|
|
|
|
|
|
পরিবর্তনের আলোয় ‘প্রিয়তমা’
প্রতীক চৌধুরি
গায়ক |
|
|
গত কয়েক মাস ধরে সারা রাজ্য-সহ কলকাতায় যে পরিবর্তনের কথা বলা হচ্ছে সে তো কেবলমাত্র রাজনৈতিক। কলকাতা তো বদলায় প্রতি দিন, প্রতি ক্ষণে— ভবিষ্যতের দিকে, আলোর দিকে, ভালর দিকে।
শ্যামবাজারের ভবনাথ সেন স্ট্রিটের অলিগলিতে কেটেছে আমার শৈশব ও স্কুল জীবন, সেই ১৯৬৭ থেকে। বাড়ির সামনে ছিল একটা শীতলা মন্দির। পাড়া দাপিয়ে কত রকম খেলা হত সারা বছর ধরে— বর্ষায় ফুটবল, শীতে ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন, ভলিবল। মাঠ থাকলেও, পাড়ার রাস্তা জুড়ে খেলার মজা এই শহর ছাড়া অন্য কোথাও আছে বলে তো আমার জানা নেই। আর পাশের পাড়ার সঙ্গে ‘টুর্নামেন্ট’ হলে তো কথাই নেই। প্রায় বিশ্বযুদ্ধের রূপ নিত সে সব দিনগুলি। পাশের পাড়া বলতে পাল স্ট্রিট। আমার বন্ধুরা বয়সে খানিক বড়ই ছিল, কিন্তু তাতে খেলায় কোনও অসুবিধা হয়নি কোনওদিন।
দুর্গাপুজোর দিনগুলো যে কোথা দিয়ে শেষ হয়ে যেত! ঠাকুর দেখার আনন্দের সঙ্গে থাকত ‘ভলেন্টিয়ার’ হওয়ার দায়িত্ব। নতুন জামায় ‘ব্যাজ’ লাগিয়ে দর্শনার্থীদের মহিলা-পুরুষ লাইন ঠিকঠাক বজায় রাখার ‘গুরুভার’ থাকত ছোটদের উপর। আর তাতে পাওনা হত ‘ফ্রি’ আলুর দম–পাউরুটি। পুজোর সময় আমার শহরের যে রূপ ধরা পড়ে তা পৃথিবীর আর কোনও শহরের কোনও উত্সবেই বোধহয় দেখা যায় না। মাতৃ আরাধনায় ভেদাভেদ ভুলে পুজোর আনন্দে গা ভাসায় এ শহরের সকল মানুষ।
আসলে
কলকাতা শহরের সৌন্দর্য তার মানবিকতায়, উষ্ণতায়, আপন করে নেওয়ায়।
তখনও কলকাতা শহরে টেলিভিশনের প্রকোপ সে ভাবে হয়নি। বাড়িতে যখন টিভি এল, পাড়ায় তখন আমরা তৃতীয় স্থানে। সন্ধে হলেই প্রতিবেশীদের ভিড় জমত বাড়িতে। ছোটদের জায়গা মাটিতে, একদম প্রথম সারিতে। |
|
কলেজের দিনগুলি যাতায়াত করতাম বেলেঘাটার পাঁচতলা ফ্ল্যাট থেকে। তত দিনে সঙ্গীতজগতেও হাতেখড়ি হয়ে গেছে। তবে সুযোগ পেলেই চলে যেতাম পুরনো পাড়ায়। বাগবাজারে মদনের তেলেভাজা, দ্বারিকের কচুরি টেনে নিয়ে যায় বোধহয় গোটা শহরটাকেই। সঙ্গে আমাকেও! মোদকের কচুরি খেয়ে অষ্টমীর উপোস ভাঙার প্রথা তো আজও প্রচলিত। আর সাধুনাথের দই তো মুখে লেগে আছে!
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কলকাতার যে উন্নতি হয়েছে তার ফলে হারিয়ে গেছে পুরনো অনেক কিছুই। বাঁধা সময়ের সিনেমা হল দর্পণা, রাধা, মিত্রার জায়গা নিয়েছে আইনক্স, মাল্টিপ্লেক্স। দুপুর দু’টোয় খেতে বসে হঠাত্–ইচ্ছের তাগিদে প্রায় চটি হাতে দৌড়ে গিয়ে টিকিট কেটে পৌনে তিনটের শো-এর সিনেমা দেখার মজা যে কী, এ প্রজন্ম আর তা জানবে না। ‘ডবল ডেকার’ বাসের দোতলায় বসে রোজকার স্কুল যাওয়ার পথ পাল্টে দিয়েছে ভূগর্ভস্থ মেট্রো রেলের চাকা।
পৃথিবীর অন্যতম ‘আম-জনতার’ শহর কলকাতা। যেখানে আজও দশ পনেরো টাকায় দিনের অন্ন সংস্থান হয়ে যায়। উত্তরের টালা থেকে দক্ষিণের টালিগঞ্জ— যাতায়াতের সুবিধা সারা শহরেই।
কলকাতা আমার শহর। তাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব তাই আমার। দায়িত্ব সকল কলকাতাবাসীর। আর প্রয়োজন একটু সচেতনতার— তাকে সুন্দর রাখার, পরিষ্কার রাখার। কলকাতা ‘তিলোত্তমা’ তার নিজ গুণে। প্রসাধন যোগাব আমরা— নগরবাসীরা, তাকে ‘বিশ্বসুন্দরী’ করতে।
|
|
|
|
|