আমেরিকা বাজার থেকে বন্ড কেনার পরিমাণ কমালেও, ভারতের অর্থনীতিতে তার বিরূপ প্রভাব পড়বে না বলে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক যতই আশার বাণী শোনাক, শেয়ার বাজার কিন্তু তাতে কর্ণপাত করছে না। বরং ওই ঘটনার জেরে সোমবারও ফের পড়েছে সেনসেক্স। ৩০৪.৫৯ পয়েন্ট পড়ে বাজার বন্ধের সময় তা এসে দাঁড়িয়েছে ২০,২০৯.২৬ অঙ্কে। গত আড়াই মাসে যা সর্বনিম্ন। পতনের চাকা কবে উল্টো দিকে ঘুরবে, তা নিশ্চিত ভাবে বলতে পারছেন না বিশেষজ্ঞরাও।
এ দিন অবশ্য টাকার দাম অল্প উঠেছে। টাকার দর ১২ পয়সা বাড়ায়, প্রতি ডলার দাঁড়িয়েছে ৬২.৫৬ টাকা। এর আগে গত দুই দিনের লেনদেনে এই দর পড়েছিল ২৭ পয়সা। অন্য দিকে, শেয়ার বাজারে গত আট দিনের লেনদেনের মধ্যে ছয় দিনই সূচকের পতন হয়েছে। ওই ক’দিনে নিট হিসাবে সেনসেক্স পড়েছে ১,১২৮.৭১ পয়েন্ট। যে ঘটনা বিশেষজ্ঞদের কপালে বিশেষ ভাবে চিন্তর রেখা ফুটিয়েছে তা হল, বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলির শেয়ার বিক্রি করা। সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের খবর অনুযায়ী, গত শুক্রবারই ওই সব সংস্থা ভারতের বাজারে ৬৫২.৯৭ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে।
ভারতের শেয়ার বাজার তেজী হয়ে উঠেছিল প্রধানত বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলির বিনিয়োগের সুবাদেই। বিশ্ব জোড়া মন্দায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলির আর্থিক হাল চূড়ান্ত ভাবে খারাপ হয়ে পড়লেও, তুলনামূলক ভাবে ভারতের আর্থিক অগ্রগতির হার ছিল ভাল। যা বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলিকে ভারতের শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করেছিল। ভারতীয় সংস্থাগুলি শেয়ার বাজারে বিনিয়োগে রাশ টানলেও ওই সব বিদেশি সংস্থা কিন্তু টানা লগ্নি করছিল।
এখন সেই সব বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলিই ভারতের বাজারে শেয়ার বিক্রি করতে শুরু করেছে। আর এটাই শেয়ার বাজার মহলের কপালে চিন্তার রেখা ফেলেছে। ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রাক্তন সভাপতি এবং স্টুয়ার্ট সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যান কমল পারেখ বলেন, “ভারতের বাজার তেজী হয়ে উঠেছিল প্রধাণত বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলির বিনিয়োগের সুবাদেই। এ বার তারা শেয়ার বিক্রি করতে শুরু করেছে। তারা যদি টানা বিক্রি করতে থাকে, তাহলে শেয়ার বাজারে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। তবে আমার এখনও মনে হয়, ভারতের বাজার থেকে ওই সব বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থার পুরোপুরি হাত গুটিয়ে নেওয়ার মতো অবস্থা সৃষ্টি হয়নি। ওই সব সংস্থা বাজার থেকে না-চলে গেলে সেনসেক্স ১৯ হাজারের নীচে নামবে না বলেই আমার আশা।”
তবে কমলবাবু ওই আশা করলেও, ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রাক্তন ডিরেক্টর এস কে কৌশিক কিন্তু আকাশে সিঁদুরে মেঘ দেখতে পাচ্ছেন। তিনি বলেন, “এই মুহূর্তে শেয়ার বাজারে পক্ষে ভাল খবর কিছুই নেই। ঋণনীতিতে সুদের হার বৃদ্ধি, টাকার মূল্য হ্রাস, আমেরিকার বন্ড কেনা কমানো এবং সর্বোপরি ২০১৩-’১৪ আর্থিক বছরে দেশের আর্থিক অগ্রগতি ৫ শতাংশের নীচে নেমে যাওয়ার পূর্বাভাস বাজারে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। নির্বাচনের আগে বাজারের ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে।”
তবে পড়তি বাজারে শেয়ার কেনার হিড়িকে সূচক কিছুটা ওঠার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশেষজ্ঞদের মধ্যে কেউ কেউ। তবে তা স্থায়ী হওয়ার আশা অবশ্য তাঁরা করছেন না। কমলবাবু বলেন, “পড়তি বাজার শেয়ার কেনার সুযোগ সৃষ্টি করবে। কেউ যদি দীর্ঘ মেয়াীদে শেয়ার কিনতে পারেন, তাহলে আখেরে মুনাফা দেখার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।” |