নিজস্ব সংবাদদদাতা • রায়দিঘি |
ব্লক অফিসের সামনে জড়ো হওয়া ভিড় সামলাতে লাঠি হাতে নেমে পড়েছিলেন বিডিও। অভিযোগ, আচমকাই যাঁকে হাতের সামনে পান, তাঁকেই লাঠিপেটা করেন তিনি। ধাক্কা মেরে ফেলে দেন এক অন্তঃসত্ত্বাকে। লাঠির ঘা এবং ধাক্কায় পড়ে গিয়ে মহিলা, শিশু-সহ জখম হন জনা পাঁচেক। এর পরেই জনতা বিডিও-র উপরে পাল্টা চড়াও হয়। মারে জখম মথুরাপুর ২ বিডিও ত্রিদিব সরকে পাঠানো হয় কলকাতার হাসপাতালে।
সোমবার সকালে এই ঘটনার পরে ত্রিদিববাবু অবশ্য দাবি করেছেন, লাঠি হাতে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কাউকে মারধর করেননি। সিপিএম এবং এসইউসি-র কিছু লোক তাঁকে আক্রমণ করেছে। কিন্তু তা হলে মহিলা-শিশুরা জখম হলেন কী ভাবে? বছর পয়ঁত্রিশের জখম ত্রিদিববাবু অবশ্য তা নিয়ে মন্তব্য করেননি। মহকুমাশাসক (ডায়মন্ড হারবার) শান্তনু বসু বলেন, “উনি সুস্থ হলে ঘটনার তদন্ত হবে।”
বিডিও-র দাবি, গত বছর ৩১ ডিসেম্বর সিপিএমের এক পঞ্চায়েত প্রধান ও পঞ্চায়েত সমিতির চার কর্মচারীর বিরুদ্ধে থানায় দুর্নীতির অভিযোগ করেছিলেন তিনি। তাঁর অভিযোগ এ দিন সকালে ব্লক অফিসে মিটিং চলাকালীনও তাঁকে হেনস্থা করে সিপিএমের লোকজন। পরে প্রতিহিংসার বশে তাঁকে মারধর করা হয়েছে। হামলায় যোগ দিয়েছে এসইউসি-র লোকজনও। বিডিও-র অভিযোগ অবশ্য মানতে নারাজ মথুরাপুর ২ পঞ্চায়েত সমিতির সিপিএম সভাপতি পীযূষ বৈরাগী এবং এসইউসি নেতা গোপাল সেন। সিপিএমের স্থানীয় কিছু নেতাই বরং জখম বিডিও-কে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান বলে দল সূত্রে দাবি করা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, রেশন কার্ড নিয়ে শুনানির জন্য এ দিন সকাল ৭টার পর থেকেই কনকনদিঘি গ্রামের মানুষজন ব্লক অফিসে লাইন দিতে শুরু করেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড়ও বাড়ে। চেঁচামেচি শুরু হয়। একতলায় খাদ্য নিয়ামকের অফিস। ত্রিদিববাবু বসেন দোতলায়। বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ উত্তেজিত অবস্থায় তাঁকে নীচে নেমে আসতে দেখেন এলাকাবাসী। ব্লক অফিসের সামনে জনা চারেক গ্রামীণ পুলিশ দাঁড়িয়েছিলেন। অভিযোগ, তাঁদের হাত থেকে লাঠি কেড়ে নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা গ্রাহকদের এলোপাথাড়ি মারতে শুরু করেন বিডিও। লোকজনকে ধাক্কা দেন।
এর পরেই গ্রাহকদের একাংশ খেপে ওঠেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য, জনা পনেরো-কুড়ি লোক বিডিও-কে ঘিরে ধরে মারতে শুরু করে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত দিঘিরপাড় বকুলতলা পঞ্চায়েতের সিপিএম প্রধান ইরান গায়েন ও ত্রিদিববাবুর দেহরক্ষী জনার্দন মণ্ডল তাঁকে উদ্ধার করে গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যান।
আহত ৫ জন রায়দিঘি গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি। তাঁদের মধ্যে আছেন পশ্চিমজটা গ্রামের তাঞ্জিরা বিবি, মাসুদা বিবি ও তাঁর অন্তঃসত্ত্বা মেয়ে রেজিনা শেখ। পূর্বজটা গ্রামের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী সোনালি ময়রা ও দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র রাজকুমার দাসও হাসপাতালে ভর্তি। চিকিৎসক রাকেশ রায় বলেন, “রেজিনা ছাড়া বাকিদের অবস্থা স্থিতিশীল। আলট্রাসনোগ্রাফি করা হলে ওই মহিলার আঘাত বোঝা যাবে।” রেজিনার অভিযোগ, “আমি লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। বিডিও হঠাৎ লাঠি দিয়ে পেটাতে শুরু করলেন। আমাকে ঠেলে মাটিতে ফেলে দেন উনি। অজ্ঞান হয়ে যাই।” |