যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে এতদিন প্রচারের হাতিয়ার শানিয়েছে তৃণমূল, এ বার সেই নন্দীগ্রাম মামলায় সিবিআইয়ের চার্জশিটকে হাতিয়ার করে বাড়ি-বাড়ি পাল্টা প্রচারে নামতে চলেছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সিপিএম।
নন্দীগ্রামে কেমিক্যাল হাবের জন্য জমি অধিগ্রহণে রাজ্য সরকারের পক্ষে হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদ ২০০৬-এর ২৮ ডিসেম্বর নোটিস জারি করেছিল। যে নোটিস বাতিলের দাবিতে নন্দীগ্রামে শুরু হয়েছিল জমি-রক্ষায় ভূমি-উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির আন্দোলন। জমি অধিগ্রহণ বা কেমিক্যাল হাব তৈরির সিদ্ধান্ত থেকে যে রাজ্য সরে আসছে, পরে বিবৃতি দিয়ে জানাতে হয়েছিল তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে। কিন্তু তত দিনে নন্দীগ্রামে রক্তস্নান শুরু হয়ে গিয়েছিল। ২০০৭-এর ১৪ মার্চ আন্দোলনকারীদের অবরোধ হটাতে গিয়ে পুলিশের গুলি-চালনায় নিহত হন ১৪ জন। ওই দিনের অভিযানে পুলিশের সঙ্গেই খাঁকি উর্দিতে সিপিএম ক্যাডাররাও ছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। ওই ঘটনার পরে নন্দীগ্রাম তথা পূর্ব মেদিনীপুর তো বটেই, রাজ্য-রাজনীতিতেও পায়ের তলার জমি আলগা হতে শুরু করে সিপিএমের। কিন্তু কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে ওই ঘটনার তদন্ত করে সিবিআই সম্প্রতি হলদিয়া মহকুমা আদালতে যে চার্জশিট জমা দিয়েছে, তাতে কার্যত বাম সরকারকে ক্লিনচিট দেওয়া হয়েছে। ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির সমর্থকদের সশস্ত্র হামলার জন্যই পুলিশ গুলি চালাতে বাধ্য হয়েছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে রিপোর্টে। শুধু তাই নয়, চার্জশিটে জমিরক্ষা আন্দোলনকারীদের মধ্যে ১৬৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছেযা নিয়ে চরম অস্বস্তিতে পড়েছে সেই সময় জমিরক্ষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া তৃণমূল।
এতদিন নন্দীগ্রামের ওই ঘটনাকে হাতিয়ার করে তৃণমূল একতরফা প্রচার চালিয়েছে। পাল্টা প্রচারে না নামার জন্য কিছুদিন আগে দলের রাজ্য নেতৃত্ব ও জেলা সিপিএম নেতৃত্বের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছিলেন দলের রাজ্যকমিটি থেকে বাদ পড়া লক্ষ্মণ শেঠ। অবশেষে সিবিআইয়ের এই চার্জশিটকে হাতিয়ার করে তৃণমূলের বিরুদ্ধে পাল্টা প্রচারে নামতে চলেছে কোণঠাসা সিপিএম। গত শুক্রবার পূর্ব মেদিনীপুরের দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রবীন দেব ও দীপক সরকারের উপস্থিতিতে তমলুকে জেলা কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, নন্দীগ্রাম মামলার সিবিআই চার্জশিটের উল্লেখ করে তৈরি ‘ফোল্ডার-লিফলেট’ বাড়ি-বাড়ি বিলি করা হবে। জেলার প্রতিটি জোনাল কমিটি এলাকায় দলীয় কর্মীরা কমপক্ষে ১০ হাজার করে লিফলেট বিলি করবেন। আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি ব্রিগেড সমাবেশ কর্মসূচি মিটলেই নন্দীগ্রাম নিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীরা প্রচারে নামবেন।
নন্দীগ্রামের সিপিএম নেতা তথা দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অশোক গুড়িয়া বলেন, “নন্দীগ্রাম নিয়ে এতদিন ধরে আমাদের দলের বিরুদ্ধে নানাভাবে মিথ্যা প্রচার করেছে তৃণমূল ও তার সহযোগীরা। কিন্তু সিবিআই তদন্ত রিপোর্টে প্রমাণিত আমাদের বিরুদ্ধে যা যা বলা হচ্ছিল তা ঠিক নয়। বিষয়টি নিয়ে জনে-জনে প্রচার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
এই প্রেক্ষিতে তমলুক লোকসভা কেন্দ্রে লক্ষ্মণ শেঠকে ফের প্রার্থী করা হবে কি না, তা নিয়েও জল্পনা শুরু হয়েছে সিপিএমের অন্দরে। দলের একাংশের মতে তমলুক কেন্দ্রে দলের হয়ে লড়াই করার জন্য লক্ষ্মণ শেঠের মতো জননেতাকেই প্রয়োজন। নন্দীগ্রাম মামলায় সিবিআই কার্যত বাম সরকারকে ক্লিনচিট দেওয়ার পর সেই দাবি আরও জোর হয়েছে। অন্দরের খবর, আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি ব্রিগেড সমাবেশের আগে দলের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করতে রাজ্য নেতৃত্ব আলোচনা শুরু করেছেন।
এদিকে ব্রিগেডের প্রস্তুতি হিসেবে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সিপিএম নেতৃত্ব বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে নিয়ে এসে সভা করলেও পূর্ব মেদিনীপুরে জেলায় আপাতত বড় সভা হচ্ছে না। মূলত আর্থিক কারণেই বড় সভার আয়োজন করতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য। তবে ব্রিগেডের সমাবেশের সমর্থনে জন্য জেলা জুড়ে জোনাল স্তরে প্রস্তুতি সভা করা হচ্ছে। সেখানে রাজ্য স্তরের কিছু নেতাও থাকবেন বলে জানা গিয়েছে। |