেছে। অমন জ্বালাও কখন যেন মিলিয়ে গেল বাবার শরীরের উষ্ণতা পেয়ে।
আমি আছি। আমি থাকব। এমন বিশ্বাসেই যে এই বুড়ো বয়সেও এখনও বাড়ির ছাদে ঘাপটি মেরে বসে থাকি। এমন রাত ভুলব কেমন করে?
চন্দন সেন (নাট্যকার)
আলো ঝলমলে রাত কার না ভাল লাগে। আকাশে বাজির রংধনু। জীবনে অনেক লড়াইয়ের পর মনে হয়েছে এমন দিনের জন্যই বোধহয় সব মানুষ পথ চেয়ে বসে থাকেন। আমি কোনও কালেই বাজি পোড়ানো নিয়ে বাড়াবাড়ি করিনি। কিন্তু এই দিনটি উপলক্ষে যখন প্রত্যেক বাড়ির আঙিনায় আলোর রোশনাই জ্বলে ওঠে তখন মনে হয় আমাদের জীবন থেকে সব দুঃখই এ বার বিদায় নেবে। আমার বহু নাটকে সেই সব চরিত্র জায়গা পেয়েছে যেখানে এমনই দীপাবলির রাতে তাদের নতুন উপলব্ধির একটা বড় ভূমিকা রয়েছে।
রুদ্রনীল ঘোষ (অভিনেতা)
সাধারণত পাড়ার ডাকাবুকো ছেলেরাই কালীপুজো করে থাকে। দুর্গাপুজোর মতো এই পুজোয় বাচ্চাদের কিংবা শান্ত মানুষদের ভিড় থাকে না। আমার কাছে এই পুজোর মূল আকর্ষণ আড্ডা আর সকলে মিলে বাজি পোড়ানোর। মূলত এটি বাজির উৎসব, আলোর উৎসব। দল বেঁধে কালীঠাকুর দেখতে যাওয়া অন্তত আমার জীবনে হয়নি। তুবড়ি-ছুঁচোবাজি তৈরি করতাম। একবার ছুঁচোবাজি ছাড়তে গিয়ে এক বন্ধুর জামার মধ্যে ঢুকে বিপদ ঘটেছিল। বন্ধুটি বেশ আহত হয়েছিল। সেই থেকে আর ওধারে যাই না। এখন এ সব খুব মিস করি। মিস করি শব্দবাজিকেও। যদিও জানি শব্দদূষণ, তবুও চারদিক কাঁপিয়ে শব্দ হবে না, সেটাও যেন ভাবতে পারি না। শব্দবাজি যে পছন্দ করি তা নয়, তবুও ঘরের মধ্যে বসে আছি, হাওয়াই আলো ছাড়তে ছাড়তে আকাশে উঠে ফাটবে না এটা যেন কেমন ফ্যাকাশে ব্যাপার। দু’দিনের মাথায় যখন শব্দগুলো থেমে যায় বুঝতে পারি ঠাকুর বিসর্জন হয়ে গেছে। এখন ব্যস্ত সব বন্ধুরা মিলে এই উৎসবে চুটিয়ে আড্ডা মারি। এর পরে আরও একটা উৎসব আসে যেটি হাতিয়ার হয়ে যায় পরিবারের সঙ্গে মিলে যাওয়ার। চূড়ান্ত ব্যস্ততার মধ্যে এই ভাইফোঁটার জন্য একটা হিসেব কষতে হয়। আমার মামাবাড়িতে দিদির সংখ্যা বেশি। সেখান থেকে সবটাই পাওনা। আবার বাবার বাড়িতে বেশি বোন। তাই মামাবাড়িতে আগে যেতাম কারণ পাওনা থেকে নিজের জন্য কিছু রেখে বেলা এগারোটার পরে বোনেদের কাছে আসতাম। পাওনার কিছু অংশ থেকে ওদের ভাগ দিতাম। কিন্তু পরে দেখা গেল দিদিরা, বোনেরা একে একে শ্বশুরবাড়ি চলে গেল। আমিও ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। এখন খরচা বেড়েছে, রোজগেরে দাদা আমি। তাই এখন একটা হিসেব কষতেই হয়। যতই হোক আমিও তো সেই ভাড়া খেটে খাই।
রবীন মণ্ডল (চিত্রশিল্পী)
তখন ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। বন্ধুরা মিলে ঠিক করলাম কালীপুজো করব। আমার বাড়ি মধ্য হাওড়ায়। নিজেদের বাড়ির পুকুরে মাচা বেঁধে কালীপুজো করেছিলাম। বিসর্জন দিয়ে ঠাকুরের হাতের খাঁড়াটি দেওয়ালে টাঙিয়ে রেখে খেলছিলাম। খেলতে খেলতে আমি খুব অসুস্থ হয়ে পড়ি। সেই থেকে আমি দীর্ঘ চার বছর অসুস্থ হয়েছিলাম। তিন হাত-পায়ে চলাফেরা করতাম। পা কেটে বাদ দিতে হবে এমন অবস্থা হয়েছিল। সেই সময় আমি বাবার মেকানিক্যাল ড্রয়িং দেখে নিজেকে রপ্ত করতে শিখেছি। চার বছরে বড় জ্যেঠিমা ও মায়ের সেবায় সুস্থ হয়ে উঠেছি। আমার মাধ্যমিক দেওয়ার বয়স এসে গেল। বড় পরিবারে জ্যেঠিমার কথাই শেষ কথা। তিনি বললেন আঁকা যখন ভালই শিখেছে ওটাই চালিয়ে যেতে। কিন্তু তারপর থেকে আর কালীপুজো কোনও দিন করিনি। তখন একটা পাড়াতুতো ব্যাপার ছিল। এখন সল্টলেকে থাকি। ফেলে আসা কালীপুজোর মতো সেই আন্তরিকতা আর নেই। এখন আড়ম্বরটাই বেশি। পুজোর জন্য নানা ধরনের বাজি তৈরি করতেন বড়রা। তুবড়িটাই বেশি হত। পাড়ায় তুবড়ি প্রতিযোগিতার জন্য অপেক্ষায় বসে থাকতাম। এই সব পার করে ভাইফোঁটার পর্ব আসত। যৌথ পরিবারে অনেক ভাইবোন। সবাই সার দিয়ে বসতাম। এক একজনের সামনে দশ থেকে বারোটা করে প্লেট। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছু খাওয়াদাওয়া বারণ থাকলেও এই দিনটাতে ছাড় থাকে। পরিবর্তনের হাওয়া চারদিকে ছড়ালেও ভাইফোঁটায় তার প্রভাব এখনও পড়েনি।
অলকানন্দা রায় (নৃত্যশিল্পী)
ছোট থেকে আমি গুন্ডা প্রকৃতির ছিলাম। তাই আজ আমি ‘গুন্ডা’দের ‘মা’ হয়েছি। আমার কাছে কালীপুজো মানে দেদার বাজি পোড়ানো। বাজি পোড়াতে আমি এখনও ভালবাসি। মনে পড়ে বেশ কয়েক বছর আগে তখনও পরিবেশ এতটা দূষিত হয়নি। লক্ষ্মীপুজো থেকে একটু শীত শীত ভাব এসে যেত। মা সোয়েটারের হাতা গুটিয়ে বাজি পোড়ানোর কথা বলতেন। আমি কালীপটকার পাতা বালতির মধ্যে রেখে থালা চাপা দিয়ে ফাঁক দিয়ে আগুন লাগাতাম। সে কি আওয়াজ। থালা ছিটকে যেত, কী মজাই না হত। এখনও রাস্তায় বাজি পোড়াই ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে, ছেলের সঙ্গে। বাজি পোড়ানোর সঙ্গী না পেলে খুব দুঃখ হয়। কোনও কোনও সময় কারওর বাড়িতে কালীপুজো দেখেছি। খুব ভাল লেগেছে। নিঃস্তব্ধ রাতে পুরুতঠাকুরের মন্ত্র, আরতি খুব উপভোগ করেছি। তবে যেখানে বলি হয় আমি যাই না। লেক গার্ডেন্সের যতীন দাস রোডে আমি যেখানে থাকি সেখানে দশমহাবিদ্যার পুজোর অনুভূতি মনে থাকবে। দুর্গাপুজোর মতো হইহই নেই। অথচ বস্ত্রহীন দেবীর কী স্নিগ্ধ চোখের দৃষ্টি! ছোট থেকে কোনও দিন কালীঠাকুরকে দেখে আমি ভয় পাইনি। কখনও প্রতিমাকে ভয়ঙ্করী মনে হয়নি। ফার্ন রোডে যৌথ সংসারে ভাইফোঁটা হত। খুড়তুতো, জ্যেঠতুতো, নিজের দাদা মিলে সে এক জমজমাট উৎসব। লাইন দিয়ে বসত ভাইয়েরা। সব চেয়ে মজা লাগত টাকমাথায় বাবা-কাকু-জ্যেঠুরা লাইন দিয়ে বসতেন আর পাকা চুলের মাথা নিয়ে পিসিরা যখন ফোঁটা দিতেন। এ সব পর্ব মিটে যাওয়ার পরে মা-কাকিমা-জ্যেঠিমারা যেতেন বাপের বাড়িতে। সারা দিন ধরে চলত উৎসব। তবে আমার একমাত্র দাদা ১৯৯৫ সালে মারা যাওয়ায় আমি আর ভাইফোঁটা উৎসব করি না।
ইন্দ্রনীল সেন (গায়ক)
আমি এমনিতেই একটু হুজুগে ছেলে। সারা বছর ব্যস্ত থাকি বলে যখনই সময় পাই বাড়িতে ছেলে মেয়েদের সময় দিই। আর কালীপুজোর রাতে যদি বাড়ি থাকি তবে ওদের চেয়েও বেশি ছেলেমানুষি করে ফেলি। হয়তো গানের জন্য কোনও বছর ওই রাতে বাড়িতে থাকতে পারলাম না। কিন্তু পরের বছর ডবল ছক্কা। বাড়ির ছাদে রংবাহারি আলো জ্বালিয়ে সন্ধে থেকেই শুরু হয়ে যায় ওদের সঙ্গে রকমারি বাজি পোড়ানো। তবে এখন তো অনেক বিধিনিষেধ আছে। তাই বেশি পছন্দ করি রংমশাল আর তুবড়ি জ্বালাতে। আলো ছড়ানো রকেট এখন আমার বেশ পছন্দের।
এই সন্ধেটা আমার জীবনের এক নতুন দিকও বলা যায়। ভাবি একটি করে বসন্ত আমার জীবন থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। তা যাক, কিন্তু এত আনন্দ যেন পরের বছরও ফিরে আসে। আমি ছোটবেলা থেকেই এই দিনটির অপেক্ষায় থাকতাম। মনে আছে কলকাতার বড় বড় বাজার ঘুরে নানা রকম বাজি কিনে বাড়িতে স্টক করতাম। আমার মনে হত, এই রাতটির মতো নির্ভেজাল আনন্দ আর কিছুতে নেই। হুজুগেপনা এখনও কম কিছু যায় না। বাজি পোড়ানোর পরে কখনও-সখনও গাড়ি নিয়ে শহর ঘুরতেও বেরিয়ে পড়ি। অনেকের সঙ্গেই দেখা হয়ে যায়। আড্ডাও চলে।
সুরজিৎ চট্টোপাধ্যায় (বাংলা ব্যান্ড)
দীপাবলি এলেই আমার কলেজ জীবনের অনেক কথাই মনে পড়ে যায়। এক সপ্তাহের পরিশ্রমে তৈরি করতাম শ’খানেক তুবড়ি। রোদে শুকিয়ে টানটান করে রাখতাম। অনেক বন্ধু আমাদের বাড়িতে চলে আসত শুধু মাত্র ওই তুবড়ির লোভে। প্রায় মাঝরাত অবধি চলত বাজি পোড়ানো। প্রতিবেশী বাড়ির সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। তারপর ছাদেই চলত গোল হয়ে বসে ভূরিভোজ। ফেলে আসা সেই নস্টালজিয়া এখন উপলব্ধি করি যখন আমার মেয়ের হাতে ওই তুবড়ি জ্বলে ওঠে। ফেলে আসা দিন তো আর ফিরে আসে না। কিন্তু সেই শূন্যস্থান ভরিয়ে দেয় আমার মেয়ে। এখন তো গান গাইতে বিভিন্ন জায়গায় চলে যেতে হয়। তবে চেষ্টা করি সন্ধের মধ্যে বাড়ি ফিরে আসার। এই সময়ের অভাবেই বাজি মেলায় যাওয়া হয় না। তবে কয়েকজন বাজি বিক্রেতাকে চিনি। ওরা আমার গানের ফ্যান। ওরাই বাড়িতে বাজি পাঠিয়ে দেয়।
এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করি শুধু বাজির জন্য নয়। খাওয়ার জন্যও। আমার শ্বশুরবাড়িতে এই দিন লক্ষ্মীপুজো হয়। ব্যাপক খাওয়া-দাওয়া। এক দিকে বাজি, অন্য দিকে ভুরিভোজ। আহা, এই দিনটি বারবার ফিরে আসুক।
অনুলিখন: বিপ্লবকুমার ঘোষ ও পাপিয়া মিত্র
 

Content on this page requires a newer version of Adobe Flash Player.

Get Adobe Flash player

 
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.