ন্যূনতম মজুরি নিয়ে মালিক-শ্রমিকদের দ্বন্দ্বে তিন দিন ধরে সাতটি চালকল বন্ধ হয়ে রয়েছে কাটোয়ায়। উৎপাদন বন্ধ থাকায় চালকলগুলির ক্ষতি তো হচ্ছেই সরকারও লেভি হারাচ্ছে।
শ্রম দফতরের কাটোয়ার সহকারী শ্রম কমিশনার মহম্মদ হানিফ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, কোনও অবস্থাতেই ন্যূনতম মজুরি ছাড়া শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করাতে পারবে না চালকল মালিকেরা। তবে চালকল মালিকদের দাবি, সরকারি নিয়মের বদলে ইউনিয়নের সঙ্গে চুক্তি করে যে মজুরি ঠিক হবে, তাই শ্রমিকদের দেওয়া হবে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১৪ নভেম্বর চালকল শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি দেওয়ার দাবিতে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে চিঠি দেয় সিটু। পাশাপাশি তথ্য জানার অধিকার আইনে জানতে চায় কাটোয়ার কোন চালকল শ্রমিকদের কত টাকা মজুরি দেয়। পরে কাটোয়া শ্রম দফতর খোঁজ খবর নিয়ে জানায়, একটা চালকলও শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি দেয় না। গত ৩১ ডিসেম্বর শ্রম দফতর এ নিয়ে একটি রিপোর্টও জমা দেয় মহকুমাশাসককে। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী, এক একটা চালকলে একেক রকম মজুরি ঠিক করা আছে। কোথাও দিন প্রতি ১১৬ টাকা, কোথাও বা ১৩০ টাকা। আর এর সঙ্গে জ্বালানি হিসাবে সাড়ে ছ’টাকা ও ১ কিলোগ্রাম চাল প্রতিদিন দেওয়া হয়। শ্রম দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, নভেম্বর মাসে চালকল শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ছিল ১৯৩ টাকা। নতুন বছরে এসে ওই মজুরি দাঁড়িয়েছে ২০৬ টাকা প্রতিদিনে। |
রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরে ১০ জুন শ্রম কমিশনার, চালকল মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন কাটোয়ার মহকুমাশাসক আর অর্জুন। সিটুর অভিযোগ, ওই বৈঠকের শেষে এসডিও আশ্বাস দিয়েছিলেন, সাত দিনের মধ্যে অর্থ্যাৎ ১৭ জানুয়ারি থেকে শ্রমিকেরা যাতে ন্যূনতম মজুরি পান, তার জন্য প্রশাসন দৃঢ় পদক্ষেপ করবে। সিটুর বর্ধমান জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা সিপিএমের কাটোয়া জোনাল কমিটির সম্পাদক অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, সাত দিনের জায়গায় এক মাস কাটতে চলল, অথচ প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নিতে পারেনি। তবে এসডিও (কাটোয়া) আর অর্জুনের বক্তব্য, “সাত দিনের মধ্যে বিষয়টি মিটিয়ে দেব, এ রকম কোনও কথা বলিনি। ন্যূনতম মজুরির বিষয়টি নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। পরে দেখব।”
এই টানাপোড়েনের মধ্যেই শুক্রবার মালিক ও শ্রমিকেরা বৈঠকে বসেন। সেখানে চালকল মালিকেরা সাফ জানিয়ে দেন, ন্যূনতম মজুরি তাঁরা মানবেন না, তার বদলে জেলায় ইউনিয়নের সঙ্গে বৈঠকে যে মজুরি ঠিক হবে, সেটাই তারা মেনে নেবেন। এরপরে শ্রমিকেরা বৈঠক ছেড়ে উঠে যান এবং শনিবার থেকে চালকলে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
কাটোয়ার চালকল মালিকদের নেতা নন্দলাল অগ্রবাল বলেন, “প্রতিবছরই জেলায় মালিকদের সঙ্গে শ্রমিকদের মজুরি নিয়ে চুক্তি হয়। সেটাই গোটা জেলার মালিকেরা মেনে নেন। এ বারও চুক্তি হলে সেই মতো মজুরি দেওয়া হবে। তবে এ বছর এখনও চুক্তি হতে দেরি আছে। তা সত্ত্বেও সিটু চালকল বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে আমাদের সঙ্গে সরকারেরও ক্ষতি হচ্ছে।”
বিষয়টি নিয়ে চাপানউতোর শুরু হয়ে গিয়েছে সিপিএম ও তৃণমূলের মধ্যেও। সিটুর বর্ধমান জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা সিপিএমের কাটোয়া জোনাল কমিটির সম্পাদক অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “তৃণমূল ও চালকল মালিকেরা এক হয়ে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি থেকে বঞ্চিত করছে। শুধু তাই নয়, শ্রমিকদের আন্দোলন ভাঙার জন্য চালকলে গিয়ে হুমকিও দিচ্ছে।” তৃণমূলের কাটোয়া শহর সভাপতি অমর রামের পাল্টা জবাব, “জেলায় ৪৭০টা চালকল আছে, কোথাও সমস্যা নেই। শুধুমাত্র কাটোয়াতে সিটু সমস্যা তৈরি করে গায়ের জোর দেখিয়ে চালকলগুলি বন্ধ করে দিয়েছে। মালিকেরা তো বলেই দিয়েছেন, আমাদের ইউনিয়নের জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে মজুরি ঠিক করা হবে। আর এটাই তো দীর্ঘদিন ধরে হয়ে আসছে।”
কাটোয়ার সহকারী শ্রম কমিশনার মহম্মদ হানিফ বলেন, “মালিকেরা ওই চুক্তির কথা আমাদের জানিয়েছেন। আমাদেরও সাফ কথা, শ্রমিকদের নির্ধারিত ন্যুনতম মজুরি দিতে হবে। তা না হলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।” ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি চালকলকে শো-কজও করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। |