সৌমিত্র কুণ্ডু ও রেজা প্রধান • মিরিক |
লেপচাদের পরে এ বার দার্জিলিং পাহাড়ের তামাঙ্গ সম্প্রদায়ের জন্যও আলাদা উন্নয়ন বোর্ড গড়ার কথা ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মঙ্গলবার দার্জিলিঙের মিরিকে তামাঙ্গ সম্প্রদায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “তামাঙ্গ সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য অনেক প্রাচীন। এই সম্প্রদায়ের তরফে পৃথক বোর্ড চেয়ে আর্জি জানানো হয়। আমরা সব দিক ভেবেই তামাঙ্গদের উন্নয়নের জন্য আলাদা একটা বোর্ড গড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” তিনি জানান, তামাঙ্গ সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যকে ধরে রেখে সংস্কৃতি সহ নানা ক্ষেত্রেও উন্নয়নের জন্য কাজ করবে ওই বোর্ড। ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল তামাঙ্গ ইয়ুথ অ্যাসোসিয়েশন ও তামাঙ্গ ফাউন্ডেশন। |
মুখ্যমন্ত্রী জানান, পাহাড় সফর শেষে তিনি কলকাতা ফিরে যাওয়ার পরে ‘ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কালচারাল বোর্ড ফর তামাঙ্গ’ গঠনের নথিপত্র তৈরি হবে। সরকারি সূত্রের খবর, ওই বোর্ডে কারা থাকবেন, তা সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে ঠিক করবে রাজ্য। যা শোনার পরে তাঁদের ঐতিহ্যশালী বাজনা ‘ডাম্পু’ বাজিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন তামাঙ্গ সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা। তামাঙ্গ ইয়ুথ অ্যাসোসিয়েশনের মুখ্য উপদেষ্টা নাজো গ্লান বলেন, “১০ বছর আগে আমরা উপজাতি হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছি। এ বার নিজস্ব বোর্ড পেলাম। আজকের দিনটি আমাদের কাছে শুভ।” তাঁদের দাবি, দার্জিলিং পাহাড় ও সমতল মিলিয়ে কয়েক লক্ষ তামাঙ্গ সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করেন।
গত বছরই রাজ্য সরকার পাহাড়ের লেপচা সম্প্রদায়ের জন্য পৃথক উন্নয়ন বোর্ড গড়েছে। এ বার তামাঙ্গদের জন্যও তা করার সিদ্ধান্ত হল। শেরপা, ধিমাল, সুব্বা, ভুটিয়া, খাওয়াস, ভুজেল, লিম্বু, মঙ্গর সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরাও তাঁদের জন্য আলাদা বোর্ডের দাবি তুলেছেন। |
তাঁদের মধ্যে কোনও কোনও সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে অনুষ্ঠান মঞ্চে দেখা করে সেই আর্জি পেশ করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য সরাসরি কোনও প্রতিশ্রুতি দেননি। তবে পরে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, “রাই, ভুজেল, লিম্বু সহ পাহাড়ের বিভিন্ন সম্প্রদায়কে আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত। তবে বিষয়টি কেন্দ্রের এক্তিয়ারে পড়ে।” জিটিএ-র ক্ষমতাসীন দল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা লেপচা সম্প্রদায়ের জন্য আলাদা বোর্ড গড়া নিয়ে প্রথমে আপত্তি জানিয়েছিল। তবে এখন কিন্তু পাহাড়ের সম্প্রদায়গুলির জন্য পৃথক বোর্ডের সিদ্ধান্তকে তারা স্বাগত জানিয়েছে। মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। আমরা চাই, পাহাড়ের প্রতিটি সম্প্রদায়ের জন্য পৃথক উন্নয়ন বোর্ড তৈরি হোক।” |
তবে সিপিএম এবং অখিল ভারতীয় গোর্খা লিগ সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে। প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য বলেন, “যদি লেপচা, তামাঙ্গ সম্প্রদায়ের উন্নয়নের জন্য আলাদা বোর্ড হয়ে থাকে, তা হলে ভাল। কিন্তু বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের রাজনৈতিক আনুগত্য মেলার আশায় যদি এ কাজ করা হয়ে থাকে, তা হলে তা আগামী দিনে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।” গোর্খা লিগের সাধারণ সম্পাদক প্রতাপ খাতি অবশ্য মোর্চাকে দুষেছেন। তাঁর অভিযোগ “পাহাড়ের যথাযথ উন্নয়ন করতে পারেনি মোর্চা। সে কারণেই প্রতিটি সম্প্রদায় নিজেদের জন্য পৃথক উন্নয়ন বোর্ড দাবি করছে।” তাঁর আশঙ্কা, “এর ফলে পরে গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন সম্ভব হবে না।” সিপিআরএমের মুখপাত্র গোবিন্দ ছেত্রীরও বক্তব্য, “যদি সব সম্প্রদায়ের জন্য পৃথক উন্নয়ন বোর্ড তৈরি হয়, তবে জিটিএ-র আর কাজ কী হবে?” দার্জিলিং ডুয়ার্স ইউনাইটেড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা মহেন্দ্র পি লামার মতে, এমন ভাবে যথেচ্ছ উন্নয়ন বোর্ড তৈরি করে পাহাড়ের উন্নয়ন সম্ভব নয়।
|