এক কাপ চা’য়, তোমাকে চাই। ব্রিগেডের সভার আগে রাজ্যের চা বিক্রেতাদের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর যোগসূত্রের সেরা উপমা হয়তো এই লাইনটাই। একসময় গুজরাতের স্টেশনে চা বিক্রি করতেন আজকের বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী। তাই রাজ্যের সব প্রান্তের চা বিক্রেতাদের তাঁর সভায় আমন্ত্রণ জানাতেও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
শেষ মাঘের দুপুরে শিলিগুড়ির বাঘাযতীন পার্কে তেমন ভিড় নেই। স্টোভ নিভিয়ে, রোদ্দুরে জিরিয়ে নিচ্ছিলেন রতন সাহা। বিজেপির পতাকা হাতে বেশ কয়েকজনকে তাঁর-ই দিকে এগিয়ে আসতে দেখে, ফের স্টোভ জ্বালানোর জন্য পকেট হাতড়ে দেশলাই বের করলেন। পরের ঘটনার জন্য অবশ্য প্রস্তুত ছিলেন না তিনি। কেউ-ই চা খেতে যাননি। কার্ড বের করে তাঁর হাতে ধরিয়ে কলকাতায় ব্রিগেড যাওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হল চয়নপাড়ার বাসিন্দা দু’দশক ধরে চা বিক্রি করা রতনবাবুকে।
গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ছবি ছাপা সেই কার্ড রতনবাবুর হাতে দিয়ে, তাঁকে বিজেপির দার্জিলিং জেলা সভাপতি রথীন্দ্র বসু বললেন, “এই নরেন্দ্র মোদীও একসময়ে গুজরাতের স্টেশনে চা বিক্রি করতেন। তিনি-ই নির্দেশ দিয়েছেন, রাজ্যের সব প্রান্তের চা বিক্রেতাদের তাঁর সভায় আমন্ত্রণ জানাতে। আপনারা কলকাতায় যেতে চাইলে, আমরা তার ব্যবস্থা করব। তিন দশক ধরে চা ফেরি করা আশিঘরের নারায়ণ পালকেও কার্ড দিয়ে ব্রিগেড যাওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হল সোমবার বিকেলে। বিজেপির জেলা সভাপতি সহ অন্যরা এ দিন সকলকে আমন্ত্রণ করতে বেরিয়েছেন। জেলা সভাপতি বললেন, “অন্তত ১০০ জন চা বিক্রেতা শিলিগুড়ি থেকে ব্রিগেড যাচ্ছেন। কিন্তু দলের রাজ্য কমিটি মারফত নরেন্দ্র মোদী নির্দেশ পাঠিয়ে শহরের সিংহভাগ চা বিক্রেতার কাছে আমন্ত্রণের কার্ড পৌঁছে দিতে বলেছেন। সে কারণে শেষ মুহূর্তে ফের নেমতন্নে বেরিয়েছি।” আগামী বুধবার কলকাতায় ব্রিগেড ময়দানে বিজেপির সভায় বক্তব্য রাখবেন মোদী। দার্জিলিং জেলা বিজেপির সূত্রে জানানো হয়েছে, জেলা থেকে অন্তত ৩ হাজার কর্মী সমর্থক বিগ্রেডে যাচ্ছেন। মোদীকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেছে নেওয়ার জন্য ‘থিম’ গানও তৈরি করেছে শিলিগুড়ির বিজেপির যুব কর্মীরা।
শেষ কোন অনুষ্ঠানে তাঁকে কার্ড পাঠিয়ে আমন্ত্রণ করা হয়েছে তা মনে করার চেষ্টা করলেন নারায়ণবাবু। তিন মেয়ের মধ্যে এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে। আর্থিক সামর্থ্যের অভাবে মেয়েদের যথাযথ পড়াশোনাও করাতে পারেনি বলে আক্ষেপ করলেন। তাঁর কথায়, “নরেন্দ্র মোদীর ছবি দেখেছি। উনি গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী তাও জানি। কিন্তু আমাকে কার্ড পাঠিয়ে আমন্ত্রন জানানো হয়েছে। এটা ভেবেই ভাল লাগল।” ষাটের কোঠায় পৌঁছে যাওয়া চা বিক্রেতা রতনবাবু অবশ্য বললেন, “উনি আগে চা বিক্রি করতেন, এটা ভেবে গর্ব হচ্ছে। তাই হয়ত উনি আমাদের সম্মান দিলেন। বিগ্রেডে যাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু ভাল লাগল।’’ ব্রিগেডে না গেলেও কার্ড পেয়ে বিস্মিত রতনবাবু ও নারায়ণবাবু।
তবে যাচ্ছেন পীযূষ সরকার। কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামের ঠেলা ভ্যানে চা বিক্রি করেন শিলিগুড়ির শান্তিপাড়ায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে নিয়ে থাকেন তিনি। এ দিন তাঁকেও কার্ড দিয়েছে বিজেপি কর্মীরা। পীযূষবাবুর কথায়, “আমি কোনও রাজনৈতিক দল করি না। ব্রিগেডে গেলেও বিজেপিকে ভোট দেব এমন নয়। তবে এক জন চা বিক্রেতাকে সামনে থেকে দেখার জন্য কলকাতায় যেতে রাজি হয়েছি। স্টেশনের চায়ের দোকান থেকে যিনি মঞ্চে পৌঁছেছেন, তাঁকে একবার দেখব না!” |