জিটিএ চিফ হিসেবে বিমল গুরুঙ্গ দ্বিতীয় ইনিংস শুরুর পরে, এ বার তাঁকে ‘নতুন দার্জিলিং’ গড়ার পরামর্শ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সভাপতি গুরুঙ্গকে মমতা বুঝিয়ে দিয়েছেন, কথা অনেক হয়েছে, এ বার সেটা কাজে করে দেখাতে হবে। ‘নতুন দার্জিলিঙে’ এক দিকে যেমন শান্তি রাখতে হবে, তেমনই সার্বিক উন্নয়নও করতে হবে। ধৃত মোর্চা সদস্যদের ছাড়ার যে আর্জি মোর্চা নেতারা এ দিন তাঁর সঙ্গে বৈঠকে করেছেন, তাতেও মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি সম্মতি দেননি। জিটিএ-তে যে সব নতুন নিয়োগ হয়েছে, তাঁদের চাকরি স্থায়ী করার ব্যাপারেও মুখ্যমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ অনুমোদন পাননি মোর্চা নেতারা।
বুধবার সারা দিন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেই ছিলেন গুরুঙ্গ। প্রথমে দার্জিলিঙে ভগিনী নিবেদিতার স্মৃতি বিজড়িত রায় ভিলায় অনুষ্ঠানের পরে লেবঙে পুলিশের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হিমাল-তরাই-ডুয়ার্স ক্রীড়া উৎসবের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে যান মুখ্যমন্ত্রী। লেবঙে গুরুঙ্গকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “দার্জিলিং বরাবরই নিজের সৌন্দর্যের কারণে ব্যতিক্রম। তবে এই শহরটা বড্ড ঘিঞ্জি হয়ে পড়েছে। শহরের সম্প্রসারণ প্রয়োজন। সান্দাকফু, লাভা, সুখিয়া, মিরিক, কার্শিয়াঙের মতো এলাকাগুলির পরিকাঠামো বাড়িয়ে নতুন দার্জিলিং তৈরি করতে হবে। যাতে পর্যটনের নতুন দিগন্তও খোলে।” যার উত্তরে গুরুঙ্গের বক্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রী ঠিক কথাই বলেছেন। রাজ্য সরকারের সঙ্গে আমাদের সংঘাত এখন অতীত। রাজ্য এবং জিটিএ মিলে নতুন দার্জিলিং তৈরির পথে হাঁটবে।” |
ভগিনী নিবেদিতাকে মুখ্যমন্ত্রীর শ্রদ্ধা। দাজির্লিঙের রায় ভিলায় । ছবি: বিশ্বরূপ বসাক। |
গত বছর গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে মোর্চার আন্দোলন এবং তারপরে জিটিএ সদস্য-সহ মোর্চা নেতাদের ব্যাপক ধরপাকড়ের পরে এ দিনই প্রথম গুরুঙ্গকে রাজ্য পুলিশের কোনও অনুষ্ঠানে থাকতে দেখা গেল। মোর্চা সূত্রে জানানো হয়েছে, এখনও বেশ কয়েক জন জিটিএ সদস্য জেলে, তবু রাজ্যের সঙ্গে যৌথ ভাবে উন্নয়নের পথে চলার বার্তা দিতেই মোর্চা এখন সে সব বিষয়কে বড় করে তুলতে চাইছে না। যে কারণেই ওই অনুষ্ঠানে গুরুঙ্গকে বলতে শোনা গেল, “ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজন করতে দার্জিলিং পুলিশ যে ভূমিকা নিয়েছে, তাকে স্বাগত জানাতেই হবে।”
গত ২৯ জানুয়ারি দার্জিলিঙে উত্তরবঙ্গ উৎসবের মঞ্চে গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে তাঁর সামনেই স্লোগান ওঠায়, মুখ্যমন্ত্রী মন্তব্য করেন, তিনি ‘রাফ অ্যান্ড টাফ’। তারপর থেকেই রাজ্য-মোর্চার সম্পর্কের অবনতি হতে থাকে। পাহাড়ে লাগাতার বন্ধও ডাকে মোর্চা। মুখ্যমন্ত্রী নরম হননি। মোর্চাই আগের অবস্থান থেকে সরে আসে। গুরুঙ্গ রাজভবনে দ্বিতীয় বারের জন্য জিটিএ প্রধানের পদে শপথও নিয়েছেন। |
মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সামনে অনুষ্ঠান পাহাড়ের
শিল্পীদের। দার্জিলিঙের লেবংয়ে। বুধবার রবিন রাইয়ের তোলা ছবি। |
এ দিন রিচমন্ড হিলে গুরুঙ্গের নেতৃত্বে জিটিএ-র প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকেও বসেন মুখ্যমন্ত্রী। ঘণ্টাখানেক বৈঠকের পরে গুরুঙ্গ বলেন, “যে অনুষ্ঠানগুলিতে আমরা যোগ দিয়েছিলাম, সেগুলি নিয়ে কথা হল। রায় ভিলা বা দার্জিলিং জেলা পুলিশের অনুষ্ঠান ভালই হয়েছে। নতুন পর্যটন কেন্দ্র গড়ে দার্জিলিং শহরের সম্প্রসারণ নিয়েও কথা হয়েছে।” গুরুঙ্গের সংযোজন, “মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, দার্জিলিঙের উন্নয়ন নিয়ে তাঁরও নিজস্ব পরিকল্পনা আছে। আমরা তাতে হস্তক্ষেপ করব না। জিটিএ-এর কাজ সুষ্ঠু ভাবে চালাব। রাজ্যের সঙ্গে যৌথ ভাবে উন্নয়ন হবে।”
গুরুঙ্গ জানান, পাহাড়ে বসবাসকারী ১০টি সম্প্রদায়কে আদিবাসী হিসেবে মর্যাদা দেওয়ার জন্য কেন্দ্রকে অনুরোধ করতে তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে আর্জি জানিয়েছিলেন। তাতে মুখ্যমন্ত্রী সম্মত হয়েছেন। এখনও জেলবন্দি মোর্চা সমর্থক তথা জিটিএ সদস্যদের মুক্তির প্রসঙ্গও ওই বৈঠকে মোর্চার তরফে তোলা হয় বলে দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। ওই সূত্রেই খবর, মোর্চা নেতাদের আইনের প্রতি আস্থা রাখার পরামর্শ দেন মুখ্যমন্ত্রী। |
ক্যামেরায় বন্দি নিসর্গ। দার্জিলিঙের লেবংয়ে ভগিনী নিবেদিতার স্মৃতিবিজড়িত
রায় ভিলায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রয়েছেন জিটিএ-প্রধান
বিমল গুরুঙ্গও। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক। |
লেবঙের অনুষ্ঠানে পুলিশের আয়োজিত তীরন্দাজি, ম্যারাথন, ফুটবল-সহ অন্য প্রতিযোগিতায় সফলদের পুরস্কার দেন। বিভিন্ন ক্লাব কর্তৃপক্ষকেও অনুদানের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি সরকারি প্রকল্পেও বাসিন্দাদের সহায়তা দেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজনে পুলিশ ভাল কাজ করছে। দার্জিলিং-তরাই-ডুয়ার্সের সকলে একসঙ্গে খেলায় অংশ নিয়েছিলেন। সংস্কৃতি, শিক্ষাতেও সকলের সমান অংশগ্রহণ চাই। এ জন্য ক্লাবগুলিকে ২৫ হাজার থেকে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অনুদান দেওয়া হচ্ছে।” লেবঙ স্টেডিয়ামের পরিকাঠামোর জন্য ১০৭ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আরও ৫০ কোটি টাকা ওই খাতে বরাদ্দ করা আছে।” পর্যটকদের জন্য দার্জিলিং জলপাইগুড়িতে নয়া ১৪০টি বাস দেওয়ার কথাও বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
|