|
দুই সপ্তাহব্যাপী রুশ চলচ্চিত্র উৎসবের প্রথম সপ্তাহে (১৫ই থেকে ২১শে ডিসেম্বর) দেখানো হল (স্থানঃ জ্যোতি সিনেমা। তিনটি পূর্ণ দৈর্ঘ্যের চিত্র। সের্গেই বোন্দারচুক-পরিচালিত দি ‘ফেট অব এ ম্যান’, মিখাইল কোলাতো জোভ-পরিচালিত ‘দি লেটার দ্যাট ওয়াজ নট সেন্ট’ এবং প্রামাণিক চিত্র “ফাস্ট ফ্লাইট টু দি স্টার্স।”
১৯৫৯ সনের মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবের শ্রেষ্ঠ সম্মানে ভূষিত “দি ফেট অব এ ম্যান’’ মখাইল শোলকফের ঐ নামেরই একটি বড় গল্পের চিত্ররূপ। একের পর এক নিষ্ঠুর ভাগ্যের আঘাত সহ্য করে জীবনের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কীভাবে এক সামান্য মানুষ না জেনেও অসামান্য বীরত্ব এবং মহত্বের পরিচয় দিয়েছে তারই কাহিনী এই ছবি। সামান্য মানুষটি হল আঁন্দ্রেই সোকোলফগ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে যে একটি ছেলে, দুটি মেয়ে আর বধূ ইরিনাকে নিয়ে সুখের সংসার গড়ে তুলেছিল। যুদ্ধের কয়েকটি বছর আঁন্দ্রেইয়ের সবকিছু কেড়ে নিয়েছেবাইরের সুখ, শান্তি, সম্পদ, ছেলে, মেয়ে, স্ত্রী ইরিনাএকে একে সব। নিজে বন্দী হয়েছিল নাৎসিদের হাতে। অনেক নির্যাতন সহ্য করে, কেবলমাত্র অসাধারণ মনোবলের সাহায্যে আঁন্দ্রেই জার্মান ফ্রন্ট-লাইন পার হয়ে একদিন দেশে ফিরে আসতে পেরেছিল। এসে দেখেছিল বাড়িঘর নিশ্চিহ্ন। জেনেছিল স্ত্রী আর মেয়ে দুটি বোমাবর্ষণের ফলে মৃত। কেবল ছেলেটি সেনাদলে ছিল। যুদ্ধশেষে চারিদিকে যখন আনন্দ উৎসব, তখন আঁন্দ্রেই শেষ দুঃসংবাদ পেলঃ দুদিন আগে সে মারা গেছে।
দুঃখের এই অন্তহীন আঘাতেও আঁন্দ্রেই তার মনুষ্যত্ব, জীবনবোধ হারায়নি, তাই মোটরচালক আঁন্দ্রেই যেদিন যুদ্ধে বাপ-মা-হারা, বিষন্ন বালক ভানিউশকাকে দেখতে পেল, সেদিন তার বুঝতে ভুল হয়নি এই ছেলের মধ্যেই সে আত্মজকে পাবেতার হারানো সব প্রিয়জনই ওর মধ্যে জীবন্ত হয়ে উঠবে।
দীপ্ত আশাবাদ যদি সোভিয়েত কাহিনীচিত্রের মূল বস্তু হয়, তবে “দি ফেট অব এ ম্যান”কে ঠিক “যুদ্ধ-বিরোধী” আখ্যা দেওয়া সঙ্গত নয়। সকল দুঃখ-যন্ত্রণার মধ্যে মানবতার মহিমা-ই এতে সরলভাবে প্রকাশ পেয়েছে। পরিচালকের সহানুভূতিশীল মনটি দর্শক সহজেই অনুভব করবেন। আবেগধর্মী এই চিত্রে শিল্পীদের অভিনয়ের সুর কতকটা উঁচু পর্যায়ে বাঁধা। ছবির চরিত্রের সঙ্গে এই অভিনয় আঙ্গিক সামঞ্জস্য রক্ষা করেছে।
|
|