|
শুভেচ্ছা ও মৈত্রীর বাণী লইয়া সোভিয়েট রাশিয়ার সুপ্রীম সেভিয়েটের সভাপতিমণ্ডলীর শ্রী এল আই ব্রেজনেভ বুধবার অপরাহ্নে কলিকাতায় পৌঁছাইলে সাদর সম্বর্ধনা লাভ করেন। শ্রীমতী ব্রেজনেভও তাঁহার সঙ্গে আসিয়াছেন। শুক্রবার সকালে তাঁহারা মাদ্রাজের উদ্দেশ্যে কলিকাতা ত্যাগ করিবেন।
বুধবার বিমানঘাটি, জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি এবং দমদম হইতে রাজভবন পর্যন্ত দীর্ঘ আট মাইল পথের দুইধারে জনতা করতালি এবং হর্ষধ্বনি দিয়া তাঁহাদের অভ্যর্থনা জানায়। সম্মানীয় অতিথি শ্রীব্রেজনেভ করজোড়ে সেই অভিনন্দন গ্রহণ করেন।
রবীন্দ্রনাথের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধাঞ্জলি
রাজভবনের পথে জোড়াসাঁকোয় নামিয়া শ্রীব্রেজনেভ এবং তাঁহার পত্নী কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান। রবীন্দ্রনাথের শেষ স্নৃতিমাখা ঘরে তাঁহারা শুভ্র চন্দ্রমল্লিকা-গোলাপ-রজনীগন্ধার এক বৃহৎ পুষ্পবলয় স্থাপন করেন।
ঐ উপলক্ষে শ্রীব্রেজনেভ বলেন যে, রবীন্দ্রনাথের গৃহে আসিতে পারিয়া তিনি আনন্দিত। কবিগুরু শুধু বিশ্ববিখ্যাত সাহিত্যিক ও নাট্যকারই ছিলেন না, তিনি ছিলেন মানবদরদী।
তিনি “ঠাকুর স্মৃতি সংগ্রহশালা”কে রবীন্দ্রনাথের গ্রন্থের অনুবাদসহ রুশ ভাষায় মোট ৬টি পুস্তক এবং একটি রেকর্ড উপহার দেন। ঐ রেকর্ডে রবীন্দ্রনাথের কয়েকটি কবিতার রুশ অনুবাদের আবৃত্তি এবং ঐকতানে রবীন্দ্রসঙ্গীতের সুর বাজান হইয়াছে।
ঐ রাত্রে রাজ্যপাল শ্রীমতী নাইডু রাজভবনে তাঁহাদের এক ভোজসভায় আপ্যায়িত করেন।
বিমানঘাটিতে প্রেসিডেন্ট ব্রেজনেভ
বিকাল তিনটার ঠিক পরেই রাশিয়ায় নির্মিত রূপালী রঙের বিরাট ইলিউসিন-১৮ বিমানটি বোম্বাই হইতে সোভিয়েট প্রেসিডেন্ট এবং তাঁহার সঙ্গীদের লইয়া দমদম বিমানঘাটিতে নামে। শীতের অপরাহ্নের উজ্জ্বল রৌদ্র তাঁহাদের অভ্যর্থনা জানায়।
তাঁহার সঙ্গে যাঁহারা আসিয়াছেন তাঁহাদের মধ্যে আছেন সোভিয়েট রাশিয়ার বৈদেশিক দপ্তরের উপমন্ত্রী শ্রী ওয়াই-এ মালিক, ভারতে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত শ্রী আই এ বেনেডিক্টভ, ভারতের পরিবহন মন্ত্রী ডঃ পি সুব্বায়ন এবং রাশিয়ায় ভারতের রাষ্ট্রদূত শ্রীসুবিমল দত্ত।
সস্ত্রীক শ্রী ব্রেজনেভ বিমান হইতে নামিলে রাজ্যপাল শ্রীমতী পদ্মজা নাইডু তাঁহাদের ফুলের মালা ও তোড়া দিয়া সাদর অভ্যর্থনা জানান। তাহারপর রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়কে সম্মানিত অতিথির সহিত পরিচয় করাইয়া দেন। শ্রীব্রেজনেভ ধূসর রঙের পোষাক এবং শ্রীমতী ব্রেজনেভ নীলরঙের একটি গাউন পরিয়া বিমান হইতে অবতরণ করেন।
প্রেসিডেন্ট ব্রেজনেভ একটি বেদীতে দাঁড়াইয়া অভিবাদন গ্রহণ করেন এবং ঐ সময় সোভিয়েট রাশিয়া ও ভারতের জাতীয় সঙ্গীতের সুর ধ্বনিত হয়। তাহার পর তিনি গুর্খা রাইফেলসের ৩।৪ তম বাহিনীর গার্ড অব-অনার পরিদর্শন করেন।
উহার পর মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ রায় প্রেসিডেন্ট ব্রেজনেভের নিকট একে একে রাজ্য বিধান পরিষদের চেয়ারম্যান, বিধানসভার স্পীকার, মন্ত্রী, রাষ্ট্রমন্ত্রী এবং উপমন্ত্রীদের পরিচয় দেন। তাহার পর পশ্চিমবঙ্গের চিফ সেক্রেটারি শ্রী আর গুপ্ত বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক প্রতিনিধি এবং কেন্দ্রীয় কর্মচারীদের পরিচয় দেন।
ঐ কেতাদুরস্ত গুরুগম্ভীর অনুষ্ঠানের মধ্যে স্থানীয় রাশিয়ান শিশুরা প্রেসিডেন্ট ও তাঁহার পত্নীকে ফুলের তোড়া দিয়া অভিনন্দন জানাইলে প্রেসিডেন্টও “শিশুর মত হেসে” তাহাদের সঙ্গে কথা বলেন, আদর করেন। কয়েকপা পিছাইয়া আসিয়া তিনি একটি শিশুর হাত হইতে ফুল লইয়া তাহাকে সস্নেহে চুম্বন করেন।
সংক্ষিপ্ত ঐ অনুষ্ঠানের শেষে প্রেসিডেন্ট ব্রেজনেভ রাজ্যপাল শ্রীমতী নাইডুর সহিত কালো রঙের খোলা গাড়িতে শহর অভিমুখে রওনা হন। তাহার পরের গাড়িতে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ রায়ের সঙ্গে ছিলেন শ্রীমতী ভিক্টোরিয়া পেত্রোভনা ব্রেজনেতা।
সোভিয়াট রাশিয়া এবং ভারতের জাতীয় পতাকা এবং বিশেষভাবে নির্মিত তোরণে সাজান পথ দিয়া গাড়িগুলি জোড়াসাঁকোর দিকে অগ্রসর হয়। বিকাল ৩-৫০ মিনিট নাগাদ তাঁহারা ঠাকুরবাড়িতে উপস্থিত হন।
জোড়াসাঁকোয় শ্রীব্রেজনেভ
ঐখানে রবীন্দ্রভারতীর সঙ্গীতভবনের ছাত্রছাত্রীরা বেদমন্ত্রের সুরে অতিথিদের অভ্যর্থনা জানান। পুষ্পবৃষ্টি করা হয়। একটি বালিকা প্রেসিডেন্টের ‘ললাটে তিলক’ দেয়।
রবীন্দ্রনাথ যে কক্ষে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করিয়াছিলেন সেইখানে পুষ্পার্ঘ দিবার পর শ্রীব্রেজনেভ মহর্ষি ভবনের অন্যান্য কক্ষ এবং একটি প্রদর্শনী দেখেন। ঐ প্রদর্শনীতে সোভিয়েট রাশিয়া এবং ইউরোপের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণরত কবিগুরুর অনেকগুলি ছবি আছে।
রাজ্য সরকারের শিক্ষা-দপ্তরের সেক্রেটারি ডঃ ডি এম সেন এবং ‘রবীন্দ্রভারতী’ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পেশাল অফিসার শ্রী কে পি সেন তাঁহাদের ঠাকুরবাড়ি ঘুরাইয়া দেখান এবং বুঝাইয়া দেন।
ঠাকুরবাড়ি হইতে তাঁহারা রাজভবনে যান, সেইখানে তাঁহারা দুইদিন থাকিবেন।
|
|