কংগ্রেসের আপত্তিতে পদচ্যুত উপ-পুরপ্রধান
তৃণমূলের দেবপ্রসাদ বাগের জায়গায় তৃণমূল-কংগ্রেস জোট পরিচালিত কালনা পুরসভার নতুন উপ পুরপ্রধান নির্বাচিত হলেন ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলার বিশ্বজিৎ সেন। সোমবার পুরসভার কাউন্সিলারদের একটি বৈঠকে ডেকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দেবপ্রসাদবাবু কয়েক দিন আগেই কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। বৈঠক শেষে কালনা পুরসভার তৃণমূল পুরপ্রধান বিশ্বজিৎ কুণ্ডু বলেন, “আমরা চেয়েছিলাম পুরসভাকে পুরোপুরি তৃণমূল পরিচালিত করতে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে আমাদের সেই চেষ্টা সফল হয়নি। কালনা পুরসভায় এখনও তৃণমূল ও কংগ্রেস জোট রয়েছে। সেই জোটের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে উপ-পুরপ্রধান বদলের দাবি তুলে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। তাই এই পরিবর্তন করা ছাড়া আমাদের উপায় ছিল না।” বর্ধমান জেলা (গ্রামীণ) তৃণমূল সভাপতি স্বপন দেবনাথ এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
দেবপ্রসাদবাবুকে যে সরানো হচ্ছে তার ইঙ্গিত অবশ্য মিলেছিল শনিবার দুপুরেই। ওই দিন পুর প্রধান বিশ্বজিৎবাবু কংগ্রেস এবং তৃণমূল কাউন্সিলরদের বৈঠকে ডেকেছিলেন। পুরসভা সূত্রের খবর, সেই বৈঠকেই বিশ্বজিৎবাবুই উপ-পুরপ্রধানকে অপসারণ করবার প্রস্তাব আনেন। বৈঠকে তিনি জানান, তাঁর পক্ষে আর দেবপ্রসাদবাবুকে নিয়ে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি ওই পদে বদল চান। ওই বৈঠকে উপস্থিত নয় জন কাউন্সিলারের মধ্যে আট জন কাউন্সিলর এই সিদ্ধান্তের পক্ষে সই করেন। এর পর শনিবার বিকেলেই পুরপ্রধানের সই করা চিঠিটি দেবপ্রসাদবাবুর বাড়িতে পৌঁছয়। সেখানে তাকে পুরসভার উপ-পুরপ্রধান পদ থেকে ‘অব্যাহতি’ নিতে বলা হয়। এই ঘটনার পর থেকেই তৃণমূলের অন্দরে এমনকী সাধারণ বাসিন্দাদের মধ্যেও চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে।
নতুন উপ-পুরপ্রধান। —নিজস্ব চিত্র।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবারের বৈঠকের শুরুতে পুরপ্রধান জানান, দেবপ্রসাদবাবু ভাইস চেয়ারম্যান থাকলে কংগ্রেসের আপত্তি রয়েছে। সেই আপত্তির কথা তারা লিখিত ভাবে জানিয়েছে। এর পর তিনি নতুন ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে বিশ্বজিৎ সেনের নাম প্রস্তাব করেন। সেই সময়ে বৈঠকে উপস্থিত কাউন্সিলার সুকন্যা পণ্ডিত ও কল্পনা বসু কংগ্রেসের দেওয়া চিঠিটি দেখতে চান। ততক্ষণে অবশ্য নতুন উপ-পুরপ্রধানকে নিয়ে কাউন্সিলারদের একাংশ মাতামাতি শুরু করে দিয়েছেন।
তৃণমূলের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবারের বৈঠকের পরেও নিজের পদ টিকিয়ে রাখবার ব্যাপারে যথেষ্ট আশাবাদী ছিলেন দেবপ্রসাদবাবু। রবিবার তিনি ও তাঁর কয়েক জন অনুগামী বর্ধমানে গিয়ে দলের এক রাজ্য নেতার সঙ্গে দেখা করে পুরো বিষয়টি জানান। শহরের অম্বিকা কালনার একটি স্কুলের মাঠে রবিবার পর্যন্ত চলা একটি পিঠে পুলি উৎসবের প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন দেবপ্রসাদবাবু নিজে। রবিবার সেখানে তাঁর অনুগামীরা সোমবারের বৈঠকের বিষয়ে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। রবিবার রাতে পুরপ্রধান বিশ্বজিৎ কুণ্ডু নিজের বাড়িতে সোমবারের বৈঠকের রণকৌশল নিয়ে কয়েক জন কাউন্সিলারের সঙ্গে আলোচনা করেন বলে তৃণমূলের অন্য একটি সূত্রে খবর,।
দিন কয়েক আগেই কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন দেবপ্রসাদ বাগ। তারপরে তৃণমূলেরই পুর প্রধান তাঁকে উপ-পুরপ্রধানের পদ থেকে ‘অব্যাহতি’ নিতে নির্দেশ দেওয়ার পিছনে কি শুধুুই কংগ্রেসের চাপ রয়েছে? না কি রয়েছে অন্য কোনও কারণ? তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, বিশ্বজিৎ-দেবপ্রসাদ বিরোধ নতুন নয়। ২০১০ সালে কালনা পুর নির্বাচনে জোট করে জিতেছিল কংগ্রেস ও তৃণমূল। কিছু দিন পর থেকেই পুরপ্রধান ও উপ-পুরপ্রধানের মনোমালিন্য শুরু হয়। দেবপ্রসাদবাবু তৃণমূলে যোগ দিলেও তিক্ততা কমেনি। বরং কালনা শহরে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আরও বাড়ে। সম্প্রতি ‘টেট’ পরীক্ষায় বিশ্বজিৎবাবুর পরিবারের কয়েক জন উত্তীর্ণ হওয়ায় দুর্নীতি রয়েছে, এই অভিযোগ তুলে তৃণমূলেরই একাংশ শহরে মিছিল করে। বিশ্বজিৎবাবুর ঘনিষ্ঠদের অভিযোগ ছিল, দেবপ্রসাদবাবুর অনুগামীরাই এর পিছনে রয়েছেন। বিশ্বজিৎবাবুর বাড়িতে বোমাবাজিও হয়। তার জন্য তৃণমূল প্রকাশ্যে সিপিএমকে দায়ী করলেও দলের অন্দরে দেবপ্রসাদ-অনুগামীদের দিকেই আঙুল তুলছিলেন বিশ্বজিৎ-ঘনিষ্ঠেরা। তবে দু’টি ক্ষেত্রেই অবশ্য দেবপ্রসাদবাবু অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন।
দেবপ্রসাদবাবুর অনুগামীদের অভিযোগ, দলীয় গোষ্ঠী রাজনীতির কারণেই উপ-পুরপ্রধানের পদ থেকে দেবপ্রসাদবাবুকে সরিয়ে দেওয়া হল। এ দিন বৈঠক শুরুর সময়ে বিশ্বজিৎবাবু ও দেবপ্রসাদবাবু উভয় নেতার অনুগামীরাই পুরসভার সামনে উপস্থিত ছিলেন। বেলা ১২টা নাগাদ দেবপ্রসাদবাবু নিজের মোটর বাইক নিয়ে পুরসভা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরে তার অনুগামীরাও পুরসভা চত্বর ছেড়ে চলে যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তৃণমূল কাউন্সিলার বলেন, “নিয়ম অনুযায়ী পুরপ্রধান একাই উপ-পুরপ্রধান ও অন্যান্য পদাধিকারীদের সরিয়ে দিতে পারেন। তবে, দেবপ্রসাদবাবু যদি পুরসভার বেশির ভাগ কাউন্সিলারের সমর্থন পেতেন তাহলে তাঁকে সরানো এত সহজ হত না।”
পদ হারানোর পরেও তৃণমূলেই থাকছেন বলে জানিয়েছেন দেবপ্রসাদবাবু। তিনি বলেন, “আমি মুকুল রায়ের হাত ধরে তৃণমূলে যোগ দিয়েছি। তাঁকে সব ঘটনা জানিয়েছি। তিনি যেমন নির্দেশ দেবেন তেমন চলব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.