আপাতত টোল আদায় করার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এল রামপুরহাট পুরসভা। তাই আজ মঙ্গলবার থেকে স্বাভাবিক বাস চলাচল করবে বলে জানিয়েছে রামপুরহাট বাস মালিক সমিতি। পুরপ্রধান অশ্বিনী তিওয়ারি বলেন, “মানুষের ভোগান্তির কথা ভেবে পুরসভা টোল আদায়ের সিদ্ধান্ত থেকে আপাতত সরে দাঁড়াল। পনেরো দিন পরে আলোচনার মধ্যে যা সিধান্ত হবে তাই কার্যকর করা হবে।” |
|
|
তখনও অমিল বাস। ভরসা মোটর চালিত ভ্যান-রিকশা। সোমবার তোলা নিজস্ব চিত্র। |
|
তবে শনিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত বাস ধর্মঘটের জেরে রামপুরহাট মহকুমার বিভিন্ন প্রান্তের মানুষকে ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়। এই সুযোগের উপযুক্ত ব্যবহার করতে ভুলে যায়নি মোটর চালিত ভ্যান থেকে ছোট গাড়িগুলি। ইচ্ছে মতো দর হাঁকছে ওই সব গাড়ইর চালকেরা। তারাপীঠ, কালুহা, দুনিগ্রাম, বিষ্ণুপুর একসঙ্গে চালু সাতটি মোটর চালিত ভ্যানের মিলিত শব্দেও কান পাতা দায়। শুধু কি তাই? কালো ধোঁয়ায় চোখ জ্বালা করছে। কিন্তু উপায় নেই। মিনিট পাঁচেকের মধ্যে মোটর চালিত ভ্যানগুলি গাদাগাদি করে কম করে ১৫ জন যাত্রী চাপিয়ে ছুটছে গন্তব্য স্থানের দিকে। রামপুরহাট বাসস্ট্যান্ডের সামনে জাতীয় সড়কের ধারে শনিবার সকাল থেকে এই দৃশ্য দেখা গিয়েছে। শনি ও রবিবার বিভিন্ন সরকারি অফিস ছুটি ছিল। তবে বাস ধর্মঘটের চিত্রটা সোমবার ছিল অন্য রকম। সপ্তাহের প্রথম দিন এবং বিশেষ করে সরস্বতী পুজোর আগের দিন বলে অন্য দিনের তুলনায় এ দিনের চিত্রটা আলাদা। রামপুরহাট ১ ব্লকের কর্মী নির্মাল্য মুখোপাধ্যায় সিউড়ি থেকে যাতায়াত করেন। বললেন, “একটাও বেসরকারি বাস নেই। সরকারি বাস না পেয়ে কী করব!” নিত্যযাত্রীদের অনেককে রামপুরহাটগামী অন্যান্য প্রাইভেট গাড়িতে আসতে হয়েছে। নির্মাল্যবাবু এ দিন একটি পিকআপ ভ্যানের ডালায় বসে রামপুরহাট আসেন। তবে কীভাবে রামপুরহাট থেকে সিঊড়ি যাবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। বিকেলে বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দেখা গেল নিত্যযাত্রীদের অনেককেই সিউড়ি ফেরার জন্য রামপুরহাট স্টেশন থেকে ট্রেন ধরে সাঁইথিয়া যাওয়ার জন্য তোড়জোড় করতে। রামপুরহাট স্টেশনের দিকে তাড়াহুড়ো করে এগিয়ে যাচ্ছেন। আবার রামপুরহাট থেকে সিঊড়ি গিয়েছিলেন রামপুরহাট ২ ব্লকের অধীন দুনিগ্রাম পঞ্চায়েতের পঞ্চায়েত সচিব নিতাইচন্দ্র মণ্ডল। তিনি বললেন, “ডিআরডিসি হলে বৈঠক ছিল। বাস বন্ধ। কীভাবে সিউড়ি যাব চিন্তায় ছিলাম। শেষে একটা সরকারি বাসে কোনও ক্রমে উঠে অতি কষ্টে সিউড়ি পৌঁছই। পরে একজনের গাড়িতে রামপুরহাটে ফিরি।”
রামপুরহাট ২ ব্লকের স্বাস্থ্যকর্মী হাবিবা খানম জানালেন, বাস নেই। ট্রেকার চলছে। কিন্তু তাতে জায়গা পেতে গেলে অন্তত আগের দু’খানা গাড়ি ছাড়তে হবে। নির্মাল্য মুখোপাধ্যায় বললেন, “যেখানে পুরসভা বাস্টস্ট্যান্ডের পরিকাঠামো গত উন্নয়নের চেষ্টা চালাচ্ছে, সেখানে বাস মালিকদের পুরসভার পাশে দাঁড়ানো উচিত।” নিতাইচন্দ্র মণ্ডল, হাবিবা খানমদের ক্ষোভ, “বাস বন্ধ রাখা কোনও সমাধানের পথ নয়। এতে মানুষের ভোগান্তি বাড়ে।” আর এক নিত্যযাত্রী রামপুরহাট থানার ছাতমা গ্রামের বাসিন্দা লাল্টু মণ্ডল বাসে করে গ্রাম থেকে দুধ নিয়ে এসে প্রিদিন রামপুরহাটে ব্যবসা করেন। তিনিও বললেন, “বাস বন্ধ থাকার জন্য রামপুরহাট থেকে তারাপীঠ স্টেশন মোড় পর্যন্ত বাসে চার টাকা ভাড়ায় আরামে যাতায়াত করি। বাস বন্ধ থাকার জন্য দশ টাকা দিয়ে মোটর চালিত ভ্যানে যতায়াত করতে হচ্ছে। সেখানেও প্যাসেঞ্জার ওঠানোর জন্য ভারি মাল বা ঝোলা থাকলে তারা আমাদের মতো ব্যবসায়ীদের মাল নিয়ে উঠতে দেয় না।”
প্রসঙ্গত, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বাসস্ট্যান্ডে পানীয় জল, শৌচাগার, লেন-সহ নানা কাজ করে উঠতে পারেনি রামপুরহাট পুরসভা। এখনও প্রায় ৫০ শতাংশ কাজ বাকি রয়েছে। অথচ বাসস্ট্যান্ড থেকে পুরসভা দৈনিক প্রতি বাস পিছু ১০ টাকা এবং বাসস্ট্যান্ড চত্বরে থাকা দোকানগুলি থেকে দৈনিক ৫ টাকা করে আদায় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তৃণমূল পরিচালিত রামপুরহাট পুরসভা। এর প্রতিবাদে জেলা বাস মালিক সমিতির রামপুরহাট শাখা শনিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাস ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল।
ধর্মঘটের জেরে সোমবার দেখা যায় কালুহা গ্রাম থেকে একটি নিমন্ত্রণ রক্ষা করে একই পরিবারের ২০ জন যাত্রী মোটর চালিত ভ্যানে করে রামপুরহাট ফিরছেন। সকাল থেকেই রামপুরহাট মহকুমা এলাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে রামপুরহাট হাসপাতাল, আদালত, বিভিন্ন অফিসে বা বাজার করতে কেউ বা ট্রেকারের ভরসায় কেউ বা অন্য গাড়িতে করে যাতায়াত করছেন। ভোগান্তির মধ্যে পড়ে রামপুরহাট মহকুমা এলাকার বিভিন্ন গ্রামের ঢাকিরাও। ময়ূরেশ্বর থানার দক্ষিণগ্রাম থেকে কান্ত দাস প্রতি বছর জেএল বিদ্যাভবনে ঢাক বাজাতে আসেন। বললেন, “চরম ভোগান্তির মধ্যে ঢাক কাঁধে নিয়ে গ্রাম থেকে পায়ে হেঁটে মল্লারপুর এসে ট্রেকার ধরে রামপুরহাট এসেছি।” এত সব ভোগান্তি চলার মাঝে এ দিন দুপুরে রামপুরহাট পুরসভায় বাস মালিক সমিতি, প্রশাসন এবং পুরসভা এই তিন জনকে নিয়ে একটি ত্রিস্তরীয় আলোচনা বসার জন্য হয়েছিল। কিন্তু বাস মালিক সমিতি তাদেরকে আলোচনার বিষয়ে চিঠি দিয়ে ডাকা হয়নি বলে আপত্তি করে। পরে পুরসভা থেকে বাস মালিক সমিতিকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়। বিকেলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, পুরসভা আপাতত বাসস্ট্যান্ড থেকে বাস পিছু দৈনিক ১০ টাকা হারে এবং বাসস্ট্যান্ড চত্বরে থাকা দোকান থেকে ৫ টাকা হারে টাকা তোলার সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখে। পুরআইন ও পরিবহণ আইন খতিয়ে দেখে পুনরায় বাসমালিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সুব্রত রায়। বৈঠকের পরে রামপুরহাট বাস মালিক সমিতির সহ-সম্পাদক ইয়ার সেলিম বলেন, “আমাদের নৈতিক জয় হয়েছে। আমরা তাই আজ মঙ্গলবার থেকে বাস ধর্মঘট তুলে নিলাম।” |