অনুষ্ঠানবাড়িতে পিসতুতো বৌদিকে গয়না পরে ঘুরতে দেখে মাথায় এসেছিল ছকটা। পুলিশের দাবি, ওই গয়নার লোভেই পিসির বাড়িতে ডাকাতির পরিকল্পনা করে ফেলে নদিয়ার ধানতলার মিঠুন বিশ্বাস। এক বছর ধরে করা সেই পরিকল্পনা অবশ্য পুলিশের দৌলতে জলে গিয়েছে। ডাকাতি করার মতলবে শনিবার দলবল নিয়ে অস্ত্রশস্ত্র-সহ পিসির বাড়ির উদ্দেশে রওনা হওয়া বছর কুড়ির ওই তরুণ এবং তার তিন সঙ্গীর ঠিকানা আপাতত শ্রীঘর।
এসডিপিও (রানাঘাট) আজহার এ তৌসিফ জানান, শনিবার গভীর রাতে বগুলাতে সন্দেহের বশে মিঠুনদের গাড়ি থামাতে বলেছিলেন টহলদার পুলিশকর্মীরা। গাড়ি থামার আগেই লাফ দিয়ে কয়েকজন পালায়। তবে পুলিশ গাড়ি ঘিরে ফেলায় চার জন ধরা পড়ে। তাঁর দাবি, “জেরায় ধৃতেরা আমাদের বলেছে, তারা হাঁসখালির বগুলা পূর্বপাড়ায় যাচ্ছিল মিঠুনের পিসি বড়মণি মণ্ডলের বাড়িতে ডাকাতি করতে। ওদের কাছ থেকে একটি গুলিভর্তি ওয়ানশটার, দু’টি রামদা ও একটি তলোয়ার পাওয়া গিয়েছে।” জেলার পুলিশ সুপার সব্যসাচীরমণ মিশ্র বলেন, “ডাকাত দলটির মূল পান্ডা পালিয়ে গিয়েছে। তার খোঁজ চলছে।” ঘটনা জেনে নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছেন না বড়মণিদেবী। বলেছেন, “মিঠুন সম্পর্কে আমার জেঠতুতো দাদার ছেলে। ছোট থেকে কোলে-পিঠে নিয়েছি। ‘পিসি-পিসি’ করে অস্থির করে তুলত। এখন পুলিশ বলছে, সেই ছেলে-ই কি না আসছিল, আমার বাড়িতে ডাকাতি করতে!”
ধানতলায় বহিরগাছি স্টেশনের পাশে মিঠুনের একটি মনোহারি দোকান রয়েছে। পরিবার সূত্রে খবর, বছরখানেক আগে মারা যান বড়মণিদেবীর বাবা। শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে ছেলে-পুত্রবধূকে নিয়ে বাপের বাড়ি বহিরগাছিতে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানেই তাঁর পুত্রবধূর গয়না দেখে মিঠুন লোভে পড়ে বলে পুলিশের দাবি। জেরায় পুলিশ জেনেছে, এরই মধ্যে ডাকাতির মামলায় অভিযুক্ত এক যুবকের সঙ্গে মিঠুনের আলাপ হয়। কোথায় তারা শিকার ধরবে তা নিয়ে আলোচনার পরে ঠিক হয়, মিঠুনের পিসির বাড়িতে ডাকাতি হবে। ভাইপোর গলার আওয়াজ পেয়ে পিসি দরজা খুললেই, ভিতরে ঢুকে হামলা করবে তার সঙ্গীরা। তবে মাঝপথে তারা পুলিশের জালে পড়ায়, সে গুড়ে কাঁকর পড়ে। রবিবার রানাঘাট আদালতে তোলা হলে বিচারক ধৃতদের পাঁচ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। বড়মণিদেবী বলছেন, “বৌমার গায়ে যে গয়না ছিল, তা আসল নয়। এই বাজারে আসল গয়না পরে বেরনোর ঝুঁকি কে নেবে?” |