তখন প্রাপ্তবয়স্ক হবার পাসপোর্ট যেন পাওয়া হয়েই যেত সরস্বতী পুজোতে। তার পরেই দোল। অত এব সেই পাসপোর্ট হাতে পেয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসা পেয়ে যাওয়া। তাই সব কিছুতেই মায়ের সায়। লালগোলাপ দিয়ে ভালোবাসার কোর্টশিপ চালু হতে না হতেই বিরহিনী যক্ষের মত দোল রঙিন হত নীল খামে পারফিউম মাখানো চিঠির ভাঁজে লিপস্টিকের চুমু পাঠিয়ে সাগরপারে। তখনও হিমেল বসন্তে ই-মেল নেই। দোলের দিনে এক টুকরো চিরকুটের নীরব প্রতীক্ষা। অপ্রত্যাশিত ভালোবাসার সেই নীল খাম পেলাম দোলে। তারপর একে একে গায়েহলুদ, সপ্তপদী আর দোলের গালের লাল রং উঠল সিঁথিতে।
এখন ফাগুনের ফুল ঝরতে না ঝরতেই চকোলেট-ডে, প্রোপোজ ডে, হাগ-ডে, কিসিং-ডে, ভ্যালেন্টাইনস-ডে পেরিয়ে দোল ডে। দোলের আবিরগুঁড়ো অহোরাত্র উড়তেই থাকে ফেসবুক জানলায়, দেওয়ালে, বারান্দায়। দোলের রং গড়িয়ে পড়তে লাগল অরকুট অলিন্দ দিয়ে। সেই রং গিয়ে পড়ল ফেসবুক উঠোনে।
এখন দোলের রঙের ওপরেও ‘টেকশো’! রূপ সচেতন বঙ্গ তনয়ারা ‘স্কিন-ফ্রেন্ডলি’ রং চায়— ইকো-ফ্রেন্ডলি আবির, ভেষজ গুলাল!
দোলের উপহারের তালিকায় আইপড কিম্বা পেনড্রাইভের কাটতি বেশি। দোলের কবিতার খাতা লুকিয়ে থাকত বালিশের নীচে। আর এখন সেই কবিতা ঝরে ঝরে পড়ছে ফেসবুকের বারান্দায়, কার্নিশ থেকে সর্বত্র। তবে দোল আছে দোলেতেই। একটু অন্য আঙ্গিকে। তখন ছিল তরতাজা সত্যি গোলাপ, এখন তা ডিজিটাল। ছিল বসন্ত কেবিনে দুজনে মুখোমুখি দুটো ডিমের ডেভিল বা ফাউল কাটলেট। প্রেম এখন বার্গার-মকটেলে আছড়ে পড়ছে অবিরত। দোলের দিনেও সেই ‘হ্যাং আউট’— শুধু বসন্ত কেবিন এখন নীল ফেসবুকের কফিহাউস কিম্বা ডিজিটাল ঠান্ডাই শরবতি মেসেজ আদানপ্রদানে।
আমরা দোলবাজি করি অন্য ভাবে। কিছুটা ফেসবুকি দলবাজিতে অথবা ব্লগবাজির ঠেকে। তবে দোলের সেই আনন্দ আর খুঁজে পাই না। ফুটকড়াই মুড়কি-মঠ হারিয়ে গেছে। হারিয়েছে দোলের আটপৌরে আভিজাত্য। দোলবাজি এখন স্মার্ট হয়েছে। দোলা লাগছে ফেসবুক-বনে কিন্তু দোলের রং লাগে না মনে। দোলের ব্র্যান্ড ডাইলুশান হল!
মকটেল থেকে চকোলেট, কফি থেকে কেক, সোনা থেকে জাঙ্ক— সর্বত্র হিয়ার মাঝে লুকোনো ‘হ্যাপি হোলি’— হোলি ধামাকা, হোলি বাম্পার, হোলি হ্যায়।
শপিং মল, মেট্রোরেল, সুইমিং পুল, তন্ত্রে-মন্ত্রে হোলি হ্যায়।
সেই কবে কবি বলেছিলেন ‘ফুল ফুটুক না ফুটুক আজ বসন্ত’। তারা পলাশ চিনুক না চিনুক, দোলের দিন আগতপ্রায়। দোলের রং লাগতে না লাগতেই ফেসবুকে স্টেটাস আপডেট করতে হবে...
|