রাজ্য সরকারের শাখা সচিবালয় উত্তরকন্যাকে ঘিরে বাসিন্দাদের মধ্যে প্রত্যাশার পারদ ক্রমশ বাড়ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, কিছুদিনের মধ্যেই সচিবালয়ে পুরোদস্তুর কাজকর্ম শুরু হয়ে যাবে। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ কাজে সেখানে আসবেন। সেক্ষেত্রে শিলিগুড়িতে পৌঁছেই সিটিবাস বা অটোতে সচিবালয়ে যেতে হবে। কিন্তু সচিবালয়ের এলাকা, ফুলবাড়ির কামারাঙাগুড়িতে কোনও গাড়িস্ট্যান্ড বা যাত্রীশেড নেই। সব গাড়িই রাস্তায় দাঁড় করিয়ে যাত্রীদের ওঠানামা করায়। বিভিন্ন পরিষেবা-সহ গাড়িস্ট্যান্ড বা বড় মাপের যাত্রীশেড তৈরির দাবি তুলেছেন বাসিন্দারা। এমনকি, শিলিগুড়ি শহর থেকে সচিবালয়ে বাস রুট চালুর দাবি তোলা হয়েছে।
বুধবার দার্জিলিং জেলা সড়ক পরিবহণ কমিটির সদস্য মদন ভট্টাচার্যের মাধ্যমেই বাসিন্দাদের দাবির বিষয়টি জানতে পারেন রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্র। এ দিন হিমাল-তরাই-ডুয়ার্স ক্রীড়া উৎসব উপলক্ষ্যে দার্জিলিঙের ছিলেন পরিবহণ মন্ত্রী মদনবাবু। তিনি বলেন, “গত তিন দশকে যা হয়নি মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে রাজ্য তা সবই হচ্ছে। উত্তরকন্যা চালু হয়েছে। আর যেখানে যাতে বাসিন্দাদের যাতায়াতের কোনও অসুবিধা না হয় তা দেখা হচ্ছে। আলাদা টাকা বরাদ্দ করে যাত্রী শেড, স্ট্যান্ড করা হবে। বাসের রুটও দেওয়া হবে।”
শিলিগুড়ি শহর থেকে উত্তরকন্যা মেরেকেট পাঁচ কিলোমিটার। ৩১-ডি জাতীয় সড়কের শিলিগুড়ি থেকে জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার রুটে যাতায়াতকারী বড় এবং মিনিবাস কামরাঙাগুড়ির রেলসেতুর কাছে রাস্তায় দাঁড়ায়। যা থেকে সচিবালয় কিলোমিটার খানেকের মধ্যে। এ ছাড়া ফুলবাড়ি বাজারে কিছু বাস দাঁড়ায়। এলাকায় সচিবালয় থেকে দূরত্ব তিন কিলোমিটারের মত্য। শিলিগুড়ি জলপাইমোড়, তিনবাতি মোড় বা নৌকাঘাট এলাকা থেকে সিটি অটো বা সিটিবাস ওই এলাকা দিয়ে চলাচল করলেও সচিবালয়ের সামনের কোনও স্টপ নেই।
এলাকার বাসিন্দা করিম বর্মন, বাবলু রায়, মাকালু শেখে’র কথায়, “আমরা রেলসেতুর উপরে দাঁড়িয়ে বাস ধরি। আর নইলে ৩ কিলোমিটার দূরে ফুলবাড়ি বাজারে যেতে হয়। এবার তো সচিবালয়ের জন্য অনেক লোকজন রোজ এলাকায় যাতায়াত করবেন। সেখানে একটা সরকারি স্ট্যান্ড থাকা অত্যন্ত জরুরি। সিটিবাস বাড়ানোটাও জরুরি।”
বাসিন্দাদের সঙ্গে একমত রাজগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য তথা ডাবগ্রাম ফুলবাড়ি সাংগঠনিক ব্লক তৃণমূল সভাপতি দেবাশিস প্রামাণিক। তিনি জানান, শিলিগুড়ির জলপাইমোড় থেকে ফুলবাড়ি অবধি অত্যাধুনিক রাস্তা তৈরি হবে। দুই পাশে সুদৃশ্য পথবাতি বসবে। সেই সঙ্গে এলাকায় গাড়ি স্পটেজ বা যাত্রীশেডও যাতে তৈরি হয় তার জন্য আমরা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব’কে বলব।
পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, ২০০১ সাল নাগাদ শিলিগুড়ি চম্পাসারি, দুই মাইল, শালুগাড়া, শালবাড়ির মত এলাকা থেকে ফুলবাড়ি যাওয়ার ৫০টি-র মত সিটিবাস চালু হয়। কিন্তু পরবর্তীতে ২০০৫ সাল নাগাদ সিটি অটো বাড়তে থাকায় বাসের সংখ্যা কমে যায়। লোকসানে চলতে থাকায় বাস মালিকেরা ওই সিটিবাসগুলি বন্ধ করে দেন। বর্তমানে ওই রুটে দিনে ৩-৪টি সিটি বাস চলে। আর সিটি অটো চলে প্রায় ৬০টি। শিলিগুড়ি মিনিবাস সিন্ডিকেটের সম্পাদক মৃণালকান্তি সরকার বলেন, “নতুন করে সিটিবাসগুলি ফের চালু করতে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। তবে পরিষেবার জন্য স্টান্ড, যাত্রীশেডও প্রয়োজন রয়েছে।”
মিনিবাসের মত বড় বাসের মালিকদেরও একই বক্তব্য। নর্থবেঙ্গল প্যাসেঞ্জার ট্রান্সপোর্ট ওনার্স কো-অর্ডিনেশন কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রণব মানি জানান, সরকারি নিয়মে শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি রুটের বড় সুপার বাসগুলি ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করলে সেখানে দাঁড়ায় না। বাসগুলি ফাটাপুকুরে দাঁড়ায়। আর অন্য জেলার বাসগুলি রাস্তায় ধারেই মূল দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলে বা নামিয়ে চলে যায়। এলাকায় একটি স্টপেজ বা স্ট্যান্ড সরকার করলে সুবিধা তো হবেই। আর সরকার নির্দেশ দিলে সব বাসই সেখানে দাঁড়াতে পারবে। |