লাল রংটা পুরো ধরেনি। কোনওটায় আবার হলদেটে ভাব। অথচ এই পলাশই এক-একটা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫ থেকে ১০ টাকায়। সরস্বতী পুজোয় এ বার পলাশ ফুলে যেন সত্যিই আগুন লেগেছে।
পলাশ ফুল ছাড়া সরস্বতী পুজো যেন কিছুটা অসম্পূর্ণই থেকে যায়। মল্লিকঘাট ফুল বাজারের বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, কালী পুজোয় যেমন জবা আর দুর্গাপুজোয় পদ্মফুল, তেমনই পলাশের চাহিদা বেড়ে যায় সরস্বতী পুজোর সময়ে। অথচ এ বার সরস্বতী পুজোয় পলাশ ফুলের আকাল পড়েছে। ভাল পলাশ প্রায় পাওয়াই যাচ্ছে না। মল্লিকঘাট ফুল বাজারের বিক্রেতা রতন চাকী বলেন, “এক কেজি পলাশ স্থানীয় বাজারের ফুল বিক্রেতারা ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি দরে নিয়ে যাচ্ছেন। ভাল মানের এক-একটা পলাশ ফুল বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকায়।” সারা বাংলা ফুল-চাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ নায়েক বলেন, “অন্য বার মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া থেকে প্রচুর পলাশ ফুল বাজারে আসে। মেদিনীপুর, পুরুলিয়ায় পলাশের জঙ্গল লাল হয়ে থাকে। এ বার তুলনায় অনেক কম ফুল ফুটেছে। অন্যান্য বারের তুলনায় এ বার অন্তত ৪০ শতাংশ কম ফুল মল্লিকঘাটে এসেছে। কিন্তু সরস্বতী পুজোর সংখ্যা তো কমেনি। বরং বাড়ির পুজো বেড়েছে।” |
কেন এ বার পলাশ ফুল কম? পরিবেশের খামখেয়ালিপনার জন্যই এ বার ফুল কম ফুটেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভাইস চ্যান্সেলর সিদ্ধার্থ দত্ত ফুল নিয়ে নানা রকম গবেষণার কাজ করেছেন। তিনি বলেন, “পলাশ মূলত বসন্তের ফুল। দেখা যায় দোলের দিন পনেরো আগে পলাশ ফুল খুব ভাল ফোটে। কিন্তু এ বার সরস্বতী পুজো খাতায়-কলমে বসন্তে হলেও শীত যথেষ্ট রয়েছে। ফলে ওই ফুল এখনও বেশি ফোটেনি।”
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে একমত ফুল-চাষিরা। মানিকতলা ফুল বাজারের এক বিক্রেতা রতন জানা বলেন, “নিয়ম মেনে মাঘ মাসে পঞ্চমী তিথিতে সরস্বতী পুজো হলেও বসন্ত কোথায়? সকালে ও রাতে তো রীতিমতো জাঁকিয়ে ঠান্ডা পড়ছে। গত বছরও সরস্বতী পুজোয় এত শীত ছিল না। বসন্তের আভাস ছিল ভালই। তাই পলাশও ভাল ফুটেছিল। এ বার ঠিক উল্টো।” শোভাবাজারের বাসিন্দা মৌসুমী মজুমদার বলেন, “ভাল পলাশ ফুল পেলাম না। যেগুলি পেলাম, তার দাম বলছে ১৫ টাকা করে। ঠাকুরমশাই বলেছেন পলাশ ফুল না পেলে অন্য কোনও লাল ফুল দিয়ে কাজ চালিয়ে নেবেন।”
তেমনটা হলে অবশ্য অসুবিধে হবে না পুজো করতে। কারণ পলাশ ফুল বাদে অন্য ফুলের জোগান ঠিকই আছে বলে জানিয়েছেন ফুল বিক্রেতারা। সরস্বতী পুজোর আগে ফুলের দাম কিছুটা বাড়লেও তা সাধ্যের বাইরে নয়। নারায়ণবাবু জানান, এ বার বর্ষা বেশি হওয়ায় দুর্গাপুজোর সময়ে ফুলের বাজার খারাপ ছিল। তার প্রভাব পড়েছিল কালী পুজোতেও। তাই চাষীরা অপেক্ষা করছিলেন সরস্বতী পুজোর জন্য। এ বার সরস্বতী পুজোর আগে ফলন ভালই হয়েছে। তবে চাহিদা বেশি থাকায় দাম একটু বেশি তো হয়ই।” |