তার চালাঘর থেকে উদ্ধার হয়েছিল এক সদ্যোজাতের মুন্ডু। ধড় আজও পাওয়া যায়নি। দু’বছর আগে বাঁকুড়ার শালতোড়ার সেই ঘটনায় ফাঁসির সাজা হল তান্ত্রিকের। সোমবার বাঁকুড়ার ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের বিচারক সুলগ্না ঘোষ দস্তিদার লক্ষ্মীকান্ত কর্মকার নামে ওই তান্ত্রিককে মৃত্যুদণ্ডের সাজা শোনান।
পুলিশ সূত্রের খবর, ২০১২ সালের ২৯ জানুয়ারি শালতোড়ার কোলাকুড়ি গ্রামের শ্মশানের অদূরে তান্ত্রিক লক্ষ্মীকান্তর চালাকুঠিতে একটি সদ্যোজাত শিশুর কাটা মুন্ডু দেখতে পান স্থানীয় বাসিন্দারা। মুন্ডুটি নিয়ে চালাঘরে ভিতরে কালী মূর্তির সামনে বিভিন্ন খেলা দেখাচ্ছিল ওই তান্ত্রিক। ঘটনাটি দেখে তান্ত্রিকের হাতে থাকা মুন্ডুটি আদৌ কোনও শিশুর না পুতুলের, তা নিয়ে প্রথম দিকে ধন্দে পড়ে গিয়েছিলেন গ্রামবাসীরা। কিন্তু, কিছু পরেই মুন্ডুটি থেকে ঝরতে থাকা রক্ত দেখে যাবতীয় সন্দেহের অবসান হয়। ঘটনার পরই তান্ত্রিককে আটকে রেখে পুলিশে খবর দেন গ্রামবাসীরা। পুলিশ গিয়ে লক্ষ্মীকান্তকে গ্রেফতার করে। ঘটনার পরদিনই শ্মশান সংলগ্ন এলাকা থেকে শিশুটির নাড়ি উদ্ধার হয়। অভিযুক্ত তান্ত্রিককে হেফাজতে নিয়ে পুলিশ শ্মশানের মাটির নীচে প্লাস্টিকে মুড়ে রাখা রক্ত মাখা ভোজালিও উদ্ধার করে। যদিও শিশুটির ধড় এখনও উদ্ধার হয়নি। তার পরিচয়ও জানা যায়নি বলেই জানিয়েছেন ওই মামলার সরকারি আইনজীবী অরুণকুমার চট্টোপাধ্যায়। |
অরুণবাবু বলেন, “ময়না-তদন্তের পরে জানা গিয়েছে, ওই শিশুটির বয়স ছিল ১০ দিনের মধ্যে এবং তাকে জ্যান্ত অবস্থাতেই গলা কেটে খুন করা হয়েছিল। উদ্ধার হওয়া ধারালো অস্ত্রে লেগে থাকা রক্ত পরীক্ষা করে প্রমাণিত হয়েছে, শিশুটির গলা ওই অস্ত্র দিয়েই কাটা হয়েছিল।” অরুণবাবু জানান, জেরার মুখে তান্ত্রিক পুলিশের কাছে দাবি করে, ওই শিশুটিকে কেউ বা কারা ফেলে দিয়েছে। গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই বন্দি অবস্থায় বিচার চলছিল তান্ত্রিকের। ২০১২ সালের ১২ এপ্রিল আদালতে ঘটনার চার্জশিট জমা করে পুলিশ। সোমবার বিচারকের এজলাসের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে লক্ষ্মীকান্ত চিৎকার করে বলে, সে নির্দোষ। তাকে ফাঁসানো হচ্ছে। বিচারক লক্ষ্মীকান্তকে ফাঁসির সাজা শোনান।
এর আগে এ দিন আদালতে আসার সময় উপস্থিত সাংবাদিকদের দেখে মেজাজ হারায় সাজাপ্রাপ্ত তান্ত্রিক। পুলিশের হাত ছাড়িয়ে সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের দিকে তেড়ে আসার চেষ্টা করলেও সে বিফল হয়। তখন মাটি থেকে ধুলো তুলে সাংবাদিকদের দিকে সে ছোড়ে। এ দিন আদালতে অবশ্য তান্ত্রিকের পরিবারের কাউকে এ দিন উপস্থিত থাকতে দেখা যায়নি। তান্ত্রিকের আইনজীবী গৌতম ঘোষ বলেন, “এই রায়ের বিরুদ্ধে আমরা হাইকোর্টে যাব।” সরকারি আইনজীবী অরুণবাবু বলেন, “ঘটনাটিকে বিচারক বিরলতম বলে উল্লেখ করেছেন। ৩০২ ধারায় তান্ত্রিককে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়েছে।” |