|
|
ভ্রাতৃদ্বিতীয়া উৎসব তাৎপর্য পূর্ণ
|
|
|
|
উৎকল ভবনে আয়োজিত উৎসবে ডঃ রায়ের মন্তব্য
(স্টাফ রিপোর্টার)
শুক্রবার সকালে কলিকাতার উৎকল ভবনে এক মনোজ্ঞ অনুষ্ঠানে ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার উৎসবকে ‘জাতীয় ব্রতরূপে পালনের সূচনা হয়। ঐ অনুষ্ঠানে মহিলারা “সকলের জ্যেষ্ঠতম ভ্রাতা” অশীতিপর মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের ললাটে চূরা-চন্দনের ফোঁটা দেন।
‘কলিকাতা আর্ট সোসাইটি’ ঐ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। উক্ত সমিতির প্রধান ডাঃ হরেকৃষ্ণ মহাতাব ডাঃ রায়কে অভ্যর্থনা জানান। শহরের বহু বিশিষ্ট মহিলা, পুরুষ ও কয়েকজন মন্ত্রী ঐখানে উপস্থিত ছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন,ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দিলে মৃত্যু আর স্পর্শ করতে পারবে না এই ধারণার পিছনে হয়ত কোন যুক্তি নাই। কিন্তু ভ্রাতৃদ্বিতীয়া উৎসবের বিশেষ তাৎপর্য আছে। এই অনুষ্ঠান হৃদয়ের ভাব বিনিময়ের প্রতীকএমন উৎসবে ‘মানুষ মানুষকে পায়।’
মিলনের ঐক্য সূত্র
তবে ডাঃ রায় বলেন যে, শুধু পারিবারিক গণ্ডীর মধ্যে না রাখিয়া ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার মত উৎসবকে ছড়াইয়া দিতে হইবে। নানা ভাষা, নানা মত ও নানা পরিধান সত্ত্বেও এই জাতীয় অনুষ্ঠানের দ্বারা বিভিন্ন ধরণের মানুষকে মিলনের ঐক্যসূত্রে বাঁধা যায়। প্রসঙ্গত তিনি আরও বলেন যে, আসাম, উড়িষ্যা, বিহার ও বাংলাদেশ রাজনৈতিক কারণে আলাদা হইয়া গিয়াছে। কিন্তু ভৌগোলিক অর্থে বিভিন্ন প্রদেশ সৃষ্টি করিলেই কি মানুষের মনকে ভাগ করা যায়?
যাঁহাদের সহিত রক্তের কোন সম্পর্ক নাই, মনেরও সম্পূর্ণ মিল নাই তাঁহাদের ভাইবোন বলিয়া স্বীকার করিতে হইবে। তবেই ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার উৎসব সার্থক হইবে।
ডাঃ হরেকৃষ্ণ মহাতাব বলেন, স্বাধীনতা পাইবার পরে জাতীয়বোধ যেন ক্রমশ হ্রাস পাইতেছে। ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার মত প্রচলিত পার্বণকে নূতন রূপ দিয়া ভ্রাতৃভাব জাগাইতে হইবে। তবেই জাতীয় জীবন পুষ্ট হইবে।
অনুষ্ঠানের প্রথম পাঁচটি কুমারী কন্যা মুখ্যমন্ত্রীকে বরণ করেন। তারপর শ্রীমতী ইলা পালচৌধুরী, বর্তমানে মহারানী অধিরানী শ্রীমতী লালিমা বসু প্রভৃতি পাঁচটি মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর কপালে ফোঁটা দেন। প্রদীপ জ্বালা হয়, শঙ্খধ্বনি হয় মুখ্যমন্ত্রীকে থালা ভর্তি মিষ্টান্ন ও পরমান্ন দেওয়া। তিনি উহা শুধু স্পর্শ করিয়া রাখিয়া দেন।
আর্ট সোসাইটির পক্ষ হইতে শ্রীপ্রণবেশ সিংহ জাতীয় ভিত্তিতে ভ্রাতৃদ্বিতীয়া পালনের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করেন। উৎকল ভবন আলপনা এবং ফুল দিয়া সুন্দরভাবে সাজান হয়।
‘পরমান্ন খাওয়ার সময় আছে’
(স্টাফ রিপোর্টার)
“পরমান্ন পরম সময়ে খাওয়া উচিৎ” পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বিশিষ্ট চিকিৎসক ডাঃ বিধানচন্দ্র রায় শুক্রবার সকালে উৎকল ভবনে ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার উৎসবে এই মন্তব্য করেন।
ফোঁটার শেষে তাকে থালা ভর্তি নানা মিষ্টান্ন এগিয়ে দিলে ডাঃ রায় বলেন ‘মিষ্টি খাব না। তোমাদের বিলিয়ে দেব’। তারপর হঠাৎ বোধহয় পুলিস মন্ত্রী শ্রী কালিপদ মুখোপাধ্যায়ের উপর তাঁর দৃষ্টি পড়ে যায়। ডাঃ রায় বলেন, “আমার মিষ্টিগুলো কালীবাবু খাবেন”।
উদ্যোক্তারা তবু নাছোড়বান্দা। একজন বলেন, “পায়েসটা আপনাকে খেতেই হবে।” মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এমন নজির কোথায় আছে দেখাতে হবে। পরমান্ন তো কেবল পরম সময়েই খাওয়া উচিৎ।
“আমারটা বকেয়া রইল”
খাওয়ার সময় পুলিস মন্ত্রীর হাতে অবশ্য মাত্র একটি রেকাবই দেখা গেল। তিনি বললেন, “আমারটা বকেয়া রইল। এটা ডাঃ রায়ের থালা।” ঐ অনুষ্ঠানের মিষ্টান্নের ঘাটতি ছিল না। বর্ধমান থেকে মিহিদানা, সীতাভোগ, কৃষ্ণনগরের সরভাজা-সরপুরিয়া, জয়নগরের মোয়া নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার বিশেষ মিষ্টির আয়োজন করা হয়েছিল। কলকাতার সন্দেশও বাদ যায় নি।
বে-সরকারী “ভাই-ফোঁটা”
শুক্রবার বিধানসভা ভবনে মুখ্যমন্ত্রীর কক্ষে পশ্চিমবঙ্গ মন্ত্রীসভার বৈঠকেও বেসরকারীভাবে ‘ভাইফোঁটা’ অনুষ্ঠিত হয়।
মন্ত্রিসভার একমাত্র মহিলা সদস্যা শ্রীমতী পূরবী মুখোপাধ্যায় ঐ বৈঠকে সন্দেশ খাওয়াইয়া অন্যান্য মন্ত্রীদের আপ্যায়িত করেন বলিয়া জানা গিয়াছে। তবে ফোঁটা দিবার অবশ্য কোন ব্যবস্থা ছিল না।
|
|
|