প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নতুন অস্থায়ী উপাচার্য খোঁজার প্রক্রিয়া শুরু হল।
প্রেসিডেন্সির বর্তমান অস্থায়ী উপাচার্য মালবিকা সরকারের কার্যকাল শেষ হবে ৩০ সেপ্টেম্বর। অর্থাৎ এখনও দু’মাসের বেশি উপাচার্য-পদে থাকার কথা তো তাঁরই। তা হলে এখনই নতুন অস্থায়ী উপাচার্যের খোঁজ কেন?
রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী উপাচার্যের বয়স হতে হবে ৬৫-র কম। আগামী ১৫ অগস্ট মালবিকাদেবীর ৬৫ বছর বয়স হয়ে যাচ্ছে। তাই ১৫ অগস্টের পরে তিনি আর উপাচার্য
|
মালবিকা সরকার |
থাকতে পারবেন না। সেই জন্যই অস্থায়ী উপাচার্য বাছাইয়ের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
অস্থায়ী উপাচার্য বাছাইয়ের জন্য তিন সদস্যের ‘সার্চ কমিটি’ বা সন্ধানী কমিটি গঠন করেছে রাজ্য সরকার। রাজ্য উচ্চশিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান সুগত মারজিৎ কমিটির আহ্বায়ক। অন্য দুই সদস্য হলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস ও অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকার। বৃহস্পতিবার সন্ধানী কমিটি প্রথম বৈঠকে বসে। উচ্চশিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই কমিটি তিন জনের নাম সুপারিশ করে ২৯ জুলাইয়ের মধ্যে সরকারের কাছে পাঠাবে। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু ও আচার্য-রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন আলোচনা করে ওই তিন জনের মধ্যে এক জনের নাম চূড়ান্ত করবেন।
সন্ধানী কমিটির আহ্বায়ক মারজিৎ বলেন, “আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিক্ষাবিদদের তিনটি পৃথক তালিকা তৈরি করে ২৭ জুলাই ফের বৈঠকে বসব আমরা। সেই সব তালিকা থেকে তিন জনের নাম বেছে নিয়ে সরকারের কাছে পাঠানো হবে।”
কিন্তু বিস্ময়ের কথা হল, যাঁর উত্তরাধিকারীর খোঁজ চলছে, সেই মালবিকাদেবী বা প্রেসিডেন্সির মেন্টর গ্রুপ এই ব্যাপারে সম্পূর্ণ অন্ধকারে। মালবিকাদেবী এ দিন দুপুরে তিনি বিকাশ ভবনে গিয়েছিলেন। সেখানে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্যবাবুর সঙ্গে তাঁর কথাও হয়েছে। মালবিকাদেবীর বক্তব্য, মন্ত্রী তাঁকে এই বিষয়ে কিছু জানাননি। উপাচার্য বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য যে-নিয়োগপত্র দিয়েছিলেন, সেই অনুযায়ী আমার কার্যকাল ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। আমি এখনও সেটাই জানি।” তাঁর দাবি, অস্থায়ী উপাচার্যের ক্ষেত্রে ৬৫ বছরের বয়ঃসীমা কার্যকর হয় না। ব্রাত্যবাবু জানান, এই বিষয়ে তিনি কোনও কথা বলবেন না।
কিন্তু প্রেসিডেন্সির জন্য কোনও স্থায়ী উপাচার্য খোঁজা হচ্ছে না কেন? কেনই বা বারবার অস্থায়ী উপাচার্য দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে? ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও স্ট্যাটিউট বা বিধি তৈরি হয়নি। তা ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের গেজেট বিজ্ঞপ্তিও হয়নি এখনও। তাই আচার্য, রাজ্য সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় মনোনীত সদস্যদের নিয়ে গঠিত সন্ধানী কমিটি মারফত স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করা যাচ্ছে না প্রেসিডেন্সিতে। সেখানকার প্রথম উপাচার্য অমিতা চট্টোপাধ্যায় আর বর্তমান উপাচার্য মালবিকাদেবী দু’জনেই অস্থায়ী ভাবে নিযুক্ত হয়েছেন। এবং পরবর্তী উপাচার্যও হবেন অস্থায়ী।
প্রেসিডেন্সির সামগ্রিক উন্নয়নের জন্যই গড়া হয়েছে মেন্টর গ্রুপ। নতুন অস্থায়ী উপাচার্য সন্ধান শুরু হয়ে যাওয়ার কথা তাদেরও জানা নেই। গ্রুপের চেয়ারম্যান সুগত বসু জানান, এ নিয়ে সরকারের তরফে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি। তিনি বলেন, “উপাচার্য নির্বাচনের পদ্ধতি কী হবে, সেই বিষয়েও সুপারিশ করার কথা মেন্টর গ্রুপের। এ মাসে সরকারের কাছে আমরা যে-রিপোর্ট জমা দেব, তাতে এই বিষয়ে কিছু কথা বলা হবে। এর বাইরে কী হচ্ছে, আমরা জানি না। এই নিয়ে কোনও মন্তব্যও করব না।” অন্য জটিলতার আশঙ্কাও আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন হবে ২২ অগস্ট। সে-দিন ছাত্রছাত্রীদের যে-সব ডিগ্রি, শংসাপত্র, পদক দেওয়া হবে, তার সব ক’টিতেই সই করছেন মালবিকাদেবী। তার আগেই উপাচার্য বদল হলে এই নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকের আশঙ্কা।
তবে মালবিকাদেবী বলেন, “আমাকে নিয়োগ করেছেন আচার্য। তিনি যদি কার্যকাল কমিয়ে দেন, মেনে নেব। দেখা যাক, কী হয়।” |