উত্তরকন্যা উদ্বোধনের রেশ কাটতেই সচিবালয়ে কোন দফতর, কোথায় ঘর পাবে তা নিয়ে তৎপরতা শুরু হয়ে গিয়েছে। শিলিগুড়ি-সহ নানা এলাকার বাসিন্দারা কী ভাবে সচিবলায়ের অন্দরে পৌঁছতে পারবেন তা নিয়েও সাধারণ মানুষের কৌতুহল তুঙ্গে। মঙ্গলবার নানা এলাকার কৌতুহলী মানুষ দিনভর উত্তরকন্যায় গিয়ে খোঁজ নেন। সেখানে সরকারি অফিসারদের একাংশও যান। সরকারি সূত্রের খবর, উত্তরবঙ্গ উৎসব সমাপ্ত হলেই উত্তরকন্যায় নানা দফতরকে ঘর বরাদ্দ করা হবে।
সচিবালয়ের কিছু কর্মী ঘরদোর পরিস্কার করে আসবাবপত্র ঠিকঠাক করতে ব্যস্ত। সামনের সুবিশাল বাগানের পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত মালিরা। গোটা সচিবালয়ের প্রতিটি গেটে মোতায়েন ছয় জন বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষী। তাঁরাও নজর রাখছেন কেউ যাতে অবাধে সচিবালয়ে ঢুকতে না পারেন। রাতে পুলিশের পাশাপাশি তিনজন বেসরকারি রাখার বন্দোবস্ত এ দিনই করা হয়েছে। |
উত্তরকন্যা ভবনের সামনে প্রহরা। মঙ্গলবার তোলা নিজস্ব চিত্র। |
সচিবালয়ের পিছনের অংশে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভামঞ্চ সকালের মধ্যে পুরো গুটিয়ে নেন কর্মীরা। আর তার পাশেই এদিন থেকে শুরু হয়ে গিয়েছে অডিটোরিয়াম-সহ অন্যান্য নির্মাণ কাজ। বাইরের দেওয়াল-সহ অন্য নির্মাণ কাজও চলে পুরোদমে। ওই কাজে ব্যস্ত কর্মীদের কয়েকজন জানান, মূল সচিবালয়ের কাজ শেষ। অন্য ভবনের কাজ এ দিন থেকেই শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, গত বছর জানুয়ারি মাসে সচিবালয়ের কাজে হাত দিয়ে রেকর্ড সময়ে কাজ শেষ করা হয়েছে। বাকি কাজও সেইভাবেই শেষ হবে বলে নির্দেশ জারি করা রয়েছে।
উল্লেখ্য, সোমবারই উত্তরকন্যার উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন অতিরিক্ত মুখ্য সচিব, আর্থিক উপদেষ্টাদের পুরোপুরি সচিবালয়ে এসে কাজ শুরু করতে মাস খানেক সময় লাগবে। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, কৃষি, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর, অর্থ, প্রাণী সম্পদ, পূর্ত, পার্বত্য বিষয়ক, পুর ও নগরোন্নয়ন, পরিবহণ, শিল্প, অনগ্রসর জাতি কল্যাণের মত দফতরগুলি চালু করার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। এ দিন তৃণমূল কংগ্রেসের সরকারি ওয়েবসাইটে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, প্রতি মাসে অন্তত একবার করে হলেও বিভাগীয় মন্ত্রীরা উত্তরকন্যায় গিয়ে বসে উত্তরবঙ্গ সংক্রান্ত সমস্ত কাজকর্ম করবেন।
পুলিশ সূত্রের খবর, ভক্তিনগর থানার অধীনে থাকা সচিবালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্ব আপাতত কমিশনারেটের এসিপি (ইস্ট) অভিষেক গুপ্তাকে দেওয়া হয়েছে। এ দিন দুপুরে এসিপি, ভক্তিনগর থানার ওসি তীর্থসারথী নাথ, এনজেপি ফাঁড়ির ওসি নবেন্দু সরকার-সহ পুলিশ অফিসারেরা সচিবালয়ে গিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখেন। তাঁরা বেসরকারি নিরাপত্তা রক্ষীদের পাশাপাশি সাধারণ পুলিশ কর্মীদের নজরদারি বাড়িয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন। মূল রাস্তা দখল করে থাকা ট্রাকগুলি সরিয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া সচিবালয়ের সামনের একটি অংশে এখনও কোনও সীমানা পাঁচিল তৈরি না হওয়ায় বাড়তি সতর্কতা নিয়েছেন পুলিশ কর্তারা। সামনে রাস্তায় মোতায়েন করা হয়েছে ট্রাফিক পুলিশের কর্মীদের।
শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনার জগমোহনও এদিন কমিশনার উচ্চ পদস্থ অফিসারদের সঙ্গে সচিবালয়ের নিরাপত্তা নিয়ে কথাবার্তা বলেন। পুলিশ সূত্রের খবর, পরিকল্পনামাফিক সচিবালয়ের জন্য নির্দিষ্ট ‘সিকিউরিটি হাব’ যত দ্রুত সম্ভব চালুর চেষ্টা করা হবে। ওই পরিকল্পনায় মূল গেটের পাশেই সিকিউরিটি হাবটি হবে। সেখানে একটি থানার মত পুলিশ কর্মী, মূলগেটে ডোর ফ্রেম, মেটাল ডিটেক্টর-সহ পুলিশ কর্মীদের মোতায়েন করা হচ্ছে। পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে ‘স্ক্যানার’ এবং বিভিন্ন প্রান্তে সিসিটিভি বসানোর। পুলিশ কমিশনার বলেন, “আমরা যত দ্রুত সম্ভব উত্তরকন্যার নিরাপত্তা আঁটোসাটো করতে চাইছি। সিকিউরিটি হাব দ্রুত নির্মাণের জন্য উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের আধিকারিকদের বলা হয়েছে।”
|