ফড়েদের নিয়ন্ত্রণ থেকে সব্জিচাষিদের মুক্ত করতে এবং চাষিরা যাতে ন্যায্য দাম পান সে জন্য রাজ্যের প্রতি ব্লকে কিষান মাণ্ডি তৈরির কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই মতো গত বছর জানুয়ারিতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিংয়ে স্পোর্টস কমপ্লেক্স মাঠে এক অনুষ্ঠানে গোসাবার ওই কৃষিবাজারের শিলান্যাস করেছিলেন তিনি। কিন্তু বছর ঘুরলেও ওই কিষান বাজার তৈরির কাজ একটুকুও এগোয়নি। এমনকী এ জন্য জমি চিহ্নিতকরণ বা টাকাও বরাদ্দ হয়নি বলে জানা গিয়েছে।
রাজ্যের কৃষি ও কৃষি বিপণন দফতরের প্রতিমন্ত্রী বেচারাম মান্না বলেন, “রাজ্যে ৩৪১টি ব্লক রয়েছে। তার মধ্যে ১০৯টি ব্লকে ইতিমধ্যেই কিষান মান্ডি তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে ৯০টির কাজ শেষ পর্যায়ে। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কাজ হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সুন্দরবন অঞ্চলের বিভিন্ন ব্লকেও কাজ শুরু করা হবে।” |
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই প্রকল্প তৈরির কথা কৃষি বিপণন দফতরের। সে জন্য প্রাথমিক ভাবে গোসাবার হ্যামিল্টন ট্রাস্টের একটি জমি দেখা হয়েছিল। মাটির নমুনা পরীক্ষাও করা হয়েছিল। ব্যাস, ওই টুকুই। তার পর আর কিছু হয়নি। ক্যানিংয়ের মহকুমা শাসক প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, “ওই প্রকল্প কী পর্যায়ে আছে বলতে পারব না। সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে আমাদের কিছুই জানানো হয়নি। প্রকল্পটি কোন পর্যায়ে আছে খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।” জেলা কৃষি বিপণন দফতরের আধিকারিক প্রবীর বিশ্বাস বলেন, “বিষয়টি দেখভাল করছে রাজ্যের কৃষি বিপণন দফতরের মার্কেটিং বোর্ড। গোসাবায় কৃষকবাজার তৈরির বিষয়টি কোন পর্যায়ে আছে, তা আমাদের জানা নেই।” কৃষি বিপণন দফতরের বাস্তুকার জিতেন ঘোষ বলেন, “গোসাবায় একটি কৃষকবাজার তৈরির কথা আছে। যত দূর জানি, এ বিষয়ে এখনও টেন্ডারই ডাকা হয়নি।”
গোসাবা তথা সুন্দরবন এলাকায় সেরকম কৃষি বাজার না-থাকায় চাষিরা তাঁদের খেতের ফসল বাজারে বিক্রি করতে পারেন না। বাধ্য হয়ে মহাজন বা ফড়েদের কবলে পড়ে কম দামে বিক্রি করে দিতে হয় ফসল। এই অবস্থায় মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় আশান্বিত হয়েছিলেন সব্জিচাষিরা। কিন্তু এতদিনেও বাজার তৈরির কাজ না এগোনোয় তাঁরা হতাশ। স্থানীয় বিমল সরদার, সুবল মাইতিরা বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী যখন ঘোষণা করেছিলেন গোসাবায় একটি কৃষিবাজার বা কিসান মান্ডি তৈরি করা হবে তখন আমরা ভেবেছিলাম ফড়েদের হাত থেকে রেহাই পেয়ে এ বার ফসলের ন্যায্য দাম পাব। কিন্তু আদতে এখনও পর্যন্ত সে সব কিছুই হল না।”
মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি মতো গোসাবায় কোনও কৃষকবাজার তৈরি না-হওয়ায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় চাষিরা। বিমল সরদার, সুবল মাইতিরা বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর যখন ঘোষণা করেছিলেন গোসাবায় কৃষিবাজার তৈরি করা হবে তখন আমরা আশা করেছিলাম, এ বার থেকে ফসলের ন্যায্য দাম পাব। কিন্তু আদতে তা হল না।” এ ধরনের একটি বাজার তৈরি হলে বাজার সংলগ্ন রাস্তা, পানীয় জল, শৌচালয়, ফসল রাখার জন্য গোডাউন, ফসল কেনাবেচার স্টল, ব্যাঙ্ক-সহ অন্যান্য পরিষেবার ব্যবস্থা থাকা দরকার। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী কৃষি বাজারের শিলান্যাসের পর সে সবেরও কোনও কিছুই গড়ে ওঠেনি। জেলা প্রশাসনের তরফেও এ ব্যাপারে কোনও কিছু জানানো হয়নি। শুধু গোসাবাই নয়, ক্যানিং মহকুমার ক্যানিং-১ ও ২, বাসন্তী কোথাও এখনও এ ধরনের কৃষকবাজার গড়ে ওঠেনি। এ নিয়ে প্রশাসনও নিরুত্তর। |