নজরুল-মামলায় ডিজি’র পদে রেড্ডির নিয়োগ রদ
রাজ্যের পুলিশ-প্রধান হিসেবে জিএম প্রভু রাজাশেখর রেড্ডির নিয়োগ সোমবার খারিজ হয়ে গেল সেন্ট্রাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনাল (ক্যাট)-এর এক নির্দেশে। কারণ, ডিজি পদমর্যাদায় রেড্ডি-সহ পাঁচ জন আইপিএস অফিসারের পদোন্নতিকেই বেআইনি অভিহিত করে ক্যাট এ দিন তা বাতিল করে দিয়েছে। নির্দেশের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার হাইকোর্টে গেলেও যেতে পারে বলে প্রশাসনের তরফে ইঙ্গিত মিলেছে।
কোনও অফিসারকে রাজ্যের পুলিশ-প্রধানের পদে নিয়োগ করতে হলে ডিজি পদমর্যাদায় তাঁকে উন্নীত হতেই হবে। কিন্তু ক্যাট এ দিন ডিজি পদমর্যাদায় রেড্ডির পদোন্নতিই বাতিল করেছে। বিতর্কিত আইপিএস অফিসার নজরুল ইসলামের দাখিল করা একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতেই ট্রাইব্যুনালের এ হেন সিদ্ধান্ত। ঘটনাচক্রে এ দিন, ৩ ফেব্রুয়ারি নজরুলের জন্মদিন। গত বছর এই দিনে তাঁকে শুভেচ্ছার চিঠি পাঠিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু নজরুল তার উত্তরে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে তাঁর সমালোচনা করেন। তার পরেই নজরুলের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করে রাজ্য সরকার।
নজরুল ইসলাম প্রভু রাজাশেখর রেড্ডি
১৯৮১ ব্যাচের আইপিএস নজরুল বর্তমানে রাজ্য পুলিশের অতিরিক্ত ডিজি (প্রভিশনিং)। গত বছর সেপ্টেম্বরে ক্যাট-এর দ্বারস্থ হওয়া নজরুল তাঁর আবেদনে জানিয়েছিলেন, তাঁকে অবৈধ ভাবে বঞ্চিত করে রাজ্য তাঁর জুনিয়র পাঁচ অফিসারকে ডিজি পদমর্যাদায় পদোন্নতি দিয়েছে। ক্যাটের মতে, নজরুলকে পদোন্নতি না-দেওয়ার ক্ষেত্রে কাজ করেছিল তাঁর প্রতি রাজ্য সরকারের বিদ্বেষ। এ দিনের নির্দেশে ক্যাট জানিয়েছে, ডিজি পদমর্যাদায় ওই পাঁচ আইপিএস অফিসারের পদোন্নতি বাতিল করে নতুন করে ‘স্ক্রিনিং কমিটি’-র বৈঠক করতে হবে। সেখানে উপযুক্ত মানদণ্ডের নিরিখে নতুন ভাবে ঠিক করতে হবে, কোন কোন অফিসার ডিজি পদমর্যাদায় পদোন্নতি পাবেন।
বর্তমান রাজ্য পুলিশের প্রধান জিএমপি রেড্ডি ১৯৮২ ব্যাচের আইপিএস। বাকি চার আইপিএসের তিন জনই ১৯৮২ ব্যাচের-- ডিজি (ওয়েলফেয়ার) অনিল কুমার, ডিজি (উপকূল নিরাপত্তা) রাজ কানোজিয়া এবং ডিজি (কমান্ডান্ট জেনারেল) রবীন্দ্রজিৎ সিংহ নালওয়া। চতুর্থ জন ১৯৮১ ব্যাচের আইপিএস ডিজি (এনফোর্সমেন্ট) বিজয় কুমার। নজরুলের ব্যাচের হলেও বিজয় কুমার ‘ইন্টারসে সিনিয়রিটি’-র বিচারে নজরুলের পরে। চাকরির পরীক্ষা ও প্রশিক্ষণের সময়ে প্রাপ্ত নম্বরের নিরিখেই ইন্টারসে সিনিয়রটি নির্ধারণ করা হয়।
ক্যাটের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে কী পদক্ষেপ করা হবে, সে সম্পর্কে রাজ্য সরকার এখনও স্পষ্ট কিছু জানায়নি। যদিও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসন এর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করার কথাই ভাবছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়। “হাইকোর্টে আবেদন করা-সহ সমস্ত আইনি পথ খোলা রয়েছে” এ দিন মন্তব্য করেছেন তিনি। ক্যাটের নির্দেশ, নজরুলকে ডিজি পদমর্যাদায় উন্নীত করা হল কি হল না, সেটা রাজ্য সরকারের তরফে ১৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তাকে জানাতে হবে। পাশাপাশি নজরুলকে ডিজি পদমর্যাদায় পদোন্নতি দেওয়া হলে নতুন পদে তাঁকে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই নিয়োগ করতে হবে। ওই দিনটিই আবার নজরুলের অবসর নেওয়ার কথা।
অর্থাৎ, হাইকোর্টে যাওয়ার আগে ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় পাচ্ছে রাজ্য সরকার। ক্যাটের নির্দেশে জেরে রাজ্য পুলিশের প্রধানের নিয়োগ খারিজ হয়ে গেলে প্রশাসনিক সঙ্কট সৃষ্টি হবে কি না, এ প্রশ্নের জবাবে সরকারি সূত্রের দাবি, ক্যাটের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে যাওয়ার সুযোগ থাকছে। তাই এখনই এ ধরনের সঙ্কট হওয়ার কথা নয়। প্রসঙ্গত, ২০০২-এর মার্চে রাজ্য পুলিশের প্রধান পদে দীনেশ বাজপেয়ীর নিয়োগ খারিজ করে দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। রাজ্যের তদানীন্তন ডিজি (হোমগার্ড) মানস চক্রবর্তীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই হাইকোর্ট নির্দেশটি দিয়েছিল। বারো বছর আগে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকার হাইকোর্টের সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছিল। শীর্ষ আদালত বাজপেয়ীর নিয়োগের পক্ষে রায় দেয়।
এ দিন ক্যাটের বিচারপতি প্রতাপকুমার রায় ও বিচারবিভাগীয় সদস্য রামসেবক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বেঞ্চ জানিয়েছে, ২০১২-র ৫ ডিসেম্বর রাজ্য সরকারের স্ক্রিনিং কমিটি যে বৈঠকে রেড্ডি-সহ পাঁচ আইপিএস-কে ডিজি পদমর্যাদায় উন্নীত করার যোগ্য মনে করেছিল, সেই কমিটির বৈঠকই অবৈধ। নজরুল তাঁর আবেদনে বলেছিলেন, নিয়ম অনুযায়ী অতিরিক্ত মুখ্যসচিব পদমর্যাদার নীচে কোনও আইএএস অফিসার ওই কমিটিতে থাকতে পারেন না। অথচ বর্তমান স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় সেই সময়ে অতিরিক্ত মুখ্যসচিব না-হওয়া সত্ত্বেও কমিটিতে ছিলেন। নজরুলের অভিযোগ, ডিজি পদমর্যাদায় পদোন্নতি দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিটি এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে খেয়াল-খুশি মতো মানদণ্ড ঠিক করেছে, অফিসারদের পুরস্কার, সততা, সাফল্য ইত্যাদি বিচার করেনি।
ক্যাট এ দিন জানিয়েছে, এ বার নতুন ভাবে ডিজি পদমর্যাদায় পদোন্নতি দেওয়ার সময় ‘পারফরম্যান্স অ্যাপ্রাইজাল রিপোর্ট’-এ উল্লিখিত নম্বরই হবে মানদণ্ড। ক্যাট বলেছে, বেশ ক’বছর নিজের কাজের মূল্যায়ন করে নজরুল তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পাঠান। কিন্তু উপরওয়ালার মন্তব্য-সহ সেই রিপোর্ট নজরুলকে ফেরত পাঠানো হয়নি। ক্যাটের নির্দেশ, ওই বছরগুলির ভিত্তিতে তাঁর মূল্যায়ন করা যাবে না। উপরন্তু একটি বই লেখা এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমালোচনা করে চিঠি লেখার জন্য নজরুলের বিরুদ্ধে এখন যে বিভাগীয় তদন্ত চলছে, তাঁর কাজের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে সেই তদন্তকেও ধর্তব্যে আনা যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে ক্যাট।
স্বরাষ্ট্রসচিব নবান্নে বলেন, “এক জন আইপিএস অফিসারের করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ক্যাটের দেওয়া নির্দেশের বিষয়ে কিছু তথ্য পেয়েছি। নির্দেশের কপি আমাদের হাতে এখনও আসেনি।” তবে ক্যাটের নির্দেশের ভিত্তিতে রাজ্য এই মুহূর্তে কোনও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছে না বলেও জানান স্বরাষ্ট্রসচিব। রায়ের পরে নজরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁর প্রতিক্রিয়া, “আমি কোনও মন্তব্য করব না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.