উত্তর কলকাতার এক কালের বাসিন্দা ছিলেন জীতু ঘোষাল। এক দিন রাতে স্বপ্নাদেশ পেলেন, শহরের জগন্নাথ ঘাটের মাটির তলায় চাপা পড়ে আছেন স্বয়ং মা দুর্গা। পর দিনই দেবী মূর্তি তুলে এনে প্রতিষ্ঠা করেন বর্তমানের ১৪ সীতারাম স্ট্রিটের বাড়িতে। নির্মাণ করেন দয়াময়ী দুর্গামন্দির। পরবর্তীকালে এই মন্দির সংস্কার করেন ঘোষাল পরিবারের প্রতিবেশী সুবল দত্ত। তাঁর তৃতীয় প্রজন্মের বংশধর সত্তরোর্ধ সমীর কুমার দত্ত ও তাঁরা পরিবার থাকেন মন্দিরের লাগোয়া বাড়িতে। মন্দির রক্ষণাবেক্ষণ ও নিত্যপুজোর কাজ দেখাশোনাও করেন দত্ত পরিবারই।
লাল মার্বেলের তৈরি মন্দিরের বহিরাংশে একটি ফলকে বাংলার ১২৫৭ সাল খোদাই করা আছে। সেটাই মন্দির নির্মাণের সাল হিসেবে ধরে নেওয়া হয়, জানালেন সমীরবাবু। খুবই সাধারণ দেখতে মন্দিরটি শুধুমাত্র মায়েরই বাসগৃহ নয়। দেবীমূর্তির বাঁ দিকে থাকেন নারায়ণ শিলা। আছে একটি শিবলিঙ্গ। প্রতিবেশীদের দান করা নানা দেবদেবীর ছবিও স্থান পেয়েছে এই মন্দিরে। মূল প্রবেশদ্বারের দু’দিকে সাদা পাথরের ওপরে আঁকা আছে মঙ্গলঘট।
যদিও দুর্গামূর্তি, তবুও মা এখানে একাই বিরাজমান। বাহন সিংহ ঘোটকরূপী আর মহিষাসুরের গায়ের রং সবুজ। পিতলের সিংহাসনে প্রায় আড়াই ফুটের এই দেবীমূর্তি আদতে পাথরের। তাই প্রতি বছর তাঁর অঙ্গরাখ করা হয় তেল রং দিয়ে। প্রায় ২০ বছর ধরে এই মন্দিরে নিত্যপুজোর কাজ করছেন পূর্ব মেদিনীপুরের বাসিন্দা পূর্ণচন্দ্র সিমলাই। প্রতি অমাবস্যায় পুজোর ঘট বদলানো হয়। দুর্গাপুজোর সময় অন্নভোগ বিতরণ করা হয় কেবল মাত্র অষ্টমীর দিন। নমবীতে মাকে দেওয়া হয় মাছ ভোগ।
দয়াময়ী মা খুবই জাগ্রত, বললেন সমীরবাবুর স্ত্রী অনুভাদেবী। মন্দির রক্ষণাবেক্ষণের সময় তাঁকে সরাতে সাত-আটজন লোককেও বেশ বেগ পেতে হয়। অথচ গাট থেকে একাই পিঠে করে তুলে এনেছিলেন জীতু ঘোষাল। মা বলেছিলেন, তিনি ‘হাল্কা’ হয়ে যাবেন, জানালেন অনুভাদেবী।
মন্দির দর্শনের সময়: সকাল ৭টা থেকে ১১টা সন্ধে ৬টা থেকে রাত ৯টা
তথ্য ও ছবি: শেলী মিত্র
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website
may be copied or reproduced without permission.