নিয়মিত জল মেলে না। যে জল পাওয়া যায় তা পানের অযোগ্য। দেড়শো বছরের পুরনো রানাঘাট পুরসভা আজও নাগরিকদের বাড়ি বাড়ি জলের লাইন পৌঁছে দিতে ব্যর্থ। রানাঘাট পুরসভার অলিগলিতে কান পাতলেই বাসিন্দারা পানীয় জল নিয়ে এমনই হরেক রকমের অভিযোগ শোনাচ্ছেন। পুর-নাগরিকদের অভিযোগ কার্যত স্বীকার করে পুরপ্রধান তথা এলাকার বিধায়ক তৃণমূলের পার্থসারথী চট্টোপাধ্যায় বলেন, “পানীয় জলের সমস্যা মেটাতে ৬৪ কোটি টাকা ব্যয়ে শিবপুরঘাটে ভাগীরথী নদী থেকে জল তোলার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। শীঘ্রই কাজও শুরু হবে। কাজ শেষ হতে বছর দু’য়েক সময় লাগবে। আপাতত গভীর নলকূপের মাধ্যমে জল সরবরাহ করা হচ্ছে।” আবেদন করেও গ্রাহকদের জলের লাইন না পাওয়া প্রসঙ্গে পার্থবাবু বলেন, “শহরের প্রায় ২০ হাজার গ্রাহক পানীয় জলের সংযোগ নিতে চায়। প্রায় ১৪ হাজার পরিবার সংযোগ পেয়েছে। আশা করি বাকিরাও দ্রুত সংযোগ পাবেন।”
পুরসভা সূত্রের খবর, ১৯টি ওয়ার্ডে জল সরবরাহ করার জন্য ১৪টি পানীয় জলের কল রয়েছে। এর মধ্যে একটি বিকল হয়ে রয়েছে। বাকিগুলির মাধ্যমে দিনে ৫ বার নিয়মিত জল সরবরাহ করা হয়। তবে পুরসভার দাবি মানতে নারাজ শহরবাসী। জল পরিষেবা নিয়ে তাঁরা বেজায় ক্ষুব্ধ। ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা কাশেম আলি বলেন, “তিন বছর আগে আবেদন করেও এখনও অবধি বাড়িতে জলের লাইন বসেনি। কবে সংযোগ মিলবে সে ব্যাপারেও পুরসভার কাছে স্পষ্ট কোনও উত্তর নেই।” ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের মহাপ্রভু পাড়ার বাসিন্দা বাচ্চু ঘোষ বলেন, “পুরসভা জল পরিষেবা নিয়ে মুখে অনেক লম্বা-চওড়া বুলি আওড়ায়। জল আসার নির্দিষ্ট কোনও সময় নেই। আবার অধিকাংশ কল দিয়ে জল পড়ে মন্থর গতিতে। বালতি ভরতে অনেক সময় লেগে যায়।” ১২ নম্বর ওয়ার্ডের সাধুরবাগান এলাকার বাসিন্দা রামবিলাস চৌধুরী বলেন, “আমাদের এলাকায় প্রায় একশোটি পরিবারে জলের লাইন পৌঁছয়নি। বেশ খানিকটা দূর থেকে জল নিয়ে আসতে হয়।”
পুরসভার জল পরিষেবা নিয়ে এক হাত নিয়েছে বিরোধীরা। সিপিএমের রানাঘাট লোকাল কমিটির সদস্য উদয়ন শর্মা বলেন, “রেললাইনের পূর্বপাড়ের অবস্থা খুবই খারাপ। মাঝেমধ্যেই পাইপ ফেটে যায়। ঠিক সময়ে সারানো হয় না। সেই ফাটা জায়গা দিয়ে নোংরা, কেঁচো ঢুকে জলের সঙ্গে মিশে যায়। বহুবার পুরসভাকে জানিয়েও কোন ফল মেলেনি।” একই কথা শুনিয়ে প্রদেশ কংগ্রেসের সদস্য ও রানাঘাটের প্রাক্তন কাউন্সিলার দুলাল পাত্র বলেন, “মাঝে-মাঝেই শুনি টাকা এসেছে, এ বার কাজ শুরু হবে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না।” |