প্রতি বছর সরস্বতী পুজোর সময় মালদহে আম বাগানের গাছগুলি মুকুলে ভরে যেত। কিন্তু এ বছর এখনও পর্যন্ত মালদহে একটি আমগাছেও মুকুলের দেখা নেই। প্রচন্ড কুয়াশা ও শৈত্যপ্রবাহের জেরে মালদহে আম বাগানে ঠিকঠাক মুকুল বার হচ্ছে না বলে উদ্যান পালন দফতর সূত্রের খবর। বিষয়টি নিয়ে জেলার আম চাষি থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীদের কপালে ভাঁজ পড়েছে। উদ্যান পালন দফতরের আধিকারিকের দাবি, শীত কিছুটা কমলেই মুকুল বার হতে শুরু করবে। উদ্যান পালন দফতর সূত্রের খবর, গতবছর ছিল আমের ‘অন-ইয়ার’। এ বছর ‘অফ-ইয়ার’। শুরুতে এ বছর আবহাওয়া আমচাষের পক্ষেই ছিল। প্রতি বছর জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে ফেব্রুয়ারির শুরুতেই মুকুল আসতে শুরু করে। |
জেলা উদ্যান পালন দফতরের সহ উদ্যানপালন অধিকর্তা রাহুল চক্রবর্তী বলেন, “এখন জেলায় ১২-১৪ ডিগ্রি মধ্যে তাপমাত্রা ওঠানামা করছে। পাশাপাশি কুয়াশা রয়েছে। আমের মুকুল বার হতে তাপমাত্রা প্রয়োজন ১৮-১৯ ডিগ্রি। তাপমাত্রা একটু বাড়তে শুরু করলে মুকুল বার হতে শুরু করবে। তাপমাত্রা বাড়ার পর ফের ঠান্ডায় মুকুলের ক্ষতি হতে পারে।”
রতুয়ার আড়াইডাঙ্গার আম ব্যবসায়ী লোকনাথ কুমার জানান, তাঁর ৩০ বিঘা আমের বাগান রয়েছে। এ বছর তিনি ১০০ বিঘা আমের বাগান কিনেছেন। তাঁর কথায়, “এ বার আবহাওয়া যা আচরণ করছে, তাতে চিন্তায় পড়েছি। এক সময় সরস্বতী পুজোর সময় আম বাগান মুকুলে ভরে থাকত। এ বছর একটিও মুকুলের দেখা নেই।” কালিয়াচক, ইংরেজবাজার, মানিকচক সর্বত্র একই ছবি। তিনি বলেন, “২০ দিন আগে গাছে মুকুলের কুঁড়ি দেখা গিয়েছিল। ভেবেছিলাম এ বার তাড়াতাড়ি মুকুল চলে এসেছে। রেকর্ড ফলন হবে। কিন্তু হঠাৎ ঠান্ডা ও কুয়াশা পড়ে যাওয়ায় মুকুলের কুঁড়ি ওই অবস্থাতেই থেকে গিয়েছে। কুঁড়ি থেকে আর মুকুল বার হচ্ছে না। এই আবহাওয়া চলতে থাকলে কুঁড়ি থেকে নতুন পাতা বার হয়ে যাবে।”
মালদহে ২৯ হাজার হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়। ২০১২ সালে আমের ফলন কম হলেও ২০১১ সালে ২ লক্ষ ২৫ হাজার মেট্রিক টন ও ২০১৩ সালে ৩ লক্ষ ২৫ হাজার মেট্রিক টন আমের রেকর্ড ফলন হয়েছিল। এবছর অধিক ফলনের আসায় চাষিরা উদ্যান পালন দফতরের আধিকারিকদের পরামর্শে একমাস আগে থেকে পোকার আক্রমণ ঠেকাতে জৈব প্রতিষেধক স্প্রে’ও করেন। দুই দফায় স্প্রে করা হয়। চাষিদের পাশাপাশি হতাশ ব্যবসায়ীরা। ইংরেজবাজারের আম ব্যবসায়ী শিবনাথ মহন্ত জানান, প্রতিবছর এই সময় আমার প্রায় ২৫০ বিঘা আমবাগানে মুকুলে ভরে থাকে। এবার আমগাছে মুকুল এসেও মুকুল ফুটছে না। তাঁর আক্ষেপ, “কুয়াশা ও শৈত্য প্রবাহ চলতে থাকলে জেলায় আম চাষ এবার খুব মার খাবে। প্রচুর টাকার লোকসান হয়ে যাবে।” |