কালজয়ী তিলোত্তমা... |
তুষারকান্তি রায়
(ফিনিক্স, অ্যারিজোনা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) |
|
|
কি আনন্দেই দাঁড়িয়ে আছ
পূতগঙ্গা-তীরে
বুঝি হাজার বছর ধরে
হাত-মিলালে সুতানুটি আর গোবিন্দপুর সাথে
ভবিষ্যতে নয়ন রাখি
হাসিটি অধরে
যে হাসি ছড়াল আজি ধরা-বক্ষ জুড়ে।
|
সুদূর অতীত থেকে
দাঁড়িয়ে আছ কালীমায়ের স্নেহাশিস মেখে
যে মায়ের আশিস মাগি কত যুগ ধরে
অগুনতি মানুষ আসে মায়ের মন্দিরে
দূর দুরান্ত থেকে, তীর্থযাত্রী দল
অশান্ত হয়েছে যারা পান করি সংসার হলাহল
শান্তি পেয়ে পুজা শেষে
ফিরে যায় আপনার ঘরে। |
|
তোমার শিক্ষার নাহি পার
দেশ-কাল-পাত্র ভেদে ইহার প্রসার
যে শিক্ষায় শিক্ষিত তব সন্তানের দল
সর্ব ধর্মে শ্রদ্ধা দানে হয়েছে সফল
রচিয়া তোমার বুকে এক আদর্শ সমাজ
যার সমতুল্য আমি দেখিনা যে আজ
যুগ যুগ ধরি কত জ্ঞানী গুণী জন
করিয়া তব পদে শ্রদ্ধা নিবেদন
বাহিরিল প্রচারিতে
আত্মজ্ঞান লাভই হলো এ যুগের শ্রেষ্ঠ সাধন। |
|
এই তো সে দিন এলেন মাদার টেরিজা
জগতের দুঃস্থ জনে জোগাতে ভরসা
নিজেরে উত্সর্গ করি দুঃস্থের সেবায়
অন্যেরে দেখালেন পথ ঘুচাতে দুর্দশা।
যেই আত্মদান মাঝে কত জনে পেলেন পূর্ণতা
ভাবি তাই, কালের নগরী তুমি
যুগে যুগে কত বিদেশি এসেছে
তব সহজ সরলতারে মানি। |
কালে কালে এলো শক, হূন, মুঘল
ফ্রেঞ্চ, ইংরেজ আরও কত দল
পুরিল নিজের ধন ভান্ডার,
হল তব ধনে ধনী।
তাদের অনেকে ফিরিল স্বদেশে
অনেকে আবার মিশে গেল শেষে,
ক্রমে নতুন প্রজন্ম গড়িয়া উঠিল
তোমারি কোলটি ঘেঁষে। |
কত শতাব্দী ব্যাপী শুনি প্রসারিলে বিশিষ্ট জ্ঞান
আপনাতে আপনি,
বিশাল সেই বিজ্ঞান ভান্ডার
তোমারে উজ্জ্বল করি।
বিকশিছে জগত মাঝার
দৃষ্টি করি আকর্ষণ করে নিমন্ত্রণ
আদান-প্রদান দিয়ে
তোমা মাঝে ঘটাতে মিলন। |
|
|
বছর ঘিরে নানান উত্সবে
তোমার আনন্দমেলা বসে যবে
জাতি-ধর্মের উর্দ্ধে তখন
তোমার সাধের ভেলাটি ভাসে।
বারো মাসে তেরো পার্বণে
শঙ্খধ্বনি ভরায় গগনে
তোমার সহাজানন্দ ঠিকরে পড়ে
এতো টুকু অবকাশে। |
তব সর্বজনীন ধ্বজাখানি
উভয় হাতে বহি
এগিয়ে চলেছ নীতি
সব সংকট সহি।
আপন স্বভাব উর্দ্ধে রাখি
তীর্থযাত্রার পুরোভাগে থাকি,
হয়েছ গোপথের দিশারী
এই তো সেদিন তীর্থভ্রমণ পথে। |
দেখালে শ্রীরামকৃষ্ণ,
বিবেকানন্দ আর শ্রীশ্রীমাকে
এ ভাবে কালে কালে কত গুণী জনে
করিলে আসন দান।
গাঁথি সেই মালা শোভিয়া অঙ্গে
সদা রাখো তারে অম্লান
আপন স্বভাবে সাধিছ এ ভাবে
জগতের কল্যাণ। |
|
|
ওগো কালজয়ী কলকাতা মোর,
সবার তিলোত্তমা,
লহ মোর সাষ্টাঙ্গ প্রণাম
তব ক্রোড়ে জন্ম লভিয়া ওগো,
পূর্ণ হয়েছে মনস্কাম।
|
নিউ ইয়র্ক মেডিক্যাল সেন্টারের বায়োকেমিস্ট্রির অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক। বর্তমানে বাস অ্যারিজোনার ফিনিক্সে। ইংরেজি ও বাংলা ভাষায় কবিতা লেখা প্রায় নেশার মতো। নানা পত্রিকা ও ওয়েবসাইটে সেই কবিতা প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রকাশিত হয়েছে বইও। |
|
—নিজস্ব চিত্র |