তাঁত বুনে প্রতি মাসে আয় হত মেরেকেটে সাতশো টাকা। বাংলাদেশের কুষ্টিয়ার নুন আনতে ভাত ফুরনো সংসারের হাল ধরা তিন কিশোরীকে প্রলোভন দেখাতে বেছে নেওয়া হয়েছিল মোক্ষম টোপ-- কলকাতায় বিউটি পার্লারে মোটা মাইনের চাকরি। এলাকারই পরিচিত দুই যুবকের কথা সরল মনে বিশ্বাস করে তাঁরা সীমান্ত পেরিয়ে চলে আসেন নদিয়ার হাঁসখালির রামনগরে। রবিবার কাকভোরে ইছামতী পার করে দেওয়ার দায়িত্বও নিয়েছিল ওই দুই যুবকই। কিন্তু ভুল ভাঙে এ পারে এসে। ওই তিন কিশোরীকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল যাদের, ওই তিন যুবকের কথাবার্তাতে সন্দেহ হয় তিন কিশোরীর। তাঁরা বুঝতে পারেন, কাজ নয়, ভিন দেশে এসে খপ্পরে পড়ে গিয়েছেন তাঁরা।
বিষয়টি জানাজানি হতে গেদে স্টেশন থেকে তিন ভারতীয় যুবককে গ্রেফতার করে কৃষ্ণগঞ্জ থানার পুলিশ। অনুপ্রবেশের দায়ে ওই তিন কিশোরীকেও গ্রেফতার করা হয়। ধৃত মাওয়ার মণ্ডল, তোতোন মালিথ্যা ও শান্তি মণ্ডল নদিয়ার হাঁসখালির বাসিন্দা। জেলার পুলিশ সুপার সব্যসাচী রমণ মিশ্র বলেন, “ওই তিন বাংলাদেশি কিশোরীকে মোটা টাকার বেতনে কাজের প্রলোভন দেখিয়ে পাচারের উদ্দেশে ভারতে নিয়ে আসা হয়েছিল। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর অভিবাসন দফতরের কর্মীদের সন্দেহ হয়। তাঁরাই ছ’জনকে ধরে আমাদের হাতে তুলে দিয়েছেন।”
পুলিশ জানিয়েছে, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ ও নওগাঁর ওই তিন কিশোরী সাতশো টাকা মাইনেতে বাংলাদেশের একটি তাঁতের কারখানায় কাজ করতেন। ঝিনাইদহের বাসিন্দা সাহাবুল মণ্ডল ও জয়নাল মণ্ডলর ওই তিন কিশোরীকে কলকাতায় বিউটি পার্লারে মোটা টাকা বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখায়। রবিবার তারা সীমান্তও পার করিয়ে দেয়। এ পারে ওই তিন কিশোরীর জন্য অপেক্ষা করছিল শান্তি মণ্ডল নামে এক যুবক। সে ওই তিন কিশোরীকে প্রথমে বগুলা স্টেশনে নিয়ে আসে। পরে সেখানে আসে মাওয়ার ও তোতোনও। তাদের কথাবার্তায় সন্দেহ হয় ওই তিন কিশোরীর। বগুলা স্টেশনে এক মহিলার কাছে গিয়ে নিজেদের বিপদের কথা খুলে বলেন তাঁরা। ওই মহিলার পরামর্শে তাঁরা বগুলা থেকে গেদেগামী ট্রেনে উঠে পড়ে। সেই ট্রেনে চেপেই পিছু ধাওয়া করে ওই তিন যুবকও। গেদে স্টেশনে নেমে তিন বাংলাদেশি কিশোরী কয়েকজনকে বাংলাদেশে যাওয়ার রাস্তাও জিজ্ঞাসা করেন। কিন্তু ততক্ষণে ওই যুবকরাও পৌঁছে যায় তাঁদের কাছে। স্টেশন চত্বরেই শুরু হয় বাকবিতণ্ডা।
গোলমাল শুনে সন্দেহ হয় অভিবাসন বিভাগের কর্মীদের। ছ’জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়। ওই কিশোরীরা পুলিশকে পুরো ঘটনা জানাতেই খবর দেওয়া হয় কৃষ্ণগঞ্জ থানায়। এরপর পুলিশ গিয়ে ছ’জনকে ধরে নিয়ে আসে। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এই ঘটনার সঙ্গে কোনও নারী পাচার চক্রের যোগ আছে কি না তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। |