মহাকরণ কিংবা হালের নবান্নে জায়গা মেলেনি গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (জিটিএ)। তা নিয়ে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার মধ্যে তো বটেই, পাহাড়ের আমজনতারও চাপা অভিমান ছিল। সেই বার্তা পৌঁছয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও। তাই পাহাড়ের অভিমান কমাতে তাঁর নিজের উত্তরবঙ্গের সচিবালয় ‘উত্তরকন্যা’তেই জিটিএ কর্তাদের বসার জন্য জায়গা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
সোমবার বিকেলে শিলিগুড়ির উপকণ্ঠে কামরাঙাগুড়িতে উত্তরকন্যা উদ্বোধনের সময়েই মুখ্যমন্ত্রী সেখানে জিটিএ-র জন্য পৃথক অফিস ঘর বরাদ্দের নির্দেশ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে, জিটিএ-র অফিসার-কর্মী ও পাহাড়ের নানা এলাকার বাসিন্দারা যাতে শিলিগুড়িতে গিয়ে কম খরচে থাকতে পারেন, সে জন্য ‘পাহাড়িয়া’ নামে একটি বিশেষ অতিথি নিবাস তৈরিরও নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। |
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “আমি চাই পাহাড়-সমতল হাতে-হাত ধরে চলুক। সে জন্য সব রকম চেষ্টা করছি। তাই উত্তরকন্যায় জিটিএ-র জন্য আলাদা অফিসের জায়গা বরাদ্দ হয়েছে। সেই সঙ্গে পাহাড়ের নানা এলাকার সাধারণ মানুষ চিকিৎসা, পড়াশোনার জন্য নিয়মিত শিলিগুড়িতে আসেন। তাই শিলিগুড়িতে পাহাড়বাসীর জন্য একটা অতিথি নিবাস তৈরির নির্দেশ দিয়েছি। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর তা তৈরি করবে।”
মঞ্চ থেকে যা ঘোষণা করেছেন, তা যে নিছক আশ্বাস নয়, তা-ও এ দিন বুঝিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। উদ্বোধন অনুষ্ঠানের পরেই সরকারি কর্তাদের নিয়ে ডাকা এক বৈঠকে জিটিএ-র ডেপুটি চিফ অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল রমেশ আলে সহ পাহাড়ের প্রতিনিধিদের ডেকে নেন মুখ্যমন্ত্রী। উত্তরকন্যার দোতলায় একটা বড় মাপের ঘর বরাদ্দ করা হয়েছে জিটিএ-কে। রমেশ আলেও সেই ঘর দেখে খুশি। সেখানে জিটিএ চিফ কিংবা তাঁর প্রতিনিধির বসার জন্য আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে। ঘরে যুগ্ম সচিব পর্যায়ের একজন অফিসারের জন্য ‘কিউবিকল’ও রয়েছে। এ ছাড়া, অন্তত ১০ জন অফিসার-কর্মীর বসার বন্দোবস্তও হতে পারে সেখানে।
সব ঠিকঠাক চললে এই ব্যবস্থা মতো আগামী মে-র মধ্যেই জিটিএ-র পুরোদস্তুর একটা অফিস হচ্ছে শিলিগুড়িতে। যেখানে দেখা যেতে পারে জিটিএ চিফ বিমল গুরুঙ্গকেও। উত্তরকন্যায় দাঁড়িয়ে রমেশ আলে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবকে বলেন, “এটা দারুণ ঘটনা। আমরা তো ভাবতেই পারিনি। অফিসটা হলে নানা ব্যাপারে ছোটাছুটি কমবে।” উদাহরণ হিসেবে তিনি জানান, কয়েক মাসে আগে দার্জিলিং পাহাড়ে ভগিনী নিবেদিতার বাড়িটি তাঁরা রাজ্যকে হস্তান্তর করেছেন। তাঁর দাবি, সে জন্য ১ কোটি টাকা জিটিএ-র পাওয়ার কথা। তিনি বলেন, “কিন্তু ওই ফাইল কোথাও থমকে রয়েছে। উত্তরকন্যায় আমরা বসলে ওই ধরনের জট সহজেই কেটে যেতে পারে। তা ছাড়া, পাহাড়-সমতলের প্রশাসনের মেলবন্ধনও এর ফলে আরও দৃঢ় হবে।” গৌতমবাবু অবশ্য জানিয়ে দেন, হতাশার কারণ নেই, যত দ্রুত সম্ভব জিটিএ-কে ওই টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা হবে। |
এই প্রথম পাহাড়ের প্রশাসনের কর্তারা রাজ্য প্রশাসনের কোনও সচিবালয়ে বসার জায়গা পেলেন। বাম আমলে জিএনএলএফ-এর সুবাস ঘিসিঙ্গ দার্জিলিং গোর্খা পার্বত্য পরিষদ আদায় করলেও মহাকরণে অফিস করার জায়গা পাননি। জলপাইগুড়িতে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদের দফতরেও ডিজিএইচসি-র জন্য জায়গা বরাদ্দ হয়নি। মোর্চা প্রধান গুরুঙ্গও জিটিএ আদায় করেছেন। কিন্তু মহাকরণে জিটিএ অফিস করার জায়গা পাননি। পরে রাজ্য প্রশাসনের সদর দফতর নবান্নে সরানো হয়েছে। সেখানেও জিটিএ-র জন্য আলাদা কোনও জায়গা করে দেওয়ার কথা ভাবা হয়নি কেন, পাহাড়ের মানুষ প্রশ্ন তুলেছিলেন।
এই প্রেক্ষাপটে উত্তরকন্যায় জিটিএ-র অফিস পাওয়াটা ‘অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মত পাহাড়-সমতলের মানুষের। সরকারি সূত্রে দাবি, মুখ্যমন্ত্রী পাহাড়কে কাছে টানতে সবরকম চেষ্টা করছেন। রেলমন্ত্রী থাকার সময়ে এনজেপি ও শিয়ালদহে নেপালি ভাষায় ঘোষণা চালু করার ব্যবস্থাও করেছিলেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে বারেবারে পাহাড়ে ছুটেছেন। গুরুঙ্গদেরও ডেকেছেন। সম্প্রতি গুরুঙ্গ দ্বিতীয় দফায় জিটিএ চিফ হিসেবে যাতে কলকাতার রাজভবনে শপথ নেন, সেই ব্যবস্থাও করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তা জানান, তাই উত্তরকন্যার পরে এ বার কলকাতাতেও জিটিএ-র অফিস হওয়ার রাস্তাও মসৃণ হল। |