৪ কার্তিক ১৪১৮ সোমবার ২১ নভেম্বর ২০১১





আদি গঙ্গার পুল: “এই পুল নিরাপদ নহে”




পাড়ায় একজন প্রৌঢ় বললেন‘ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি মশাই, এখানে পাকা পুল হবে। তা আর হল কই?’

এপারে কালীঘাট, ওপারে চেতলা। মাঝখানে টালির নালা। লোকে বলে আদিগঙ্গা। গত তিরিশ-চল্লিশ বছর ধরে কথা শোনা যাচ্ছে, কেওড়াতলা শ্মশানের পাশে দেশবন্ধু স্মৃতিসৌধের কোল ঘেঁষে একটি পাকা পুল হবে। কিন্তু ঐ কথাবার্তাই সার, কর্পোরেশন, সি আই টি আর রাজ্য সরকারের গদাই লস্করী চালে সেই কবেকার নড়বড়ে কাঠের পুলই বহাল তবিয়তে আছেকাজ কিছু এগোয়নি।

এখন আবার শোনা যাচ্ছে সি আই টি শীগগীরই কালীঘাট-চেতলা ঐ পুল পাকা করবেন। রাসবিহারী এভিনিউর পশ্চিম প্রান্তে ‘বাস্তুহারা হকার্স কর্ণার’ তুলে দিয়ে চেতলা সেন্ট্রাল রোড আর রাসবিহারী এভিনিউর হাত মেলাবেন। উদ্বাস্তু দোকানদারেরা তাহলে যাবে কোথায়? সি আই টির এক কর্তাব্যক্তি জানালেন, ‘হ্যাঁ সেটাও ভেবে রেখেছি, তাঁদের জন্য চেতলায় এক ভাল পাড়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’

পাড়ার ঐ ভদ্রলোকটি কিন্তু সব শুনে বললেন‘না আঁচালে বিশ্বাস নেই। ও রকম কথা আমরা আগে অনেক শুনেছি মশাই।’

দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের স্মৃতি

কালীঘাট চেতলায় যোগাযোগ রক্ষার জন্য এখন সেখানে যে কাঠের পুল আছে তা দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় তৈরী। বছর তিরিশ আগে নতুন চওড়া রাস্তা রাসবিহারী এভিনিউ তৈরী করার সময় ঐ জায়গায় বড় একটি পাকা পুল বানাবার কথা প্রায় পাকাপাকি হয়ে যায়। স্থানীয় একজন বলেন, কর্পোরেশন আর সি আই টির মধ্যে ঝগড়াঝাঁটি নাকি তখন কাজে নামাক বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তারপর এল যুদ্ধ। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ। রাতারাতি তৈরি হয়ে গেল কাঠের একটি পুল। কারণ প্রয়োজনের তাগিদ বড় বেশী।

যুদ্ধের পর অবস্থা আবার যে কে সেই। নড়বড়ে পুল ঝরঝরে হয়ে গেল। ইতিমধ্যে বসে গেল উদ্বাস্তুদের এক বাজার। সরকার গেলেন পুল ভেঙে ফেলতে। কিন্তু চেতলা আর কালীঘাটের লোকেরা তা মানবে কেন? পাড়ার ছেলেরা রুখে দাঁড়াতেই পুল ভাঙার কাজ বন্ধ হয়ে গেল। উল্টো মেরামতি করে দেওয়া হল খানিকটা।

দুর্ভোগের একশেষ

এই জায়গায় একটি ভাল পুলের অভাবে জনসাধারণ কি পরিমান দুর্ভোগ পোহাচ্ছে কহতব্য নয়। অফিস টাইমে কাতারে কাতারে লোক ঐ কাঠের পুল গিয়ে এপার ওপার করে। সারা দিনে লোক চলাচলের সংখ্যা প্রায় চল্লিশ পঞ্চাশ হাজার। কালীগাট পাড়ায় ছেলেরা যায় ঐ পাড়ে চেতলা হাইস্কুলে। চেতলা পাড়ার অফিসযাত্রী এপারে এসে ট্রামবাস ধরে। রাসবিহারী এভিনিউর মোড়ে। অন্যান্য নানা কাজে যাতায়াত তো আছেই।

যদি একটি ভাল পুল থাকতো, তাহলে এই হয়রানিটা হতনা। লাখ লাখ লোক প্রতিদিন দুর্ভোগ পোহাতো না। সরকারী বাস এপার ওপার করত, যাত্রীরা ছুটাছুটি করত না, শহরের যানবাহনের ভিড়ের অনেকটা সুরাহা হত।

তাছাড়া সোনারপুর-ক্যানিং অঞ্চল থেকে মামলার তদ্বিরে আলীপুর আদালতযাত্রী যে লোক সকল লোক বালিগঞ্জ স্টশনে নামেন, তাঁরা চলে আসতে পারতেন সোজা জর্জ কোর্ট রোডে। কালীঘাট স্টেশনে নেমে ট্রাম বা বাস বদলের দরকার তাদের হত না। চেতলা রোড আর চেতলা সেন্ট্রাল রোডের মোড় থেকে আদালত দশ মিনিটের পথ।

নিরাপদ নয়, নিরাপদ নয়

কালীঘাট-চেতলার মিল ঘটাতে এই পুলের যেমন দরকার, তেমনি দরকার কাছাকাছি আরও কয়েকটি পুলের সংস্কার সাধনের। যেমন হাজরা রোডের ওপর আলীপুর যাবার পুল। সেখানে ট্রাম চলে, বাস চলে ঠিকই, কিন্তু অবস্থা জরাজীর্ণ এবং যাতায়াতে ‘ওয়ান-ওয়ে’। হামেশাই সেখানে ট্রাফিক বিকল হয়।

শোনা গেছে, সি-আই-টি এখানেও একটি নতুন পুল বানানোর কথা ভাবছেন। তবে তার আগে বিকল্প একটা চাই। কালীঘাট-চেতলা পুল যদি তৈরী হয়, তাহলে দু বছরের জন্য হাজরা রোডের ঐ পুল বন্ধ রেখে যানবাহন চালানোর ব্যবস্থা করা হবে কালীঘাট-চেতলার নতুন পুল দিয়ে। ওদিকে সেখানে চওড়া আর একটি পুল বানানোর কাজ চলবে। কিন্তু সবই নিভর্র করছে অতিকায় একটি ‘যদি’র উপর।

হাজরার পুল পেরিয়েই কালীঘাট-চেতলার কাঠের পুল। আরও দু ফার্লং এগিয়ে রেলপুল। এবং টালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের পাকা পুল আর রেল পুলের মাঝখানে ঐ টালির নালার উপরেই আর একটি ‘প্রাগৈতিহাসিক’ কাঠের পুল আছে। চারু এভিনিউর শেষ প্রান্তে। সেখানেও লোকের ভিড়। নিউ আলীপুর-টালিগঞ্জে ঐ পুল দিয়েই অবিরাম যাওয়া আসা।

যানবাহন এবং জনতার ভিড় কমাতে এখানেও একটি ভাল পুলের দরকার। কিন্তু সে কবে হবে ভগবানই জানেন। আপাতত ঐ পাড়ার লোকেরা সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী নিজ দায়িত্বে ঐ পুল ব্যবহার করছেন। সরকার পুলের গায়ে নোটিশ টাঙিয়েছেন“এই পুল নিরাপদ নয়”।



Content on this page requires a newer version of Adobe Flash Player.

Get Adobe Flash player


আমার শহরঅতীতের তাঁরাতারাদের চোখেআনাচে-কানাচেফিরে দেখাশিরোনামে শেষ তিরিশ

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.