দীর্ঘ পাঁচ মাস বন্ধ থাকার পরে আগামী বুধবার থেকে ফের খুলতে চলেছে চন্দননগরের গোন্দলপাড়া জুটমিল। এই খবরে আপাতত স্বস্তিতে কয়েক হাজার শ্রমিক পরিবার।
শ্রমিক অসন্তোষের কারণ দেখিয়ে গত ২৭ সেপ্টেম্বর ওই চটকল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ (সাসপেনশন অব ওয়ার্ক) করে দিয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ। সোমবার কলকাতায় রাজ্যের অতিরিক্ত শ্রম কমিশনারের দফতরে সব পক্ষকে নিয়ে একটি বৈঠকে জট কেটেছে। রাজ্য শ্রম দফতরের পরিষদীয় সচিব তপন দাশগুপ্ত বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই আজ জরুরি বৈঠক হয়। কর্তৃপক্ষের টালবাহানায় মিলটি এত দিন বন্ধ হয়ে ছিল। প্রশাসন একাধিক বৈঠক করলেও কর্তৃপক্ষ কোনও সমঝোতাই করছিলেন না। যাবতীয় সমস্যা অবশ্য মিটে গিয়েছে।” চন্দননগরের ডেপুটি শ্রম কমিশনার তীর্থঙ্কর সেনগুপ্ত জানান, বৈঠকে ঠিক হয়েছে, মিল খোলার পরে শ্রমিকদের ২ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। বাইক বকেয়া পরে মেটানো হবে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, ওই চটকলে স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে হাজার পাঁচেক শ্রমিক কাজ করেন। মিল বন্ধ হওয়ায় তাঁরা সমস্যায় পড়েন। শ্রমিকদের অভিযোগ, শুধু কাজ বন্ধই নয়, কর্তৃপক্ষ শ্রমিক আবাসনের জল এবং বিদ্যুতের সংযোগও কেটে দিয়েছিল। সমস্যার দ্রুত সমাধানের দাবিতে পথে নামেন শ্রমিকেরা। তাঁদের পরিবারের লোকজনও সামিল হন তাতে। রাস্তা অবরোধ থেকে মহকুমাশাসকের দফতর ঘেরাও কিছুই বাদ থাকেনি।
জেলা শ্রম দফতর সূত্রের দাবি, মিল খোলার ব্যাপারে একাধিক বৈঠক করেন তাঁরা। কিন্তু মিল কর্তৃপক্ষ নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকায় কাজের কাজ হচ্ছিল না। পরিস্থিতির কথা জানিয়ে শ্রমিক সংগঠনগুলির তরফে রাজ্য প্রশসনের বিভিন্ন স্তরে এমনকী, মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও চিঠি পাঠানো হয়। এ দিনের বৈঠকে অতিরিক্ত শ্রম কমিশনার এইচ এ নাসিম ছাড়াও পরিষদীয় সচিব তপনবাবু, যুগ্ম শ্রম কমিশনার, ওই চটকলের ডিরেক্টর শম্ভু পাল উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন আইএনটিটিইউসি রাজ্য সভানেত্রী দোলা সেন-সহ মিলের ১০টি শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধি। প্রায় ৩ ঘণ্টা বৈঠক হয়। তাতে ঠিক হয়েছে, ১২ সদস্যের একটি মনিটরিং কমিটি গড়া হবে। মিলের অভ্যন্তরীণ সমস্যা মেটাতে ওই কমিটি হস্তক্ষেপ করবে। কমিটিতে প্রশাসনের পাশাপাশি শ্রমিকপক্ষ, মালিকপক্ষ এবং শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা থাকবেন।
শ্রমিকদের বক্তব্য, এত দিন মিল বন্ধ থাকায় পেট চালাতে ছোটখাটো নানা কাজ করতে হচ্ছিল তাঁদের। কেউ দোকানে কাজ করছেন, কেউ আবার হকারি করেছেন। এ দিন মিল খোলার খবর ছড়াতেই শ্রমিক মহল্লায় স্বস্তি ফিরেছে। তাঁতঘর বিভাগের কর্মী কার্তিক চৌধুরী বলেন, “মিল বন্ধ থাকায় পরিস্থিতি অসহনীয় হয়ে উঠছিল। আধপেটা খেয়ে আমাদের দিন চলছিল কোনওমতে। আবার উৎপাদন চালু হবে মিলে, এটা শোনার পরে যেন ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ল।” স্প্রিং বিভাগের কর্মী ছোটুলাল চৌধুরীর বক্তব্য, “মিল কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালিপনায় দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল আমাদের। এ বার হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম।” তাঁর সংযোজন, “আর যেন এমন পরিস্থিতি না হয়, প্রশাসন সেটা দেখুক।”
গোন্দলপাড়ার শ্রমিক মহল্লায় এখন ছোটুলালের কথার প্রতিধ্বনি। |