অটো নিয়ে নির্দেশ না-মেনে আদালত ‘অবমাননা’য় রাজ্য
লকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দেওয়ার প্রায় এক বছর পরেও অটো-দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের হল। হাইকোর্টের নির্দেশ কার্যকর না করায় রাজ্যের মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র ও পরিবহণ-সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সোমবার আদালত অবমাননার অভিযোগ দায়ের করলেন আইনজীবী রমাপ্রসাদ সরকার। আগামী বৃহস্পতিবার মামলাটি শুনানির জন্য ওঠার কথা।
অটো-দৌরাত্ম্য বন্ধে এক বছর আগে জনস্বার্থের মামলাটি রমাপ্রসাদবাবুই দায়ের করেছিলেন। ওই জনস্বার্থের মামলায় প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ গত ৮ মার্চ রাজ্য সরকারকে অটোর নির্ধারিত ভাড়া ঠিক করতে নির্দেশ দিয়েছিল। তা ছাড়া অটোয় মিটার চালু করতেও বলা হয়েছিল। হাইকোর্ট অটোয় যাত্রী তোলা নিয়ে তাদের নির্দিষ্ট অভিমত জানিয়েছিল। কাটা রুটে অটো চালাতে নিষেধ করে দিয়েছিল।
প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের কাছে এ দিন মূল মামলার আবেদনকারী আদালত অবমাননার আবেদন জানিয়ে বলেন, তিনি মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র এবং পরিবহণ-সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে হাইকোর্টের নির্দেশ কার্যকর করার অনুরোধ জানিয়ে বারংবার চিঠি লিখেছেন। কিন্তু তার পরেও ওই দুই সচিবের কাছ থেকে নির্দেশ পালন করার ব্যাপারে কোনও হেলদোল লক্ষ করা যায়নি। অথচ তিন মাসের মধ্যে ওই নির্দেশ কার্যকর করার কথা ছিল।
প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্য সরকারকে কী কী নির্দেশ দিয়েছিল? পরিবহণ আইনের দুইয়ের সাত ধারা এবং ১২০ ধারা উল্লেখ করে ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছিল, চালক যদি কখনও যাত্রীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন, তা হলে সংশ্লিষ্ট অটোর পারমিট বাতিল করতে হবে এবং ৮৬ ধারা অনুযায়ী অটোচালককে সাময়িক ভাবে কাজ থেকে বসিয়ে দিতে হবে। একমাত্র সরকারের ঠিক করে দেওয়া ভাড়া অনুযায়ী অটো চলতে পারবে। ডিভিশন বেঞ্চের মত ছিল, অটো এক ধরনের ‘মিনি ট্যাক্সি’। তাই ট্যাক্সির ক্ষেত্রে যে সমস্ত নিয়ম খাটে, অটোর ক্ষেত্রেও সেগুলি কার্যকর করতে হবে।
মামলার আবেদনকারী রমাপ্রসাদ সরকার তাঁর আবেদনে বলেন, জেলা দূরে থাক, এ পর্যন্ত রাজ্য সরকার কলকাতা শহরেই অটোর ভাড়া ঠিক করতে পারেনি। ইউনিয়নের ইচ্ছামতো সর্বত্র ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।
ডিভিশন বেঞ্চ বারংবার বলেছে, অটোরিকশা নির্ধারিত রুট ছাড়া চলতে পারবে না। কিন্তু সরকার সে দিকে কোনও নজরই দেয়নি। দুঃখের বিষয়, সরকার অটোর জন্য কোনও ভাড়া নির্ধারণ করে না।
অটোরিকশা যখন চালু হয়, তখনই ১৯৮৮ সালের মোটর ভেহিক্লস আইনের ৭৪ নম্বর ধারায় বলে দেওয়া হয়েছিল, মিটার ছাড়া অটো চালানো যাবে না। এই ব্যবস্থায় যাত্রীদের কাছে বেশি ভাড়া নেওয়ার সুযোগ প্রায় থাকেই না (যদি না মিটারে কারচুপি হয়ে থাকে)। কিন্তু রাজ্য সরকার সেই নিয়ম মানেনি। গোটা রাজ্যেই মিটার ছাড়া অটো চলছে।
এ দিনের আদালত অবমাননার মামলা প্রসঙ্গে পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, “দেশের আইন অনুযায়ী আদালতের রায় মানতে সবাই বাধ্য। এক বছর আগে থেকেই আদালতের রায় বিভিন্ন ভাবে কার্যকর করার চেষ্টা শুরু করেছি। দুর্গাপুজো, ঈদ, পঞ্চায়েত নির্বাচন-সহ বিভিন্ন ঘটনার জন্য আদালতের নির্দেশ এখনও কার্যকর করা যায়নি। আমরা চেষ্টা করছি। এই সংক্রান্ত সব কাগজপত্র চেয়ে পাঠিয়েছি।” অটোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে বিভিন্ন মহল থেকে প্রতিবাদ ওঠার ভয়ও যে রাজ্য সরকারের রয়েছে, তা এ দিন পরিষ্কার করে দিয়েছেন পরিবহণমন্ত্রী। তাঁর মন্তব্য, “রাস্তায় অটো ধরে জোর করে যদি মিটার লাগানোর চেষ্টা করতাম, তা হলে বিরোধীরা এটা নিয়ে আন্দোলন করত।” এ ক্ষেত্রেও সিপিএমকে দুষেছেন মদন। তাঁর অভিযোগ, “সিপিএম উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে ১৯৯০ সালে অটো থেকে মিটার উঠিয়ে দেয়। তার জন্যই সাধারণ মানুষের ভোগান্তি শুরু হয়েছে।”
অটোকাহিনি
হাইকোর্টের আপত্তি
• সরকারের ভাড়া ঠিক করে না দেওয়া
• মিটার ছাড়া অটো চালানো
• নির্দিষ্ট রুটের বাইরে অটো চালানো
• রুট ভাগ করে অটো চালানো
• যাত্রীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও যাত্রী প্রত্যাখ্যান
বাস্তব অবস্থা
সরকারের অটো-নীতিই তৈরি হয়নি, তাই কাটা রুটের রমরমা
কোনও অটোতেই মিটার লাগানো নেই
অটোর ভাড়া ঠিক করছে সংশ্লিষ্ট শ্রমিক সংগঠন
যাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার চলছেই
কোর্ট চায়
• সংশ্লিষ্ট অটোর পারমিট বাতিল
• সংশ্লিষ্ট অটোচালককে সাসপেন্ড



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.