|
|
|
|
দৌড়ে অলিম্পিক, স্বপ্ন দেখাচ্ছে তরুণ সঙ্ঘ
সুমন ঘোষ • মেদিনীপুর |
চূড়ান্ত অর্থ সঙ্কট। অন্যের সাহায্য-সহযোগিতার উপরেই নির্ভর করতে হয়। তবু দৌড়ে চলেছে তরুণ সঙ্ঘ ব্যায়ামাগার। সেই দৌড় অলিম্পিকে যাওয়ার স্বপ্নও এঁকে দেয়।
সম্প্রতি দার্জিলিং পুলিশ আয়োজিত ১৩ কিলোমিটার ম্যারাথনে প্রথম স্থান পাওয়া শ্যামলী সিংহ এই ক্লাবেরই সদস্য। স্বামী সন্তোষ সিংহই তাঁর কোচ। দার্জিলিংয়ে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শ্যামলীর হাতে ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা তুলে দিয়েছেন। বিচারকেরাও প্রশংসা করেছেন। আপ্লুত শ্যামলীর কথায়, “রাজ্যের নাম দেশ জুড়ে ছড়িয়ে দিতে চাই।” রাজ্যের বাইরেও দৌড় প্রতিযোগিতায় সফল হয়েছেন শ্যামলী। সন্তোষের ইচ্ছে শ্যামলীকে অলিম্পিকের মাঠে দেখা। তিনি বলেন, “চেষ্টা করব যাতে ২০১৬ সালের ব্রাজিল অলিম্পিকে শ্যামলী সুযোগ পায়।”
সন্তোষের বাড়ি রানিগঞ্জ। আর শ্যামলী পশ্চিম মেদিনীপুরের নারায়ণগড়ের বিরবিরা গ্রামের মেয়ে। দৌড়ের ময়দানেই দু’জনের পরিচয়। তারপর বিয়ে। সন্তোষই শ্যামলীকে নিয়ে আসেন মেদিনীপুর শহরের তরুণ সঙ্ঘ ব্যায়ামাগারে। এখানে অন্য প্রশিক্ষকদের কাছেও তালিম মেলে। তাছাড়া, খেলার পোশাক, জুতো থেকে খাবারের ব্যবস্থা, ভিন্ রাজ্যে প্রতিযোগিতায় পাঠানো, সেখানে যাওয়া, থাকার খরচ সবই বহন করেন ক্লাব কর্তৃপক্ষ। |
তরুণ সঙ্ঘ ক্লাবে শরীরচর্চায় ব্যস্ত শ্যামলী।—নিজস্ব চিত্র। |
এই পরিবেশ শ্যামলীর উত্থানে সহায়ক হয়েছে। ২০১৩ সালেই শ্যামলী ভুবনেশ্বর ম্যারাথন (৬ কিমি), আসানসোল ম্যারাথন (১০ কিমি) ও রাঁচি (১২কিমি) ম্যারাথনে প্রথম স্থান পান। ইলাহাবাদে আয়োজিত ইন্দিরা ম্যারাথনে (৪২.৯৫ কিলোমিটার) তৃতীয় হন শ্যামলী। তার আগে মুম্বইয়ে আন্তর্জাতিক স্তরের ম্যারাথনেও (৪২ কিমি) দশম স্থান পেয়েছিলেন। এ বার গুজরাত ম্যারাথনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তারপরই লক্ষ্য অলিম্পিক। সন্তোষের কথায়, “তরুণ সঙ্ঘ ব্যায়ামাগার ও কিছু শুভানুধ্যায়ী নিয়মিত অর্থ সাহায্য করার জন্যই লড়াইটা চালিয়ে যেতে পারছি। নিজেরও দৌড়নোর ইচ্ছে রয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে স্ত্রীকে এগিয়ে রাখতে চাই। কারণ, ওর মধ্যে প্রতিভা রয়েছে।” দূরশিক্ষায় বিএ পড়া শ্যামলীর কথায়, “সকলের সাহায্য পাচ্ছি। অলিম্পিকে সুযোগ পেতে মরিয়া হয়ে লড়াই চালাতে চাই।”
রাজ্যে পালাবদলের পরে বিভিন্ন ক্লাবকে সরকারি সাহায্য দেওয়ার চল শুরু হয়েছে। জঙ্গলমহলের বহু ক্লাব ২ লক্ষ টাকা সাহায্য পেয়েছে। তবে তরুণ সঙ্ঘ ব্যায়ামাগারের এখনও শিকে ছেঁড়েনি। ১৯৮০ সালে খড়ের ছাউনি দেওয়া ছোট ঘরে এই ক্লাবের জন্ম। ক্রমে পাকা বাড়ি হয়েছে। রয়েছে পুরুষ ও মহিলাদের মাল্টিজিম। গরিব ও মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের নিখরচায় থাকার ব্যবস্থাও রয়েছে। শুধু শ্যামলী নন, এই ক্লাব থেকেই বিমল মাহাতো, শম্ভু মল্লিকদের মতো একাধিক যুবক দৌড়ে বহু পুরষ্কার পেয়েছেন। বিমল মাহাতো তো এশিয়া ম্যারাথনেও প্রথম হয়েছিলেন। আমেরিকায় আন্তর্জাতিক ম্যারাথনে গিয়ে ১৯তম স্থান পেয়েছিলেন তিনি। মেদিনীপুর রামকৃষ্ণ মিশনের নবম শ্রেণির ছাত্র আয়ুষ দাসও যোগায় একাধিক পুরস্কার পেয়েছে ক্লাবের সাহায্যেই। এ বার গুজরাতের রাজকোটে জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় যাচ্ছে সে।
মেদিনীপুর শহরের এই ক্লাবের এখন সাড়ে তিনশো সদস্য। তাঁরা বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় সাফল্যও পাচ্ছেন। সম্প্রতি এই সব কৃতীদের সংবর্ধিত করেন ক্লাব কর্তৃপক্ষ। ক্লাবের স্পোর্টস বিভাগের যুগ্ম সম্পাদক তপন ভকত ও উত্তম নন্দী বলেন, “সহৃদয় মানুষের সাহায্যেই ক্লাবের খরচ চলে। বছরে প্রায় ৮ লক্ষ টাকা খরচ হয়। ইলাহাবাদ, টাটা, ঝাড়খণ্ড, হাজারিবাগ, ঝাড়গ্রাম, শালবনি-সহ বিভিন্ন জায়গায় আমাদের শিবিরও রয়েছে। সেখানে গরিব ও মেধাবী দৌড়বিদদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।”
এই ক্লাবকে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন মেদিনীপুরের বিধায়ক মৃগেন মাইতি। তিনি বলেন, “এই ক্লাবটি দীর্ঘদিন ধরেই কৃতীদের খুঁজে বের করে তাঁদের প্রতিভার বিকাশে সহায়ক হয়ে দাঁড়াচ্ছেন। এই ক্লাবকে সব ধরনের সাহায্য করব। অন্যদেরও সাহায্যের আবেদন জানাব।” |
|
|
|
|
|