|
|
|
|
মসজিদ সরিয়ে জাতীয় সড়ক, দৃষ্টান্ত কাঁকেবার |
প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায় • রাঁচি
৩ ফেব্রুয়ারি |
একদিকে এলাকার উন্নয়ন, অন্য দিকে ধর্মীয় আবেগ—এই দুইয়ের টানাপোড়েনের মধ্যে শেষ পর্যন্ত ‘বৃহত্তর স্বার্থ’-কেই অগ্রাধিকার দিল ঝাড়খণ্ডের রামগড় জেলার কাঁকেবার এলাকার সংখ্যালঘু মানুষ। জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের কাজ অব্যাহত রাখতে কাঁকেবারের আঞ্জুমান ইসলাহুল মুসলমিন একটি মসজিদ অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে কার্যত একটা নজিরই গড়ল। এর ফলে রাঁচি-জামশেদপুর ৩৩ নম্বর জাতীয় সড়কের বন্ধ হয়ে যাওয়া কাজ ফের শুরু করতে আর কোনও বাধা রইল না। রামগড় জেলা প্রশাসনের এক সূত্র জানিয়েছেন, “সড়ক সম্প্রসারণের কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তবে খুব শীঘ্রই তা শুরু করা হবে।”
রাঁচি-জামশেদপুর সংযোগকারী ৩৩ নম্বর জাতীয় সড়ককে চার লেনের করতে সম্প্রসারণ পরিকল্পনা নিয়েছে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার। তার জন্য রাজ্য সরকার প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণও করেছে। নকশাও তৈরি করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু জায়গায় কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু রামগড়ের কাঁকেবার গ্রামের মধ্যে রাস্তা সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে পার্শ্ববর্তী মসজিদটি নিয়ে সমস্যা হচ্ছিল। ধর্মীয় ফতোয়া মেনেই স্থানীয় সংখ্যালঘু মানুষজন মসজিদ সরানোর ব্যাপারে প্রাথমিক ভাবে আপত্তি তোলেন। দাবি ওঠে, নকশা পরিবর্তন করে রাস্তার অভিমুখ বদল করতে হবে। সরকার সমস্যায় পড়ে, কারণ বিষয়টি ব্যয়সাপেক্ষ। এর জন্য নতুন করে অধিগ্রহণও প্রয়োজন। পুরো ব্যাপারটি সময়সাপেক্ষও বটে।
এই জটিলতার মধ্যে কাঁকেবারে রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। সমস্যা সমাধানে স্থানীয় মানুষের সঙ্গে প্রশাসনের তরফ থেকে আলোচনা শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত বৃহত্তর স্বার্থ ও উন্নয়নের প্রশ্নে ধর্মীয় ফতোয়াকে সরিয়ে এগিয়ে আসেন রামগড়ের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ। তাঁদের সংগঠন, আঞ্জুমান ইসলাহুল মুসলমিন গত শনিবারই জেলাশাসকের কাছে লিখিত সম্মতিপত্র দিয়ে জানিয়েছে, মসজিদ স্থানান্তরে তাঁদের সম্মতি রয়েছে। তবে পরিবর্তে পার্শ্ববর্তী একটি জমি তারা চেয়েছে। জেলা সূত্রে জানা গিয়েছে, সংগঠনটি তাদের জানিয়েছেন, বিনা পয়সায় নয়, ন্যায্য মূল্যেই তারা জমি কিনে সেখানে মসজিদ স্থানান্তর করবে। আঞ্জুমান ইসলাহুল মুসলমিনের সভাপতি নাসিম আহমেদ কুরেশির কথায়, “ফতোয়া আছে, কোথাও মসজিদ থাকলে সেই মসজিদ সরানো যাবে না। কিন্তু এ ক্ষেত্রে এলাকার উন্নয়নের প্রশ্ন জড়িয়ে রয়েছে। আবার এলাকায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার দায়ও রয়েছে। সেই কারণে উন্নয়ন আর মানুষের সঙ্গে মানুষের সুসম্পর্ককে গুরুত্ব দিতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিকল্প জমিটি আমরা সরকারের কাছ থেকে কিনেই নেব। কারণ, সরকারি দানের জমির উপর মসজিদ করা যায় না।”
প্রশাসন সূত্রে খবর, রাস্তা তৈরির কাজ করতে গিয়ে প্রথমে একটি বাড়ি ভাঙা পড়ে। বাড়িটির ভিতরে একটি কালী মূর্তি ছিল। এরপর রাতারাতি ওই জায়গাতে একটি কালী মন্দির তৈরি হয়ে যায়। প্রশাসনের উপরে চাপ আসতে থাকে, হয় নুড়ি মসজিদ সরাতে হবে, না হলে নতুন তৈরি হওয়া মন্দিরটিকে রেখেই রাস্তার নকশা বদলাতে হবে। এই পরিস্থিতিতে মসজিদ সরানোর সিদ্ধান্ত তাৎপর্যপূর্ণ। সংখ্যালঘুদের দাবি মেনে নতুন করে মসজিদ গড়তে অন্যত্র জমি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। মসজিদের সমস্যা মেটার পরে সেই মন্দিরটি সরাতে প্রশাসন মন্দির নির্মাণকারীদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করছে।
বিষয়টি স্পর্শকাতর বলে এ নিয়ে রামগড় জেলা প্রশাসন বিশেষ কিছু বলতে চাইছেন না। রামগড়ের মহকুমা শাসক দিলেশ্বর মাহাতো শুধু বলেন, “কাঁকেবারের মানুষ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা দৃষ্টান্ত হয়ে রইল। আশা করছি, এ বার মন্দিরটি সরিয়ে রাস্তার কাজ শুরু করতে অসুবিধা হবে না।” |
|
|
|
|
|