বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রত্নবস্তু ও ঐতিহাসিক সামগ্রী সংরক্ষণে গড়া হবে ওপেন এয়ার মিউজিয়াম। সোমবার বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরশিক্ষা ভবনে এক সাংবাদিক বৈঠকে এ কথা জানান দিল্লির ললিতকলা অ্যাকাডেমির চেয়ারম্যান কল্যাণকুমার চক্রবর্তী। তিনি আরও জানান, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় মূলত পশ্চিমী ধাঁচের। সেখানে বেশ কিছু ঐতিহাসিক সামগ্রী থাকলেও তা সংরক্ষণের কোনও আধুনিক পদ্ধতি নেই। এখানে লোক শিল্পমুখী সংগ্রহশালা গড়া হবে বলেও জানান তিনি। যেখানে সন্নিহিত জেলাগুলির হস্তশিল্পের প্রদর্শনীই শুধু নয়, সেগুলি আধুনিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণ ও পুনর্নিমাণ এবং পরে বিপণনের ব্যবস্থাও করা হবে।
উপাচার্য স্মৃতিকুমার সরকার বলেন, “বর্ধমান ও তার আশপাশে যে লোকশিল্পগুলি ছড়িয়ে রয়েছে, সেগুলি চিহ্নিত করে সেই শিল্পের সঙ্গে জড়িত শিল্পীদের খুঁজে আনা হবে। আধুনিক পদ্ধতিতে সাবেকী আমলের শিল্পসম্ভার তৈরি করা শেখানো হবে তাঁদের। এতে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলির লোক শিল্পীদের নতুন কর্মসংস্থানের রাস্তা খুলে যাবে। অনেক শিল্পও বেঁচে উঠবে। এই পরিকাঠামো তৈরি হলে আঞ্চলিক শিল্প সংস্কৃতির ইতিহাসকে স্নাতকস্তরের পাঠ্যক্রমের আওতায় আনা হবে।” |
এ দিন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজবাটীতে অবস্থিত মিউজিয়াম ও মহতাব মঞ্জিল ঘুরে দেখেন কল্যাণবাবু। সংগ্রহশালায় থাকা প্রায় সমস্ত ঐতিহাসিক সামগ্রীর সম্পর্কে তথ্য নথিভূক্ত করেন তিনি। সেগুলি কী ভাবে সংগৃহীত হয়েছে, তাও জানতে চান। তবে তাঁর সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি মিউজিয়ামের কিউরেটর রঙ্গনকান্তি জানা। তিনি বলেন, “আমরা যতটা তথ্য পেয়েছি, ততটুকুই নথিভুক্ত করেছি।”
কল্যাণবাবু বলেন, “এই সংগ্রহশালায় যে সব প্রত্নসামগ্রী রয়েছে, তা নিঃসন্দেহে মূল্যবান। কিন্তু এগুলি কী করে সংগ্রহশালায় এল, কারা এগুলি উদ্ধার করলেন, কারাই বা এগুলিকে জেলা প্রশাসনের কাছে বা মিউজিয়ামে পাঠাবার উদ্যোগ নিলেন, তা জানা যায়নি। যে এলাকা থেকে এগুলি উদ্ধার হয়েছে, সেগুলির কোনও ছবিও নেই। যাঁরা উদ্ধার করছেন, তাঁদের কোনও অভিজ্ঞতাও লিপিবদ্ধ করা হয়নি আধুনিক মিউজিয়ামে এগুলি থাকা দরকার।” এ দিন রাজবাটীর বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখেছেন কল্যানবাবু। মহতাব মঞ্জিলের পিছন দিকের ভাঙা অংশ দেখে বলেন, “এই ঐতিহাসিক ভবনের অবিলম্বে সংস্কার প্রয়োজন। যে পিলারগুলি মঞ্জিলের ভার ধরে রেখেছে, সেগুলির স্থাপত্যও মুগ্ধ করে। কিন্তু যেভাবে প্লাইউড দিয়ে পার্টিশন করা হয়েছে, ছাদ ঢেকে ফেলা হয়েছে, তাতে ভবনের সৌন্দর্য্য নষ্ঠ হচ্ছে। দীর্ঘ টানা বারান্দাটিতে কত ছবি, লেখা সাজিয়ে ভবনের ইতিহাস তুলে ধরা যেত। সেসব দেখতে না পেয়ে খারাপ লেগেছে।” ভবনের সংস্কারেরও আশ্বাস দেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, “বর্ধমান একটা ঐতিহাসিক শহর। এখানে নানা সময়ের ঐতিহাসিক নির্মাণ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত সেগুলি নিয়ে নতুন করে গবেষণা করা। গবেষণালব্ধ তথ্য সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া। একমাত্র তাহলেই মানুষ স্থানীয় ইতিহাসের প্রতি আকর্ষিত ও শ্রদ্ধাবান হবেন।” বিশ্ববিদ্যালয়ের মিউজিয়াম কিউরেটর রঙ্গনকান্তি জানা বলেন, “কল্যাণবাবু যে পরামর্শগুলি দিয়েছেন, তা মেনে চলবার চেষ্টা করব। তবে পরিকাঠামোগত সাহায্য না পেলে সমস্যা রয়েছে।” |