সরস্বতী পুজোয় উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকার বাজারে এখন মাদারিহাটের পলাশের কদরই যেন বেশি। তা হওয়ারই কথা। কারণ, ফালাকাটা-মাদারিহাট রাস্তার দু’ধারে চোখ মেললে দেখা যায় লালে লাল হয়ে রয়েছে দিগন্তরেখা। যত দূর চোখ যায় রাস্তার দুদিকে পলাশ ফুল ছেয়ে আছে। সেখান থেকে পলাশ ফুল নিয়ে জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, শিলিগুড়ির বাজার ধরে নিয়েছেন ফুল বিক্রেতারা। শিলিগুড়ির ফুল বিক্রেতা নিমাই দাস, লতিকা রায়রা বললেন, “ইন্টারসিটি এক্সপ্রেসে গিয়ে মাদারিহাট থেকে পলাশ এনে বিক্রি করছি। শিলিগুড়ির আশেপাশে আগে অনেক পলাশ ছিল। এখন খুব কম। তাই ট্রেনে গিয়ে আনতে হয়।” |
|
|
ময়নাগুড়িতে পুজোর পসরায় পলাশ। মাদারিহাটে গাছ ভরেছে ফুলে। |
|
এ বছর ফালাকাটা-মাদারিহাট পূর্ত সড়কের দু’ধারে পলাশ গাছের সারি নজর কাড়ছে সকলেরই। মাদারিহাটে যে পরিমাণ পলাশ ফুল হয়েছে তার চাহিদা এলাকায় ততটা নেই। কিন্তু, শহরাঞ্চলে সরস্বতী পুজোর আগে পলাশ ফুলের চাহিদা রয়েছে। তাই কয়েক বছর ধরে মাদারিহাট ব্লকের প্রচুর মানুষ সরস্বতী পুজোর আগের দিন দূর দূরান্তে ফুল বিক্রি করতে চলে যাচ্ছেন।
বিশেষ করে শিলিগুড়ির বাজারে এবার বিশেষ চাহিদা রয়েছে মাদারিহাটের ফুলের। এলাকার পলাশ ফুল সোমবার ভোরে মাদারিহাট রেলওয়ে স্টেশন থেকে বস্তা বোঝাই করে কয়েকশো মানুষ ইন্টারসিটি ট্রেনে চেপে শিলিগুড়ি-সহ উত্তরবঙ্গের বেশ কয়েকটি শহরে ফুল বিক্রি করতে যান। ওই ফুল বিক্রি করেই দুমাসের সংসার খরচের টাকা জোটাচ্ছেন অনেক বাসিন্দা। মাদারিহাট এলাকার বাসিন্দা অনিল রায়ের কথায়, “শহরে এক মুঠো ফুল বিক্রি করলে ১০ টাকা আয় হয়। এক বস্তা ফুল বিক্রি করলে তো আমাদের দু’মাসের চাল-ডালের খরচ উঠে যায়। তিন বছর ধরে তাই আমরা ফুল নিয়ে শহরে যাচ্ছি।”
রাস্তার গাছের ফুল বিক্রি করে কয়েকটা দিন হলেও সংসার চলে। তাই এখন আর রাস্তার ধারের গাছ কাটতে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছেন বাসিন্দারা। এক সময় ফালাকাটা-মাদারিহাট যাতায়াতের রাস্তায় কয়েক হাজার গাছ ছিল। বছর সাতেক আগেও দিনের বেলাতেও গাছ কাটত দুষ্কৃতীরা। গাছ চুরি রোধ করতে রীতিমত হিমসিম খেতে হত বন দফতর ও পুলিশকে। তবে গত পাঁচ-ছয় বছর ধরে অবশ্য আগের তুলনায় সে হার অনেকটাই কমেছে। বাকি যে কয়েকশো গাছ রয়েছে তার মধ্যে অবশ্য পলাশ,শিমুল রয়েছে বেশি। |