পার্কে গিয়ে গণধর্ষিতা কিশোরী, ধৃত প্রেমিক
‘প্রেমিক’ বলেছিল, মায়ের সঙ্গে দেখা করাতে নিয়ে যাবে। চাপা উত্তেজনা আর স্বপ্ন নিয়ে পৌঁছে গিয়েছিল বছর পনেরোর মেয়েটি।
পরের কয়েক ঘণ্টায় সব ভেঙে চুরমার। অভিযোগ, ইছামতীর ধারে নির্জন কাঁটাবাগান পার্কে নিয়ে গিয়ে ওই প্রেমিক আর তার তিন বন্ধু মেয়েটিকে ধর্ষণ করে। তার সঙ্গী, সম্পর্কিত এক বোনেরও শ্লীলতাহানির চেষ্টা হয়। সে পালিয়ে বেঁচেছে।
রবিবার রাতে ঘটনাটি ঘটে উত্তর ২৪ পরগনার স্বরূপনগরে। মূল অভিযুক্ত, কিশোরীর ‘প্রেমিক’ জাহাঙ্গির সর্দারকে পুলিশ ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে। সোমবার বসিরহাট এসিজেএম আদালতে হাজির করা হলে তাকে চার দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। বাপ্পা সর্দার, মনিরুল গাজি এবং মফিজুল গাজি নামে আরও তিন জন জড়িত বলে পুলিশ জেনেছে। সকলেই গরু ব্যবসায়ী, বয়স ২০-২৫।
সকালে জাহাঙ্গিরের গ্রেফতারের খবর চাউর হতেই মনিরুল আত্মহত্যার চেষ্টা করে বলে তার বাড়ির লোকের দাবি। সে বসিরহাট হাসপাতালে ভর্তি। বাকি দু’জনকে রাত পর্যন্ত ধরা যায়নি। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, “প্রাথমিক তদন্তের পরে গণধর্ষণের মামলা রুজু করা হয়েছে।” এ দিন মেয়েটির ডাক্তারি পরীক্ষাও হয়েছে।
সম্প্রতি কয়েকটি ঘটনায় প্রেমিক বা পরিচিত পুরুষসঙ্গীর সঙ্গে বেরিয়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছে মেয়েরা। মধ্যমগ্রামে গণধর্ষণের শিকার হয়ে পুড়ে মরতে হয়েছে এক কিশোরীকে। গাইঘাটাতেও পরিচিতের সূত্রে গণধর্ষণের শিকার হয় এক নাবালিকা। গাজলেও প্রেমিকের সঙ্গে বেরিয়ে গণধর্ষিতা হতে হয় এক তরুণীকে।
স্থানীয় সূত্রের খবর, বাদুড়িয়ার উমাপতিপুরের বছর পনেরোর ওই কিশোরীর সঙ্গে মাস তিনেক আগে সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল জাহাঙ্গিরের। মেয়েটির বাবা গাছগাছড়ার ওষুধ বিক্রি করেন। সপ্তম শ্রেণির পরে সে আর পড়েনি। তার সম্পর্কিত বোন এখন নবম শ্রেণিতে পড়ছে। তারও বয়স পনেরো। দিন দুই আগে রামচন্দ্রপুরে মাসির বাড়িতে গিয়েছিল সে। রবিবার সেখানে আসে নির্যাতিতা কিশোরীও।
নির্যাতিতা মেয়েটির বোন পুলিশকে জানিয়েছে, মায়ের সঙ্গে দেখা করাবে বলে জাহাঙ্গির ফোন করে সন্ধ্যায় ডেকেছিল। সে-ও সঙ্গে যায়। জাহাঙ্গিরের সঙ্গে কিছু ক্ষণ ঘুরে রাত ৮টা নাগাদ তারা কাঁটাবাগান পার্কে যায়। জাহাঙ্গির ফোন করে তার তিন বন্ধুকেও সেখানে ডেকেছিল। বোনের দাবি, “জাহাঙ্গির দিদিকে নিরালায় নিয়ে যায়। খানিক বাদেই দিদির চিৎকার শুনে আমি ছুটে যেতে গেলে বাকিরা বাধা দেয়। শ্লীলতাহানি করারও চেষ্টা করে। আমি দৌড়ে কিছু দূরে একটি ক্লাবের সামনে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে যাই।” ক্লাবেরই এক যুবক পরে তাকে বাড়ি পৌঁছে দেয়।
নির্যাতিতা মেয়েটি নিষ্কৃতি পায় রাত ১১টা নাগাদ। পুলিশ জেনেছে, পার্ক থেকে প্রায় আধ কিলোমিটার দূরে একটি বাড়ির দোতলায় আলো জ্বলতে দেখে কোনও ক্রমে সেখানে পৌঁছয় মেয়েটি। বাড়ির কর্তা সত্যব্রত ভট্টাচার্য ও তাঁর আত্মীয়া অঞ্জনাদেবীই তাকে প্রাথমিক ভাবে সুশ্রূষা করেন। অঞ্জনাদেবীর কথায়, “মেয়েটির অবস্থা ছিল গুরুতর। সারা গায়ে কাদামাখা। পোশাক ছেঁড়া। আমরাই পুলিশে খবর দিই।” রাতেই স্বরূপনগর থানার পুলিশ পার্ক থেকে মেয়েটির সালোয়ার ও চটি উদ্ধার করে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রের খবর, জাহাঙ্গির, বাপ্পা ও মনিরুল স্বরূপনগরেরই সর্দারপাড়ার বাসিন্দা। মফিজুলের শ্বশুরবাড়ি সেখানে। মনিরুলের শ্বশুর জামাল গোলদারের বক্তব্য, “মনিরুল পুলিশের ভয়ে ভায়রাভাইয়ের বাড়িতে পালিয়েছিল। সেখানে সে আত্মহত্যার চেষ্টা করে।” স্থানীয় সূত্রের দাবি, নির্যাতিতা মেয়েটির ওড়না মনিরুলের কোমরে বাঁধা ছিল। সেটি দিয়েই নিজের গলায় ফাঁস দিয়েছিল সে। বসিরহাট হাসপাতালে তাকে কড়া পুলিশি পাহারায় রাখা হয়েছে।
ওই হাসপাতালেই ভর্তি রয়েছে মেয়েটিও। বন্ধ চোখের কোল দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে জল। কথা বলার শক্তি নেই। বহু প্রশ্নের জবাবে একটি কথাই বলে সে “এক জনকে বিশ্বাস করেছিলাম, ভালবেসেছিলাম। সে যে এমন সর্বনাশ করবে, ভাবিনি।”





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.