মদ খাইয়ে বেহুঁশ করে কুপিয়ে খুন আমবাড়িতে, সন্দেহ পুলিশের
প্রথমে কানে আসে আর্তনাদ। তারপরে বাইরে এসে দেখেন চোখের সামনে দাউদাউ করে জ্বলছে একটি গাড়ি। পোড়া দেহের গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে বাতাসে। কিছু দূরে পড়ে আরও দু’জনের রক্তাক্ত দেহ। শনিবার শেষ রাতের সেই দৃশ্য ভুলতে পারছেন না শিলিগুড়ি লাগোয়া আমবাড়ির বলরামপুরে এক কারখানার নৈশপ্রহরী যোগেশ দাস। ওই এলাকায় যাতে আর থাকতে না হয়, তাই কারখানার কাজও ছেড়ে দিতে চান তিনি।
নিহতদের পরিজনদের সান্ত্বনা উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেবের। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
রবিবার ভোরে বলরামপুর এলাকায় একটি ছোট ভ্যান গাড়ি থেকে দু’জন ব্যক্তির পোড়া দেহ উদ্ধার করা হয়। গাড়ির পাশেই পড়েছিল আরও দু’জনের দেহ। পুলিশের ধারণা, প্রথমে ধারাল অস্ত্র দিয়ে খুন করে ৩টি মৃতদেহে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগানো হয়। চতুর্থ দেহটি অবশ্য ভ্যানটির অদূরে নাড়িভুঁড়ি বার হওয়া অবস্থায় ফেলে রাখা হয়। সোমবার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দেহগুলির ময়নাতদন্ত করানো হয়েছে। নিহতদের পাকস্থলীতে অ্যালকোহলও মিলেছে বলে হাসপাতাল সূত্রে পুলিশ জানতে পেরেছে। পুলিশের অনুমান, মদের আসরে ৪ জনকে বেহুঁশ করে খুনের ছক কষা হয়ে থাকতে পারে। ঠিক কী হয়েছে, তা জানতে তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছেন শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার জগ মোহন। তিনি বলেন, “অনেক কিছুই সন্দেহ হচ্ছে। কিছু সূত্র পেয়েছি। একটি মোবাইল আমাদের হাতে এসেছে। তার কল রেকর্ডের উপরে ভিত্তি করে কিছু নাম আমাদের হাতে এসেছে। দু-এক দিনের মধ্যেই অপরাধীদের গ্রেফতার করা হবে।”
বলরামপুরের ঘটনাস্থলের পাশেই একটি পাইপের কারখানার চৌকিদার যোগেশবাবু সে দিন ভোরের দিকে আর্তনাদ শুনেছেন। তিনি বলেন, “তখন ভোর ৪টে হবে। হঠাৎ তীব্র আর্তনাদে ঘুম ভাবটা কেটে যায়। পরপর চিৎকার হতেই থাকে। একটু ঘাবড়ে যাই। দরজা খুলে বাইরে বার হয়ে কিছুটা এগিয়ে দেখি, দাউদাউ করে একটি ছোট গাড়ি জ্বলছে। আমিও চিৎকার শুরু করি।” হইচই শুনে অনেকে বার হন। খবর দেওয়া হয় পুলিশ ও দমকলকে। যোগেশবাবু বলেন, “ওই দৃশ্য আমি জীবনে ভুলতে পারব না। চোখ বুজলেই তা ভেসে উঠছে। তাই ওই কারখানায় আর চৌকিদারি করতে চাই না।”
আগুন নেভার পরে পুলিশ গিয়ে গাড়ির মধ্যে বেঁধে রাখা অবস্থা দুটি মৃতদেহ উদ্ধার করে। একটি দগ্ধ দেহ দূরে পড়েছিল। অন্যটি গাড়ির সামনে ফেলে রাখা ছিল। গাড়ির মধ্যে একটি বাছুরের দগ্ধ দেহ ছিল। সে জন্য প্রাথমিক ভাবে পুলিশের সন্দেহ হয়, গরু চুরির সংক্রান্ত বিবাদের জেরেই ঘটনাটি ঘটে থাকতে পারে। কিন্তু নিহতেরা এলাকায় দিনমজুর বলেই পরিচিত। তাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে কোনও অভিযোগও নেই বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি। যে গাড়িটি পোড়ানো হয়েছে, তার মালিক মহম্মদ সাবারিকেও খুনের পরে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। নিহতদের বাড়ির লোকজন ও পড়শিদের দাবি, পুরানো শত্রুতার কারণে চার জনকে খুন করা হয়েছে। সাবারি ছাড়া নিহত অন্য তিন জনের নাম জাফরুল মহম্মদ, জলিল মহম্মদ ও গুরুঙ্গ ওরফে জাভেদ। এ দিন নিহতদের বাড়িতে যান উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। তাঁকে ঘিরে এলাকার বাসিন্দারা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন।





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.