প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের প্রক্রিয়া এখনও তেমন এগোয়নি। এই অবস্থায় উপাচার্য হিসেবে মালবিকা সরকারের কার্যকাল আরও এক দফা বাড়ানোর জন্য আচার্য-রাজ্যপালের কাছে আবেদন জানিয়েছে রাজ্য সরকার। সোমবার আচার্য এম কে নারায়ণনের কাছে এই মর্মে চিঠি পাঠানো হয়। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানান, এই আবেদন করা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন মেনেই।
প্রেসিডেন্সির প্রথম স্থায়ী উপাচার্য বাছাইয়ের জন্য গত ২০ জানুয়ারি সার্চ বা সন্ধান কমিটি গড়ে রাজ্য সরকার। তাতে আছেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বা ইউজিসি-র চেয়ারম্যান বেদ প্রকাশ, প্রেসিডেন্সির মেন্টর গ্রুপের চেয়ারম্যান সুগত বসু এবং মেন্টর গ্রুপেরই অন্যতম সদস্য নয়নজ্যোত লাহিড়ী। কিন্তু প্রেসিডেন্সি সূত্রের খবর, সন্ধান কমিটি এ-পর্যন্ত এক বারও বৈঠকে বসেনি। উপাচার্য হিসেবে মালবিকাদেবীর কার্যকাল শেষ হওয়ার কথা আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের প্রক্রিয়া বিশেষ এগোয়নি। এই পরিস্থিতিতে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত মালবিকাদেবীর মেয়াদ বাড়াতে রাজ্যপালের কাছে আর্জি জানিয়েছে সরকার। তার মধ্যে নতুন উপাচার্য বাছাই হলে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেবেন মালবিকাদেবী।
বর্তমান উপাচার্যের কার্যকাল আগেই এক প্রস্ত বাড়ানো হয়েছে। ২০১১-র অক্টোবরে মালবিকাদেবীকে দু’বছরের জন্য প্রেসিডেন্সির অস্থায়ী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ করা হয়। ২০১৩-র ১৫ অগস্ট তাঁর ৬৫ বছর বয়স পূর্ণ হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী এটাই উপাচার্যের অবসরের বয়স। তাই আরও এক জন অস্থায়ী উপাচার্য বাছাই করতে তখন একটি সন্ধান কমিটি গড়ে রাজ্য। তবে মেন্টর গ্রুপের ব্যাখ্যা ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু থেকে চার বছর পর্যন্ত অস্থায়ী উপাচার্যেরা কাজ চালাতে পারেন। ৬৫ বছরে অবসরের নিয়ম তাঁদের ক্ষেত্রে খাটে না। পরে রাজ্যপালের হস্তক্ষেপেই মালবিকাদেবীর মেয়াদ ছ’মাস বাড়িয়ে ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত করা হয়।
ওই সময়ের মধ্যেই সন্ধান কমিটি গড়ে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম স্থায়ী উপাচার্য বাছাই ও নিয়োগ করে ফেলা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্যবাবু। কিন্তু তা হয়নি। ডিসেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্ট্যাটিউট’ বা বিধি তৈরি করে রাজ্য সরকারের কাছে জমা দিয়েছে প্রেসিডেন্সির কাউন্সিল। তার পরে সন্ধান কমিটি গড়েছে সরকার। এখনও সেই কমিটির কোনও বৈঠক হয়নি। তবে সন্ধান কমিটির সদস্যেরা শীঘ্রই আলোচনার মাধ্যমে প্রেসিডেন্সির জন্য প্রথম স্থায়ী উপাচার্য বাছাই করে ফেলতে পারবেন বলে সরকারের আশা। এই মধ্যবর্তী সময়ের জন্য তাঁরা আর নতুন কাউকে দায়িত্ব দিতে চান না বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী। তবে উচ্চশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, প্রেসিডেন্সির উপাচার্য বাছাই প্রক্রিয়ায় দেরি হচ্ছে কেন, আচার্য নিজেই তা জানতে চেয়েছেন।
উচ্চশিক্ষা দফতরের এক কর্তা জানান, আচার্য-রাজ্যপালের মনোনীত সদস্য বেদ প্রকাশ ওই সন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান। তিনি বৈঠক ডাকেননি এবং বারবার চেষ্টা করেও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তাই উপাচার্য বাছাই প্রক্রিয়ায় দেরি হচ্ছে। প্রেসিডেন্সির রেজিস্ট্রার প্রবীর দাশগুপ্ত জানান, সন্ধান কমিটি গড়ার সরকারি নির্দেশিকা জারির পর থেকে তিন বার ই-মেল করা হয়েছে বেদ প্রকাশকে। উত্তর আসেনি। প্রবীরবাবু উচ্চশিক্ষা দফতরকে তা জানান। রাজ্যপালকেও সে-কথাই জানানো হবে বলে উচ্চশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর।
মালবিকাদেবী অবশ্য জানান, তাঁর কার্যকাল বাড়ানোর জন্য রাজ্যপালের কাছে সরকারের আর্জি জানানোর কথা জানা নেই। তিনি বলেন, “আমি সব সময়েই বলেছি, প্রেসিডেন্সির উন্নতির জন্য যদি কিছু করতে পারি, অবশ্যই করব। কিছু কাজ বাকি থেকে গিয়েছে। সুযোগ পেলে সেগুলি শেষ করব।”
৬ ফেব্রুয়ারি রাজারহাটে প্রেসিডেন্সির দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের শিলান্যাস করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার এ কথা জানিয়ে মালবিকাদেবী বলেন, “দ্বিতীয় ক্যাম্পাসে গবেষণা, কনফারেন্স কেন্দ্র, শিক্ষক-ছাত্রদের থাকার জায়গা, কিছু ইন্টার-ডিসিপ্লিনারি বিভাগ ইত্যাদি তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে।” |