দিন আসে, দিন যায়, তার ফাঁকেই ইতিহাসে ঢুকে পড়ে তার চলাচলের খবর। পুরনো দিনের শহুরে খবর দিয়ে চেনা যায় এখনকার
অতি পরিচিত শহরের অতীতটাকে, তার নাগরিক জীবনযাপন থেকে খেলাধুলো, সংস্কৃতি বা কূটকচালি থেকে রাজনীতির হাল।
পঞ্চাশ বছর আগের কলকাতা শহরের গতিবিধি চিনতে ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৩ থেকে ২০ মার্চ ১৯৬৩ এক মাসের কিছু বিশেষ খবর।

বৃহস্পতিবার ৮ ফাল্গুন, ১৩৬৯ (২ ফাল্গুন, ১৮৮৪ শক) THURSDAY, FEBRUARY 21,1963
• কলিকাতায় সার্কুলার রেলপথ পুনরায় পরিকল্পনা চালু করার চেষ্টা: কলিকাতা ঘিরিয়া সার্কুলার রেলপথ স্থাপনের যে পরিকল্পনাটি দীর্ঘদিন ধামাচাপা পড়িয়াছিল তাহা পুনরায় চালু করার চেষ্টা হইতেছে। এবার উদ্যোক্তা সিএমপিও। পশ্চিমবঙ্গ যাত্রী সঙ্ঘের সহযোগীতায় মার্চ মাসের গোড়ার দিকেই তাঁহারা ট্রাফিক সমীক্ষা সুরু করিবেন। উত্তর শহরতলীর যাত্রী ও ট্রেন চলাচলের ধরনটি এই সমীক্ষায় পর্যালোচনা করা হইবে। দৈনিক যাত্রীদের কে কোথা হইতে আসিতেছেন, কোথায় যাইবেন, সপ্তাহে কয় দিন আসিতে হয়, কোন স্টেশন হইতে কত লোক উঠেন প্রভৃতি প্রশ্ন সমন্বিত একটি করিয়া কার্ডে যাত্রীদের উত্তর দিবার জন্য অনুরোধ করা হইবে। এই রেলপথ নির্মাণের প্রথম ধাপে রাণাঘাট, বনগাঁ প্রভৃতি স্টেশন হইতে আগত শহরতলীর যাত্রীদের শিয়ালদহের পরিবর্তে কর্মক্ষেত্রের কাছাকাছি লইয়া যাইবার প্রস্তাব আছে। দমদম হইতে ট্রেনগুলিকে চিত্পুর, বাগবাজার, বড়বাজার, ডালহৌসী, ইডেন উদ্যান দিয়া হেস্টিংস পর্যন্ত আনা হইবে। রেল এবং পোর্ট কমিশনার্সের মাল চলাচলের বতর্মান লাইনগুলিকে এজন্য ব্যবহার করা যাইতে পারে। এ সম্পর্কে সিএমপি ও রেলকর্তৃপক্ষের সহিত পত্রালাপ করিতেছেন। আগামী ২৫শে ফেব্রুয়ারী সিএমপিও, পোর্ট কমিশনার্স, রেল ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মধ্যে এ বিষয়ে এক বৈঠক হইবে।
শুক্রবার ৯ ফাল্গুন, ১৩৬৯ (৩ ফাল্গুন, ১৮৮৪ শক) THURSDAY, FEBRUARY 22,1963
• কলিকাতায় ফাইলেরিয়া রোগের প্রাদুর্ভাবের আশঙ্কা: কলিকাতা মহানগরীতে ব্যাপকভাবে ফাইলেরিয়া রোগের প্রাদুর্ভাবের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কিউলেক্স মশা এই রোগের জীবাণু বহন করে। এই মশার বংশবৃদ্ধির মূল কারণ হইতেছে নগরীর পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থায় ক্রমাবনতি, বিভিন্ন পল্লিতে স্তুপীকৃত আবর্জনা, সাকুসলায় খালের জমাট জল ও কচুরীপানা এবং এই ব্যাপারে শহরতলীর পৌরসভাগুলির নিলির্প্ত ঔদাসীন্য। রাজ্য সরকার দাবি করেন, ম্যালেরিয়াবাহী এনোফিলিস মশার অত্যাচার তাঁহারা দমন করিয়াছেন। কিন্তু কিউলেক্স মশার ক্রমবধর্মান উপদ্রবের প্রতি তাঁহাদের নজর পড়িয়াছে কি ? সাধারণত বত্সরের প্রথম তিন মাসে মশার প্রকোপ বাড়ে।
উল্টাডাঙা খালের ধার মশকের বংশবৃদ্ধির আস্তানা হইয়া দাঁড়াইয়াছে।
এবারও তাহার ব্যতিক্রম হয় নাই। বস্তুত শহরের যেসব এলাকায় এ-যাবত্ মশার অনধিকার প্রবেশ ছিল এবার সেইসব এলাকায়ও তাহাদের গুঞ্জন শোনা যাইতেছে। কলিকাতা কর্পোরেশন নাকি কিউলেক্স মশার বংশ বিস্তার ঠেকাইতে অপারগ। শহরতলীর মিউনিসিপ্যালিটিগুলি এ বিষয় উদাসীন। এ ব্যাপারে রাজ্য সরকারেরও কোন উদ্যোগ নাই বলিয়াও অভিযোগ পাওয়া যায়। প্রকাশ, সরকারের এ্যান্টি ম্যালেরিয়া স্কোয়াড কেবলমাত্র এনোফিলিস মশার বিরুদ্ধেই অবিযান চালাইয়া থাকে। সব রকম মশার বিরুদ্ধে অভিযান চালাইবার জন্য কলিকাতা কর্পোরেশনের মশক নিরোধ বিভাগ আছে। কিন্তু অভিযোগ এই, এই বিভাগটি সুপরিচালিত নয়। নগরীর বিভিন্ন মহল্লার মশার বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর জন্য উক্ত বিভাগের কর্মচারীদের মোটরগাড়ি দেওয়ার ব্যবস্থাও নাকি নাই। ফলে কর্মচারীদের যন্ত্রপাতিসহ পায়ে হাটিয়া কাশীপুর, পাইকপাড়া, টালা হইতে টালিগঞ্জ পর্যন্ত কাজ সারিতে হয়।


কলকাতার ট্রাম লোহার লাইন ছাড়াও চলতে পারে কি? বাগবাজারে-মদনমোহনতলায় গেলে
মনে হবে, এরই পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে সেখানে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, লোহার লাইনের প্রধান
অংশ ভেঙ্গে উড়ে গেছে কবে। ট্রামের মূক চাকা ঐ ভাঙ্গা লাইনের গায়ে পাথরের ওপর দিয়েই চলে বেশ
খানিক পথ; সারা ট্রাম সে সময় লাফাতে থাকে ভীষণভাবে, সঙ্গে সঙ্গে সিটের এপর যাত্রীরাও! আনন্দ-চিত্র


শনিবার ১০ ফাল্গুন, ১৩৬৯(১১ ফাল্গুন,১৮৮৪ শক) SUNDAY, FEBRUARY 23, 1963
• কলিকাতা—দমদম সুপার হাইওয়ে জমি দখলের কাজ অগ্রসর: কলিকাতা—দমদম সুপার-হাইওয়ে নিমার্ণের জন্য জমি সরকারী দখলে আনার কাজ অনেকদুর জাগাইয়া গিয়াছে এবং ১৯৬৩ সালের মার্চের মধ্যে কাজ শেষ হইবে বলিয়া রাজ্য সরকার আশা করিতেছেন। ঐ পথ নিমার্ণ পরিকল্পনা রূপায়নের ব্যয় পড়িবে ১ কোটি ৫৫ লক্ষ টাকা। সরকার মনে করেন যে, এইভাবে কাজের অগ্রগতি অব্যহত থাকিলে ১৯৬৪-৬৫ সালের মধ্যে ঐ সড়ক নির্মাণের কাজ শেষ করা যাইবে। সড়কটি ১০০ ফুট চওড়া হইবে এবং ৪টি গলির দ্বারা বিভক্ত থাকিবে। দুইটি গলি দমদম এবং দুইটি রাজভবনের দিকে চলাচলের জন্য খোলা রাখা হইবে। আরও দুইটি গলির (মোট-৬টি) দ্বারা সড়কটি সম্প্রসারণের পরিকল্পনাও রাখা হয়। ভীড়ের চাপ হ্রাসের জন্যই ঐরূপ ব্যবস্থা করিবার কথা স্থির হয়। সড়কটি নিউকাট ক্যানাল ও কৃষ্ণপুর ক্যানালের সংযোগস্থলের নিকট সি-আই-টি (বেলগাছিয়া) রোড হইতে বাহির হইবে।কৃষ্ণপুর ক্যানালের উত্তর তীর বরাবর প্রায় ২ মাইল গিয়া ইহা উত্তর দিকে বাকঁ ঘুরিয়া বাগজোলা খালে পড়িবে। ইহার পর সড়কটি বাগুইআটি পর্যন্ত যাইবে। ফলের বাগান ও চাষের জমি মধ্য দিয়া গিয়া অতঃপর উহা বিমান ঘাটির এক নম্বর গেটের নিকট যশোহর রোডের সঙ্গে মিশিবে।

• চতুর্থ শ্রেণীর কর্মীদের আকস্মিক ধমর্ঘটে হাসপাতালে অচল-অবস্থা:
কলিকাতা ন্যাশানাল মেডিক্যাল কলেজের ৭ জন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মীকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করিবার ঘটনাকে উপলক্ষ্য করিয়া শুক্রবার অকস্মাত্ ঐ হাসপাতালের সকল চতুর্থ শ্রেণীর কমর্চারীই ধমর্ঘট রিয়া বসে। ফলে, ঐ হাসপাতালে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। ধমর্ঘটীদের সংখ্যা ১২৫ জন। এইদিন সন্ধ্যাবেলায় ঐ হাসপাতালে গিয়া দেখি, এমার্জেন্সিতে তখনও ডাক্তার বসিয়া আছেন। কয়েকজন নার্স অসহায়ভাবে ঘোরাঘুরি করিতেছেন। তাঁহাদের একজন জানান,“আজ সকাল ৯টা—১০টা হইতে রোগীদের বেডপ্যান দিবার লোকও পাওয়া যায় নাই। নার্সদিগকেই ঐ কাজ করিতে হইতেছে।” হাসপাতালের মজদুর পঞ্চায়েতের পক্ষ হইতে জানান হয়, “যতদিন পর্যন্ত ঐ ৭ জন কর্মীর পুর্ণবহাল না হইতেছে, ততদিন পর্যন্ত ধমর্ঘট চলিবে।” হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ সেইজন্য গুরুতরভাবে পীড়িত রোগীদিগকে চিত্তরঞ্জন হাসপাতালে(গোবরায়) পাঠাইয়া দিতেছেন এবং যে-সব রোগী বাড়ি যাইতে ইচ্ছুক, তাঁহাদিগকে খালাস করিয়া দিতেছেন। ইনডোরে রোগী ভর্তি বন্ধ করিয়া দেওয়া হইয়াছে।

• স্বর্ণশিল্পীদের দুর্গতি নিয়ে শুক্রবারও রাজ্য বিধানসভায় আলোচনা: কেন্দ্রীয় সরকারের স্বর্ণ নিয়ন্ত্রণ বিধির ফলে বাংলার অগণিত স্বর্ণশিল্পীর দুগর্তির বিষয়টি শুক্রবারও রাজ্য বিধানসভায় উঠে। আলোচনায় অংশগ্রহণকারী প্রায় সকল সদস্যই স্বণর্শিল্পীদের কমর্চ্যূতির পটভূমিকায় পশ্চিমবাংলার বেকার সমস্যা বৃদ্ধির আশঙ্কা প্রকাশ করেন। মূখ্যমন্ত্রী শ্রীপ্রফুল্লচন্দ্র সেন বলেন, স্বর্ণ নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে কেন্দ্রীয় সরকার যে নীতি গ্রহণ করিয়াছেন সেই নীতি রাজ্য সরকার সম্পূর্ণ সমর্থন করেন। তবে সরকার দুর্গত কারিগরদের সমস্যা সমাধানের জন্য তাঁহাদের সংখ্যা নির্ধারণের ব্যবস্থা করিতেছেন। ঐদিন শ্রীশম্ভুচরণ ঘোষ (ফ-ব) জানিতে চান যে, ক্ষতিগ্রস্থ স্বণর্শিল্পীদের সংখ্যা কত এবং তাঁহাদের বিকল্প রুজিরোজগারের জন্য সরকার কি ব্যবস্থা লইতেছেন। শ্রমমন্ত্রী শ্রীবিজয় সিং নাহার ঐ শিল্পীদের সঠিক কোন সংখ্যা সভায় পেশ করিতে পারেন না। তখন একাধিক সদস্য জানিতে চাহেন যে, সংখ্যাই যেখানে জানা যায় নাই সেখানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা কিভাবে লওয়া যাইবে?


—সবটাই বাতিল করব? বইটায় আগাগোড়া নায়িকা
ভারী ভারী সোনার গহনা পরে অভিনয় করেছে।

বাড়ীতেও ঘাটতি বাজেট!
তুমি কি নিজেকে অর্থমন্ত্রী ভাবছো।


রবিবার, ১১ ফাল্গুন, ১৩৬৯(৫ ফাল্গুন, ১৮৮৪ শক), SUNDAY, FEBRUARY 24, 1963
• কলিকাতা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাষ্টের বাজেট, তিনবত্সর ধরিয়া ক্রমাগত ঘাটতি: শনিবার কলিকাতা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাষ্টের যে বাজেট প্রকাশিত হইয়াছে, তাহাতে দেখা যাইতেছে যে, পর পর তিন বত্সর—আগামী(১৯৬৩-৬৪) বত্সরের হিসাব ধরিয়া—ক্রমাগত ঘাটতি হইতেছে। ট্রাষ্টের চেয়ারম্যান বাজেটটি পেশ করিয়া আশঙ্কা প্রকাশ করেন, “সরকারী সাহায্যের পরিমাণ বেশি করিয়া বাড়াইয়া না দিলে, ট্রাষ্টের কাজকর্ম বন্ধ হইয়া যাইবে।” ট্রাষ্ট যে ধরনের উন্নয়নমূলক কাজে হাত দিয়াছে তাহাতে নিজের আয়ে নিজের খরচ বহন করিবার ক্ষমতা তাহার নাই বলিয়াই তিনি মন্তব্য করেন। এই বাজেটটিতে ১৯৬২-৬৩ সালের আয় ব্যয়ের সংশোধিত হিসাব এবং ১৯৬৩-৬৪ সালের আয় ব্যয়ের একটা আন্দাজ দেওয়া হইয়াছে। উহাতে দেখা যাইতেছে যে, রাজস্ব এবং মূলধনী খাতে ঘাটতির পরিমাণ ১৯৬১-৬২ সালে ২১,৯১,৫১২ টাকা ১৯৬২-৬৩ সালে ৪৫,৬১,৮৫২ টাকা এবং ১৯৬৩-৬৪ সালে ৪৬,৭৭,৯৫০ টাকা।

মঙ্গলবার, ১৩ ফাল্গুন, ১৩৬৯, TUESDAY, FEBRUARY 26, 1963
• কলিকাতা সংস্কৃত কলেজে শতাব্দী ভবনের ভিত্তি স্থাপন: ১৩৭ বছরের প্রাচীন সংস্কৃত কলেজের ইতিহাসে সোমবার এক নুতন অধ্যায়ের সূত্রপাত হয়। ঐদিন ঐখানে শতাব্দী ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন সম্প্রসারিত গ্রন্থাগার ভবনের উদ্ভোধন ও সংস্কৃত কলেজিয়েট উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবনির্মিত ভবনের দ্বারোদ্ঘাটন হয়। তিনটি শুভ কাজই সম্পন্ন করেন পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী রায় শ্রীহরেন্দ্রনাথ চৌধুরী। বক্তব্য প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী সংস্কৃত কলেজে নিজস্ব স্নাতকোত্তর ক্লাস খোলা উচিত বলিয়া মন্তব্য করেন। একদা সংস্কৃত কলেজের ছাত্র এবং পরে অধ্যক্ষ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের পূণ্য স্মৃতিতে ঐদিন বিদ্যাসাগর হল-য়ের উদ্ভোধন হয়। বর্তমান পরিচালকমন্ডলীর সভাপতি শ্রীফণিভূষণ চক্রবর্তী হলটির উদ্ভোধন করেন। তিনি অনুষ্ঠানে সভাপতির আসনও গ্রহণ করেন। ইহা ছাড়া ঐদিন এক বিশেষ সমাবর্তনে অধ্যক্ষ ডঃ গৌরীনাথ শাস্ত্রী পন্ডিত যামিনীকান্ত তর্কতীর্থকে ‘তর্ক চূড়ামণি’ এবং ডঃ রাধাগোবিন্দ বসাককে ‘বিদ্যাবাচস্পতি’ উপাধিতে ভূষিত করেন।

তোমার লাল-পাগড়ি
থেকেই এই সব সায়া
সেমিজ হয়ে গেল।
• লাল পাগড়ী—নীল টুপি: লালদীঘি, লালফিতা, লালবাজার সবই রইল- কিন্তু শহর কলকাতার পুলিশদের সেই বহু খ্যাতি-অখ্যাতির ঐতিহ্যবাহী ‘লাল পাগড়ী’ সোমবার থেকে আর রইল না। টকটকে লাল থেকে একেবারে নীল। সোমবার থেকে কলকাতা শহরের এক হাজার ট্রাফিক পুলিশের মাথায় লাল পাগড়ি নেই, তার বদলে নীল রঙের বেরে টুপি। পরণে শাদা শার্ট আর শর্ট। পায়ে সেই বিরাট পট্টীর বদলে শুধু সকস্। লাল পাগড়ির ঐতিহ্য ছিল দেড়শ বছরের। ১৭৮৫ সালে নাকি কলকাতায় লাল পাগড়ির প্রথম পত্তন। ১৯৫৮ সালের এক ছবিতে দেখা যাচ্ছে কলকাতা পুলিশের পোষাকের কিছুটা বিবর্তন ঘটেছে। চোগা-চাপকান পরা ইউরোপীয়ান ইন্সপেক্টর, ভারতীয় সার্জেন্টের মাথায় রাজা রামমোহন রায়ের মত পাগড়ী, পরনে জোব্বা, ঢোলা পায়জামা—আর কনস্টেবল অর্থ্যাত্ চৌকিদারের মাথায় লাল পাগড়ী। অবশ্য সেটি বাঁধার ঢঙ অন্য রকমের। কিছুটা বেধে কিছুটা ঝুলিয়ে দেওয়া। গায়ে ফুলহাতার আটঁশাটঁ পোষাক। শহর কলকাতায় লাল পাগড়ী সেদিন লাল জুজুর মতই আতঙ্ক। ৬১৮৯ জন কনস্টেবল আছেন কলকাতা পুলিশে। সেই সঙ্গে ২৭১৫ জন সিপাই। তার মধ্যে সোমবার থেকে কলকাতার এক হাজার ট্রাফিক পুলিশ নতুন পোষাক পরল। ধীরে ধীরে কলকাতার সমস্ত অধঃস্তন পুলিশ কর্মচারীদের নতুন পোষাকের আওতায় আনা হবে বলে জানা গেছে। সাড়ে আট লক্ষ টাকা দিয়ে এখন পুলিশের পোষাক তৈরি হবে।
শনিবার, ১৭ ফাল্গুন, ১৩৬৯ (১১ ফাল্গুন, ১৮৮৪ শক) SATURDAY, MARCH 2, 1963
• কলিকাতায় শোকের ছায়া: শুক্রবার সকালে ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদের মৃত্যুসংবাদে প্রভাতী সংবাদপত্রে প্রকাশিত হইবার সঙ্গে সঙ্গে কলিকাতার বুকে শোকের ছায়া নামিয়া আসে। শুক্রবারের কলিকাতা ছিল এইদিনের মেঘমেদুর আকাশের মতই বিষণ্ণ। এইদিন সরকারী দপ্তর ও অধিকাংশ বেসরকারী দপ্তর বন্ধ থাকে। সরকারী দপ্তরগুলিতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকে। চিত্রগৃহগুলির ম্যাটিনী শো বন্ধ করিয়া দেওয়া হয়। এইদিন কলিকাতার হাইকোর্ট ও বন্ধ থাকে। শতাব্দীর ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে একদা সংযুক্ত ছিলেন ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ। আইন পরীক্ষায় পাশ করার পর ১৯১১ সালে আইন ব্যবসায়ী হিসাবে প্রথম এখানে কর্মজীবনের সূচনা করিয়াছিলেন। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির স্মৃতিবিজড়িত ইডেন হিন্দু হোষ্টেলেও শোকের ছায়াপাত হয়। এইদিন সকালে হোষ্টেলের ছাত্ররা এক শোকসভার আয়োজন করেন। ১৯০২ সাল হইতে ১৯০৭ সাল দীর্ঘ পাঁচ বছর ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ এই ছাত্রাবাসে কাটাইয়া গিয়াছেন। এই ছাত্রাবাসে এই কলিকাতা শহরেই তাঁহার স্বাদেশিকতার প্রথম দীক্ষা।

• পৌরসভার কোন্দল, মহানগরীর নালা সাফাইয়ের কাজ প্রায় বন্ধ:
কলিকাতা কর্পোরেশনের এক শ্রেণীর কাউন্সিলার এবং প্রশাসন কতৃপক্ষের ক্ষমতার লড়াইয়ের ফলে শুক্রবার হইতে নগরীর তিন চতুর্থাংশ স্থানে ভূগর্ভস্থ পয়ঃপ্রণালীর গ্যালীপীট ও খানাখন্দ সাফাইয়ের কাজ বন্ধ হইয়া যায়। গ্যালীপীট ও খানাখন্দ পরিষ্কারের কাজে নিযুক্ত বহু শ্রমিক ও কিছু লরীকে এইদিনে আবর্জনা পরিষ্কারের কাজে লাগানো হইয়াছে। সেইজন্য এই অবস্থা। এইদিনে আবর্জনা পরিষ্কারের কাজে আর ভাড়া লরী নিয়োগ করা হয় নাই। কমিশনার স্ট্যান্ডিং ওয়ার্কস কমিটির চেয়ারম্যান ও স্ট্যান্ডিং ফিনান্স কমিটির ডেপুটি চেয়ারম্যানের শর্তমতে তিন মাসের জায়গায় মাত্র তেইশ দিনের জন্য লরী ভাড়া করিতে রাজী হন নাই। এ ব্যাপারে শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় মেয়র, কমিশনার, ওয়ার্কস কমিটির চেয়ারম্যানের মধ্যে যেভাবে চিঠিপত্রের আদানপ্রদান হইয়াছে, তাহাতে কর্পোরেশন ভবনের ক্ষমতার লড়াই রাস্তায় নামিতে চলিয়াছে বলিয়া কেহ কেহ এই দিন মন্তব্য করেন।
রবিবার, ১৮ ফাল্গুন, ১৩৬৯ SUNDAY, MARCH 3, 1963
• শহরের পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থায় বিপর্যয়ের আশঙ্কা: শনিবার ও কলিকাতা কর্পোরেশনের ভূগর্ভস্থ পয়ঃপ্রণালীর গ্যালীপীট ও খানাখন্দ সাফাইয়ের লরী ও মজদুরদের দ্বারা আবর্জনা সাফাইয়ের কাজ চলিয়াছে। তবুও কর্পোরেশনের দুই নং কাশীপুর জেলা এবং টালীগঞ্জের ৭৬ ও ৭৭ নং ওয়ার্ডে আবর্জনার স্তুপ জমিতে দেখা যায়। এদিকে সাত-আট দিনের মধ্যে নগরীর পয়ঃপ্রণালীর ব্যবস্থায় বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হইতেছে। শুক্রবার হইতে পয়ঃপ্রণালীর প্রবেশমুখ গ্যালীপিট পরিষ্কারের কাজ শহরের তিন চতুর্থাংশ স্থানে একেবারে বন্ধ হইয়াছে। এই অবস্থা চলিতে থাকিলে শহরবাসী পয়ঃপ্রণালীর পূর্তিগন্ধময় আবর্তে পড়া ভিন্ন উপায় থাকিবে না। অপরদিকে এইদিন কমিশনার শ্রী এস বি রায়ের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন সম্পর্কে এক শ্রণীর কংগ্রেসী কাউন্সিলার মহলে বেস তোড়জোড় দেখা যায়। ওয়াকিবহাল মহলের সংবাদে প্রকাশ, এই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপনের উদ্যেগ আয়োজন চলিতেছে। তবে উহার পূর্বে মজদুরদের চার টাকার মজুরীর ব্যাপারে কমিশনারের ভূমিকা সম্পর্কে একটি নিন্দাসূচক প্রস্তাব উঠিতে পারে।

• বিধান স্মৃতি শিশু হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন: প্রধানমন্ত্রী শ্রী নেহেরু আগামী ১ লা জুলাই কলিকাতায় ডাঃ বিধানচন্দ্র রায় স্মৃতি শিশু হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করিয়াছেন বলিয়া জানা যায়। ডাঃ বিধানচন্দ্র রায় স্মৃতি কমিটির সম্পাদক শ্রীঅতুল্য ঘোষ এম পি এজন্য শ্রীনেহেরুকে আমন্ত্রণ করিয়াছিলেন। তাহার উত্তরে শ্রীঘোষের নিকট শ্রীনেহেরু তাহার সম্মতি জানাইয়াছেন। ডাঃ রায় স্মৃতি কমিটি শনিবার এক বৈঠকে স্থির করেন, নারিকেল ডাঙায় ৬ একর জমির উপর দুই শত শয্যার একটি হাসপাতাল নির্মাণের কাজ হাতে লওয়া হইবে। শ্রীতুষারকান্তি ঘোষ এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। কমিটি এ পর্যন্ত এজন্য ৪৭ লক্ষ টাকার বেশী সংগ্রহ করিয়াছেন। ডাঃ রায়ের একটি জীবনী রচনার জন্য কমিটি ৩০ হাজার টাকা মঞ্জুর করেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার ইতিমধ্যেই এজন্য একটি কমিটি গঠন করিয়াছেন। এই কমিটির সহযোগিতায় জীবনী রচনা করা হইবে।

এই সেই বিখ্যাত চিকিত্সকের বাড়ী—যিনি একাদিক্রমে পনের বত্সর পশ্চিমবঙ্গের শাসন-কণর্ধার
ছিলেন। আজ সেই বাড়ীর দেওয়ালগুলি পোস্টারক্ষেত্রে পরিণত হইয়াছে। ছবিতে অনেক প্রতিষ্ঠানের
বিজ্ঞাপনের মধ্যে জাতীয় প্রতিরক্ষার একটি বিজ্ঞপ্তিকেও উকিঁ মারিতে দেখা যাইতেছে। —আনন্দ-চিত্র


মঙ্গলবার, ২০ ফাল্গুন, ১৩৬৯ (১৪ ফাল্গুন, ১৮৮৪ শক) TUESDAY, MARCH 4, 1963
• লুম্বিনী পার্কের নূতন ব্লক, বিকৃত মস্তিষ্কদের জন্য আরও ১২৫ টি শয্যা: রবিবার বিকালে তিলজলার মানসিক আরোগ্যশালা লুম্বিনী পার্কের একটি নতুন ব্লকের আনুষ্ঠানিকভাবে স্বারোদ্ঘাটন করা হয়। ১২৫ টি শয্যাযুক্ত এই নূতন ব্লকের স্বারোদ্ঘাটন করেন পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য বিভাগের উপমন্ত্রী শ্রী জয়লাল আবেদীন। প্রধানত কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থানূকূল্যে এই নতুন ভবনটি নির্মিত হইয়াছে। এই অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে পৌরোহিত্য করেন বিধান সভার সদস্য শ্রীমতী বিভা মিত্র এবং অতিথির আসন অলঙ্কৃত করেন শ্রীরামকুমার ভুয়ালকা এম এল সি। অধ্যাপক সত্যেন্দ্রনাথ বসুও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। লুম্বিনী পার্কের বর্তমান অবস্থার বিবরণ দিয়া হাসপাতালটির পরিচালক শ্রীতরুনচন্দ্র সিংহ বলেন, প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে এক নিদারুণ আর্থিক সঙ্কটের সন্মুখিন হইয়াছে। বাজারে ঋণের অংক ৪৬ হাজার টাকা। অর্থাভাবে অনেকগুলি গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ণের কাজও দীর্ঘদিন যাবৎ স্থগিত রাখা হইয়াছে। শ্রীভুয়ালকা তাঁর ভাষণে প্রতিষ্ঠানকে সর্বপ্রকার সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেন। শ্রীমতী বিভা মিত্র বলেন, বিকৃতমস্তিষ্ক ব্যক্তিরা একটি সামাজিক সমস্যা। এই সমস্যার সমাধানে লুম্বিনী উদ্যানের প্রচেষ্টা অত্যন্ত গৌরবোজ্জ্বল। উপমন্ত্রী শ্রী আবেদীন বলেন, প্রতিষ্ঠানটির প্রতি যথেষ্ট সরকারী সহিনুভূতি আছে।

• বেলুরমঠে শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ দেবের জন্মোৎসব উদযাপিত: রবিবার বেলুরমঠে বিশেষ ভাব গম্ভীর পরিবেশে বিভিন্ন অনুষ্ঠানসূচীর মাধ্যমে ভগবান শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ দেবের ১২৮ তম জন্মোৎসব পালন করা হয়। সকাল হইতে সণ্ধ্যা পর্যন্ত প্রদশর্নী মন্ডপে স্বামী পূণ্যানন্দের লীলা কথকতা, সিদ্ধশ্বরী কালী কীর্তন সন্মিলনীর শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ সঙ্গীত, আন্দুল কালী কীর্তন ও শ্রী সত্যেশ্বর মুখোপাধ্যায় ও সম্প্রদায়ের ‘বিবেকানন্দ-জীবনলেখা’ প্রভৃতি বিভিন্ন কর্মসূচী অনুসৃত হয়। বেলা ১২ টি হইতে ৪ টা পর্যন্ত মঠাঙ্গনে দাঁড়াইয়া প্রায় ১২ সহস্রাধিক ভক্ত হাতে হাতে প্রসাদ গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে ধর্মার্থীদের অংশ গ্রহণের সুবিধার জন্য সকাল হইতে রাত্রি ৯ টা পর্যন্ত এসপ্ল্যানেড ও বেলুর মঠের মধ্যে কয়েকটি স্টেট বাস চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়। চলাচলের সুবিধার জন্য টেম্পল রোডে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়। মঠ এলাকায় ধর্মার্থীদের মধ্যে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখিবার জন্য মঠাঙ্গনে হাওড়া শহরের উপআরাক্ষাধ্যক্ষ শ্রী সরোজ ভট্টচার্যের নেতৃত্বে একটি পুলিশ ক্যাম্প এবং বিধি-নিষেধ অমান্যকারীদের ঘটনাস্থলেই বিচার করিবার উদ্দেশ্যে প্রথম শ্রেণীর মেজিস্ট্রেট শ্রী এল এন রায়ের পরিচালনায় একটি অস্থায়ী আদালত বসে। পুলিশ বিভিন্ন অভিযোগে ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করে বলিয়া প্রকাশ।
মঙ্গলবার, ২০ ফাল্গুন, ১০৫৯ TUESDAY, MARCH 5, 1983
• স্বর্ণশিল্পীদের ভবিষ্যৎ, বিকল্প কর্মের জন্য চেষ্টার আশ্বাস: সোমবার বঙ্গীয় স্বর্ণশিল্পী সমিতির এক প্রতিনিধি দল বিভানসভা ভবনে মুখ্যমন্ত্রী শ্রী প্রফুল্লচন্দ্র সেনের সহিত সাক্ষাত করেন। ছয়জন স্বর্ণশিল্পী সহ শ্রী দ্বিজেন সেনগুপ্ত এম এল সি, শ্রী হেমন্তকুমার বসু এম এল এ এবং শ্রী নিখিল দাস এম এল এ এই প্রতিনিধি দলে ছিলেন।
এ সম্পর্কে বঙ্গীয় স্বর্ণশিল্পী সমিতির সভাপতি শ্রী দ্বিজেন সেনগুপ্ত জানান যে, মুখ্যমন্ত্রী তাঁহাদের বক্তব্য বিশেষ সহানুভূতির সঙ্গে শুনিয়াছেন এবং নিন্মোক্ত বিষয়গুলি বিবেচনা করিয়া দেখিবার আশ্বাস দিয়াছেনঃ-
সরকারী স্বর্ণনীতির প্রতিবাদে শনিবার বিকালে সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে স্বর্ণব্যবসায়ী ও স্বর্ণশিল্পীদের সভা।
১। বেকার স্বর্ণশিল্পীদের মধ্যে যাঁহারা সুক্ষ কাজ জানেন তাঁহাদের নাম পাইলে অর্ডন্যান্স ফ্যক্টরীতে বা অনুরূপ কাজে নিয়োগের চেষ্টা; ২। অন্যান্য কর্মহীন স্বর্ণশিল্পীদের চাকুরী সম্পর্কে বিভিন্ন শিল্পপতিদের সহিত আলোচনা করিয়া ব্যবস্থা গ্রহণ; ৩। সমবায় সমিতি মারফৎ স্বর্ণশিল্পীরা কোন কাজে হাত দিলে সরকারী আর্থিক সাহায্য মঞ্জুর; ৪। ব্যক্তিগতভাবে কেহ চেষ্টা করিলেও সরকারী সাহায্য; ৫। কেরসিন বা অন্যান্য জিনিসের ব্যবসার জন্য স্বর্ণশিল্পীদের পারমিট ও কোটায় দানের ব্যবস্থা: ৬। ইহি ছাড়া খুর দুর্গত স্বর্ণশিল্পীদের নাম পাইলে ত্যাহাদের জন্য সরকারী আর্থিক সাহায্য মঞ্জুরের চেষ্টা প্রভৃতি; ৭। স্বর্ণশিল্পীদের ছেলেমেয়েদের মধ্যে যাঁহারা আর্থিক কষ্টের জন্য লেখাপড়া চালানোয় অসুবিধায় পড়িয়াছে তাহাদের সাহায্য।
বুধবার, ২১ ফাল্গুন, ১৩৬৯, (১৫ ফাল্গুন, ১৮৮৪ শক) WEDNESDAY, MARCH 6, 1966
• ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা আরম্ভ: মঙ্গলবার কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা সুরু হয়। এইদিন আই এস-সি পরীক্ষার্থীদের ইংরাজী প্রথম পত্র ও দ্বিতীয় পত্রে পরীক্ষা লওয়া হয়। বৃহস্পতিবার আই এ পরীক্ষা আরম্ভ হইবে। এ বত্সর আই এ এবং আই এস-সি পরীক্ষাত্রীদের সকলেই নন কলেজিয়েট বা বহিরাগত। আই এস-সি পরীক্ষাত্রীদের সংখ্যা প্রায় দুই হাজার। আর আই এ পরীক্ষাত্রীদের সংখ্যা ষোল হাজারের মত। এই পরীক্ষা গ্রহণের জন্য কলিকাতায় সাতাশটি এবং মফঃস্বলে বত্রিশটি কেন্দ্রের ব্যবস্থা হইয়াছে। উত্তরবঙ্গের পরীক্ষাত্রীদের সুবিধার জন্য সেখানে তিনটি পরীক্ষা কেন্দ্র খোলা হইয়াছে।
শুক্রবার, ২৩ ফাল্গুন, ১৩৬৯ FRIDAY, MARCH 8, 1963
• মহারাষ্ট্রীয় চিত্রাবলী প্রদর্শনী: একই প্রদর্শনীতে এতগুলো দ্যোতনাময় ছবির সমাহার কলকাতায় এর আগে কদাচিত্ দেখা গেছে। প্রায় প্রতিটি ছবিই অভিনব। প্রতিটি ছবিতেই কিছু-না-কিছু নতুন বক্তব্য। পৃথিবীর কোন দেশের তুলনায়ই মহারাষ্ট্রের আধুনিক চিত্রকলা যে আজ এক পা-ও পিছিয়ে নেই— ক্যাথিড্রল রোডের অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টস ভবনে প্রদর্শিত মহারাষ্ট্রীয় আধুনিক চিত্রাবলী তার অকাট্য প্রমাণ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টস ভবনে মহারাষ্ট্রীয় চিত্রকলার প্রদর্শনীটি উদ্বোধন করেন বিধান পরিষদের অধ্যক্ষ ডঃ সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়। সভার পৌর্যহিত্য করেন প্রখ্যাত শিল্পী শ্রী ও সি গাঙ্গুলী। ৫৬টি চিত্রের এই প্রদর্শনীটি আগামী ১৬ই মার্চ পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য খোলা থাকবে। অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসের সভানেত্রী লেডী রাণু মুখার্জী বলেন যে, একটি সাম্প্রতিক পরিকল্পনা অনুযায়ী স্থির হয়েছে, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের চিত্রশিল্পীদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতর আদানপ্রদানের জন্য মাঝে মাঝে এই ধরনের প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হবে। এই পরিকল্পনারই প্রথম পর্যায়ে মহারাষ্ট্রীয় চিত্রপ্রদর্শনীর কলকাতায় আগমন। কলকাতা থেকেও কিছুদিনের মধ্যেই একটি প্রদর্শনী মহারাষ্ট্রে যাবে। দিল্লি এবং মাদ্রাজের অ্যাকাডেমির সঙ্গেও এ-বিষয়ে পত্রালাপ অনেকদূর অগ্রসর হয়েছে বলে সভায় জানান হয়।
শনিবার, ২৪ ফাল্গুন, ১৩৬৯ SATURDAY, MARCH 9, 1963
• ‘খাটাল হটাও’ অভিযানে প্রথম সাফল্য: ৮ই মার্চ, শুক্রবার বেলা ঠিক ১১টা বাজিবার সঙ্গে সঙ্গে দক্ষিণ কলিকাতার পণ্ডিতিয়া রোড অঞ্চলে ‘খাটাল হটাও’ অভিযান আরম্ভ হয়। অভিযানের প্রথম পর্ব শেষ হইতে সময় লাগে ঠিক পাঁচ মিনিট। প্রথম দিনের অভিযানে কলিকাতার পুলিস বাহিনী সম্পূর্ণরূপে সফল হইয়াছে। বেলা ১১টা বাজিবার কিছু আগে পণ্ডিতিয়া রোডের বৃহত্তম খাটালটির সুবিস্তৃত প্রাঙ্গণে উপস্থিত হইয়া দেখি ইতস্তত বিক্ষিপ্ত আট-দশটি গরু-মহিষ নির্বিকারভাবে জাবর কাটিতেছে। পুলিসের রিপোর্ট অনুযায়ী এই খাটালে ১২২টি গরু-মহিষদের আস্তানা। কিন্তু ১৯৫৯ সনের আইনটি ১৯৬৩ সনে প্রয়োগ করিবার জন্য কলিকাতার পুলিস যে এইবার বদ্ধপরিকর তাহা উপলব্ধি করিয়া কেহ কেহ ইতিপূর্বেই খাটাল হইতে গরু-মহিষ সরাইয়া লইয়াছে। দুই চারিজন আশাবাদী কিন্তু তখনও হাল ছাড়ে নাই। কিন্তু শুক্রবার দিন ঘড়ির কাঁটা যতই বেলা ১১টার দিকে অগ্রসর হইতে থাকে আশাবাদীদের আশাও ততই ক্ষীণ হইতে থাকে। খাটালে ঢুকিবার মুখেই দেখিতে পাই এক গোয়ালিনী তাহার যাবতীয় স্থাবর সম্পত্তি একটি ঠেলাগাড়িতে বোঝাই করিয়া হালতুর পথে রওয়ানা হইবার উদ্যোগ করিতেছে। এই অঞ্চলের বাস্তুহারা গরু-মহিষেরা বর্তমানের মত হালতু অঞ্চলেই আশ্রয়ের সন্ধানে আছে। বালীগঞ্জ রেল-স্টেশনের অপর পারে হালতু কলিকাতা পুলিসের আওতার বাইরে।

— আঁকিনি। যে জামা পরে হোলি খেলেছিলাম, সেটাই ফ্রেমে বাঁধিয়ে রেখেছি।


মঙ্গলবার, ২৭ ফাল্গুন, ১৩৬৯ TUESDAY, MARCH 12, 1963
• জরুরী অবস্থায় সরকারের ব্যয়সংক্ষেপের নমুনা: জরুরী অবস্থায় ব্যয় সংকোচ রীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখাইয়া কলিকাতা মেডিকেল কলেজের সুপারিন্টেন্ডেন্টের অফিস ঘর এবং সেই ঘরের পাশের বাথরুম ‘ঠাণ্ডিকরণের’ কাজ পুনাদমে আগাইয়া চলিয়াছে। ব্যয় বরাদ্দ মোটা কয়েক হাজার টাকা। আর, শুধু শীততাপ নিয়ন্ত্রণ নয়, গোটাঘর এবং বাথরুমটিকে ঢালিয়া সাজাইবার ব্যবস্থা হইয়াছে। পোক্তো মেঝে খুঁড়িয়া তুলিয়া ফেলিয়া মোজাক করা হইতেছে এবং মোজাকের রঙের সঙ্গে দেওয়ালের রঙের ‘‘ম্যাচ’’ করাইবার জন্য হালে ডিসটেম্পার করা দেয়ালগুলিকে ঘষিয়া মাজিয়া সাফ করা হইতেছে। বাথরুমও বাদ যাইবে না। বাথরুমের আবার বাড়তি ঝামেলা আছে, যথা, সিঙ্ক, বেসিন, ইত্যাদি। কারণ, তাহা না হইলে দেওয়াল এবং মেঝের রঙের সঙ্গে ওগুলি খাপ খাইবে না। জরুরী অবস্থার বিধিনিষেধের ব্যাপারে মেডিকেল কলেজের পরিচালকরা গোড়া হইতেই বেশ কিছুটা নির্লিপ্ত। জরুরী অবস্থায় সরকারের বিশেষ অনুরোধ: বিজলী খরচ কমাও। অথচ, মেডিকেল কলেজের লন, বাগিচা, লেনগুলিতে রাতভর দপদপ করিয়া কয়েকশত নিয়ন বাতি জ্বলে! কলেজের সর্বত্র কিন্তু এত আলোর ছড়াছড়ি নাই। প্রয়োজনের জায়গাগুলিতেই আলো কম। ডাক্তারদের অভিযোগ, অনেক সময়, প্রায়ান্ধকারে রোগীদের ইনজেকসন দিতে হয়। নার্সদের অনুযোগ, কয়েকটি ওয়ার্ডে আলোর অভাবে কাজের অসুবিধা হয়।
বুধবার, ২৮ ফাল্গুন, ১৩৬৯ WEDNESDAY, MARCH 13, 1963
• গহনার ব্যবসা ত্যাগ, অলঙ্কারের দোকান লণ্ড্রীতে রূপান্তরিত: কলিকাতার আটটি গহনার দোকানের মালিক মঙ্গলবার তাঁহাদের মজুত সোনা ও গিণি সোনার অলঙ্কার ওজনে প্রায় সাত শত গ্রাম স্বর্ণ নিয়ন্ত্রণে দপ্তরে জমা দিয়াছেন ইঁহাদের অনেকেই আর এই ব্যবসা করিবেন না। সতীশ মুখার্জি রোডের একটি গহনার দোকান এখন লন্ড্রীতে রূপান্তরিত, গড়িয়াহাটে আর এক স্বর্ণ ব্যবসায়ী কাপড়ের কারবার সুরু করিয়াছেন। এ দিকে ও-দিকে এমনি আরও দুই একটি সোনার দোকানের রূপ বদলাইতেছে। কলিকাতার গহনার দোকানগুলি ১৮ই মার্চ পর্যন্ত বন্ধই থাকিবে। মণিকার ও স্বর্ণ-রৌপ্যকার সমিতি সোমবার এক সভায় এই সিদ্ধান্ত করেন। সভায় মোটামুটি একটা মত ছিল যে, শতকরা ৯৫ জন কারিগর ১৪ ক্যারেটের কাজ করিতে পারিবেন না, সুতরাং দোকান খোলার পরও ১৪ ক্যারেট গহনা তৈরী অসম্ভব। ৮ই ফেব্রুয়ারীর মধ্যে লাইসেন্সের জন্য দরখাস্ত করেন নাই এই রূপ অর্ধ শতাধিক মালিককে তাঁহাদের অবিক্রীত সোনা ও গহনা সরকারের নিকট জমা দিবার জন্য স্বর্ণ নিয়ন্ত্রণ দপ্তর (হেয়ার স্ট্রীট) নোটিশ দিয়াছিলেন। মঙ্গলবার ছিল ঐ মজুত জমা দেওয়ার শেষ তারিখ। যাঁহারা সোনা ও গহনা জমা দিয়েছেন সরকার হইতে তাঁহাদের আন্তর্জাতিক মূল্যে (তোলা প্রতি ৬২।।) দাম দেওয়া হইবে। ইহা ছাড়া অনেকে জানাইয়াছেন যে, তাঁহাদের দোকান কোন মজুত সোনা বা গহনা নাই।
শনিবার, ২ চৈত্র, ১৩৬৯ (২৫ ফাল্গুন ১৮৮৪ শকাব্দ) SATURDAY, MARCH 16, 1963
• ট্রাম, বাস ও ট্যাক্সির ভাড়া বৃদ্ধির সম্ভাবনা: কেন্দ্রীয় বাজেট প্রস্তাবের পর পশ্চিমবঙ্গে একযোগে সরকারী ও বেসরকারী বাস, ট্রাম এবং ট্যাক্সির ভাড়া বৃদ্ধির চেষ্টা শুরু হইয়াছে বলিয়া জানা যায়। প্রকাশ, ট্রাম কোম্পানী ইতিমধ্যে বিষয়টি বিচার বিবেচনা করিয়া দেখিতেছেন। আর বেসরকারী বাস ও ট্যাক্সির মালিকগণের পক্ষ হইতে আঞ্চলিক পরিবণ কর্তৃপক্ষের নিকট ভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাব নাকি দেওয়া হইয়াছে। বেসরকারী বাসের মালিকগণ এক হইতে কুড়ি মাইলের মধ্যে প্রতি টিকিটের জন্য তিন নয়া পয়সা এবং একুশ হইতে চল্লিশ মাইলের মধ্যে ছয় নয়া পয়সা বাড়ানর প্রস্তাব দিয়াছেন বলিয়া জানা যায়। কলিকাতা স্টেট ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশনের এক মুখপাত্র জানান, স্টেট বাসের ভাড়া বৃদ্ধি করা হইলে তাহার হার বেসরকারি বাসের তুলনায় কম হইবে। ইহা ছাড়া যে সমস্ত রুটে অসামঞ্জস্য থাকিয়া গিয়াছে, সেগুলিও সংশোধন করা হইতে পারে। তিনি বলেন, ভাড়া বাড়ান হইলেও কলিকাতার বাসের ভাড়া বোম্বাইয়ের তুলনায় কম হইবে।

“দিন তো দাদা এক গাছা দড়ি—যদি
অবশ্য আজই দাম বেড়ে না থাকে।”

মূল্যবৃদ্ধি রোধ করা
হইবেই — সরকারী ঘোষণা


সোমবার, ৪ চৈত্র, ১৩৬৯ (২৭ ফাল্গুন ১৮৮৪ শকাব্দ) MONDAY, MARCH 18, 1963
• স্বর্ণ শিল্পীর জাবনাবসান, আত্মহত্যা বলিয়া সন্দেহ: স্বর্ণশিল্পী শ্রীসুনীলকুমার কর্মকরের জীবনাবসান ঘটিয়াছে। প্রকাশ, বরিবার সকাল ৪টার সময় সুনীলকুমার নাইট্রিক অ্যাসিড পান করিলেতাঁহাকে ৩নং হুজুরীমল লেন হইতে নীলরতন সরকার হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানেই বেলা ১১টা নাগাদ তিনি মারা যান। ইহা একটি আত্মহত্যার ঘটনা বলিয়া সন্দেহ করা হইতেছে। সুনীলকুমার অকৃতদার ছিলেন। বিধবা মা ও একটি কনিষ্ঠ ভাইয়ের ক্ষুদ্র সংসার তাঁহার গোজগারেই চলিত। প্রকাশ, স্বর্ণ নিয়ন্ত্রণ বিধি চালু হওয়ার পর গত কয়েক দিন তাঁহার নাকি আহার জুটে নাই। মৃত্যুকালে তাঁহার বয়স হইয়াছিল ৩০ বত্সর।
মঙ্গলবার, ৫ চৈত্র, ১৩৬৯ (২৮ ফাল্গুন ১৮৮৪ শকাব্দ) TUESDAY, MARCH 19, 1963
• রঙবদল: লালের পর নীল, নীল্র পর সাদা। লাল পাগড়ীর বদলে গাঢ় নীল টুপি কলকাতার ট্রাফিক পুলিশের মাথায় উঠেছিল। রঙ বদলের সেই খবরে টুপি ইতিমধ্যে শুভ্র হয়েছে। আবার তাতে লােলর পরশ লাগবে কি না কে জানে! সোমবার সন্ধ্যায় মধ্য কলকাতার কয়েকটি মোড়ে ট্রাফিক কনস্টেবলকে সাদা বেরে-টুপি মাথায় কাজ করতে দেখা গেল। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, রাত্রে গাঢ় নীল টুপি অন্ধকারে মিশে যাবার অসুবিধা দেখা দিয়েছে। তাই পরীক্ষামূলকবাবে ঐদিন থেকে অপেক্ষাকৃত সঅন্ধকার জায়গায় ট্রাফিক পুলিশের মাথায় নীল টুপির ওপর সাদা কাপড়ের ঢাকনা ও হাতে সাদা দস্তানা চালু করা হয়েছে। যদি এই রঙবদল সন্তোষজনক হয় তাহলে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণকারী পুলিশ কর্মচারীর ক্ষেত্রে এই সাজ-বদল স্থায়ী হবে বলে পুলিশের মুখপাত্র জানান। নতুন সাজের অসুবিধা সরকারের উচ্চতম মহলকেও চিন্তিত করেছে। মুখ্যমন্ত্রী শ্রীপ্রফুল্লচন্দ্র সেন বেরে টুপির গায়ে লাল ফিতার বন্ধনী দেবার প্রস্তাব করেছেন বলে জানা গেল।


আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত এই সকল সংবাদের বানান ও ভাষা অপরিবর্তিত।
 
 


 

Content on this page requires a newer version of Adobe Flash Player.

Get Adobe Flash player

 
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.