কলকাতা শহর এবং রাজ্যের নানা প্রান্তে ৮২টি ‘নমো টি স্টল’। নরেন্দ্র মোদীর আগমনের ৪৮ ঘণ্টা আগে শহরের রাজপথে ঘুরে বেড়াচ্ছে তাঁর নামাঙ্কিত চায়ের বিপণি নিয়ে মোবাইল ভ্যান। উত্তর কলকাতায় সোমবার সন্ধ্যায় জনতার মধ্যে বিতরিত হয়েছে মোদী সন্দেশ! মোদীর মুখোশ পরে এবং প্রচারপত্র নিয়ে বইমেলায় লোকজনকে ঘুরে বেড়াতে দেখে পুলিশের শিরদাঁড়ায় ঠান্ডা স্রোত! অনলাইনে আসন সংরক্ষণ তো আছেই।
দলের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীর জন্য কাল, বুধবার ব্রিগেড ময়দান ভরিয়ে দেওয়াই এখন রাজ্য বিজেপি-র কাছে চ্যালেঞ্জ। স্মরণযোগ্য কালের মধ্যে এই প্রথম ব্রিগেড সমাবেশ করতে চলেছে এমন একটি দল, শুধু সাংগঠনিক শক্তিতে সংগঠিত লোক এনে যাদের পক্ষে ময়দান ভরিয়ে ফেলা কঠিন। তাই নানা অভিনব কৌশল নিয়ে মোদীর সভাকে বিপণন করতে চেয়েছে বিজেপি। সমাজের নানা অংশের বিশিষ্ট মানুষজন যাতে সে দিন ব্রিগেডে আসেন, তার জন্য বস্তুত, বিজেপি-র আগে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের ব্রিগেড সমাবেশ হয়ে গিয়েছে। আবার বিজেপি-র পরে হবে বিরোধী বামফ্রন্টের সমাবেশ। নিজেদের সাংগঠনিক শক্তিতে তৃণমূল এবং বাম, দু’পক্ষই লোক এনেছে এবং আনবে। বিজেপি-র উপরে তাই বাড়তি চাপ সম্মানরক্ষার! বিশেষত, দেশের যেখানেই মোদী যাচ্ছেন, সেখানেই যখন ভিড় উপচে পড়ছে। নিজেদের সীমিত সাংগঠনিক শক্তি উজাড় করে দিয়েও রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব তাই নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পথে হেঁটেছেন এ বার। ব্রিগেড সমাবেশকে এমন বিপণনের প্রয়াস সেই অর্থে অভিনব! |
চলছে বিজেপির পতাকা তৈরির কাজ। সোমবার ময়দানে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক। |
বিভিন্ন জেলা থেকে গাড়ি, বাস, ম্যাটাডোর ভাড়া করে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের ব্রিগেডে নিয়ে আসাই রাজ্যের প্রধান রাজনৈতিক শিবিরের দস্তুর। বিজেপি-র কর্মী-সমর্থকেরাও কাল একই পন্থায় আসবেন ব্রিগেডে। ব্যপস্থা থাকছে বিশেষ ট্রেনেরও। আবার তারই পাশাপাশি মোদী-উৎসুক জনতার জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে অনলাইন বুকিং। বিজেপি সূত্রের খবর, এ দিন, মোদীর সভার ৪৮ ঘণ্টা আগে পর্যন্ত প্রায় ২১ হাজার ৭০০ জন অনলাইনে ব্রিগেডের সভার আসন সংরক্ষণ করেছেন। তাঁদের মধ্যে ৩৫০০ জন সংরক্ষণ করেছেন বিনামূল্যে। বাকিরা ন্যূনতম ১০০ টাকা থেকে শুরু করে যে যেমন পেরেছেন, অনুদান দিয়েছেন। কিন্তু টাকা দেওয়া বা না-দেওয়ার উপর নয়, বরং আগে এলে আগে পাবেন, এই ভিত্তিতেই থাকছে চেয়ার। কিন্তু সভার জন্য টাকা নেওয়ায় নৈতিক প্রশ্নও তো উঠছে? রাহুলবাবুর জবাব, “রাজ্য বিজেপি আর্থিক ভাবে দুর্বল। শুধু পুঁজিপতিরা এবং সারদার মতো সংস্থাগুলি ব্রিগেডের সভার জন্য টাকা দেবে, তা আমরা চাইনি। সাধারণ মানুষের অর্থে সভা করতে চেয়েছি।”
রাহুলবাবুর অভিযোগ, অভিনব প্রচার কৌশল নিতে গিয়ে তাঁদের বাধার মুখেও পড়তে হয়েছে। রবিবার বইমেলায় মোদীর মুখোশ পরে প্রচারপত্র বিলি করার সময়ে বিজেপি-র যুব শাখার কর্মীদের কাছ থেকে কেড়ে মোদীর মুখোশ ছিঁড়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। পটনায় মোদীর সভায় বিস্ফোরণের প্রেক্ষিতে ব্রিগেডে এনএসজি, রাজ্য পুলিশ ও গুজরাত পুলিশের তরফে বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকছে। তবু রাজ্য প্রশাসনের উপরে ভরসা রাখছে না বিজেপি। ব্রিগেডে এক হাজার স্কোয়ার ফিট আয়তনের তিনটি মঞ্চ তৈরি হচ্ছে। রাখা হচ্ছে ১২টি এলইডি স্ক্রিন।
এই মোদী আবহের মধ্যেই এ দিন বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন এক ঝাঁক বিশিষ্ট ব্যক্তি। তাঁদের মধ্যে ছিলেন অভিনেতা নিমু ভৌমিক, প্রাক্তন পুলিশ-কর্তা বি কে শর্মা, সারা বাংলা ট্যাক্স কনসালট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশনের নেতা দিলীপ চৌধুরী, সঙ্গীত পরিচালক অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যের সেচ বিভাগের প্রাক্তন চিফ ইঞ্জিনিয়ার কল্যাণ মিশ্র প্রমুখ। রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন ডিজি আর কে হান্ডা আগেই বিজেপি-তে যোগ দেন। তিনিও এ দিন কলকাতা প্রেস ক্লাবে হাজির ছিলেন। আসরে নেমেছেন মোদী-বিরোধীরাও। এ দিন তৃণমূলের সংখ্যালঘু শাখার চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলি নানা ধর্মের প্রতিনিধিদের পাশে নিয়ে ঘোষণা করেছেন, মোদীর সভার পরে তাঁরা গঙ্গাজল দিয়ে ব্রিগেড পবিত্র করবেন! |
মোদী-সজ্জা |
• এক হাজার বর্গফুটের তিন মঞ্চ। মধ্যমণি মোদী।
• অনলাইন আবেদনকারীদের জন্য ২২ হাজার চেয়ার।
• চা-বিক্রেতা-সহ আমন্ত্রিতদের জন্য আরও ১০ হাজার।
• এলইডি স্ক্রিন ১২টি।
• গোটা চত্বরে মোদী-মুখোশ। |
|