আট মাস আগেও যা ছিল গোর্খাল্যান্ড পার্সোনেলের (জিএলপি) অলিখিত ক্যাম্প অফিস, পাহাড়ের লেবং লাগোয়া সেই ‘রায় ভিলা’কে কেন্দ্র করেই নানা স্বপ্ন দেখতে শুরু করল দার্জিলিং পাহাড়। সৌজন্যে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাতে সামিল গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ) এবং রামকৃষ্ণ মিশন।
দার্জিলিঙের ভগিনী নিবেদিতার স্মৃতি বিজড়িত ওই রায় ভিলাকে কেন্দ্র করে লেবং লাগোয়া এলাকায় রামকৃষ্ণ মিশনকে নানাবিধ উন্নয়নের প্রকল্প গ্রহণেরও অনুরোধ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বুধবার রায়ভিলায় এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মিশন কর্তৃপক্ষকে ওই অনুরোধ করেন। তিনি মূলত দুটি বিষয়ে জোর দিয়েছেন। প্রথমত, নতুন করে সংস্কার হওয়ার পর রায় ভিলা যাতে পর্যটক এবং ধর্মপ্রাণদের আকর্ষণ কেন্দ্র হয়ে ওঠে, সে জন্য তিনি সবরকম ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন। দ্বিতীয়ত, তিনি নারী শিক্ষার সার্বিক প্রসার ও মহিলাদের স্বনির্ভর করার জন্য প্রকল্প-প্রস্তাব গ্রহণের উপর জোর দিয়েছেন।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “দার্জিলিং শহর ক্রমশ ঘিঞ্জি হয়ে পড়েছে। সে জন্য শহরকে ছড়িয়ে দিতে হবে। রায় ভিলা সেক্ষেত্র আদর্শ হতে পারে। রায় ভিলা এবং লাগোয়া এলাকায় হোম স্টে চালু করতে হবে। দেশ বিদেশের পর্যটকেরা এসে যাতে প্রার্থনা করার জায়গা, আর্য়ুবেদিক স্পা করার সুযোগ পান, সেটাও মাথায় রাখতে হবে। আর এই এলাকার মেয়েদের আরও বেশি করে উচ্চ শিক্ষা, কম্পিউটার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে তাঁরা স্বনির্ভর হতে পারেন।” এর পরেই তিনি জানিয়েছেন, ওই যাবতীয় দায়িত্ব রামকৃষ্ণ মিশনকেও পালন করতে হবে। রাজ্য সরকার এবং জিটিএ তাতে সহযোগিতা করবে। |

দার্জিলিঙের রায় ভিলায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রয়েছেন বিমল গুরুঙ্গও। বুধবার। —নিজস্ব চিত্র। |
মঞ্চে উপস্থিত জিটিএ চিফ বিমল গুরুঙ্গ বলেন, “রামকৃষ্ণ মিশনের মত একটি সংস্থা’কে আমরা সবসময়ই সব রকম সহযোগিতা করব। আমরাও চাই নারী শিক্ষার প্রসার এবং মহিলারা আরও বেশি স্বনির্ভর হোক।” রামকৃষ্ণ মিশনের তরফে অবশ্য রাজ্য এবং জিটিএ-র সহযোগিতায় রায়ভিলায় সার্বিক উৎকর্ষ কেন্দ্র গড়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। মিশনের তরফে স্বামী সুহিতানন্দ সেকথা জানিয়ে দেন। তিনি বলেন, “আমরা এখানে নারী শিক্ষার প্রসার, কর্ম সংস্থান এবং স্বনির্ভরতার জন্য নানা কর্মসূচি নেব। নানা ভাষা চর্চার জন্য উৎকর্ষ কেন্দ্র গড়া হবে।” তিনি এটাও জানান, ভগিনী নিবেদিতা রায়ভিলার যে ঘরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন, সেটি যথাযথ মর্যাদায় সংরক্ষণ করে জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়ার কথাও ভাবা হয়েছে।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, দীর্ঘদিন ধরেই রায়ভিলা সংস্কারের অভাবে জীর্ণ হয়ে পড়ছিল। গত দু’বছর ধরে সেটির কার্যত কোনও রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছিল না। গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা জিএলএপি গঠনের পর সেখানে পর্যায়ক্রমে সদস্য, সদস্যদের রাখা শুরু করে। সেখানে তাদের নানা প্রশিক্ষণ দেওয়া হত। সংস্কারের অভাবে দেওয়ালের পলেস্তরা খসে পড়া, দেওয়াল ভেঙে যাওয়ার ঘটনাও বাড়তে থাকে। বিষয়টি জানতে পারেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। রামকৃষ্ণ মিশনের তরফেও তাঁকে বিস্তারিতভাবে সব জানানো হয়। পরে পাহাড় সফরে গিয়ে তিনি রায়ভিলার খোঁজখবরও নেন। ইতিমধ্যে পাহাড়ে জিটিএ গঠন হয়।
গত বছরের মে মাসের মাঝামাঝি মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধে রায়ভিলার দায়িত্ব জিটিএ কর্তৃপক্ষ রামকৃষ্ণ মিশনের হাতে তুলে দেন। রায় ভিলার পরিবর্তে জিটিএ-কে সরকারের হাতে থাকা একটি যুব আবাস হস্তান্তর করে দেন মুখ্যমন্ত্রী। জোরকদমে রায়ভিলার সংস্কারের কাজ শুরু হয়। সাত মাসের মাথায় সেই সংস্কারপর্ব সম্পন্ন হয়। এ দিন সেই নতুন ভবনের উদ্বোধন হয়েছে। এ দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রায়ভিলার জন্য রামকৃষ্ণ মিশনকে ১ কোটি টাকা এবং জিটিএকে যুব আবাসের জন্য ১ কোটি টাকা দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী, জিটিএ চিফ এবং রামকৃষ্ণ কর্তৃপক্ষ সকলেরই আশা, শিক্ষা সংস্কৃতির প্রসারে রায়ভিলা দার্জিলিং পাহাড়ে আগামী দিনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। |