|
খৃষ্টের জন্মদিন বড়দিন নাম।
বহুমুখে পরিপূর্ণ কলিকাতা ধাম।
গুপ্ত কবির লেখা বড়দিনের কলকাতা আজ আর নেই, তবু কলকাতার বড়দিন আজও আছে। ‘রণবেশী মিলিটারি যত সব গোরা’ এবং সেই সঙ্গে “আন্দ্রুস, পিন্দ্রুস ডিকোপ্টা ও ‘ডিরোজাদের’ দাপট কলকাতা থেকে অস্তমিত হলেও, বড়দিনের জেল্লা ও জৌলুষ এখনও যে কমেনি তা সোমবারের কলকাতা দেখলেই বোঝা যায়।
কলকাতার বড়দিনের সাধারণত দুটি দিকএকটি ধর্মীয় দিক অপরটি প্রমোদের। একটি রূপ দেখতে হলে আসতে হবে চৌরঙ্গী পাড়ায়, পার্ক স্ট্রীট থেকে ফ্রি স্কুল স্ট্রীট হয়ে ধর্মতলায়। অন্যরূপ আলিপুরের চিড়িয়াখানায়, ইডেনে আর বোটানিকসে। অথবা যশোর রোড বি টি রোড আর ডায়মন্ড হারবার রোড ধরে শহরতলীর দিকে।
বড়দিনের সকালের সেন্ট পলস ক্যাথিড্রেল বুঝি কলকাতার ওয়েস্ট-মিনিস্টার অ্যাবে, আলো ঝলমল চৌরঙ্গী যেন রাতারাতি পিকাডলি সার্কাস, পার্ক স্ট্রীটের পাঁকের মনে ‘কন্টিনেগ্রেটর’ রঙ।
দোকানে দোকানে খ্রীষ্টমাস ট্রী, চৌরঙ্গী পাড়ার ঘরে ঘরে অর্গালের সঙ্গে ক্যারলের সুর, আর হোটেলে হোটেলে মদিরাঘন উৎসব রাতিগালা নাইট।
বড়দিনের রাতে চৌরঙ্গীর ফুটপাথে কত পদাতিক ছিল, পথে ছিল তেমনই মোটরের অরণ্য। সন্ধ্যা থেকে বার বার ট্র্যাফিক জ্যাম। নিউ মার্কেটে আলোকের শ্রীঝরণা ধারা।
প্রমোদ ভ্রমণের ভিড় আলিপুর পশুশালায় আর শিবপুর বোটানিক্যাল গার্ডেনে। টিকিট কেটে যাঁরা চিড়িয়াখানায় ঢুকেছেন, তাঁদের সংখ্যা ২৮৪৭৫ জন। ছ’বছরের কম ছেলেমেয়েদের এই হিসাব ধরা হয়নি। গত বছরে এইদিনে দর্শনার্থী সংখ্যা ছিল ২৯১৭৭।
ভিড় সামলাবার জন্য ৮টি নতুন ফটক করতে হয়েছিল চিড়িয়াখানায়। নিয়োগ করতে হয়েছিল অর্ধশতাধিক অতিরিক্ত কর্মচারী। প্রায় ২ শতের মত ছেলে-মেয়ে হারিয়ে গিয়েছিল। বোটানিক্যাল গার্ডেনে এসেছিলেন প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। উচ্ছৃঙ্খল আচরণের জন্য গ্রেফতারের সংখ্যা ২০।
পৌষ সবাইকে বাইরে ডাক দিয়েছিল। বড়দিনে তাই কলকাতার পথে পথে মানুষ। স্বামী-স্ত্রী ছেলেমেয়ে আর কীটব্যাগে খাবার নিয়ে বার হয়েছেন অনেকেই। লরী বোঝাই হয়ে হৈ-চৈ করতে করতে চড়ুইভাতিতে বেরিয়েছে অনেক দল। চিড়িয়াখানার ভিড় দুপুরবেলা জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছিল। শিশু জলহস্তীকে বোতলে করে দুধ খাওয়ান দেখতে ভিড় হয়েছিল বহু কৌতুহলী জনতার।
কলকাতার বড়দিনের আর একটি বড় খবর আছে। দক্ষিণ আমেরিকার পার্বত্য প্রদেশের যে পুমাটি কিছুদিন ধরে আলিপুরের অতিথি, বড়দিনের সূর্যস্নাত প্রভাতে সে দুটি শিশুর জন্ম দিয়েছে। বড়দিনের কলকাতার এই নতুন আগন্তুকটি এখন সুস্থ ও সবল।
|
|