মঞ্চে হঠাৎ আঁধার, তদন্তে নামল প্রশাসন
কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে উত্তরবঙ্গ উৎসবের মঞ্চে হঠাৎ আলো নিভে যাওয়ার পৃথক তদন্তে নামল পুলিশ ও প্রশাসন। সরকারি সূত্রের খবর, ঘটনার প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ-প্রশাসনের অফিসারদের অনেকেরই অভিমত, অন্ধকারের সময়ে ঠেলাঠেলি, হট্টগোলের জেরে বড় অঘটন ঘটে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। তাই ওই ঘটনাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখছে পুলিশ-প্রশাসন।
সোমবার সন্ধ্যায় উত্তরবঙ্গ উৎসবের মঞ্চ ছেড়ে তখন সদ্য নেমে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তখনও অভিনেতা প্রসেনজিৎ ও গায়ক বাপ্পি লাহিড়ি ও নচিকেতা সহ বিশিষ্ট শিল্পীরা মঞ্চেই ছিলেন। স্টেডিয়ামে উপস্থিত ছিলেন বহু দর্শকও। তার মধ্যেই হঠাৎ করে মাঠের দক্ষিণ দিকের ফ্লাড লাইট নিভিয়ে দেওয়ায় আলো-আঁধারি পরিবেশ তৈরি হয় স্টেডিয়ামে। শুরু হয়ে যায় হুড়োহুড়ি, ধাক্কাধাক্কি। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। তিনি বলেন, “আলো নেভানোর আগে উদ্যোক্তাদের মত নেওয়া উচিত ছিল। তা করা হয়নি বলেই এমন হট্টগোল হয়েছে। ভাগ্যিস বড় কিছু হয়নি। তবে হতেও পারত। সে জন্যই আলো নেভানোর উদ্দেশ্য নিয়ে নানা সন্দেহ দানা বাঁধছে। ঘটনায় যে কর্মী জড়িত, তাঁর শাস্তি হওয়া উচিত। পুলিশ-প্রশাসনকে তদন্ত করে কঠোর পদক্ষেপ করতে বলা হয়েছে।”
সরকারি সূত্রের খবর, প্রাথমিক তদন্তের পরে স্টেডিয়াম কমিটির এক কর্মী অলোক কুন্ডুর দিকে সন্দেহের তির গিয়েছে তদন্তকারী অফিসারদের। উৎসব কমিটির অভিযোগের ভিত্তিতে অলোকবাবুর বিরুদ্ধে শিলিগুড়ি থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। স্টেডিয়াম কমিটির চেয়ারপার্সন তথা শিলিগুড়ি মহকুমা শাসক দীপাপ প্রিয়াও পৃথক তদন্ত করাচ্ছেন। মহকুমাশাসক বলেছেন, “ইতিমধ্যেই পুলিশের কাছে এফআইআর করা হয়েছে। অলোক কুন্ডু নামে এক কর্মীকে সন্দেহ করছেন উদ্যোক্তারা। ওই কর্মীকে জেরার পরে পদক্ষেপ করা হবে।” ঘটনাচক্রে, বাম আমলে স্টেডিয়াম কমিটিতে কর্মী হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন ওই কর্মী। স্টেডিয়াম কমিটির কয়েকজন প্রাক্তন সদস্য অবশ্য দাবি করেছেন, পূর্ণাঙ্গ তদন্তের পরেই পদক্ষেপ করা উচিত।
অলোকবাবুর দাবি, তিনি দায়িত্বে কোনও গাফিলতি করেননি। তাঁর বক্তব্য, “আমি কোনও অন্যায় করিনি। বাদবাকি যা বলার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বলব।” তবে স্টেডিয়াম কমিটির একজন সদস্য জানান, অলোকবাবু ঘনিষ্ঠ মহলে দাবি করেছেন, মাঠের সব আলো ১ ঘন্টা জ্বালানোর মতো তেল দেওয়া হয়েছিল। সেই সময় ফুরোতেই জেনারেটর বন্ধ করা হয়। অলোকবাবুই সে কথা তাঁদের জানিয়েছেন বলে স্টেডিয়াম কমিটির ওই কর্তার দাবি।
উৎসব কমিটির দাবি, অলোকবাবুকে জেনারেটরের তেলের জন্য ৮ হাজার টাকা আগাম দেওয়া হয়। প্রয়োজনে আরও বরাদ্দ করার আশ্বাসও দেওয়া হয়। তা সত্ত্বেও মঞ্চে চিত্রতারকা, গায়করা থাকাকালীন আলো নেভানোর আগে উৎসব কমিটির কর্তাদের জানানো উচিত ছিল। মন্ত্রী গৌতমবাবুও বলেছেন, “তেলের টাকা আগাম দেওয়া হয়েছিল।”
উৎসব কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, মাঠ অন্ধকার হওয়ায় ব্যারিকেড টপকে অনেকেই তারকাদের অটোগ্রাফ নিতে মঞ্চে উঠতে থাকেন। বেগতিক দেখে জলপাইগুড়ির তথ্য সংস্কৃতি আধিকারিক জগদীশচন্দ্র রায় মঞ্চের সামনে জনতাকে আটকানোর চেষ্টা করেন। উৎসব কমিটির কর্তারাও সেখানে ছুটে যান। সকলে মিলে তারকাদের ঘিরে যখন তাঁদের নিয়ে যাচ্ছেন, তখন ধাক্কাধাক্কি চরমে ওঠে। ভক্তদের ধাক্কায় বাঁশের ব্যারিকেডে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয় প্রসেনজিতের। তাঁর হাতে চোট লাগে। বাপ্পি লাহিড়ি ও নচিকেতাকেও ঘিরে ধরার চেষ্টা করে জনতা। মিনিট পাঁচেক ধরে ধস্তাধস্তি করে প্রসেনজিৎ ও দুই গায়ককে গাড়িতে তুলে দেন উদ্যোক্তারা। জগদীশবাবু জানান, এ দিন প্রসেনজিৎ শিলিগুড়ির কাওয়াখালিতে প্রস্তাবিত ফিল্ম সিটির জায়গা পরিদর্শন করতে গিয়েছিলেন।
এর পরে উৎসবের উদ্যোক্তারা যে কর্মী আলো নিভিয়েছেন, তাঁকে চিহ্নিত করেন। তাঁকে জেরা করলে তিনি উদ্যেক্তাদের জানিয়ে দেন, অলোকবাবুর নির্দেশে তিনি আলো নিভিয়েছেন। তখনই অলোকবাবুকে সেখানে ডেকে আনা হয়। উৎসব কমিটির একাধিক কর্তা জানান, অন্তত ৬ জন অফিসারের সামনে অলোকবাবু প্রথমে জেনারেটর-কর্মীর উপরে দোষ চাপিয়ে দেন। কিন্তু জেনারেটর কর্মী কাউকে আলো নেভাতে বলেননি বলে সকলের সামনেই দাবি জানান। এর পরে অফিসার-কর্মকর্তারা জেরা করলে অলোকবাবু কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি বলে উৎসব কমিটির দাবি। কমিটি সূত্রের খবর, মন্ত্রী গৌতমবাবু তখনই পুলিশ অফিসারদের ডেকে অলোকবাবুর বিরুদ্ধে এফআইআর করানোর নির্দেশ দেন।





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.