অটোচালকদের শিক্ষা কি ‘সম্পূর্ণ’ হবে, রইল সংশয়
রাস্তার মোড়ে সিগন্যালে লাল আলোর তোয়াক্কা না করে অটো নিয়ে চলে যাওয়াই অভ্যাস। কিন্তু সোমবার ‘রেড সিগন্যাল’-এ দাঁড়িয়ে গিয়েছেন বছর পঁয়ত্রিশের সঞ্জীব স্বর্ণকার। রবিবারেই পুলিশের কাছ থেকে শিখেছেন, সিগন্যাল না মানলে কী কী হতে পারে। এ দিন তাই আর লাল আলোটি এড়াতে পারেননি সঞ্জীব।
কলিম আহমেদের আবার অটোয় উঠেই প্রচণ্ড জোরে মিউজিক সিস্টেম চালিয়ে দেওয়া অভ্যাস। এ দিনও চালিয়েছেন। তবে যখন লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন, তখন। গাড়ি চালানোর সময়ে আর গান চালাচ্ছেন না। কলিমের দাবি, “যাত্রীদের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে মাঝেমধ্যে খুব আস্তে করে চালাচ্ছি।”
রবিবারই মোহিত মঞ্চে কলকাতা ট্রাফিক পুলিশের কর্মশালায় যোগ দিয়েছিলেন সঞ্জীব এবং কলিম। তাঁদের দু’জনেরই বক্তব্য, “ক্লাস করে বেশ লাভ হয়েছে। অনেক কিছুই জানতে পেরেছি। অনেক বিষয়ে সাবধানও হয়েছি।”
দমদম-চিড়িয়ামোড় রুটে অটো চালান সঞ্জয় মণ্ডল এবং সোমনাথ সাহা। তাঁরা বলেন, “আমাদের রুটের চালকেরা এর আগেও দু’বার পুলিশের ক্লাসে যোগ দিয়েছে। তার ফলও আমরা হাতেনাতে পেয়েছি। ওঁরা আমাদের বোঝান, ওভারটেক করলে কী হতে পারে, যাত্রীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা উচিত নয় এই সব। তাতে কিন্তু উপকারই হয়েছে। আমাদের রুটে এমনিতে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ কম। কারণ, প্রথম থেকেই এই রুটে এ ব্যাপারে খুব কড়াকড়ি। ক্লাস করার পরে আমরা আরও শিখছি।” শুধু শিখেই অবশ্য বসে নেই কাশীপুর এলাকার চালক অভিজিৎ দাস। তাঁর রুটে যে যে অটোচালক পুলিশের ওই কর্মশালায় যাননি, তাঁদেরও শেখাচ্ছেন তিনি। বলছেন, “ক্লাসটা খুব ভাল লেগেছে। অটোচালক বন্ধুদের মধ্যে কেউ ঝগড়া করছে দেখলেই গিয়ে থামাচ্ছি।”
অটোয় সবচেয়ে বেশি ঝামেলা হয় খুচরো নিয়ে। খুচরোর সমস্যা নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে নিয়মিত ঝামেলা লেগেই থাকে। এ দিন সে সব এড়িয়ে গিয়েছেন বেলগাছিয়া-লেকটাউন রুটের শেখ সালাম এবং নারায়ণ দে-রা। বলছেন, “খুচরো নিয়ে আগে তর্ক করতাম। এখন এড়িয়ে যাই। মাথা ঠান্ডা রেখে বোঝানোর চেষ্টা করি।” শুধু পুলিশের কর্মশালায় যোগ দিয়েই সব সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে করছেন না অটোচালকেরা। তাঁদের মতে, “পুলিশ বললেই সকলে শুধরে যাবে? আমি নিজে ভদ্রতা না শিখলে কে আমায় জোর করে শেখাবে!”
শুধু অটোচালকেরাই নন, এমনটা মনে করছেন অতীতে কলকাতা পুলিশে ট্রাফিকের দায়িত্ব সামলানো অফিসারেরাও। এক ট্রাফিক-কর্তার বক্তব্য, “এর আগেও বাস-ট্যাক্সি-অটোচালকদের নিয়ে শিবির হয়েছে। কিন্তু তাতে ছবিটা বদলায়নি। ওই কর্তার মতে, “সচেতনতা শিবিরের পরে তা মানা হচ্ছে কি না, সেটার দিকে নজর দেওয়া জরুরি।” অর্থাৎ, কোনও অটোচালক ক্লাসের পড়া আদৌ কাজে লাগাচ্ছেন কি না, সেটা ধরতে গেলে নজরদারি বাড়াতে হবে। ওই কর্তার কথায়, “ধরা পড়ার ভয় না থাকলে, আইন মানার প্রবণতা কমে।” আইনের কড়াকড়ি করে যে লাভ হয়েছে, তার উদাহরণ হিসেবে তিনি পূর্ব-মধ্য আফ্রিকার রোয়ান্ডার উদাহরণ তুলেছেন। জানিয়েছেন, রোয়ান্ডায় আইন বলবৎ করেই পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা কমেছে।
ট্রাফিক পুলিশের বর্তমান অফিসারদের অবশ্য দাবি, শিবির করেই থেমে থাকছেন না তাঁরা। শিবির করে কী ফল হচ্ছে, তা দেখার জন্য অটোচালকদের উপরে বিশেষ নজর রাখা হয়। উত্তর কলকাতায় কমর্রত ট্রাফিক বিভাগের এক ইনস্পেক্টরের বক্তব্য, “কিছু অটোচালকের মধ্যে পরিবর্তন তো লক্ষ্য করাই যায়।” ওই ইনস্পেক্টরের দাবি, উত্তর কলকাতায় বেপরোয়া অটো চলাচল আগের থেকে কিছুটা হলেও কমেছে। এ দিনও শ্যামবাজার ও তার আশপাশে এমন নজরদারি চলেছে বলেই পুলিশ সূত্রের দাবি। উত্তর কলকাতার একটি থানায় কর্মরত সার্জেন্টের বক্তব্য, অটোচালকদের মধ্যে অনেকেই প্রশিক্ষিত নন। পুঁথিগত শিক্ষাও অনেকের নেই। ফলে অটো চালানোর নিয়মটা কী, সেটাই জানা থাকে না। শিবিরগুলিতে যখন নিয়ম-নীতির পাঠ দেওয়া হয়, তখন তাঁদের মধ্যে অনেকেই বিষয়টির গুরুত্ব বুঝতে পারেন না। একই সঙ্গে ওই সার্জেন্ট বলছেন, “শিবির থেকে বেরোনোর পরেও শুধরোননি, এমন অটোচালকও অনেক।”
শিবির করেই তাই কাজ শেষ করে দিচ্ছে না লালবাজার। কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্রাফিক) দিলীপ আদক বলছেন, “শিবিরে আসা চালকদের তথ্য রাখা হচ্ছে। ভবিষ্যতে কোনও গোলমাল হলে, আমরা ওই তথ্য ঘেঁটে পরিচয় জানতে পারব। নিয়ম ভাঙলেও জানতে পারব, সংশ্লিষ্ট অটোচালক শিবিরে প্রশিক্ষণ পেয়েছিলেন কি না।” তবে পুলিশকর্তাদের বক্তব্য, অটোচালকদের শুধু ধরপাকড় করলেই সমস্যার সমাধান হবে না। সচেতনতাও বাড়াতে হবে। “অটোচালকেরা যদি সচেতন হন, তা হলে উপকার তো হবেই,” মন্তব্য এক ট্রাফিক-কর্তার। তবে কলকাতার সব অটোচালককে যে এখনও প্রশিক্ষণের আওতায় আনা যায়নি, তা-ও মেনে নিচ্ছেন লালবাজারের কর্তারা। এক কর্তা বলেন, “শহরে প্রচুর অটোচালক রয়েছেন। খেয়াল রাখা হচ্ছে, ধীরে ধীরে যাতে তাঁরা সকলে প্রশিক্ষণ পান।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.